ইউ আর দ্য রিজন গড মেড ওকলাহমা
ঝকঝকে তকতকে বিশাল ওকলাহমা সিটি আর নরম্যান নামের ছোট্ট শহর। যেখানেই যাচ্ছি ঝাঁ চকচকে অফিস, ঠাঁটবাট দেখে চোখ ট্যারা হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ওকলাহমার বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ওকলাহামানস এর অফিসে। এটাও খুব চকচকে অফিস। কিন্তু প্রবেশপথের কাছেই বড় বড় কাগজের রোল। হাজারহোক পত্রিকা অফিস। একটু এলোমেলো না হলে কি চলে। সাংবাদিকদের টেবিলেও দেখলাম চিরপরিচিত বক্সফাইল, লেখার স্তূপ। কয়েকজন সাংবাদিকের টেবিল একটু এলোমেলোও। পত্রিকা অফিস মানেই নতুন ছাপা পত্রিকার সুবাস, কম্পিউটারে পেজ মেকআপ। কথা হলো ওদের ফিচার এডিটর, লাইফস্টাইল পেজের এডিটর, নিউজ এডিটর ও চিফ রিপোর্টারের সঙ্গে। মনেই হলো না অজানা, অপরিচিত মানুষ। সাংবাদিকতা পেশাটাই এমন। একই ধরনের আলাপ, চিন্তাচেতনা।
তখন বুশ প্রশাসনের আমল। কিন্তু যে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ হলো তারা মোটেই বুশের সমর্থক নন। খোলামেলাভাবেই সরকারবিরোধী কথাবার্তা বললেন। নিউজরুমটিও ঘুরে দেখালেন। ডেস্কে সেই একই রকম ব্যস্ততা আর ফিচারে কিছুটা রিল্যাক্স আমেজ। সন্ধ্যায় আমাদের দেশের মতোই ওদেরও পত্রিকা অফিসে ব্যস্ততার শুরু। তবে আলাপ করে মনে হলো, আমাদের দেশের সাংবাদিকদের মতো ওদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় না। আর আমাদের পত্রিকাগুলোর মাসের পর মাস অনিয়মিত বেতন ওদের কাছে অকল্পনীয়।
দ্য ওকলাহামানস বড় পত্রিকা। ওই অফিসের ঠাঁটবাট তাই অনেক বেশি। কিন্তু দ্য নরম্যান ডেইলির অফিস একটু ছোটখাটো। সাধারণ। সেইসূত্রে আরও বেশি আপন। দ্য নরম্যান ডেইলি মফস্বল পত্রিকা। ছোট অফিসে ওয়ার্কস্টেশন রিপোর্টারদের জন্য। ডেস্কে কাজ করছেন কয়েকজন। ফিচার এডিটরের ঘরটা ছোট্ট। ভদ্রমহিলার সঙ্গে ভালো আলাপ জমলো। তখন সামনে হ্যালুইন। ওরাও পাতা পরিকল্পনা করছেন হ্যালুইন নিয়ে। খাবার দাবার, সাজপোশাক, ঘর সাজানো, লাইফস্টাইল পেজের যা কাজ আরকি। আইডিয়া শেয়ার করতে করতে ভাবছিলাম, পত্রিকার জগতটা চলে মোটামুটি একই চিন্তাভাবনায়। তবে হ্যা, এই ছোট্ট মফস্বল পত্রিকারও সাংবাদিকরা হাইলি পেইড। ওদের পত্রিকাগুলো অবশ্য অনেক বেশি পাতার। প্রচুর পাতা, প্রচুর বিজ্ঞাপন।
চ্যানেল ফোর নামে একটি টিভি চ্যানেলেও গেলাম আমরা। এটি পুরোপুরি ঝাঁ চকচকে মিডিয়া হাউজ। বিশাল সব স্টুডিও। নিউজ প্রচার হয় যে স্টুডিও থেকে সেটির ঠাঁটবাট দুর্দান্ত। এই চ্যানেলের নিজস্ব হেলিকপ্টারও আছে।
সংবাদপত্র ও মিডিয়া জগতে আমাদের অভিজ্ঞতা আর ওদের অভিজ্ঞতার বিনিময় হয়। ডিজাস্টার বা দুর্যোগ সাংবাদিকতা নিয়ে সেশনের পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি জাদুঘরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কিভাবে কাভার করতে হয় সেটা হাতে কলমে দেখানো হয় এখানে। বহু বছর পর আমাদের সিডর এবং রানা প্লাজার ঘটনার কাভারেজ দেখে বারে বারে মনে পড়ছিল ওকলাহমায় শেখা বিষয়গুলো। দুর্যোগ সাংবাদিকতার মূল বিষয়ই হলো জনগণকে সঠিক তথ্য দিতে হবে কিন্তু প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না। আমাদের দেশে প্রায়শই এর উল্টোটা ঘটে।
