চার
কেন্দ্রীয় নেতা সাবু ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে দ্রূত পার্টি অফিসে ফিরে এসেছে জামান !
জনদরদী সাম্যবাদি দলের চেয়ারম্যান মফিজুল্লাহ স্বপন গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। সাধারণ সম্পাদক ফারুক মেহেদি (চায়না ফারুক ) উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আবির হাসানের দিকে । জামানের ফোন পেয়ে ইউনিভার্সিটিশাখার কয়েকজন কর্মীও এসেছেন। পার্টি অফিস জমজমাট। সবাইকে চা দিচ্ছে মতি মিয়া।
আবির হাসান বললো, সাবু ভাইয়ের অসুস্থ হবার খবরটা বেশ কয়েকটা টেলিভিশন চ্যানেলেই গেছে। প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছি সব প্রিন্ট মিডিয়াতেও। এখানে জামান ভাইয়ের ভূমিকা দারুণ। তিনিই সব তথ্য এনে দিয়েছেন।
জামান বিগলিত হাসি হাসে। কিন্তু কোনো কথা বলে না।
মফিজুল্লাহ সাহেব গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন তার দিকে। তিনি গলায় লাল রঙের একটা মাফলার জড়িয়ে রেখেছেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোহিত মাও সেতুং এর মতো কোর্ট পরেছেন। কোটের গলার বোতামটি আটকে রেখেছেন। চুলও কেটেছেন অনেকটা তার মতো।
তিনি শুস্ক মুখে বললেন, সাবু ভাইয়ের কিছু হলে রাজনীতিতে আমরা অনেক পিঁছিয়ে যাবো। সরকারের সাথে বসার প্রায় একটা ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। ওনার যা লাইন লিঙ্ক! কিন্তু সাবু ভাই অসুস্থ হওয়াতে সব মনে হয় পিঁছিয়ে গেলো। তাছাড়া সামনে আবার মেয়র ইলেকশন। এবার আমাদের দলের সম্ভাব্য মেয়র ক্যান্ডিডেট হবেন সোবহান সর্দার ওরফে সাবু ভাই। আগামি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং! ওনাকে এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন ছিলো।
ফারুক মেহেদি হেসে বললেন, জী দাদা একদম ঠিক কথা । মাওসেতুং তো বলেছিলেন, রক্তপাতহীন যুদ্ধের নাম রাজনীতি। সুতরাং মেহনতি মানুষের কল্যানে এখানে ক্ষমতাসীনদের সাথে সমঝোতা করা যেতেই পারে। সেক্ষত্রে সাবু ভাইই হবে মূল বা কেন্দ্রীয় চরিত্র। মূল ক্ষমতাবানকে ঘিরে অন্য ক্ষমতাপ্রয়াসীরাও সাইক্লিক অর্ডারে ঘুরতে থাকবে -এটাই স্বাভাবিক।
এইতো তুমি ঠিকই বলেছো। আপামর জনগণকে এটাই বোঝাতে হবে। মূল শক্তি অর্থাৎ ক্ষমতাবানদের সাথে থাকলে অস্তিত্বের সংকট থাকবে না।
আসলে দাদা সাম্যবাদ হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণির পূর্ণাঙ্গ মতাদর্শের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয় –এটা এক নতুন সমাজ ব্যবস্থাও বটে। অন্য যে কোনো মতাদর্শের ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে এটা আলাদা । মানব ইতিহাসে এ মতাদর্শ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সম্পূর্ণ, প্রগতিশীল, বিপ্লবী এবং যুক্তিসঙ্গত। এইরকম মতাদর্শের প্রতি সরকারের আলাদা একটা মোহ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।
রাইট ফারুক। সরকারের সাথে এক জোটে যেতে পারলে আগামি সংসদ নির্বাচনে আমরা প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একটা নতুন ম্যানার তৈরি করতে পারবো। আমাদের আইডেনটিটি আসবে নতুন ভাবে। আর এ সবই শোষিত মানুষের কল্যাণের জন্যই।
ঠিক। সাম্যবাদ বা কমিউনিজমের ধারাতো সেই কথাই বলে দাদা। কমিউনিজম মানে শ্রেণীহীন, শোষণহীন, ব্যক্তি মালিকানাহীন এমন এক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে উৎপাদনের সকল মাধ্যম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ (যেমন ভূমি, খনি, কারখানা) রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। সাম্যবাদ হল সমাজতন্ত্রের একটি উন্নত এবং অগ্রসর রূপ, তবে এদের মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে বহুকাল ধরে বিতর্ক চলে আসছে। অবশ্য সাম্যবাদ আর কমিউনিজম হাত ধরাধরি করে হাটে । দুজনেরই মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তিমালিকানা এবং শ্রমিক শ্রেণীর উপর শোষণের হাতিয়ার পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার অবসান ঘটানো।
ভালো বলেছো ফারুক । মফিজুল্লাহ সাহেব এবার জামানের দিকে তাকান। বলেন , জামান, আমাদের একটা প্রতিনিধি দল সাবু ভাইকে দেখতে যাবে কাল। আচ্ছা আমাদের আউয়াল কি ওখানে?
