সেলিম রেজা নিউটনের গুচ্ছ কবিতা
কামিনীর ফুলের ইশারা এই কান্না অত দূরে পৌঁছাবে কি, বলো? এই যে পাশের ঘরে যত দূরে কচি কষ্ট বুকে নিয়ে সন্তান ঘুমায় অথবা যতটা দূরে ভেসে যায় বিমানের ইঞ্জিনের ধ্বনি? …
কামিনীর ফুলের ইশারা এই কান্না অত দূরে পৌঁছাবে কি, বলো? এই যে পাশের ঘরে যত দূরে কচি কষ্ট বুকে নিয়ে সন্তান ঘুমায় অথবা যতটা দূরে ভেসে যায় বিমানের ইঞ্জিনের ধ্বনি? …
চিড়িয়াখানা চিড়িয়াখানায় প্রায়ই যাই বানরের খেলা দেখি, জিরাফের গলা দেখি গন্ডারের নিস্পৃহ দাঁড়িয়ে থাকা দেখি গাছ-গাছালির ভিড়ে সন্ধ্যাদেরও নামতে দেখি। মাঝে মাঝে কিছুই দেখি না কোন বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করি …
একদিন বিকেল শেষ হলে চলে যাব মুক্তপুরুষ। বেদির উপর ফুল ও বেলপাতা পড়ে থাকবে। সিঁদুর রঙের মেঘে লুকিয়ে যাবে দিন। রাতের বিছানা পেতে শোবে সাজু ও রূপাই। হে বাংলা ভাষা, …
দিগন্তে শুকতারা মেঘলা দিনের দুঃখ মাথা ছাড়িয়ে একবারে আকাশ ধরে ফেলে আর তখনই চোখে পড়ে যায় মায়ের রেখে যাওয়া সবুজ নদী গতকাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল আজ সকালে সে জল সাদা …
সংসার গন্তব্য এক হয় না আমাদের, মতের অবস্থা চৌচির। নীরবতার আড়ি পরস্পর, কথার ভিতর থেকে কথা টেনে নিতে তৎপর। কোণঠাসা সোফায় বসা আমার জড়োসড়ো শরীর, পুজোর পাথর… আমরা যেন দু-মেরুর …
হন্টন কুড়িয়ে আনা পাথরের গা থেকে আলাদা করি রোদের ছায়া বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মায়া.. পাথরের ছায়াও পথ আগলে দাড়ায় নূপুর থেকে খসে পড়া নাচের মুদ্রা জড়াই পায়ে। পা তুই কোথায় যবি …
পিতার দৃশ্য জুড়ে রাস্তার দৃশ্য ক্রমশ দূরের দিকে যায় গৃহিপালিতের দিকে চেয়ে থাকার পরিণামগুলি বিকেলের অনভ্যাসে মানবিক হয়ে ওঠে দিন শূন্যতাও চলমান, স্থিরতার স্পর্শে জেগে ওঠে মানুষের হাত থেকে ফুলের …
১. কেউই নও ছিলেওনা কখনো সময় সত্য ২. আমি ছিলেম? বর্তমানই সত্য কেউ থাকেনা ৩. কেঁদেছো মন? শান্তি পেতেও পারো কাঁদছি খুব ৪. সত্য সময়? এখনই সময় শুরু করেছি ৫. …
প্রার্থনা নিজের সংগে একলা থাকার সঙ্গতি দাও গাছপালারা যেমন থাকে একলা একলা তাঁতিপুকুর ভরা শহর দাঁড়িয়ে থাকে অনতিদূর – সারাটি রাত প্রদীপ জ্বেলে ল্যাম্পপোস্টের দাঁড়িয়ে থাকা সারাটি দিন জাগতে থাকা …
প্রতিভা একটা লম্বা চুল সারাদিন ঘুরেফিরে যুবকের মেরুন জামায়। আপাতত এইটুকু সুখ, আর ভাবনার দু’একটা হৈচৈ—মাথার ভেতর। বাইরে দীর্ঘ শীত। চুমুর অভাবে তার ঠোঁট ফেটে যায়। সারাদিন ঘুরেফিরে তাই, যুবকটি …
একজন জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবেন কেউ গন্তব্য বলে না পাখিরা কোথায় যায় কেউ জানে নিষিদ্ধ পল্লীর পাশ ঘেষে যাত্রীদের কাছে পাখি কেনা-বেচার কৌতুক চলে প্লাটফর্মের আকাশ সীমাবদ্ধ হুইসেলের শব্দে হারিয়ে …
লা দলচে ভিতা ভাসে; যার ভার নেই কোনও, ঘাটও নেই, মান্দাস যেমন, যেন এই দূর থেকে দেখাই আসল। কোথাও থাকার টান রয়ে যাওয়া মানে তার নিজেকেই ভালোবেসে ফেলা; একটি কাচের …
মহা লগ্ন গন্তব্যস্থানে পৌঁছেছি ! তোমার তীক্ষ্ণ চক্ষু অথবা পঞ্চেন্দ্রিয় দেখে না কিছুই আমার এই উত্তীর্ণ হওয়া অথবা পুরাতন জীবন নতুন করে পাওয়া। পৃথিবীর যত প্রেম যত ব্যথা আছে আজ …
স্বপ্ন ঘুম ও জাগার বাইরের যে মুহূর্ত– সেখানটাতে আটকে আছি হাওয়ায় দুলে দুলে শূন্যে ভেসে তোমার বাড়ি পৌঁছে যাই সদর দরজায় আটকে দেয় তোমার ডাবের মতো চোখ আমার কর্নিয়া রিডেবল …
এই নাও দাহ ভেতর কঙ্কাল নেবে? আলোর দহন ঢেউ আলোকিত ভোর কালোর কলঙ্ক গাঁথা তপ্ত বাহুডোর। গুচ্ছ আর পুঞ্জময় বিভক্ত পীরিতি মোমের প্রতিমা শব, প্রসূন প্রতীতি। নেবে? ঐ দীর্ঘ স্বর্ণাভ …
কিডন্যাপ জংলা ফলের শাঁস তুমি বোবা মন গাঁয়ের কিশোরী যেমন বহু হাত ঘুরে পৌঁছোয় অচেনা উপকূলে হাওয়ার টানা গর্জনে জেগে থাকে ভয়ে আলো নিবে গেলে গোঙায় লোহালক্কড়ের অন্ধকারে ঘুম-ঘুম বন্দরের …
মেহেরগড় আদিতে ভারত ভিন্ন প্রস্তর যুগের পৃথিবীর পুরাতন প্রাচীন সভ্যতা; বালুচিস্তানের কাচ্চি, সমতল ভূমি বোলান নদীর পাড়ে কোয়েটা শহর- উচ্ছ্বল দিনের ভাঁজে রোদের ঝকমক। কিলেগুল, মহম্মদ, কোটডিজি গুমনা, মুণ্ডিপাক, মেহের …
নর্দার্ন লাইটস চলো একবার যাই, ঘুরে আসি উত্তরে সম্ভোগ, অনুরাগ, বিরাগ, কিচ্ছু নয়… আকাশ-চেরা রোশনাই খুঁজে রাত্রির পথে কেবল চেয়ে থাকবো দ্যুতি জ্বেলে চোখে রাতের নির্মল আকাশে, অন্ধকার নিবিড় হলে! …
নাও যখন বেরুলাম আমরা, তখন ছিল জোয়ারের সময়। নৌকো বাঁধা হল যেখানে, জল সেখান থেকে অনেক নিচে। নাইয়া বলল, রোসো। সরু ফিনফিনে একটা কাঠের তক্তা সে পেতে দিল একেবারে জেটি …
একলা আগুন এ আগুন একাকিনী, সন্ধ্যার গাউন পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মরণরঙের আলোর ফেরিতে, দাহ্যহাড়লোভী, রাক্ষুসে, বর্ণাঢ্য! ভস্ম করবার বিষ নিয়ে ঘোরে ফেরে, গৃহবিমুখ, নির্জন হারমোনিয়ামের রিডে সুর জ্বলে যাচ্ছে, জ্বলছে …
