আঞ্জুমান রোজীর ভ্রমণগদ্য: মায়াবী ছোট্ট শহর ইলোরা

কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের একটি ছোট্ট শহর, নাম তার ইলোরা। এখানে ইলোরা নামে একটি শহর আছে, ভাবতেই পুলকিত হয়ে উঠি। ইলোরা মানেই তো ভারতের সেই ঐতিহাসিক অজন্তা ইলোরা। অন্টারিওতে কিভাবে ইলোরা নামের একটি শহর এলো, তা জানার আগ্রহ থেকে দেখার আগ্রহ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। অনেকদিন ধরে প্লান করে করে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো সেই ইলোরা শহরে। করোনার জন্য সময়টা এমনিতেই স্থবির। তার উপর গ্রীষ্ম বিদায় ঘন্টা বাজাচ্ছে, চলে যাচ্ছে খুব নিরবে। এমন অবস্থায় ভাবতে ভাবতে কয়েকবন্ধু মিলে এক সকালে ছুটলাম টরন্টো থেকে উত্তর পশ্চিম কোণে। প্রায় দু’ঘন্টা ড্রাইভের দুরত্বে ইলোরা। গ্র্যান্ড নদী ঘেঁষে গড়ে ওঠা উনিশ শতকের একটি মায়াবী শহর।

বহুল জনশ্রুতি একটি শব্দ ‘ইলোরা’। যা শোনামাত্রই ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি (১৮.৬ মাইল) দূরে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে পাহাড় খোদাই করে হাজার বছর ধরে তৈরি করা হয় অজন্তা-ইলোরা গুহা। রাষ্ট্রকুট রাজবংশ এই নিদর্শনের স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছিল। এখানে রয়েছে প্রচুর স্মৃতি সংবলিত গুহার সারি। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে। ভারতের শিলা কেটে কোন কিছু তৈরি করার প্রাচীন প্রতিরূপ স্থাপত্যটি এখানে অনুসৃত হয়েছে। মোট ৩৪টি গুহা রয়েছে যেগুলো চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। গুহাগুলোতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের মন্দিরের স্বাক্ষর রয়েছে। ৫ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে এই ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নির্মিত হয়েছিল। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি হিন্দু ধর্মের ১৭টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি মন্দির রয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয়ের এই সহাবস্থান সে যুগের ভারতবর্ষে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে। ভারতের এই ঐতিহাসিক ইলোরা অজন্তার সঙ্গে অন্টারিও প্রভিন্সের ইলোরা শহরের নামের দ্যোতনা রয়েছে।

কারণ, ভারতের সেই ইলোরা অজন্তাতে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন উইলিয়াম গিলকিসন। যিনি স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারে জন্মগ্রহণ করলেও ১৭৯৬ সালে তার পরিবারের সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় চলে আসেন। ১৮১২ সালের যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে কাজ করেছিলেন। ভারত থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত ব্রিটিশ অফিসার হিসেবে ছিলেন। তিনি ১৮৩২ সালে প্রায় ১৪,০০০ একর জমি নিকোল টাউনশিপে ক্রয় করেন। তার প্রস্তাবিত বসতি স্থাপনের জন্য গ্র্যান্ড নদীর জলপ্রপাতের নিকট এই অঞ্চলটিকে একটি শহরের সাইট হিসেবে বেছে নেন। তখন একে ইরভিন সেটেলমেন্ট নামে অভিহিত করা হয়েছিল। ১৮৩৩ সালের মধ্যে, গিলকিসন একটি করাতকল এবং একটি সাধারণ স্টোর খোলার কাজ করেছিলেন। পরে স্বয়ং ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের কাছে ইলোরা গুহা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জায়গাটির নাম পরিবর্তন করে ইলোরা নাম রাখেন।

১৬০০ দশকের শেষদিকে ইলোরা অঞ্চলটিতে প্রথম পরিদর্শন করে রোমান ক্যাথলিক মিশনারির একটি দল। যাদের উদ্দেশ্য ছিল নিরক্ষর মানুষগুলোকে খৃষ্টান করানো। তারপর ১৭১৭ সালে প্রথম ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী আসে। এ সময় সেখানে মাত্র ১০০ জন বাসিন্দা ছিল। তবে দুটি গীর্জা, তিনটি মিল এবং একটি পোস্ট অফিস ছিল। ১৮৫০এবং ১৮৬০ এর দশকে, ইলোরা একটি প্রধান কৃষি বাজার হয়ে ওঠে। শহরতলিতে স্টোরগুলি বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রি করে। আটা কল এবং করাতকল গ্র্যান্ড রিভারের পাশেই স্থাপন করা হয়।

আমাদের গাড়ি ইলোরা শহরের প্রবেশদ্বারে পৌঁছালে লক্ষ্য করলাম, চারদিকে লোকে লোকারণ্য। কারণ, দিনটি ছিল গ্রীষ্মের শেষ উইক্যান্ড। এদিকসেদিক মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছিল। তাই ইলোরা প্রশাসন বড় বড় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্ভিগ্নে হাঁটা চলার ব্যবস্থা করে দেয়। আমাদের গাড়ি ধীর গতিতে ঘুরে-ঘুরে ইলোরা ডাউনটাউনের শেষ প্রান্তে সবুজ ঘেরা বিসেল নামে এক পার্কের পাবলিক প্লেসে গাড়ি পার্ক করে৷