জ্বি। হাসপাতালে। নেতার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা উনিই করছেন।
তাহলে আউয়ালকে একটু বলে রেখো। আমরা কাল দুপুরে যাবো সাবু ভাইকে দেখতে। তুমিই আমাদেরকে গাইড করে নিয়ে যাবে।
জামান ঘাড়টা দুলিয়ে একটু হাসে।
সাবু ভাই ডিনার খেয়েছেন। এক বাটি ভাত, রুই মাছের ঝোল আর তেল ছাড়া সবজি-ডাল। তবুও অমৃত লাগলো! খাবার পর বেশ তৃপ্তি নিয়ে বিছানায় বসে আছেন নেতা। পেশেন্টের জন্য এক গ্লাস দুধ দিয়ে গেছে ওরা। এটা ঠিক ঘুমানোর আগে খাবেন বলে ঠিক করেছেন সাবু ভাই। আউয়ালের মেজাজ খারাপ। রাতের খাবার খেতে গিয়ে তার গলায় রুই মাছের কাঁটা বিঁধেছে। সাথে সাথে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে। তারপর সেই কাঁটা বের করার জন্য গলায় আঙুল ঢুকিয়ে ওয়াক ওয়াক শব্দ তুলে বাথরুম ভাসিয়ে দিয়েছে আউয়াল। একটা বালতি নিয়ে আবার বাথরুম পরিষ্কারও করেছে সে। বাথরুম থেকে বেরিয়েই ইন্টারকমে ফোন দিয়ে হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ফারহানার সাথে কথা বললো আউয়াল ।
হ্যালো, আপা কেবিন নম্বর ১০০৫ থেকে বলছি। একটু জরুরি ভিত্তিতে আমাদের রুমে আসতে পারবেন?
জী বলেন। আমি শুনছি।
আউয়াল সেকেন্ডখানিক কি যেনো ভাবলো। তারপর একটু অন্য লাইন ধরলো ! সে বললো , কিছু মনে করবেন না আপা, আপনাদের রুই মাছটা বোধ হয় পঁচা ছিলো। ব্যাড স্মেল । এতো বড় একটা হাসপাতাল। এখানে যদি ঠিকমতো এই ব্যাপারগুলো দেখা না হয়। তাহলেতো সমস্যা।
দুঃখিত স্যার। আমি এখনই আবার রি-চেক করছি। কিন্তু এরকমতো হবার কথা না স্যার !
আসলে দোষ আপনাদের না। দোষ আমাদের কপালের !
ছি ছি। আমি এটা মিন করিনি স্যার। আমি এখনই দেখছি।
প্লিজ দেখেন।
ফোন রেখে দিয়ে আউয়াল ঘাপটি মেরে বসে আছে।
সাবু ভাই বললো, কাঁটা কি এখনো আছে আউয়াল ?
আউয়াল মাথা নেড়ে বললো, জী বস। মনে হচ্ছে এখনও আছে।
এক কাজ কর। নিচে ক্যান্টিনে গিয়ে দ্যাখ কলা পাওয়া যায় কিনা। একবারে দু-চারটা কলা টপাটপ করে খাবি। দেখবি কাঁটা হাওয়া।
এরই মধ্যে রুমের ইন্টারকম বাজলো। দৌড়ে গিয়ে ফোন তোলে আউয়াল। রিসিপশন থেকে একটা খবর শুনে চমকে যায় সে। সাবু ভাইও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আউয়াল ফোন রেখে হাসি হাসি ভঙ্গিতে বলে, বস, ভাবি আর রুক্সি মা-মনি আসছে।
বলিস কি? শিগগিরি কম্বল দে। আমাকে বিছানায় শোয়া। লাইট বন্ধ কর।
আউয়াল দ্রুত সাবু ভাইয়ের নির্দেশ পালন করে চেয়ারে বসে থাকে গম্ভীর হয়ে। সাবু ভাই চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে পড়ে থাকে। হঠাৎ তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকে মরিয়ম বেগম আর তাদের মেয়ে রুক্সি। ওদেরকে দেখেই আউয়াল উঠে দাড়ায় ! সালাম দেয়। মরিয়াম বেগম খুব শান্তভাবে হাত তুলে সালামের উত্তর নিলেন।
আউয়ালের কাছে এসে আস্তে আস্তে বললেন, ওনার এখন কি অবস্থা ?
আউয়াল হেসে বললো, জ্বি এখন মোটামুটি ভালো। তবে শরীর প্রচন্ড দুর্বল। মাঝে মাঝে ভুল বকে। এখন অবশ্য একটু স্টেবল। ঘুমোচ্ছে !
রাতের খাবার খেয়েছে ?
জ্বি।
আমি এই হটপটে ওর প্রিয় মুরগি ভুনা আর বাসমতি চালের ভাত নিয়ে এসেছি। খুবই সামান্য তেলে রান্না করেছি।
আউয়াল কিছু বলার আগেই সাবু ভাই চোখ খুললেন, কে এসেছে? মরিয়ম? আমার কুসুম মা মনি কই?
রুক্সি এতোক্ষণে মুখটা হাসি হাসি করে তাকায়, বাবা ইউ ইউজুয়ালি কল মি রুক্সি।
সাবু ভাই হাসে। মুখটা কম্বলের ভেতর থেকে কচ্ছপের মতো বের করে বলে, আই নরমালি অনলি ডু সো ইনফ্রন্ট অফ ইওর মাদার। কিন্তু এখন থেকে তোমাকে এই নামেই ডাকবো।
আউয়াল ইশারা দিয়ে ততক্ষণে রুমের বাইরে চলে গেছে। কুসুম আর মরিয়ম বেগম চেয়ার টেনে একেবারে সামনে বসে পরেছেন। সাবু ভাই মরিয়মের একটা হাত ধরে বলেন, তুমি এসেছো বলে আমি খুব খুশি হয়েছি মরিয়ম! আমি আবারও তোমার কাছে ক্ষমা চাই। মানুষেরইতো ভুল ত্রুটি হয়। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। তুমি বাড়ি ফিরে আসো !
মরিয়ম বেগম চুপ করে থাকে। কুসুম মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, বাবাতো ক্ষমাই চাইলো তোমার কাছে। আমার দিকে তাকিয়ে বাবাকে মাফ করে দাও মা।
মা কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে কি যেনো ভাবলেন। বললেন, যেতে পারি। কিন্তু একটা শর্তে!
সাবু ভাই উৎসুক হয়ে বললো, কি শর্ত?
তোমার বনানির ফ্ল্যাটে এখন কোনো ভাড়াটিয়া থাকে?
না।
তোমাকে রিলিজ দেবে কবে ?
জানিনা, সম্ভবত পরশু দিন।
আমরা এবার থেকে বনানীর বাসায় থাকবো।
তাহলে ধানমন্ডির বাড়ির কি হবে ?
সেটা পরে দেখা যাবে।
সাবু ভাই আর এ নিয়ে কোনো কথা তোলে না। কাজলীর প্রসঙ্গটাও কেউ তোলে না। ডাক্তার রেহনুমা আবার রুমে ঢোকেন। সাবু ভাই ওকে দেখে হাত তোলেন! মরিয়ম বেগম হেসে বললেন, আমি মিসেস সোবহান। আপনার সাথে ওর শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করার সময় হবে ?
রেহনুমা মিষ্টি করে হাসে। বলে, সিওর ম্যাডাম। চলুন ডক্টরস লাউঞ্জে গিয়ে বসি।
মরিয়ম বেগম সাবু ভাই আর কুসুমের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আউয়াল হাসপাতালের গ্রাউন্ডফ্লোরের ক্যান্টিনে এসেছে। এই প্রথমবার সে হাসপাতালের ক্যান্টিনে এলো। এটা ঠিক ক্যান্টিন না ,ফাইভ ষ্টার টাইপের রেস্টুরেন্টের মতো অনেকটা । সোফায় বসে আউয়ালের মন তাই কিরকম অস্থির হয়ে ওঠে।
মনে মনে ভাবে সে, এতো দুই নম্বরি টাকা এরা কোথায় পেলো ? নাকি ব্যাংক লোন ? এদের কেউ কি মন্ত্রী বা এমপি ছিলো কোনোদিন? এই হাসপাতালের মালিক কে আসলে? আশ্চর্য ! এইসব বেসিক কোশ্চেনগুলোই আগে মনে আসেনি !
উর্দি পরা একজন ওয়েটার এসে বললেন, স্যার এখনতো ক্যান্টিন ক্লোস্ড। কিছু খেতে চাচ্ছেন ?
আউয়াল লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে। বলে, সরি। আসলে আমি হঠাৎ করেই ঢুকে পড়েছি।
কোনো সমস্যা নেই স্যার। আপনি সময় নিন। চা-কফি এখনো দেয়া যাবে। লাগলে বলবেন।
ওয়েটার চলে যেতেই আউয়াল উঠে দাঁড়ায়। কৃত্রিম একটা হাসি দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে আসে সে। লিফটের সামনে একেবারেই লোকজন নেই। হাতঘড়িটা দেখে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আউয়াল -ফিফ্থ ফ্লোরে বিলিং সেকশনে যাবে সে ।
লিফট থেকে পাঁচ তলায় নেমেই কাউন্টারে যায় আউয়াল। এই রাতেও দুজন কাউন্টারে গভীর হিসাব-নিকাশে মত্ত। আউয়ালকে দেখে দুজনই বিগলিত হাসি হাসে। বললো, স্যার ভালো আছেন ?
আউয়াল কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে, জ্বি ভালো আছি।
স্যার আপনাকে সন্ধ্যায় কোনো একটা চ্যানেলে দেখলাম। পরে শুনলাম আপনাদের সেন্ট্রাল কমিটির অসুস্থ নেতার সাথে আপনারা আমাদের হাসপাতালেই আছেন।
আউয়াল হাসি হাসি মুখ করে বললো, আমাদের এখন পর্যন্ত বিল কতো এসেছে জানানো যাবে ? আমাদের কেবিন নম্বর -১০০৫
সিওর স্যার। একটু ওয়েট করেন।
কম্পিউটারে বিল দেখে লোকটা ভীষণ উৎসাহ নিয়ে বললো, খুব বেশি না স্যার। এখন পর্যন্ত এক লাখ ছাব্বিশ হাজার টাকা।
বলেন কি? এক রাতও তো হয়নি !
স্যার আসলে নেতা থাকছেন এক্সক্লুসিভ ভিআইপি স্যুট এ। ওটার ভাড়াই পঁচাত্তর হাজার। কোনো সমস্যা স্যার?
আসলে সমস্যাতো আছেই! উনিতো জনমানুষের নেতা। সারাজীবন শোষিত মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। এতো টাকা ওনার পক্ষে দেয়াতো অসম্ভব! কোনোদিনতো টাকা পয়সা নিয়ে ভাবেন নাই ?
বলেন কি স্যার? এতো বড় একজন নেতা। উনিতো মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু এক্সপেন্স এফোর্ট করার মতো অবস্থা নেই ?
আউয়াল একটু চিন্তিত হবার ভান করে। মিনমিন করে বলে, নারে ভাই। সবাইরে কি একই দাড়ি পাল্লায় মাপা ঠিক হবে ? উনি দেশের একজন সৎ নেতা। তবু দেখি কি করা যায় !
ক্যাশ কাউন্টারের দুজন এবার করুনার দৃষ্টিতে আউয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সাবু ভাইয়ের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসেছেন মরিয়ম বেগম। তার মুখ গম্ভীর। পাশের চেয়ারে কুসুম হাসি হাসি ভঙ্গিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
অনেকদিন পর মরিয়ম বেগমকে পাশে দেখে সাবু ভাই কিরকম উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে। যেনো সব স্মৃতিগুলো দ্রুত এক জীবনের ফ্রেমে উঠে আসে। সেই ইউনিভার্সিটি পাশ করে আবারো যেনো নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলো সাবুর! নিজেকে প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আর ঠিক তখনই সাবুর বাবা তার প্রিয় বন্ধুর মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবটা নিয়ে আসেন নিজের একমাত্র ছেলে সাবুর জন্য। খুব একটা ইচ্ছে না থাকলেও বাবার মুখের উপর কখনই কোনো কথা বলেনি সাবু। কারণ খুব অল্প বয়সেই মাকে হারিয়ে যখন পুরো শৈশবটাই এলেমেলো হয়ে যেতে বসেছিল সাবুর, বাবাই তখন যেনো রক্ষকের ভূমিকায় নেমে নিজের সব স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে সাবুর স্বপ্নগুলো পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন । সেই থেকে বাবা কখনো হয়ে ওঠেন স্নেহময়ী মা কখনো কর্তব্যপরায়ণ বাবা। তাই বাবার প্রস্তাব মেনে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে ছিলো সে মরিয়ম বেগমের সাথে।
প্রথম জীবনে হয়তো কষ্ট ছিল। সংগ্রাম ছিলো। তবে আনন্দও কম ছিলো না। মরিয়ম বেগমকে আদর করে সাবু ভাই ডাকতেন শিউলি। সেই শিউলিই সাবু ভাইয়ের জীবনটা যেনো ভালোবাসার সুঘ্রাণ দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছিলো। কুসুম ওদের জীবনে আসতেই ওদের সংসার নতুন করে আলোয় আলোয় ভরে উঠলো আবারও ।
মরিয়মের গানের গলাটা ছিলো ভীষণ মিষ্টি। প্রায়ই মাঝরাতে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গাইতো সে –’দেখো আলোয় আলো আকাশ/দেখো আকাশ তারায় ভরা/দেখো যাওয়া পথের পাশে/ছোটে হাওয়া পাগল পারা’!
সবকিছুই ঠিক ছিলো। শুধু বাবাই বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে সাবুকে চির জীবনের মতো নিঃস্ব করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মরিয়ম বেগম একটু বিচলিত হয়ে তাকালেন। কি ভাবছো ? কোনো সমস্যা ?
সাবু ভাই মরিয়মের দিকে তাঁকিয়ে হেসে বললো, ডাক্তার রেহনুমা কি বললেন ?
না তেমন মেজর কোনো প্রবলেম নাই। তবে বয়স যে হচ্ছে সেদিকে তো কোনো খেয়াল নাই তোমার। সারাদিন শুধু রাজনীতি। রাজনীতি। এবার তোমাকে আর অতো তাড়াতাড়ি বাইরে বেরুতে দিচ্ছি না। একটু নিজের দিকে খেয়াল করো। পরিবারকে সময় দিতে শেখো।
সাবু ভাই কথা শুনে হাসে। মাথা নাড়ে। ফিসফিস করে বলে, ওরা রিলিজ দিবে কবে ? কিছু বললো ?
মরিয়ম বেগম এবার একটু হাসেন। বলেন, ধৈর্য্য ধরো। কাল দুপুরে জানাবে। আচ্ছা তোমার এখানে কজন এটেনডেন্ট থাকতে পারে ?
একজন।
মরিয়ম বেগম চুপ হয়ে গেলেন।
সাবু বললো, কেনো বলোতো ?
না আমি থাকতে চাইছিলাম।
সাবু ভাই কথা শুনে হাসে। তার মনটা ভীষণ ভালো হয়ে যায়। কুসুম বলে, আরে আম্মু না। যদি আমরা বনানীর বাসায় থাকি তবে কাল অনেক কাজ। কাল আমিও ইউনিভার্সিটি যাবো না। অনেকদিন ধরে এপার্টমেন্টটা খোলা হয় না মনে হয়। ফার্নিচারগুলো কি অবস্থায় আছে কে জানে ? তার চেয়ে তোমার সাথে ঘর গোছগাছ করবো। পরশুদিন বাবাকে ওখানে রিসিভ করবো।
ওয়েলকাম হোম টাইপের রিসেপশন।
মরিয়ম বেগম ঠোঁট সামান্য ফাক করে হাসেন। বলেন, চল কুসুম আমরা উঠি। তুই দ্যাখতো তোর আউয়াল আঙ্কেল কই ?
কুসুম তড়িঘড়ি করে বাইরে যায়। মরিয়ম বেগম এবার একটু কঠিন দৃষ্টিতে তাকান সাবু ভাইয়ের দিকে ! ‘বলেন, ‘বাই দি ওয়ে, তোমার ধানমন্ডির বাড়ির কাজলির খবর কি ?’
প্রশ্নটা শুনে সাবু ভাই একেবারে চমকে ওঠে। তবু চোখ -মুখ স্বাভাবিক রেখে বলে , আমিতো গত সপ্তাহখানিক বাসায় যেতেই পারিনি ! কিছুই জানিনা !
মরিয়ম বেগম এবার সুরটা একটু নরম করে বলে, ওই মেয়েটাকে এখনো বাড়িতে রেখেছো কেনো ?
