চিল
আমার আজ বুকে কোনো ব্যথা নেই,
নির্মেঘ আকাশে, দুটো ঘুড়ি উড়ছে,
কে কাকে কেটে দেবে,
কিচ্ছু জানি না।
ক্রমশ উড়ে যায় ঘুড়ি দের কাছে,
দেহটা ফেলে রেখে বঙ্কিম তটে।
উড়তে উড়তে কখন সব ছাড়িয়ে চলে যাই,
নিচে দেখি, শরীর আর প্রাণ,
কে কাকে ছেড়ে গেছে
কিচ্ছু জানি না।
শুধু ঘাসের ডগায় কিছু নীল ফুল ফুটে আছে।
যুবক
আমার তো বয়স হলো, মুখে।
দেখতে দেখতে শিশু চোখ,
নীরবে গাঢ় হয়ে যায়।
মুখে আর মুখের অবয়ব
খুঁজলেও খোঁজ নেই, এই সেই?
অতন্দ্র জলপ্রপাত?
ত্বকের জড়ির কাজে ঢেকে গেছে সুপ্তির কাল।
আমার তো বয়স হলো, হাতে।
দু হাত গড়িয়ে গেছে উপন্যাস যেদিকে যায়,
বাক্যের ফাঁকে ফাঁকে পড়ে নিতে হয় নীরবতা,
আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে তেমনই জমেছে চেয়ে থাকা..
একটা একটা করে মুকুলের শীষ জেগে ওঠে,
ফুলের অপেক্ষায়।
তট-তটিনী
ঠোঁটের বাদামি তাপে
স্নায়ু গুচ্ছ অবাধ্য দিনে
ধীরে ধীরে নীল হয়ে আসে।
সে কি বোঝে না নির্যাস?
কি ভাবে শুকায় অতলে,
বালি ভূমে নিস্তেজ শুয়ে থাকে চারা..
তবু, সমুদ্র সার্থক হতে শেখেনি,
অজস্র তোলপাড়ে, বুকে এসে আছড়িয়ে পড়ে।
আমার দেহজ বালি, নিজের গর্ভে ধরে রাখে
ঢেউয়ের শব্দে তাই, দুজনেই খুশি হয়ে যাই।
সৈকতে হেঁটে যাই কোনো এক প্রতিপদ রাতে।
হ্যাশট্যাগ
অনুমান হয়, আমি নেই,
তাই অনুযোগ করে গেছি শিশিরের কাছে,
চুপ করে ঝরে যাওয়া মধ্যরাতের পিছুটান।
তখন নেশাই ছিল,
সহজ করে দেখেছি পূর্ণিমা,
কি কৌশলে বুঝিয়েছি নিজেকে..
পূর্ণ হবে সমস্ত বাকদান।
অনুভব হয়, আমি নেই,
সে যন্ত্রণার পাপে, ভুলে গেছি সময় অসময়।
আমার ভবিষ্যৎও নেই,
তখন আশাই ছিল,
নিখোঁজ হয়ে খুঁজেছি অন্তর,
কি কৌশলে ডুবিয়েছি নিজেকে
কোনো অধিকারই সমান অধিকার নয়।
কোমা
কখনও নিজের কাছে খুলে খুলে
দেখিনি পরত,
কেবলই সকাল হলে গলার গভীর কোনো তলে,
নিশ্চুপ প্রাণ জাগে, বিষাদও জেগেছে কোলাহলে।
আমি জানি, অনেকেরই,
হঠাৎ এক রাতের প্রহর শেষে
অচিরে সকাল এসে যায়।
আমার নিজের কথা বলি,
অবশ অপেক্ষাতে অন্য প্রহর মিশে,
মধ্যরাত জেগে ওঠে।
ঘন ঘন পাতা সরে ফুটপাথ উঠোনের পাশে,
হাওয়ায় দোলায় মৃদু চুল, দরজার বাইরেতে
আমার সকাল-পথ খুঁজি।
কিছু না বলেই আমি চলে যাই অনেকটা রাত,
কেউ পিছু ডাকে না সময়..
এ রাস্তা সে রাস্তা মুখ বুঁজে ঘুরি, দেখি,
কত দিকে রাত বিস্তৃত।
আমার শরীরে কোনো অবসাদ নেই,
আমার শরীরে কোনো অবকাশ নেই..
একই পিপাসায় ঘুরে কি যেন খুঁজেছি সারারাত।
আর আকণ্ঠ জমে যায় প্রতীক্ষা স্তর, যার
তোমার আসার পথ সকালের দিকে নিয়ে যায়,
পরতে পরতে জাগে ঘুম।
অ্যাটলাস
আমি আর কত খানি জানি কতদূর ভূমধ্যসাগর,
শহরের বুকে, উবু দশ কুড়ি, বাড়ি পেরিয়ে নোনা..
মাঠ পেরিয়ে ধোঁয়া,
ধোঁয়া পেরিয়ে তীব্র নিকোটিন…
কী কঠিন? বুকের আদিম তলে আমাদের
থেকে যাওয়া চলে, আজীবন!!
আমার সঙ্গে এই, স্বপ্ন বুনতে পারো তুমি।
বুনতে বুনতে স্বপ্ন, হাতের রেখার থেকে দীর্ঘ
অতি দীর্ঘ হতে হতে নিজেদের হারিয়ে ফেলা
নিজেদের বসতিতে,
চুল মুছছো, ঘর ঝাড়ছি, আমাদের বসবাসে,
বাইরে রোদে মেলে দিচ্ছি নানান কথোপকথন…
হাতের তালুতে হাত ভিজিয়েছি,
মুখের তালুতে জিভ,
ডেকে ডেকে নাম জোয়ার আনি, এমনই তরকিব।
মেঘে মেঘে ছায়া বেড়েছে বেলার
ঢেউয়ে ঢেউয়ে পারাবার।
ওয়াসিম মাকীম জাভেদ
যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে বসবাস।
প্রকাশিত গ্র ন্থ: কাব্যরূপ, ২০১৩ই, প্রকাশক ইম্প্রেশন ইন্ডিয়া; অন্যান্য ভূমিকায় ২০১৮, ঋত প্রকাশন; কোলিয়ার্স উড, ২০২০, সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী।
এছাড়া নির্বাচিত কিছু কবিতার ইংরেজি অনুবাদ, ভিয়েনা, গ্রীস ও লন্ডনের কিছু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ইমেইল: [email protected]