আমাদের দেশে কর্মজীবী নারীদের একটি প্রধান সমস্যার নাম ডে কেয়ার সেন্টারের অভাব। শিশু সন্তানকে কোথায় রেখে যাব সেটি বাংলাদেশের কর্মজীবী মায়েদের প্রধান সমস্যা। এই কারণে অনেক মেয়ে চাকরিও ছেড়ে দেয়। এই সমস্যার সমাধান ওকলাহমায় কিভাবে করা হয়েছে সেটি দেখতে আমরা গেলাম একটি ডেকেয়ার সেন্টারে।
এখানে একেবারে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে একটু বড় শিশুদের সারাদিনের বা অল্প সময়ের জন্য রাখা হয়। কি যে চমৎকার পরিবেশ এই ডেকেয়ার সেন্টারটির। বেশ বড় জায়গা নিয়ে খোলামেলা একটি ভবন। কাঠের বাড়ি। সামনের লনে সবুজ ঘাসে খেলা করতে পারে শিশুরা। নানা রকম রাইড রয়েছে, রয়েছে ছোট্ট সুইমিং পুল। সুইমিং পুলের একপাশে বালি। সেখানে বসে ছোট্ট দুটি শিশু বালি দিয়ে একটা বাড়ি বানাচ্ছে। দোলনায় দুলছে কয়েকজন। সবই একেবারে ছোট্ট। ‘টডলার’ যাকে বলে। আরও ছোট বাচ্চাদের রাখা হয়েছে একটি ঘরে। ওরা কয়েক মাসের। ওদের দোলনায় রাখা হয়েছে।
এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শিশুদের যত্ন নেওয়া হচ্ছে যে দেখে ভীষণ ভালো লাগে। একটু বড় শিশুও ছিল। যারা স্কুলের শিশুশ্রেণিতে পড়ে। ওরা এখানেই কিছু কিছু লেখাপড়া করছে। সন্ধ্যায় বাবা মা নিয়ে যাবে ওদের। প্রতিটি শিশুই সুন্দর, ফুটফুটে আর স্বাস্থ্যবান। কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, রেডইন্ডিয়ান, এশীয় বংশোদ্ভুত সব রকম শিশুই রয়েছে। ওরা বেশ মিলে মিশে আছে এখানে। ওদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। ওরা বর্ণবাদ বোঝে না। এই শিশুদের দেখে মনে পড়লো অনেক আগে শোনা একটি গানের কথা। ‘ইউ আর দ্য রিজন গড মেড ওকলাহমা’। গানটি শুনেছিলাম সেই আশির দশকে স্কুলে পড়ার সময়। এতদিনে ওকলাহমায় এসে মনে হলো এই নিষ্পাপ শিশুদের কলহাস্যে মুখরিত ওকলাহমা সত্যিই বড় সুন্দর।
ওকলাহমায় একটুকরো বাংলাদেশ
আমার চাচাতো বোন নীলুফার সাফিয়া। প্রায় কুড়ি বছর পর তার সঙ্গে দেখা হলো। না, কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে নয়। দেখা হলো ওকলাহমায়। নীলা আপা আমেরিকায় আছেন ১৯৭০ সাল থেকে। তার সঙ্গে যোগাযোগ খুবই কম, সময়ের স্বাভাবিক নিয়মেই।
আমি ওকলাহমায় যাচ্ছি শুনে তাঁর সহোদর আমার বড় চাচাতো ভাই আবু রুশদ রুশো কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে এলেন নীলা আপাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সেই সূত্র ধরেই ম্যারিয়টস ইন এ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন নীলা আপা। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে শাহনাজ মুন্নী ও অন্যদের বেশ ভাব জমে উঠলো। আমাদের কয়েকজনকে তিনি একদিন ডিনারে নিমন্ত্রণ করলেন। তিনি নিজে যদিও আমেরিকান খাবারেই বেশি অভ্যস্ত কিন্তু আমাদের রুচির কথা চিন্তা করে তিনি মোগলাই খাবার পাওয়া যায় এমন একটি রেস্টুরেন্ট পছন্দ করলেন। ওকলাহমায় তার ভারতীয় ও বাংলাদেশী বন্ধুদের এই রেস্টুরেন্টেই আপ্যায়ন করেন। এখানে তিনি বেশ পরিচিত একজন ভ্যালুড কাস্টমার।
রেস্টুরেন্টটির নাম মিশাল। পাকিস্তানি আর বাঙালির যৌথ মালিকানায় চলছে এই রেস্টুরেন্ট। শুধু চলছে বললে ভুল হবে, রীতিমতো দৌড়াচ্ছে। আর এই চলার মূল কৃতিত্ব হলো রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফের। এইখানেই হলো আসল গল্প।
স্থানীয় আমেরিকানরা মিশালের মোগলাই ডিশের দারুণ ভক্ত। এদের শিস কাবাব(চিরদিনের চেনা শিক কাবাবকে শিস কাবাব বলায় আমি এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি), চিকেন টিক্কা, বিফ ও ল্যাম্ব রোস্ট, বিরিয়ানি, কিমা পুরি, নান, নারগিসি কোফতা ইত্যাদি ডিশের নাকি তুলনা হয় না।
রেস্টুরেন্টটা বেশ বড়। সুন্দর করে সাজানো। জাফরিকরা কাঠের আসবাবে সাজানো। পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট শুনে প্রথমেই একটা বিরক্তির ভাব জেগেছিল। কারণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তান শব্দটির প্রতি আমার দারুণ অ্যালার্জি আছে। পাকিস্তানি কোনো রেস্টুরেন্টে বা দোকানে আমি কখনও যাই না। কিন্তু বিদেশে অনেক কিছুই মেনে চলা যায় না। তাছাড়া এটার তো আবার অর্ধেক মালিকানা বাঙালির।
খেতে বসে বিরক্তি কিন্তু কমছিল। রান্নাটা সত্যিই ভালো। দেখলাম নীলা আপা এখানে বেশ আদরণীয়। তাকে ভালোই খাতির করা হচ্ছিল। এক ফাঁকে আমি মন্তব্য করলাম যে, খাবারটা বেশ ভালো। নীলা আপা বললেন, বাঙালি ছেলে ভালো রান্না করছে। বাঙালি শেফ? আমার প্রশ্ন। এবার শুনলাম তার গল্প। বুয়েট থেকে পাশ করা প্রকৌশলী তিনি। আমেরিকায় এসে এখানে শেফের কাজ করছেন অনেক বছর ধরে। কিন্তু দেশে আত্মীয় পরিচিতদের সে কথা বলেননি। শেফের চাকরিতে তার রোজগার প্রচুর। পাশ্চাত্যে শেফ একটি ভালো প্রফেশন। এদের দারুণ কদর। বেতনও অনেক অনেক বেশি। হলে কি হবে, বাঙালির মনমানসিকতা আছে না? যদি কেউ জানে তিনি আসলে প্রকৌশলীর পেশা ত্যাগ করে শেফ হয়েছেন তাহলে নাকি তার মান সম্মান কিছুই থাকবে না। ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হলো। প্রথমে সামনে আসতে চাননি। পরে নীলা আপার অনুরোধে আমাদের সামনে এলেন। যে রাঁধে সে যেমন চুলও বাঁধে তেমনি যে রাঁধে সে দেখতেও সুদর্শন হতে পারে অনায়াসেই। ভদ্রলোক দেখতে সত্যিই ভালো। বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন যেন তার নাম ও পরিচয় কোনোভাবেই ফাঁস না হয়।
নীলা আপা নরম্যান শহরেই থাকেন। এখানে বেশ কয়েকটি বাঙালি পরিবার রয়েছে। বেশিরভাগই ওকলাহমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। কেউ শিক্ষক, কেউ ছাত্র বা গবেষক।
এরা সকলে মিলে একদিন এক পার্টির আয়োজন করলেন আমাদের জন্য। আমাদের মধ্যে শাহনাজ মুন্নী সবচেয়ে পরিচিত মুখ। ওখানে তার বেশ অনেক ভক্তও রয়েছে। অনেকেই তার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত।
পার্টির খাবারের আয়োজন করেছেন সব বাঙালিরা মিলে। বিরিয়ানি, মাংসের রেজালা, মুরগির রোস্ট, পুডিং এমনকি বোরহানিও বাদ পড়েনি। রান্নাও করেছেন সবাই মিলেই।
এখানে বেশ কয়েকজন আছেন যাদের স্ত্রী আমেরিকান। আজকের দিনটিতে তারাও বেশ শাড়ি পরে এসেছেন। বাংলাতেই গল্প হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাংলা গানও শুরু হলো। গান, গল্প, আড্ডার ফাঁকে এক শ্যামবর্ণা সুন্দরী আমাকে বললেন, চিনতে পারছ? আমি চেষ্টা করেও মনে করতে পারছিলাম না, উনি সূত্র ধরিয়ে দিলেন। ওর ছোটবোন আমার খালাতো বোনের সঙ্গে আমাদের ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের এক ক্লাসে পড়তো। ও যদিও অন্য স্কুলের ছাত্রী ছিল কিন্তু বোনকে আনতে নাকি প্রায়ই ইউল্যাবে যেত। তখন আমাকেও দেখেছে। ক্ষীণ সূত্র সন্দেহ নেই। ঢাকায় হলে এমন ক্ষীণ সূত্রের উল্লেখ করাই অবান্তর বলে মনে হতো। কিন্তু এখানে, এই বিদেশে ওর আমাকে খুব আপন বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ও এখানে এসেছে স্বামীর হাত ধরে। অন্যদিকে আমি হলাম ওর ছোটবোনের পরিচিত। সে হিসেবে ওর বাবার বাড়ির লোক। আমার মনে হলো মেয়েটি এই ক্ষীণ পরিচয়ের সূত্র ধরে যেন স্পর্শ করতে চাচ্ছে নিজের হারিয়ে যাওয়া কিশোরবেলাকে।
গান, গল্প চলছে। এই আড্ডার অধিকাংশই আমার অপরিচিত। ঢাকায় হলে এমন বোরিং পার্টিতে আমি এক ঘন্টার বেশি কোনোক্রমেই থাকতাম না। এখানে কিন্তু মোটেই বোরিং বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এই আড্ডায় আছে দেশের স্পর্শ। আমরা না হয় এসেছি মাত্র কিছুদিনের জন্য। কিন্তু ওরা আছেন অনেকদিন ধরে। আছেন জন্মভূমি থেকে, মাতৃভাষার ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে। ওদের কাছে আমরা নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের শ্যামল মাটির সৌরভ। ওদেরকে যেমন আমার কাছে আপন বলে মনে হচ্ছে তেমনি তারাও আমাদের মাঝে আপনজনেরই ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের কাছে ওরা আর ওদের কাছে আমরাই তো একটুকরো বাংলাদেশ।
প্রোফেসর জো ফুট: ওকলাহমার আইকন
এমন কয়েকজন মানুষ আছেন যাদের সঙ্গে পরিচয় হলে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হয়। তেমনি একজন মানুষ প্রোফেসর জো ফুট। তিনি ওকলাহমা বিশ্ববিদ্যালয়ের গে লর্ড কলেজ অফ জারনালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন এর চেয়ার পারসন। প্রফেসর জো ফুটের সঙ্গে প্রথম দেখা ঢাকায়। ঢাকায় তখন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ছিলেন হ্যারি কে টমাস। তাঁর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে আলাপ হলো জো ফুটের সঙ্গে। পরে আবার দেখা হলো আমেরিকান সেন্টারের পরিচালক পল সেবরার বাড়িতে। আমার সঙ্গে আলাপের পর জো ফুট বলেছিলেন একজন মুসলিমের নাম শান্তা মারিয়া? তোমার কথা আমি কখনও ভুলবো না। তিনি সত্যিই ভোলেননি। ওকলাহমার প্রোগ্রামে আমার নামটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
ঢাকা থেকে লম্বা পথ উড়ে যখন ওকলাহমায় পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় দশটা। এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশন দিয়ে বের হয়েই চোখে পড়লো প্রবীণ অধ্যাপকের সৌম্য মূর্তি। তিনি যখন সাদরে আমাদের সম্ভাষণ করলেন অর্ধেক ক্লান্তি যেন নিমিষে উধাও হলো। লাবণ্য কাবিলীর লাগেজ ঠিকঠাক মতো পৌঁছায়নি। জো ফুট সেসব ক্লেইম করার ব্যবস্থা করে আমাদের সঙ্গে নিয়ে পৌঁছালেন ম্যারিয়টস ইনে। অবাক হয়ে দেখলাম জো ফুট নিজেই আমাদের লাগেজ গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন। যার যার রুমে পৌঁছে দিচ্ছেন। এটুকু না করলে কিছুই হতো না। কিন্তু এটা শুধু ভদ্রতা নয়, আন্তরিকতার প্রকাশ। আমি পরে প্রফেসর জো ফুটের প্রোফাইল দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম তার যোগ্যতা ও পাণ্ডিত্যের বর্ণনায়। বর্ণাঢ্য তাঁর ক্যারিয়ার। তিনি ওকলাহমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভারসিটিতে তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট রোটারি ফেলো ছিলেন। তিনি অ্যারিজনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগেরও প্রধান ছিলেন। তাঁর জন্ম অবশ্য ওকলাহমাতে।
এই পণ্ডিত মানুষটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছেন প্রচুর। অনেক রাষ্ট্রীয় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেক উচ্চ পদেও নিজের যোগ্যতা ও মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস নিয়েছেন।
প্রফেসর জো ফুট একদিন আমাদের সবাইকে তাঁর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলেন। সেখানে শুনলাম তার প্রেম, বিয়ে ও গার্হস্থ্য জীবনের গল্প। হাইস্কুলে পড়ার সময় জোডি নামে এক টিন এজ মেয়ে তার হৃদয়হরণ করে। সেই মেয়েকেই বিয়ে করেন তিনি। এবং ত্রিশ/চল্লিশ বছর ধরে সেই নারীই তার গৃহলক্ষ্মী। জো এবং জোডির তিন সন্তান। জ্যাকসন, জ্যান এবং জোয়ি। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে সন্তানরা বড় হয়ে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংসারে এখন চিরদিনের সঙ্গী জো আর জোডি। ক্রিসমাসে, থ্যাংকস গিভিংসে সন্তানরা ফেরে বাবা-মায়ের কাছে। জোডি শোনালেন জো ফুটের তারুণ্যের গল্পও। জো ফুট নাকি ছিলেন বেশ কাউবয় গোছের দুরন্ত তরুণ। ঘোড়া চালানোতে দক্ষ। পাশাপাশি লেখাপড়াতেও ভালো ছাত্র। জোডির জীবনেও জো-ই প্রথম ও একমাত্র পুরুষ। আমি অবাক হয়ে তাদের এই প্রেম ও মধুর দাম্পত্যের কাহিনী শুনছিলাম।
আমেরিকানরা তো শুনেছি সকালে বিয়ে হলে বিকালে ডিভোর্সের চিন্তা করে। সেখানে এমন দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন সত্যিই বিষ্ময়ের। কিন্তু জো এবং জোডি জানালেন এমন দীর্ঘ ও সুখী দাম্পত্য আমেরিকাতেও বিরল নয়। যে বিয়েগুলো ভেঙ্গে যায় সেগুলো নানা রকম কারণে ভাঙ্গে ঠিকই কিন্তু যেগুলো টিকে যায় সেগুলো সত্যিকারের ভালোবাসাকে ধারণ করে বলেই টেকে। কারণ ওদেশে ‘ভান করা ভালোবাসার’ কোনো প্রয়োজন নেই। নীতির সঙ্গে আপোষ করে, সমাজের কারণে বিয়ে টেকানোর দরকার পড়ে না। মৃত সম্পর্ককে অযথা টেনে নেওয়ারও দরকার নেই। যে সম্পর্কগুলো সজীব রয়েছে সেগুলোই টিকে থাকে।
আমিও বিষযটি নিয়ে একটু ভাবলাম। আমাদের দেশের নারীরা সাধারণত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে স্বামীর ও শ্বশুরবাড়ির প্রচুর নির্যাতন সহ্য করেও মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো, কে খাওয়াবে এই নির্ভরশীলতায় স্বামীর অনেক অন্যায় মুখ বুজে মেনে চলে। এই মেনে চলা বা সয়ে যাওয়ার নাম তো ‘বিয়ে’ হওয়া উচিত নয়। এটা প্রতিমুহূর্তের অপমান ও যন্ত্রণা। আমেরিকান নারীর তো এই যন্ত্রণা সহ্য করেও বিয়ে নামক দাসত্বটি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেলে ওরা বিয়েটাকেও সহমরণে পাঠায়। আর যে বিয়েগুলো টিকে আছে সেগুলো প্রবল ভালোবাসা বহমান আছে বলেই রয়েছে।
জো ফুটের বাড়িতে আমরা একটি কালচারাল নাইট উপহার দেই সেদিন। বাংলা গান, নাচ তো হয়ই। বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে একটি ছোট্ট ফ্যাশন প্যারেডেরও আয়োজন করি। সেদিন আমি পরেছিলাম টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, নকশী চটিজুতো (আড়ং এর), মাটির গয়না, কাঁচের চুড়ি। এগুলোর পরিচয় দেওয়ার পর বললাম ‘অল আর মেড ইন বাংলাদেশ ইনক্লুডিং মি’।
সেদিন জো আর জোডি আমাদের ওকলাহমার ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার খাইয়েছিলেন। জোডি বললেন প্রতিটি ডিশ জো আর তিনি মিলে তৈরি করেছেন। অনভ্যস্ত রুচিতে অন্যান্য খাদ্য মোটামুটি লাগলেও অপূর্ব লেগেছিল কেক আর আইসক্রিম। দুটোই নাকি বাড়িতে তৈরি।
শুধু বাড়িতে ডাকাই নয় যতদিন আমরা ওকলাহমায় ছিলাম জো ফুট নিজে আমাদের সুখ সুবিধা তদারকি করেছেন। আমাদের কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে কিনা তার খোঁজ খবর নিয়েছেন প্রতিদিন অতি আন্তরিকভাবে। প্রায় আশি বছর বয়সী এই মানুষটি অন্তরে চির তরুণ। আমাদের সঙ্গে মজার আলোচনাতেও অংশ নিতেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ওকলাহমা থেকে যেদিন চলে আসি সেদিন আমাদের পৌঁছাতে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন জো ফুট। তাঁর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমি এই প্রবীণ শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। তিনি চমকে উঠেছিলেন। আমি বললাম, স্যার আমাদের দেশে এটাই সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের রীতি। আপনাকে শ্রদ্ধা না জানালে আমি শান্তি পেতাম না।’
প্রফেসর জো ফুট আমার দেখা ভালো মানুষদের অন্যতম। এই লেখার মাধ্যমে তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। সেই সঙ্গে কামনা করি তাঁর দীর্ঘ জীবন।
হেমন্তের পাতাঝরা দিন
ওকলাহমায় বেশ কিছু খনি আছে। খামার ও কৃষির জন্যও এই স্টেট বিখ্যাত। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওকলাহমা স্টেট ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের একদিন নিয়ে যাওয়া হলো এই স্টেট ফেয়ার দেখতে। শহরের ভিতরেই বিশাল মাঠে তাঁবু পড়েছে। সার্কাসের তাঁবুও রয়েছে। এটা হলো ফেয়ার আর কার্নিভাল। ওকলাহমার ঐতিহ্যবাহী এই মেলা।