আসলে বহুবার ভেবেছি, ওকে পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু কেউ নাই জেনে পরে আর পাঠাইনি ! একটা ছোট ছেলে আছে ওর । বৃদ্ধ নানির কাছে থাকে। স্বামী নেই। অসহায় তো বটেই। এম্নিতেতো মেয়েটা মেট্রিক পাশ করেছে। ভেবেছিলাম ওকে আরো পড়াশোনা করিয়ে স্বনির্ভর করে দেবো। তবে তুমি যেহেতু বলছো পাঠিয়ে দেবো।
আমি তা মিন করিনি ! তুমি ভালো করেই জানো, কাউকে আমি কোনোদিন কষ্টের দিকে ঠেলে দেইনা। এমনকি আমার শত্রুকেও না। শুধু নিজে একটু ঠিক থেকো। নিজের মেয়েটা বড় হচ্ছে। এমন কোনো আচরণ করো না যাতে মেয়েটা কষ্ট পায়।
মরিয়ম বেগম এবার টিপ্পনি কেটে বললো, আমি ঠিক করেছি তুমি বাসায় ফিরলে এবার সবার আগে তোমাকে খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে গোছল করাবো।
সাবু ভাই যেনো একটু সাহস পেলো। হেসে বললো, তুমি যা বলবে তাই হবে।
মরিয়ম বেগম স্বাভাবিক গলায় বললেন, দুধ দিয়ে গোসল করাবো কেনো জানতে চাইলে না ? তোমার পাপগুলো সব ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হবে। অবশ্য পাপ ধোঁয়া এতো সহজ কাজ না। তারপরও প্রতীকী অর্থে বললাম।
সাবু চুপ করে থাকে। স্ত্রীরা রাগ করলে একটু কাঁচুমাচু ভাব নিতে হয়। অনেকক্ষণ পর মরিয়ম বেগম হাসেন ! বলেন, যাই হোক সুস্থ হয়ে ওঠো তাড়াতাড়ি। আমি বনানীর বাসায় অপেক্ষা করবো।
এরই মধ্যে আউয়াল কেবিনে ঢোকে। মরিয়ম বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে, ম্যাডাম কি চলে যাচ্ছেন ?
মরিয়ম বেগম এবার মিষ্টি করে হাসেন। মাথা নাড়েন।
সাবু ভাই বললো , আউয়াল বনানীর বাসার চাবিগুলো কার কাছে ?
কেয়ারটেকার হানিফের কাছে স্যার। ওখানে দুজন ডোমেস্টিক ওয়ার্কারও আছেন। কালাম আর হাবিব। ম্যাডাম চাইলে এখনই গিয়ে ওদেরকে কাজে লাগাতে পারবেন। ওরা নিচের সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে থাকে। আমি এক্ষুণি ফোন দিচ্ছি।
ঠিক আছে! তবে আমরা আজ না, কাল দুপুরে বনানী যাবো।
কিন্তু স্যারকে তো রিলিজ দেবে পরশুদিন বিকেলে। সেখান থেকে ধানমন্ডির বাসায় পরপর দুদিন সরকারি দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে দুটো মিটিং ঠিক করা আছে। হয়তো স্যারের বনানীর বাসায় ফিরতে ফিরতে আরো ৪/৫ দিন লাগতে পারে ম্যাডাম।
মরিয়ম বেগম কি যেনো ভাবেন। ঠিক তখন যেনো ঝড়ের গতিতে ঢোকে কুসুম। বাবার গালে চুমু খায়। হাত নেড়ে বলে, গেট ওয়েল সুন বাবা। দেখা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিং থেকে এসে রিসেপশনে দাঁড়িয়েছে । আর দেরি করা যাবে না। আমরা যাই।
মরিয়ম বেগম বিদায় যেন। সাবু ভাই হাত নাড়ে। এক ধরণের অদ্ভুত সুখের ঘেরাটোপের মধ্যে ডুবতে থাকে সে।
পাঁচ
সোবহান স্যারের অসুস্থতার কথা গতকাল কাজলিকে জানিয়েছে আউয়াল। সেই থেকে মন বিষণ্ণ কাজলির।
সারা বাড়িতে এখন ওরা সবাই কাজের লোক। বাড়ি পরিষ্কারের দায়িত্বে নিজামউদ্দিন আর ঝন্টু । এরা আবার বিশেষ সময়ে স্যারের মেহমানদারিও করে। দারোয়ান মনু মিয়া গেট সামলে রাখেন। দুজন ড্রাইভার ময়না আর খাদেম থাকে নিচের ড্রাইভারস কোয়ার্টারে ! কাজলির দায়িত্ব বাড়ির সবার জন্য রান্না-বান্না করা! আর পুরো বাড়ি দেখাশোনা করা। মর্জিনা নামে একজন মাঝবয়সী ছুটা বুয়া আসে প্রতিদিন সকালে! ঘর-দোর মোছামুছি সেই করে। যায় দুপুরের ভাত খেয়ে। বাড়িতে এখন সোবহান মানে সাবু স্যার একাই থাকেন। মাঝে মাঝে ইউনিভার্সিটি হল থেকে ছুটির সময় অবশ্য কুসুম আপা আসে । তখন বাড়িতে খুব হৈ চৈ হয়। কুসুম আপা ভীষণ হাসি-খুশি। কাজলিকেও বেশ পছন্দ করে। সমস্যা হয়েছে শুধুমাত্র মরিয়ম খালাকে নিয়ে। একদিন সকালবেলা ঘোরের মধ্যে কাজলি, স্যারের নামে একটু অভিযোগ করতেই রেগে-মেগে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো মরিয়ম খালা। আসলে কাজলি কেনো এই কাজটা করেছিলো তা সে নিজেও জানে না । ফলে পুরো বিষয়টাই হয়ে গেলো এলোমেলো । পরে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে বহুবার ক্ষমা চেয়েছে খালাম্মার কাছে। বলেছে, ‘এগুলো সব মিথ্যে। আমি বানিয়ে বলেছি। ‘ কিন্তু মরিয়ম বেগমের মন টলেনি !