লকআপ জলমগ্ন জীবন জামদানি আঁচলে ভাসিয়ে দিই—দেয়ালের বুকে পেরেক ঠুকে ঝুলিয়ে দিয়েছি ছবির ফ্রেম! খুনসুড়ি রাতের চোখ গলে সেতারে উঠছে ঝড় সুরের মূর্ছনায়!জানালার পর্দা ভীষণ কাঁপছে জ্বরে বাতাসের শিহরণে—তাতিয়ে ওঠা …
যাপন ভাঙা হারমোনিয়ামের মতো সকাল। ফাটা বাজারে থলে থেকে যেটুকু রোদ্দুর পিছলে পড়ে সেই আমাদের ডাল, ভাত। সকাল দশটার টাইমের জলের মতো সরু হয়ে বিষাদ পড়ে আমাদের বারোয়ারি চানঘরে। কতটা …
ভার একশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি নিষ্ফল গাছ তুমি কি তার কষ্ট বোঝো! অথচ এর পেছনে আজো তার কোনো হাত নেই! তাহলে বন্ধ্যা এ শব্দটি কেমন করে উচ্চারণ করো …
পয়লা বৈশাখ, ১৪২৭ প্রাচীন নগরীর চবুতরায় তিনি কুম্ভকে বহুদিন, চাঁদ ভাসে, সূর্য ডোবে নির্লিপ্ত পরিক্রমায়, আশ্চর্য মহামুদ্রা তার, যেমত প্রস্তর, উদাসীন। নির্বাসিত সেই ছায়ার ভারে ইদানিং গোধূলির চোখ অতিরিক্ত কাজল …
ন হন্যতে বললে, তুমি কী রোমান্টিক! আমি বললাম, রোমাঞ্চকর… তুমি সশব্দে হাসলে। বললাম, তুমি তেতুঁলগাছের ভুতুড়ে হাওয়া। তুমি বললে, ‘হ্যাঁ, তাই তো আমি বুড়ো বটগাছটার শেকড়ে শেকড়ে স্রোতের ছলছলানি’ কিন্তু …
ডায়েরির শায়েরি ফুয়াদ হাসান * আসমান ও জমিনের মাঝখানে যে সব অনুভূতি ঝুলছিল, তাদের কিছু খুঁজে পাবে এখানে। আর কিছু ছেড়া কাগজের টুকরো, দীর্ঘদিন বইচাপা পড়ে শুকিয়ে চেপ্টা হওয়া পাতাসহ …
এক বিকেলে চায়ের কাপে চায়ের কাপে ধোঁয়ার মাপে চুমুক চুমুক সখ্যতা যেনো বিজ্ঞাপনে সুর মেপে আজ একশো বেলুন মুখরতা স্মৃতির সাঁকো নাড়তে থাকো নাব্য গভীর মগ্নতা দুঃখগুলো হাওয়াই ফানুস হুল …
তন্দ্রালোকের অন্তকথা সূর্য উঠে… সূর্য ডোবে…আবার সূর্য উঠে… এই গ্রামে আমাদের বাড়ি সকালের সাথে দেখা হয় বিকালের সাথে খেলি সন্ধ্যা অধিক সুন্দরী বেশিক্ষণ থাকে না… রাত মায়ের মতো, বউয়ের মতো …
মিঠু আর দুগ্গামাঈ ১ দুগ্গামাঈ দেখো ওই হ্যাঁ-পদ্ম না-পদ্ম ভাসে জলে আর জলের দক্ষিণে বালিটিকুরির ধোঁয়া যেদিকে উড়েছে সেই অগ্নি না বায়ু না কোন ঈশানে নৈঋতে ভাঙা ঘর আলো করা …
আয়না সবুজ কুঠার দিয়ে কেটেছি কালো গাছ সবুজ বর্শা দিয়ে গেঁথেছি কালো মাছ সে-কুঠার ঐতিহাসিক, সে-বর্শা চিহ্নের মতো বিস্ময়! তাদের গল্পে দম ফেটে ফেটে অনুনাসিক। পৃথিবীর জাদুঘরে সময়ের কঙ্কাল রাখা …