বিশাল বড় মেলা। এখানে কৃষিপণ্য, খামারের পশুপাখি প্রদর্শিত হচ্ছে। তার পাশাপাশি আছে আদিবাসীদের অনেকগুলো স্টল। এসব স্টলে নেটিভ আমেরিকান বা রেড ইন্ডিয়ানদের তৈরি নানা রকম ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ড্রিম ক্যাচার তো আছেই ছোট বড় অসংখ্য নকশায় আর আকারে, আরও আছে আদিবাসীদের অলংকার, পোশাক, হেয়ার ব্যান্ড আর নানান রকম শোপিস। খেলনা আর পোশাকের স্টলেরও কমতি নেই। সেই সঙ্গে আছে মজার মজার খেলার স্টল। কোনটাতে হয়তো লক্ষ্যভেদের খেলা। তীর ছুঁড়ে ঠিক জায়গায় পাঠাতে হবে। কোনোটাতে হয়তো একটি লাঠির মাথায় রিং পরাতে হবে, কোথাও বল ছুঁড়ে লক্ষ্যে পাঠাতে হবে। কোথাও আবার জলপিস্তল দিয়ে লক্ষ্যভেদ। পুরস্কার কোথাও টেডি বিয়ার কোথাও অন্য কোনো সফট টয়েজ। সবগুলো খেলাই দারুণ মজার। ছোট বড় রঙিন তাঁবুর নিচে চলছে এসব খেলা। কোনো কোনো তাঁবুতে ভাগ্য দেখার খেলাও চলছে। বড় কাঁচের গোলক সামনে নিয়ে বসে আছে জিপসি সাজের নারীরা। তারা ওই ক্রিস্টাল গোলকে আমাদের অতীত ভবিষ্যত সব দেখে আগাম বলে দিতে পারবে।
আরও আছে অনেক রকম রাইড। একটি বিশাল ফেয়ার হুইল রয়েছে। আছে রোলার কোস্টার, নাগরদোলা, মেরি গো রাউন্ডসহ নানারকম রাইড। কোনটি বিপদজনক আবার কোনটা নেহাতই নিরীহগোছের। আমরা চড়লাম একটি রাইডে। এটি হলো বেজায় উঁচু একটি টাওয়ারের মাথায় চড়া। কাঁচের লিফটের মতো বড় বড় প্রকোষ্ঠ রয়েছে। সেগুলোতে চড়লে ধীরে ধীরে টাওয়ারের মাথায় উঠতে থাকে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ভয় পাবো। অত উঁচুতে চড়লে মাথা ঘুরবে। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম বেশ মজার। এত ধীরে ধীরে লিফট ওঠে যে মোটেই সমস্যা হয় না। উপর থেকে পুরো ওকলাহমা শহরটা দেখা যায়।
মজাদার আরো একটি রাইডে চড়া হলো। আমাদের শিশুপার্কের স্বপ্নপুরীর মতো অনেকটা। এরপর গেলাম কৃষিপণ্য প্রদর্শনী দেখতে। গ্রীষ্মে ক্ষেতে যেসব সবজি ফলেছে সেগুলোও রয়েছে এখানে। বিশাল আকারের সব কুমড়া দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ। ফুলকপির সাইজ কি! বেগুনও হাতি মার্কা। বেগুনকে ওরা বলে এগপ্ল্যান্ট। কিন্তু এখানে গোল বেগুনের যেমন বড় আকার তাতে অনায়াসে তাকে এলিফ্যান্ট প্ল্যান্ট বলা চলে। ভুট্টারও আকার কিছু কম নয়। টমাটোগুলো তো টেনিস বলের সাইজ। আর পেঁয়াজ এত বড় যে মনে হয় কারও মাথা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলে মাথা ফাটবে। আলু দেখলে মনে হয় পাঁচ নম্বর ফুটবল। মনে মনে বলি আমেরিকানরা যেমন লম্বা চওড়া তেমনি তাদের সবজি।
বিশাল মেলা। হেঁটে হেঁটে মেলা দেখছি। মজা পাচ্ছি। কিছুক্ষণ হাঁটার পর খিদে পেয়ে গেল বেজায়। আসলে কিছুক্ষণ নয়, আমরা প্রায় দুই ঘন্টার মতো ঘুরছি এই মেলায়। কিছু খাওয়া দরকার। খাবারের স্টলের অভাব নেই। হটডগ, আইসক্রিম, আপেল পাই, স্মোকড টার্কি, স্মোকড বিফ, বার্গার, অভাব নেই কোনো কিছুর।
কে কী খাবে সে বিষয়ে একমত হওয়াই মুশকিল। দশজনের দশরকম রুচি। আমি আইসক্রিম খেতে উদগ্রিব। অন্যদিকে কারও আবার গলায় ব্যথা। শেষ পর্যন্ত সাব্যস্ত হলো আলুভাজা। না ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নয়। আলুর প্যাচানো রিং চিপস। পুরো আলুটাই একসঙ্গে কেটে ডুবো তেলে ভাজা। আমাদের সামনেই রীতিমতো ম্যাজিক দেখানোর ভঙ্গীতে একটি আস্ত আলু নিয়ে বিশেষ এক ধরনের ছুরি দিয়ে কাটলেন বিক্রেতা। এই মোড়ানো আলুর চিপস বেশ কয়েকটা কিনে ঘাসের ওপর বসে পড়লাম হারাধনের দশটি ছেলে। দারুণ মজার ছিল সেই আলুভাজা। এক ডজন আলু নিমেষেই খতম।সব মিলিয়ে ওকলাহমা স্টেট ফেয়ারের সেই বিকেলটি ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর।
