এক বিকেলে চায়ের কাপে
চায়ের কাপে
ধোঁয়ার মাপে
চুমুক চুমুক সখ্যতা
যেনো বিজ্ঞাপনে
সুর মেপে আজ
একশো বেলুন মুখরতা
স্মৃতির সাঁকো
নাড়তে থাকো
নাব্য গভীর মগ্নতা
দুঃখগুলো
হাওয়াই ফানুস
হুল ফোটানো সভ্যতা
এক বিকেলে
তোমার ছাদে
নামলে কিছু উষ্ণতা
উড়িয়ে দিও
সুতোর প্যাঁচে
আকাশমুখর ঘুড্ডিটা
তোমার আমার
চুমুর হিসাব
চায়ের কাপে কম্পমান
এক বিকেলে
উড়ুক্কু চুল
মেঘের চোখে আটকে থাক
আকাশ আঁধার
রাত্রি হলে
তারায় তারায় স্বপ্ন সাধ
জোছনা স্নানের
গভীর টানে
নীল স্মৃতিতে নিদ্রা যাক
ইচ্ছে পালে
হাওয়ার তালে
জোনাক জ্বলা রাত্রি সাজ
আমার চোখে
একটা জীবন
চন্দ্রাঘাতেই বন্দী থাক
বন্দী থাক
বন্দী থাক
এক বিকেলে চায়ের কাপে
সবটা জীবন
সংগোপনে
মন বাগানে থমকে থাক
বায়োস্কোপের
ফ্রেমের ভিতর
রাঙতা কাগজ রঙিন মোড়ক
ইচ্ছেগুলো
তার ভিতরই
জোছনা বরফ- বন্দী থাক
থ্রো ব্যাক – লাস্ট লাইফ
হতে পারে আজ বিকেলই শেষ
চায়ের কাপে উত্তাপ ফেরি করা সখ্যতার
কুরুশকাঁটায় বুনে যাওয়া জীবন
ফের সূর্যোদয়ের আগেই
হয়ে উঠবে অন্তিম স্পর্শের রেশ
অভ্যাসের বৃষ্টি ফোঁটারা তীরের ফলার মতো
চুমু খেয়ে যাবে পড়শীর চাতালে
শিহরণে কাঁপাবে লেকের তিরতির জল
ভিজে পাতার আড়ালে পাখিরাও
চঞ্চুতে চাখবে উষ্ণতার পূর্বাপর
পঙক্তির গ্রাফিতিতে ঘুঙুর বেঁধে
বৃত্তাকারে ছুঁড়ে দেয়া সিগ্রেটের ধোঁয়ায়
চঞ্চল আঙুলে বিধ্বংসী অভিযান তোমার
কলকল হাসি আর উন্মুল চুলের নৃত্যে
লিখে যাওয়া আপতনসিদ্ধ যুগল-অভিসার
স্মৃতির পাহাড়চূড়ায় ফেলে আসা ভোর
কুয়াশার মতো মিহি বৃষ্টি জলে
স্নানভেজা বুনোফুল ঘিরে মৌমাছিদের
গোল্লাছুট দৌড় প্রখর– লহমায়
ছুঁয়ে যাবে আমার অতর্কিত প্রস্থান প্রহর
চলে গেলে কতোখানি টিকে থাকে লোক
রোজ রোজ একটু করে নীরবে দেখুক
টবের গাছগুলো অবহেলায় তখনো বাড়ুক
অকস্মাৎ ধুলো ঝাড়তে পুরোনো বইয়ের মতো
কালেভদ্রে কারো নয় ভুল করে কাউকে মনেই পড়ুক
জীবন যখন কত্থক
টেবিলে চায়ের কাপে মেলে রাখা
রতিহীন বসবাস অভ্যাস উত্তাপ
প্রাইমটাইম সিরিয়াল অবিরাম
শব্দবাজ হয়ে উঠলে বাস ট্রাম
চেঁচিয়ে শহর থমকে দ্যায় অকস্মাৎ
নেভানো নিয়নের আড়ালে ছায়া
ফিশফিশ করে বলে ওঠে
দ্রুত ধরো হাত বেদনার
নতুবা জেনো তা হয়েছে বেহাত
সাথে নিয়ে যাবে সুখ এমন কি
জমানো স্মৃতির বাঁধাই ছবিটা
যেতে দেরি হলে পাখিরাও
আলসেতে বসে না বিকেলে
তবু দেখা হয়ে গেলে অকস্মাৎ
বৃষ্টির পরে ভেজা ময়দানে
শ্যাওলা ওঠা কংক্রিট বিছানো
পথে অনুক্ত খেয়ালে বৃষ্টিভেজা
আকাশের নীচে মুঠোয় মুঠোবন্দী
অতীত দৌড় দ্যায় বর্তমান
সাথে নিয়ে পায়ে পায়ে
পথে জমে থাকা বৃষ্টিজল ডিঙিয়ে
এক ছুটে সিথানের ভাঁজ লাগা
হাত ছুঁয়ে দরোজায় এঁটে যায় খিল
পথ পড়ে থাকে পথের সীমানা জুড়ে
মৃত জোনাকিরা বিড়বিড় করে–
খুচরো পয়সার গহনায় গড়েছো
অচল আলোয়ান নকশা
সব ফেলে এলে, সব, উৎসব হুল্লোড়
বাতিল ফোনের মেমোরি সেলের
পরতে পরতে জমা ছবি শখ সাধ
একাকি ছুঁয়ে দেখা নির্লজ্জ আহলাদ,
কুয়াশার মতো হেঁয়ালি যাপনে
আবিষ্কার করলে অপার সত্য;
দু:খের সাথেই শুধু জীবনের
থাকে যেনো সর্বাধিক অন্তমিল।
লুৎফুল হোসেন
কবি, প্রকাশক ও সাহিত্যকর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। বিভিন্ন রকমের পোর্টাল ও পত্রিকায় নিয়মিত গল্প, কবিতা, ফিচার, প্রবন্ধ এবং গান লিখছেন। বাংলাদেশের লিটলম্যাগ ও নানা প্রকাশনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন সেই ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই। শৈল্পিক মননশীলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলছেন তার নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘রচয়িতা’।