মাউথ অর্গানে বাজে অভ্রনীল কবিতানামা
|| ক্রান্তিকালের ডায়েরি ||
অপমান ও অভিশাপে যে তুমি এসেছো
তাকে দূর করি নানা উচ্চারণে, নানা মন্ত্রবানে
ওগো দূর অযাচিত অতিথি-প্রলয়
তোমাকে ভুলে যাবার হয়েছে সময়
ভাঙা হাত, ভাঙা পা
খুঁড়িয়ে চলাটা খুব একান্ত উপচার
মনে মনে ভরে নেই নীল পাহাড়ের জল
তারপর পথ চলা, কথা না বলা
বিষাদ অন্বেষণে সেলাইয়ের সুচারু ধারা
কেউ এসেছিল, কেউ গিয়েছিল
কেউ নাম ধরে ডেকে ডেকে ফিরে চেয়েছিল
সেরকম চাওনি তুমি, লক্ষকোটি আয়োজনে
দূরের ঘণ্টা বাজিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছো খুব
জ্বলজ্বলে একটানা পৃথিবীর সমুদয় সুখ
|| তৃতীয় নয়নের দিন ||
সরে যায় দৃশ্য ও দূরবীন, অন্তরীক্ষের দাপট শাস্ত্র
সারাদিন ঠোঁটে ধরে হারানো মাউথ অর্গানের ঝুঁটি
তৃতীয় নয়নের রাত
দেখা যায় সমুদ্র ওপার থেকে অসীম আলোর ভ্রুকুটি
স্বভাব দোষে চিৎকার, স্বভাবের কারসাজি লাভা
নাম না জানা অভিযোগ
অগ্নিসাক্ষী রেখে বিবাহ সম্পন্ন করে শূন্যতার সাথে
ঘাটে ঘাটে নৌকায় অনিদ্রা সারারাত দুলতে থাকে
নাম না জানা জনপদ
এ-প্রান্তে কেউ নেই, ও-প্রান্তে কালো ম্যাজিকের বাড়ি
সেরকম সীমানায় দাঁড়িয়ে কেউ সিগারেট টানে
ধোঁয়ার আলপনা আঁকছে গুচ্ছের মাউন্টেন্ট লোগো
অপসৃত গান, আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হাসে
ধীর কুয়াশা তানে নগ্ন ডালিম ফুলে চুমুক নামে
গ্রীষ্মরাতের ঘুমহীন পাখা ঘণ্টা পিটিয়ে বলে
পাহাড়ে উড়াল এঁকে উড়ে যাওয়া যায়, যাবে!
|| সকালের মধ্যবিন্দু ||
মানুষের কাছাকাছি হবার আকাঙ্ক্ষা তৃষ্ণায়
কেবলই আগুনের চকখড়ি ভাঙি, আঁকি এটা-সেটা যা খুশি
এমন সকাল যেন আসেনি আগে, যে সকালের মধ্যবিন্দু
একাগ্র টেনে নিলো বৃষ্টির শাড়ি
আহা! এক না দেখা নগ্নতায় ভিজতে ভিজতে মনে পড়ে
কবে কোন প্রত্ননগরে ভেজা চুল সরিয়ে দেখেছিলাম কারো মুখ
কষ্টিপাথরে খোদাই করা সেমুখ ঘুরে ঘুরে আসে
নিশিডাক বারবার আড়মোড়া ভেঙে
এজীবনে যত অভিজ্ঞতা, আ-নিশ্বাস পান করা, বেঁচে থাকা
চৌকশ নাগরিক বন্দনা, কেমন আছরে পড়ে গ্রাম্যতা মেখে
সবটুকু বাজি রেখে নেমে গেলাম জুয়ার আসরে
এই সকালবেলা
ফেরদৌস নাহার
ফেরদৌস নাহারের জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে। নেশা, দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো ও বইপড়া।
ফেরদৌস নাহার বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগীত রচয়িতা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা: ১৫টি কবিতা ও ৩টি প্রবন্ধের বই। তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে একটি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে অসংখ্য যৌথ কবিতা সংকলন। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দল ‘মাইলস’-এর অনেকগুলো জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও কানাডা থেকে কম্পিউটার ট্রেনিং প্রোগ্রাম কোর্স করেছেন তিনি। কবিতার পাশাপাশি ছবি আঁকেন, গান লেখেন, ব্লগিং করেন, কফিশপে ধোঁয়া আর ঘ্রাণে আড্ডার ঝড় তোলেন। কিন্তু সবকিছুর উপরে এক বিশ্ব বোহেময়ান কবি আর চির তারুণ্যের নাম ফেরদৌস নাহার। মন চাইলে বেরিয়ে যান। ঘুরে বেড়ান খেয়াল-খুশি মতো, যাকে তিনি ‘ঘুরণ’ বলেন। ভালোবাসেন প্রকৃতি ও মানুষ। পথের নেশা তাকে করেছে ঘরছাড়া, ঘুরতে ঘুরতে এখন আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে, কানাডায়। সেখানে জীবন যাপনের পাশাপাশি জীবন উৎযাপন করেন কবিতা এবং লেখালিখির খরস্রোতা নদীতে বৈঠা বেয়ে। ইমেইল : [email protected]