জলের শব্দ শুনে হেঁটে হেঁটে সামনে গিয়ে দেখি এক বিশাল জলপ্রপাত। সবুজের মাঝে জলের শব্দে বেশ উচ্ছ্বসিত হই। কিছুটা সময় সেখানে অতিবাহিত করে আমরা মূল শহরের দিকে পা বাড়াই। সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে যাওয়া মানে শরতের আগমন। কিছু মেঘলা ও কিছু রোদের আনাগোনায় মিষ্টি বাতাসের ছোঁয়া নিয়ে হাঁটতে থাকি।

প্রতিটি স্মল টাউনের নিজস্বতা আছে। আছে তাদের বিশেষত্ব। তবে সব স্মল টাউনই কোনো না কোনো নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা। এসব টাউনে চারদিকে সুনসান নিরবতা বিরাজ করে। সেইসাথে কাজ করে নির্মল অনুভূতি। এমন অনুভূতি নিয়ে আমরা হেঁটে বেড়াচ্ছি আর চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি দেড়শো বছরের বেশি পুরনো ইলোরা শহরকে। দৃষ্টিনন্দন ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও হরেকরকমের দোকান মনে করিয়ে দেয় সেই সময়ের কথা। এখানে রয়েছে ১৯০৯ সালের পাবলিক লাইব্রেরি ভবন, ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পোস্ট অফিস, মিউজিয়াম; এসবই এখন অন্টারিও হেরিটেজ-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ও কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইলোরার যেসব পুরুষেরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে পেলাম। ১৮৫৭-তে নির্মিত গ্র্যান্ড নদীর পাশেই গড়ে ওঠা বিখ্যাত ইলোরা মিল, যা বর্তমানে আবাসিক হোটেল ও রেস্তরাঁ হিসেবে ভীষণ জনপ্রিয়। ছোট্ট এক শহর ইলোরা, কত কত ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর আনাচে-কানাচে! আমিও যেন সেই শত শতবছর আগের ইলোরায় বসবাসকারী এক মানুষ হয়ে যাই৷

ইলোরার বিখ্যাত গিরিখাত বা গর্জ পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ও সুপরিচিত। শহরের অলিগলি পথ পেরিয়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম সেই গ্র্যান্ড নদীর সঙ্গে লাগানো গর্জ বা গিরিখাতের কাছে। আকাশচুম্বী গাছের আলোছায়ার নিচ দিয়ে হাঁটছি। গাছের গুড়ি গুলো যেন জড়াজড়ি করে ভূমি আঁকড়ে আছে। আমরা তারই মাঝ দিয়ে হৈহৈ রৈরৈ করে গিরিখাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এই জায়গাটিরও একটি ইতিহাস আছে। ইলোরা গর্জ বা গিরিখাতকে একটি বিশেষ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেটাকে ‘লাভার’স লিপ’ বলে ডাকা হয়।

ভিক্টোরিয়া পার্ক দিয়ে যেয়ে ‘লাভার লিপ’ ট্রেইলটি ইরভিন ক্রিকের দিকে চলে যায়। সেখানে একটি সিড়ি আছে যা চুনাপাথরে খোদাই করা। এই সিড়িটি ইরভিন ক্রিকের দিকে নামিয়ে আনবে। ইতিহাস খ্যাত ঘটনাটি ঘটে এখানে। আরভিন নদীর স্রোতধারা যেখানে গ্র্যান্ড নদীর সাথে মিশে গেছে, সেখানে এক গভীর গিরিখাত আছে। যেখানে এক ইন্ডিয়ান আদিবাসী কুমারী, যুদ্ধে তার প্রেমিক যোদ্ধার নিহত হবার সংবাদ পাওয়ার পর সাথে সাথে, পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে এই গিরিখাতে আত্মহত্যা করেন। এমন ইতিহাস পড়তে পেলাম একটি সুদৃশ্য ইস্পাতের ফলকে। প্রেম অবিনশ্বর। এর অনুভূতি যেন কাল থেকে কালান্তরে চলে যায়। তাই সিড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে গভীর গিরিখাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে সেই আদিবাসী নারীর অনুভূতিতে আলোড়িত হলাম। ১৮৭০-এ ইলোরাতে রেললাইন বসানোর পর এই ‘গর্জ’ এবং তার ‘লাভার’স লিপ’ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসে আবার শহরের মধ্যে যাই। সূর্য মধ্য আকাশ থেকে হেলে পড়েছে। মৃদু মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। কফির তৃষ্ণা পেয়েছিল খুব। তাছাড়া একটি নতুন জায়গায় গেলে সেই জায়গাটার স্বাদ এবং অনুভূতি নেয়ার জন্য যেন উদগ্রীব হয়ে থাকি। তাই প্রথমে রেস্তোরাঁয় যাওয়ার কথা বাদ দিয়ে কফির স্বাদ নিতে মরিয়া হয়ে উঠি। কারণ, রেস্তোরাঁয় কোরানার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিল। প্রতিটি রেস্তোরাঁর বাইরে থেকে লম্বা লাইন ছিল। খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে ডাইনিং এ বসাচ্ছিল। আমরা রেস্তোরাঁয় যাওয়ার আশা বাদ দিয়ে স্থানীয় কফিশপ খুঁজতে শুরু করলাম। অবশেষে খুব পুরানো এক কফিশপ পেয়ে গেলাম। যার নাম ছিল লস্ট এন্ড ফাউন্ড কফিশপ। ইন্টারেস্টিং নাম। কফিশপে স্থানীয় আর্টিস্টদের আর্ট ডিসপ্লে করে রেখেছিল। এক চমৎকার আবহে বসে কফির তৃষ্ণা মিটিয়ে বের হয়ে আসি।

