এক.
মানুষে মানুষের এতযে পূজা চান;
বুঝেনি আগে আমি,তাইতো বিস্ময়।
প্রেম ও ভালবাসা উড়ছে কর্পুরে।
পুষ্প তরতাজা, তৈল শরিষায়-
লোকেরা হতে চান খুশিতে গদ গদ।
দাসের পাঠ নিয়ে, মঞ্চে প্রভু সাজ;
মুচকি হাসি পায়, বলি না আর কারও।
নিখিলে বড় ভয়, কী থেকে কীযে হয়;
জানি না বলে তাই, রয়েছি সংশয়ে;
লুকায় আপনাকে গভীর গহ্বরে।
দুই.
মিলেছে বর-বউ, কাম্য সন্তান;
জরায়ু মেলে ধরে লুটেছে ভ্রুণদল।
দশম মাস পর পুত্র কোলজুড়ে,
পেয়েছে চুম্বন আলো ও হাওয়াদের ।
অনেক রাতদিন আসেনি চোখে ঘুম,
গন্ধ প্রকটিত যদিবা মুত্রের-
নিয়েছে বাবা-মায়ে সহজে মেনে তারা।
চুষেছ মার দুধ, খেয়েছ পেটপুরে
কখনো কোনোদিন চাইনি দাম তার।
বাবা ও মাকে নিয়ে বিদিক তামাশায়,
কখনো বখে গিয়ে, গিয়েছ রসাতলে।
বৃদ্ধ-আশ্রম ভরসা শেষমেশ-
একুশ শতকের বৃহৎ জঞ্জাল;
জননী-জনকেরা ঝামেলা কাঁটাতার!
তিন.
আমরা বুড়োবুড়ি থাকি যে ছনঘরে,
একদা মনভরে দেখেছি ছবিখানি।
কাকেরা উড়ে এসে কোথার দানাপানি
রাখে সে চুপিসারে নিজেরা চোখবুজে।
ভেবেছে দুনিয়ায় দেখেনি কেউ কিছু।
আমিও কাক হয়ে করেছি কত পাপ।
আঁধার কাঁধে করে নীরব চুপিসারে,
কামের লোভবশে গিয়েছি অভিসারে।
পাপের রঙে আঁকা- খোদা যে গুনাখাতা;
জ্বালিয়ে ছাই করে- নিয়ো গো কোলে তুলে
চার.
আমিতো অসহায়-ছেলে যে হুমায়ুন,
ফিরেছি পশ্চিমে দাঁড়িয়ে শেষবার।
কোথায় প্রভুরাজ দেখ না চোখমেলে-
নাদান সম্রাট জহির উদ্দিন;
একটি প্রার্থনা- দুহাতে ভিখ মাগি।
আমার সন্তান থাকুক দুধে-ভাতে,
দুচোখে জলধারা নেমেছে নীলনদ
নিজের বিনিময়ে চাইছি বাছাধন।
যদিও মাখলুক, লোকেরা রাজা বলে;
সকলি স্বপ্ন গেছে যে রসাতলে।
হাঁস ও শামুকের নানান দর্শন,
কিছুটা গোলমাল করে যে সেজদায়।
এখন সব ফেলে মরার দর্শনে,
সাপের মত করে হয়েছি টান টান।
মুসার মনজিলে ফিরেছে চোখদ্বয়
তুরের ধ্যানজ্ঞানে খুঁজছি এইবার
অথবা নবিজীর মিরাজ দর্শন-
এসব নিয়ে আমি কাবার মুখোমুখি।
আমাকে দেখা দাও মহান খোদাতা’লা।
পাব না দেখা জানি চর্মচক্ষুতে-
তবুও আশা নিয়ে পেতেছি দুইহাত
পূর্ব পশ্চিমে তীব্র হাহাকার,
প্রজার কল্যাণে হেকিম লোকমান-
ফেরাও তাকে তুমি হেকিমি বিদ্যায়।
পাঁচ
ফিরব চুপিসারে কেননা প্রত্যহ,
অসৎ সন্তুরা বাড়ছে সমহারে।
মন্দকাজগুলো পারি না বাঁধা দিতে,
পারি না মেনে নিতে সত্য নির্জলা।
তাই কি এই হাল, ফুটিয়ে হুলগুলো
মৃত্যুকূপ খুঁড়ে নিচ্ছ ডেকে ডেকে।
আমরা খালি হাত- অন্য কিছু নেই,
তোমার ভালাবাসা ছিনিয়ে নিতে চাই।
ছয়
এখানে চালনেরা সুঁইকে ডেকে বলে-
তোর যে পাছা ছ্যাঁদা- ভাবিস নিরবধি?
তাইযে দেমাগের হয়নি খেলাধুলা
তোমাকে বলি আমি ভয়াল ঝড়তুলে
যেন হে খামোখায় করো না তুলোধুনা
আছিতো বরাভয়ে নূহের জলযানে-
আশার মেটাফরে ভাসছি রাতদিন।
মহিউদ্দীন মোহাম্মদ
কবি, সাংবাদিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। জন্ম: ১৪ আগস্ট, ১৯৭০, যশোরের পশ্চিম বারান্দী পাড়ায়।
ধর্মীয় পরিমণ্ডলে বড় হলেও উদারনৈতিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত।সাম্যবাদের দীক্ষায় নিজেকে আলোকিত করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষাও সাহিত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল সম্পন্নের পর পিএইচডি করছেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি প্রবল ঝোঁক। ফলে লেখা-লেখির অন্যান্য শাখায় কাজ করলেও কবিতার প্রতি আত্মনিষ্ঠ। তবে কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে লিটলম্যাগকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বাগ্রে।
আত্মচৈতন্যের ছোটকাগজ প্রতিশিল্প’ সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। আগ্রহের বিষয়: প্রাচ্যের ভাষা ও সাহিত্য; বিশেষত আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও নেপালী। সাথে সাথে বিশ্বসাহিত্যের তুলনামূলক পাঠ।