শামস আল মমীনের তিনটি কবিতা
কেমন আছো তুমি তোমাকে দেখেই বুঝে নিতে পারি তুমি আছো কেমন। আজন্ম দুঃখের নোলক পরে কার্তিকের আকালের মতো ঘুরে ফিরে আসো তুমি। তোমার অ-বলা জিভ অকস্মাৎ রোদ ওঠা আকাশের চেয়ে …
কেমন আছো তুমি তোমাকে দেখেই বুঝে নিতে পারি তুমি আছো কেমন। আজন্ম দুঃখের নোলক পরে কার্তিকের আকালের মতো ঘুরে ফিরে আসো তুমি। তোমার অ-বলা জিভ অকস্মাৎ রোদ ওঠা আকাশের চেয়ে …
গাছের কাছে নদীর কাছে এই কথাটাই জানাতে চাই , জেনে রাখা ভালো : অন্ধকারকে আড়াল করছে সাজানো সব আলো ! এই যে এত আলোর বাহার, আলোর মেদুর স্রোতে বৃক্ষ দেখো …
কুকুরটা বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক কি হয়ে গেল। কিন্তু এটুকু অনুভব করল, একটা বেদনাবোধ যেন সাঁ করে তার পাঁজরের ভেতর দিয়ে ঢুকে গেছে। অবিশ্বাস্য বোবা দৃষ্টি মেলে সে সামনের …
চাঁদ ফোড়ন সাগরে ছিপ ফেলে একদিন চাঁদ ধরেছিলাম, ছোঁ মেরে ঢেউ নিয়ে গেলো চাঁদ, খুব দূরে, যেখানে ডুবে গিয়েছিলো একটি আস্ত মানুষ, সেখানে কি করে এলাম অমাবস্যা হয়ে, জানি না। …
মূল থেকে অনুবাদ: জাভেদ হুসেন বাগানে সব ফুল বিদ্রোহ করলো। গোলাপের বুকে দপদপ করছিল বিদ্রোহ। তার শিরায় শিরায় জ্বলছিল আগুন। একদিন সে নিজের কাঁটা ভরা ঘাড় তুলে, ভাবনাচিন্তা একপাশে সরিয়ে …
মুখ মুখের বিচিত্র ধরন; জিভ দিয়ে স্বাদ নেয় ঠোঁট ভরে চুমু। দাঁত দিয়ে কামড়ে খায় নাক দিয়ে ঘ্রাণ আর চোখ দিয়ে রঙ এ মুখের বিচিত্র শখ; কণ্ঠের ধ্বনি জিভ গলিয়ে …
জর্জিয়া ৪ কাকে সে বলতে পারে? ন্যাগ এবং লভিকে বিশ্বাস করা চলে। কিন্তু তার ভয় একমাত্র টেরেন্স। তাই কোরা সিদ্ধান্ত নিল শুধু তাকেই সে বলবে যে এমন ভাবনার কথা তাকে …
শাহবাগ শেষমেশ কোথাও যাব না। রাক্ষসপুরীর এই দুর্ভেদ্য দেয়াল, প্রহরী, বন্দুক আমাকেও অসুখী করেছে পথের টহল কখনো থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘এত রাতে কুনখানে যাও?’ এর নাম শাহবাগ? আটটা না বাজতেই …
নদীর পাড় ধরে হেঁটে বাড়ী ফিরছিলাম। পড়ন্ত বিকেল, পূর্বী নদীতে মোলায়েম রোদের খেলা ছোট ছোট ঢেউয়ের মাথায়। হঠাৎ করে দৃষ্টি ছড়িয়ে গেল নদী ছাড়িয়ে ওপারে ম্যানহ্যাটনের হর্ম্যরাজির ওপরে। আহা, ভারী …
পাতারপাহাড় ও রক্তবর্ণ হীম বিউটিআপাদের ওই বাংলোর যে কোনো জায়গায় দাঁড়ালে বিস্তর সবুজের দেখা পাওয়া যায়। সেসব সবুজ বর্ণনা করার সাধ্য আমার নাই। যেদিকে তাকাই উঁচা উঁচা পাতারপাহাড়। সেইসব পাহাড় …