ওকলাহমায় ফুটবল খুব জনপ্রিয় খেলা। এই ফুটবল অবশ্য আমাদের ফুটবল নয়। এটি হলো আমেরিকান ফুটবল বা রাগবি। আমাদের দশজনকে একদিন লাঞ্চে নিমন্ত্রণ জানালো ওকলাহমার নারী ফুটবল টিম। সেখানে দলটির প্রধান এক চমৎকার বক্তব্য রাখলেন। তার বক্তব্যের সারমর্ম ছিল কোনো কিছুতে কখনও হতাশ হতে নেই। ফুটবলের মূল প্রেরণা শুধু দল বেঁধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলাই নয় সেই সঙ্গে নিজেও তারকার আলো নিয়ে জ্বলে ওঠা। একই সঙ্গে দলকেও জিতাতে হবে আর নিজেকেও মেলে ধরতে হবে। এই জয়ের পথে সব বাধা ডিঙিয়ে, সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কখনও কখনও বাধা এড়িয়েও যেতে হয়। অনেক সময় বাধা দূর করতে গেলে সময় নষ্ট হয়। তখন বাধাকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই কথাগুলো শুধু ফুটবল টিমের বেলাতেই নয়, জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাধা জয় করে এগিয়ে যাওয়া, সংগ্রাম করে টিকে থাকা আর বন্ধুদের ও নিজের জন্য জয়কে ছিনিয়ে আনা এটাই জীবন। আর জয়ের পাশাপাশি পরাজয়কেও মেনে নিয়ে পরবর্তি খেলার জন্য, পরবর্তি সংগ্রামের জন্য নিজেকে ফিট রাখা, মনোবলটা ধরে রাখাই জীবন।
ওকলাহমার পাতাঝরা দিনগুলো আমাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছে। অনেক বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু ওকলাহমার দিনগুলো, প্রফেসর জো ফুট ও সফরসঙ্গীরা প্রত্যেকেই স্মৃতির ফোল্ডারে এখনও সজীব।
শান্তা মারিয়া
২৪ এপ্রিল, ১৯৭০ ঢাকায় জন্ম।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহমা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় নারী নেতৃত্ব বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
১৯৯৭ সালে দৈনিক মুক্তকণ্ঠে সাংবাদিকতা শুরু। এরপর জনকণ্ঠ, আমাদের সময়, রেডিওআমার ও চীনআন্তর্জাতিক বেতার এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম-এ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ আমাদের সময় পত্রিকায় ফিচার এডিটর পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে চীনের ইউননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার শিক্ষক। পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটসহ মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে পেপার উপস্থাপন করেছেন। কবিতা, গল্প ও ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। এ পর্যন্ত ৫টি কাব্যগ্রন্থসহ ১২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, চীন, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল এবং বাংলাদেশের প্রায় সবক’টি জেলায় ভ্রমণ করেছেন। জ্ঞানতাপস ভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৌত্রী ও ভাষাসৈনিক এবং বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী মুহম্মদ তকিয়ূল্লাহর কন্যা। ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। মিথোলজি ও ইতিহাসপাঠ শান্তা মারিয়ার প্রিয় নেশা।