বিকেলের কোলে যেন পায়ে হাঁটা মানুষগুলো এলিয়ে পড়ে৷ কেউ পথের উপর, কেউ পথের দু’ধারে আইলের উপর অলস ভঙ্গিতে বসে থাকে৷ স্ট্রিট সিঙ্গারের গান হচ্ছিলো। সেখানেও মানুষ জড়ো হয়ে গান এনজয় করছিল। এমন দৃশ্য ব্যস্ত শহরগুলোতে দুর্লভ। তাই তো মাঝেমাঝে ছুটে যাই ছোট্ট শহরগুলোতে। সে এক অনাবিল প্রশান্তি। শত শতবছরের পুরনো শহরগুলো এখনো দেখলে মনে হবে, কত যত্ন করে ইতিহাস লালন করে রেখেছে! কাছে না গেলে বোঝার উপায় নেই। সেখানে গেলে নস্টালজিয়াতে পড়তে হয়। ইলোরা তেমন একটি শহর।

সূর্য ডোবার আগেই আমরা ফিরে আসার যাত্রা শুরু করি। উঁচু নীচু পথ পেরিয়ে সবুজের বুক চিরে ধীরগতিতে আমাদের গাড়ি চলছিল। ক্লান্তি এসে ভর করার চেয়ে একটি নতুন শহরের স্বাদগন্ধ নিয়ে বুকভরে ফিরে যাচ্ছি। পথের পাশেই চোখে পড়লো বিস্তৃত সেমেট্রি। এপিটাফের পর এপিটাফ। কালের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এপিটাফগুলো। কিছুক্ষণের জন্য জীবন থমকে যায়। স্তব্ধতা এসে ভর করে। পথের অপর পাশেই গ্র‍্যান্ড নদীর তীর। যেখানে জীবন কথা বলে। পথের দু’ধারের নয়নাভিরাম সবুজের হাতছানি এক মায়াবী আবেশ তৈরি করে। পিছনে ফেলে এলাম বিচিত্র এক শহর, তার আকর্ষণীয় পুরনো শপ, আর্ট শপ, ঐতিহাসিক পাথর ভবন আর ঘন সবুজের উদ্যান। ধীরেধীরে চোখের আড়াল হয়ে যায় সব। ইলোরা শহরটিকে দেখার অনুভূতি নিয়ে যাই, যেভাবে থেকে যায় আর সব অনুভূতি স্মৃতির নহর বয়ে।

 

আঞ্জুমান রোজী

আঞ্জুমান রোজী: ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কানাডা প্রবাসী। কবিতার প্রতি প্রেম বেশি হলেও গদ্য এবং গল্প লেখায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।এ পর্যন্ত তার তিনটি কবিতাগ্রন্থ, দুটি গল্পের বই এবং একটি গদ্যের বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কবিতার বই, ‘এক হাজার এক রাত’ (২০১০) , এবং গল্পের বই ‘ মূর্ত মরণ মায়া'(২০১২) সাকী পাবলিশিং ক্লাব থেকে প্রকাশিত হয় । ২০১৩ ও ২০১৫ তে নন্দিতা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতার বই ‘বৃষ্টির অন্ধকার’ এবং তৃতীয় কবিতার বই ‘নৈঃশব্দ্যের দুয়ারে দাঁড়িয়ে’।২০১৭তে গদ্যের বই অনুপ্রাণন প্রকাশনা থেকে ‘মুখর জীবনগদ্য’ এবং চৈতন্য প্রকাশনা থেকে ২০১৯এ গল্পগ্রন্থ ‘সবুজ পাসপোর্ট ও অন্যান্য নিঃসঙ্গ গল্প’ প্রকাশিত হয়।ভ্রমণবিলাসী আঞ্জুমান রোজী লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তি শিল্পের সঙ্গেও জড়িত আছেন । বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আবৃত্তি সংগঠন- ‘কন্ঠশীলন’ এবং বাংলাদেশ গ্রুপথিয়েটারভুক্ত নাঠ্যসংগঠন- ‘নাট্যচক্র’র তিনি সদস্য ছিলেন।বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ করে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিয়ে গঠিত গবেষণামূলক আর্কাইভ 1971GenocideArchive এর সঙ্গে জড়িত আছেন।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top