মেয়েটা মেয়েটা আসতো মাঝেমধ্যে ছেলেটার খোঁজে। –এমন বললো পুরনো বাড়িওয়ালা। আসতো চোখভরা এক আকাশ মেঘ সাথে করে আচমকা বৃষ্টিতে চৌকাঠ ভিজে যেতো। সেই প্রবল বর্ষণের ভেতরে বিষণ্ণ পা টলোমলো করতে …
জীবন জীবন হলো বাসনা-মাখা সাবান স্নান করব বলে যেই নেমেছি জলে ফসকে গেল হাতের মুঠি গলে! ফিরে যাওয়া তুমি ফিরে গেলে মাতাল হাওয়ার দেশে বাতাসের ফুঁয়ে নবীন পাতার বাঁশী …
কামিনীর ফুলের ইশারা এই কান্না অত দূরে পৌঁছাবে কি, বলো? এই যে পাশের ঘরে যত দূরে কচি কষ্ট বুকে নিয়ে সন্তান ঘুমায় অথবা যতটা দূরে ভেসে যায় বিমানের ইঞ্জিনের ধ্বনি? …
গত কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করছি মানুষের সঙ্গ কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হওয়া মানেই তাদের সম্মুখীন হওয়া। এমনকী ঘরেও আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেন একা হতে …
জর্জিয়া ও’কিফ (Georgia O’Keeffe) আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পীদের অন্যতম এবং বিশ্বে আর্টজগতের এক বিস্ময়। বর্ণাঢ্য শিল্পজীবনের অধিকারী ও’কিফ আর্টজগতকে দিয়েছেন ভিন্নমাত্রার এক শৈল্পিক চেতনা। তিনি অবহেলিত ক্ষুদ্রাকারের ফুলকে বড় আকারের …
চিড়িয়াখানা চিড়িয়াখানায় প্রায়ই যাই বানরের খেলা দেখি, জিরাফের গলা দেখি গন্ডারের নিস্পৃহ দাঁড়িয়ে থাকা দেখি গাছ-গাছালির ভিড়ে সন্ধ্যাদেরও নামতে দেখি। মাঝে মাঝে কিছুই দেখি না কোন বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করি …
আমার নানীর বিয়ে হয় ন’বছর বয়সে! শুনেছি শাশুড়িকে পাননি তিনি। শ্বশুরই তাঁকে মাতৃস্নেহে বড় করেছেন, শাড়ি পরা শিখেছেন, পড়িয়েছেন। হয়ত সে কারণেই আমাদের সমাজের পুরুষদের মতই ছিল তার আত্ম নির্ভরতা …
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় সাদারঙের ‘শেভরোলে’ যখন ছুটতে শুরু করলো, শক্ত করে সিটবেল্ট বেঁধে আমরা তখন আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছি। দুদিকেই আকাশমুখী পাহাড়। ঢালে বৃক্ষ-আচ্ছাদিত ঘনজঙ্গল। নিচে আগাছায় ঘেরা গিরিখাত দিয়ে …
জর্জিয়া ৩ বস্তিতে এবছর সাতজন মেয়ে। সবার বড় মেরী। সে মৃগী রোগী। নোংরা জঞ্জালের মধ্যে পড়ে শরীর মোচড়াচ্ছে বারবার আর মুখ দিয়ে পাগলা কুকুরের মত ফেনা উগরাচ্ছে। চোখদুটো দেখাচ্ছে যেন …
(১) বন ডাকে। কেমন সে ডাক, ভীতিকর নাকি প্রীতিকর, বিকট-বীভৎস নাকি শ্রুতিমধুর, উচ্চগ্রামের নাকি মৃদু লয়ের– এসব বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। এমনই অবর্ণনীয়, ব্যাখ্যাতীত, অব্যক্ত সে ডাক। সময়ও অনির্ধারিত। …