অথচ এই ব্যাপার নিয়ে সোবহান স্যার কিছুই বলেননি কখনো। এমনকি কোনো প্রশ্নও তোলেননি তিনি ।
শুধু রাতের অন্ধকারে কাজলিকে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে সাবু স্যার বলেছিলো, কোনোদিন বেইমানি করিস না কাজলি! তোর বেয়াদব স্বামী তোকে ছেড়ে যাবার পর আমি তোর সব দায়িত্ব নিছি ! দায়িত্ব বলতে ফুলপুর গ্রামে তোর নানির কাছে বড় হয়ে ওঠা তোর ছেলে সরল এর দায়িত্ব ।
কথা শুনে কাজলি চুপ করে থাকে। একটা গভীর অপরাধবোধ তাকে যেনো তাড়িয়ে বেড়ায়। সে ফিসফিস করে বলে, স্যার আমারে মাফ কইরা দিয়েন! কখনো এইরকম ভুল হবে না আর।’ সাবু ভাই কোনো উত্তর দেয় না। চুপ করে থাকে।
কাজলির নামে একাউন্ট আছে গ্রামের সবুজ বাংলা ব্যংকে। এখানে শুধুমাত্র ছেলের খরচের জন্য কুড়ি হাজার টাকা দেয় সাবু। আউয়ালই এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাজলির বেতনের টাকা জমা হয় ঢাকার এক ব্যাঙ্কে ! তবে মাত্রাতিরিক্ত অংকের টাকা। এসব টাকার অংক শুনলে ভয়ে শরীর শিউরে ওঠে তার।
আউয়াল ভাই শুধু বলে, তোর জন্য মাসে তিরিশ হাজার টাকা বরাদ্দ। এই নে আগামি ছয় মাসের অ্যাডভান্স চেক। বাদ-বাকি টাকা স্যারের ব্যবসার!
কাজলি অবাক হয়ে বলে, আমার একাউন্টে স্যারের টাকা ক্যান ?
আউয়াল একটা চতুর হাসি হেসে বলে, পুরুষ মানুষ যারে সত্যিকার ভালোবাসে তার জন্য অনেক কিছু করতে পারে কাজলি। তোর মতো স্বামী খেঁদানো মেয়েছেলের কাজের বেতন ৫০,০০০ টাকা। পৃথিবীতে এই উদাহরণ আর একটাও আছে? কথা কি বোঝা গেছে ?
