চিহ্ন তাঁর পদচিহ্ন তাঁর
রাস্তা ক্রমে হতেছে রাজপথ
পদচিহ্নের শিল্পভার বুকে
বিন্যাসে বেণি দুললো দুপুরে
হেঁটে যায় মৌন সে একা,
মৃদু, তবু সুষমার মুগ্ধ সম্ভার
বড় ভার ঠেলে দেয় বিমুগ্ধ বাপাশে
বাম ভূখণ্ড জুড়ে জেগে ওঠে সাতলক্ষ চোখ
যোজন পিয়াসী
তুলে রাখে চিহ্ন তাঁর পদচিহ্ন তাঁর।
ডান ভূখণ্ড জুড়ে দীপ্তি তার স্পর্শের-কিংখাব
বাঁকায় তেজস্বী ঘাড়, গ্রীবা ঘুরে সোনালী রোদ্দুর
ঝরে ছিল, স্বর্ণ-পিচ স্খলিত কুয়াশায়।
উত্তর গোলার্ধে কিছু? না, উত্তর গোলার্ধে কিছু নেই,
পড়ে আছে পরাজিত দক্ষিণ গোলার্ধ!
রহস্যপ্রতিম
আততায়ী কবিদের হাত থেকে এইমাত্র চলে গেল
কোমল নির্জনে, লালরোম, চেরাসুখ নিয়ে
স্পর্শে ছিন্নভিন্ন, ধবল ডালপালায়…
দুর্লভ ফ্রেমের ঈর্ষা, এই দৃশ্য দেয়ালে গ্রথিত
প্রতি মুহূর্তে জ্যামিতিক, মগ্ন ভাস্কর্য ম্যুরীয়
রূপতস্করের দল হতে দূরে, এইমাত্র
নিভৃত ওমের দেশ, প্রবাল পালকে
পালঙ্ক বিস্তৃতি দিল এঁকে দিল, কাঠামো তূরীয়।
পঙক্তিদের ফাঁকি দিয়ে কবিতা দাঁড়াল!
বাসররাত
তোমার পিঠের নিচে তোমার বিনুনির পাশে
হা ঈশ্বর, তাঁর মত্ত, হা হা খোলা
কলরোল, ঢেউক্ষুব্ধ সমুদ্র শুয়েছে
খুলেছে, সঁপেছে গর্জন গিয়েছে উড়ে
ঐ পাখি মিয়ানো আলোর সুড়ঙ্গে
শেষাবধি কি কেচ্ছা নিপুণ নেমেছে।
উড্ডয়ন, সেও কি তবে মর্ত্যবিলাসিনী?
তোমার বাহুবন্ধনের ঘেরে তোমার কণ্ঠার কাছে
কী আশ্চর্য আকাশ নীল মন্ত্রমুগ্ধ বুনটে
পলকাসই হাঁসেরা স্বচ্ছ ছন্দোসীর ভাঁসে
নেয়ে ওঠে অভিসারী জলের ভেতর
প্রবাল পালক ঠাঁসা গ্রিসীয় গ্রীবায়
স্বচ্ছল নিতম্বে দোলে বিন্দুকাচ আলোর পরাগ।
আলো, সে ও কি তবে দেহপসারিণী?
আলোর উড্ডয়ন দেখি কাকভোরে লুটায়ে রয়েছে।
নগর দ্রৌপদী
ঝোপের আড়ালে দ্রুত সেরে নেয় প্রসাধন
বিদায়ী আলোর ভোজে কী আহার্য এগুনো আঁধারে
পায়ে পায়ে বেঁধে আনে তন্দ্রারহিত রাত
অভুক্ত দিনের গ্লানি পাঁজরে পঙক্তিময়,
বিশীর্ণ শরীরে বিকীর্ণ স্তনফুল ঝুলে পড়ে
আসে ক্লান্ত তন্দ্রাজড়িত ভোর, ঘাসে ছড়ানো ডিভানে।
পাখা ঝটপট দ্রুত নত হয় মোরগের সঙ্গমে
ঝোপে বা পৃথিবীর পতিত প্রান্তরে, আহত মাটির মতো
বিস্বাদিত, বিলম্বে তার ঘৃণা
সে এনেছে ভণিতা-বিহীন দেহ পৃথিবীর পণ্যের রীতি জেনে
অধিক বিপন্ন আর মানবিক তার ক্ষুধা।
কাঁদাজলে পদচ্ছাপ বাঘের অন্ধকারে লুকানো অবয়বে
সরীসৃপ হেঁটে যায় উচ্ছিষ্ট মিনারে
কিংবা এক গিরগিটি গেল খুঁড়ে
সবুজের অধিক সবুজ ঋতুর ভেতরে লালজবা
স্বেদে ও সম্ভবে বৃষ্টি আর কুয়াশার নিচে
নিয়নের সতিনী সখ্যতা।
যখন ঘুমায় পাপ, মরুসাপ নগরের প্রখ্যাত নারীরা
পরাগ বিছানো অলৌকিক বেহেস্তের ঘরে
জেগে থাকে ধ্রুপদসম্ভব জনপদের দ্রৌপদী।
কিশোরীর ঘুম
ঘুমের ভেতরে ভুল হুলস্থুল স্টিমার ছেড়ে যায় ঘাট
অতীন্দ্রিয় নগরের কানে ভেঁপু বাজে, গল্পের সমান সাহসে
মুঠোময় তুলে আনে কার ও পরাগ?
সার বেধে, যেন সিঁড়ি বেয়ে, স্বপ্নেরা সিঁথি বেয়ে বেয়ে
আঙুলের ভেতরে আঙুল
ঘুমের ভেতর সাজ
নম্র ভাঁজ, সলাজ উদ্ভাসন
খোঁসার ভেতরে খুব সন্তর্পণে এসে যায় ধান।
কেউ কিছু পায়নিতো টের, বালিকাও ছিল তার ঘুমে
খুব কাছে নদী ছিল অন্যমনস্ক স্রোত নিয়ে
ছিল হাঁসের সাতারে ত্রস্ত চমকানো মাছ।
আরেক জীবনে তার জেগে ওঠা, জঘনের বরফে ও তাপে
দর্পণে দর্প কার? সতীনের মুখ দেখে জলে।
কামরুল হাসান
কামরুল হাসান এর জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১, শরীয়তপুরে। তিনি মূলত কবি। অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ গদ্যকার হিসেবেও খ্যাত। আছে নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
ভারতের বিশ্বখ্যাত খড়গপুর আইআইটি থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সমাপ্ত করেন। এছাড়াও স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কামরুল হাসান শিক্ষকতা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। কামরুল হাসান দু’হাতে লেখেন। এপর্যন্ত ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ, ১ টি ছোটগল্প, ১টি প্রবন্ধ, ৪টি ভ্রমণ গ্রন্থ, ২ টি অনুবাদ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সমীর রায় চৌধুরী ও তুষার গায়েনের সাথে পোস্টমর্ডান বাংলা পোয়েট্রি ২০০৩ সম্পাদনা করেছেন।
ভাল লাগল, বরাবের মত।
ধন্যবাদ, কবি।
ভালো লাগল, কবিতা। বিভিন্ন বোধ, অনুভব করলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ, কবি।