বৃষ্টি থেমে গেছে। অনেকক্ষণ। গাড়ি থেকে নেমে মাধবীলতার ঘন ঝাড় পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই কেমন গা ছমছম করে উঠল। মাধবীলতার ঘ্রাণ ছাড়িয়ে, মাটির সোঁদা গন্ধ টপকে ঘাসের ওপর স্নিকার্স পরা …
উষ্ণ বয়সী ব্ল্যাকবোর্ড সুদীর্ঘ ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে দেখি ছিমছাম এক বাংলো। অত্যন্ত মনোরম আর্কিটেক্টচারে একতলা বিল্ডিং। বাংলোতে ঢোকার মুখে ফুলের বাগান । নানা প্রজাতির ফুলের সমারোহ। একটা ঝুমকোজবা …
একদিন বিকেল শেষ হলে চলে যাব মুক্তপুরুষ। বেদির উপর ফুল ও বেলপাতা পড়ে থাকবে। সিঁদুর রঙের মেঘে লুকিয়ে যাবে দিন। রাতের বিছানা পেতে শোবে সাজু ও রূপাই। হে বাংলা ভাষা, …
দিগন্তে শুকতারা মেঘলা দিনের দুঃখ মাথা ছাড়িয়ে একবারে আকাশ ধরে ফেলে আর তখনই চোখে পড়ে যায় মায়ের রেখে যাওয়া সবুজ নদী গতকাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল আজ সকালে সে জল সাদা …
সংসার গন্তব্য এক হয় না আমাদের, মতের অবস্থা চৌচির। নীরবতার আড়ি পরস্পর, কথার ভিতর থেকে কথা টেনে নিতে তৎপর। কোণঠাসা সোফায় বসা আমার জড়োসড়ো শরীর, পুজোর পাথর… আমরা যেন দু-মেরুর …
সেমি পাকা দেড় কামরার কলোনিতে রোজিনার সংসার। রোজিনা কর্মজীবী। একটি কেজি স্কুলে পড়ায় আর টানাপড়েন সংসারের হাল ধরতে গিয়ে টিউশনিও করতে হয় তাকে। অবসর কি সে জানেনা। ঘরের বদ্ধ হাওয়ার …
হন্টন কুড়িয়ে আনা পাথরের গা থেকে আলাদা করি রোদের ছায়া বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মায়া.. পাথরের ছায়াও পথ আগলে দাড়ায় নূপুর থেকে খসে পড়া নাচের মুদ্রা জড়াই পায়ে। পা তুই কোথায় যবি …
পশ্চিম আফ্রিকায় নভেম্বর শুরুর সকালের বাতাসটা বড় স্নিগ্ধ। যদিও দুপুরের দিকে তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি অতিক্রম করছে তবু রাতে তা নেমে যাচ্ছে পঁচিশ ডিগ্রিতে। গত চারমাস মালির উত্তরাংশের মরুতে বৃষ্টিফোটারা মহার্ঘ্য …
পিতার দৃশ্য জুড়ে রাস্তার দৃশ্য ক্রমশ দূরের দিকে যায় গৃহিপালিতের দিকে চেয়ে থাকার পরিণামগুলি বিকেলের অনভ্যাসে মানবিক হয়ে ওঠে দিন শূন্যতাও চলমান, স্থিরতার স্পর্শে জেগে ওঠে মানুষের হাত থেকে ফুলের …
১. কেউই নও ছিলেওনা কখনো সময় সত্য ২. আমি ছিলেম? বর্তমানই সত্য কেউ থাকেনা ৩. কেঁদেছো মন? শান্তি পেতেও পারো কাঁদছি খুব ৪. সত্য সময়? এখনই সময় শুরু করেছি ৫. …