কাজলি কিছু কথা বোঝে। কিছু বোঝে না। চুপ করে মাথা নাড়ে।
কাজলি ভাবে, গত একটামাত্র রাত স্যার বাসায় না থাকাতে কিরকম অস্থির লাগছে তাদের । মনে হচ্ছে, পুরো বাড়িটাই ভুতুড়ে একটা বাড়ি। কোনো আওয়াজ নেই। কোলাহল নেই। সব কিরকম মরা হিজল গাছের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর সেই ফুলপুর গ্রামের প্রিয় হিজল গাছটার মতো দিনমান টুপটাপ শুধু পাতা ঝরার শব্দ। এতো নৈঃশব্দের ঘোর ! শূন্যতা। তবু বুকের ভেতর কোথাও যেনো একটা স্বপ্নও খেলা করে। মনে হয়, খুব দ্রুতই ফিরে আসবেন তিনি।
কতো অদ্ভুত মানুষটা ! বাড়িতে ফিরলেই যেনো পুরো রাত উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। খালাম্মা চলে যাবার পর থেকে সাবু স্যার তাঁর পার্টির লোকজনকে বাসায় নিয়ে আসেন। সারারাত চলে গল্প-গুজব। আলোচনা। ফাঁকে ফাঁকে নিজামুদ্দিন আর ঝন্টু ভাই খুব সুন্দর করে গ্লাস সাজিয়ে দেন। কাজলিও শিখেছে কিছুটা। টেবিল সাজানোর নিয়ম। মদ পরিবেশনের নিয়ম। এই যেমন বাসায় পার্টি হলে সবসময় এক ট্রেতে দুটো গ্লাস থাকবে । সাথে থাকবে ভদকার বোতল। একটা আইস বক্স। সাথে বরফের কুঁচি। অন্য আর এক প্লেটে হালকা বিটলবণ আর ভিনেগার দিয়ে মেশানো সাদা বাদাম। সঙ্গে সিদ্ধ চিকেন, শশা, টমেটো, গাঁজর দিয়ে বানানো সালাদ। কাজলি এখন জানে ভদকা শুধু পানি আর আইস দিয়েও খাওয়া যায়। আবার লেমন জুস্, অরেঞ্জ জুস্, আপেল জুস্ এমনকি ম্যংগো জুস্ দিয়েও খাওয়া যায়। মদ পরিবেশনের সময় মাথা রাখতে হবে ঠান্ডা। অল্পতেই রাগ করা যাবে না। নিজামুদ্দিন আর ঝন্টু ভাই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা মানুষ। কেউ কিছু বললেও তারা চুপ করে শুধু শোনে। যেনো জলজ্যান্ত দুটো পাথর। এই এতো লোকজন, ভিন্ন ধরণের পরিবেশ, ঐশ্বর্য্য, এতো আনন্দ, বৈভব– এসব কিছুকেই বড় বেশি ভালোবেসে ফেলেছে কাজলি।
শুধু মাঝে মাঝে গভীর রাতে স্বপ্নের মধ্যে তার নয় বছরের ছেলেটা কোত্থেকে যেনো এই বাড়িতে ছুটে আসে। চোখ-মুখ তার বিষণ্ণ। কাজলিকে দেখেই গভীর আবেগে গলা জড়িয়ে ধরে তার। বলে, মারে, আমার আর একা একা ভালো লাগে না। চলো বাড়িতে যাই। নানুমনিরে নিয়া থাকি। ‘
কাজলি তখন শক্ত করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। বুকের ভেতরটা কিরকম হু হু করে তার। ছেলেটা বলে, মাগো চলো যাই। তাড়াতাড়ি চলো। বাবা যদি বাড়ি আইসা আমাগো না পায় !’
কাজলির আর ঘুম হয় না। একলা বাড়িতে একা একা হাঁটতে থাকে সে। হাঁটতে থাকে আর চোখ মোছে। আহারে কতোদিন ছেলেটার সাথে দেখা হয় না তার!
মোস্তফা সোহেল
জন্ম ১২ জানুয়ারি, ১৯৭০। যশোর শহরে। মা এবং মেঝো ভাই মোশতাক শাকিলের অনুপ্রেরণাতেই নিজেকে লেখালেখির ভুবনে প্রোথিত করেন নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশায় উন্নয়নবিদ। ঔপন্যাসিক, গল্পকার। মাঝে মাঝে কবিতাও লেখেন তিনি। এ পর্যন্ত মোস্তফা সোহেলের ১৫ টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত উপন্যাস: তুমি আমায় প্রথম ছুঁয়েছিলে, রূপালি রাত (২০১১, পলল ), আনন্দবাড়ী, (২০১২, জনান্তিক), বুনো জোৎস্নায় (জনান্তিক), মুখোশ (২০১৩, বিজয় প্রকাশ), নেতা (২০১৪), ভালবাসা ও একটি জলফড়িং (বিজয় প্রকাশ,২০১৫), বধূ কোন আলো (বিজয় প্রকাশ, ২০১৭), আমি কান পেতে রই, একদিন ঝুম বৃষ্টিতে (বাংলানামা ), মনপাহাড় ২০১৮, চোখের আলোয় দেখেছিলাম এবং সুন্দর তুমি এসেছিলে। ২০১২-২০১৩ সালে উপন্যাস নেতার জন্য তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার লাভ করেন।
কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নিঃসঙ্গ টারমিনাল, সাদা মেঘে ওড়াই মৌনতা এবং শহরে রটে গেছে আমাদের প্রেমের কথা।
মৃত্যু: আগস্ট ১২, ২০২০