কালোজাদুর রুমাল
ক্রুশবিদ্ধ সময়ে ছদ্মবেশে গোপন করেছো ছোরা, ছোরার গায়ে মাখো বিষ! অহেতুক দাও উসকানি। সিটি বাজাও আর মেকাপে ঝলকানি।
আমাকে প্রার্থনার অনুমতি দাও, মলিন জনারণ্যান্ধ ফুল—
কাঠের দেরাজে খোদাই করা রাত্রির বিষণ্ণপ্রলেপ ঝুরঝুর হয়ে ঝরে মাখছে কালিমা। ক্লান্তির জলে স্নান সারছে ছিন্নপালক তীর্থের খোঁজে। অবাস্তব ও মিথ্যার ডানায় উড়ে গেছে দ্বিবিধ সময় বানোয়াট প্রেমে।
ঢুকে পড়ি কালোজাদুর রুমালে— অবিকল রপ্ত করি শিখিয়ে দেয়া বুলি। রচনা করি, আমি মিথ্যা; তুমি সত্য! নীতি-নৈতিকতা ডুবিয়ে দিই ধর্মশালায়।
প্রতিটি জাগরণে ফেলে আসি জীবনের স্বাদ—
চোখ মেলে দেখি, একা আমি। চারিদিকে কবরে কবরের বাহাস!
আধভাঙ্গা আশ্রয়
শবযাত্রায় মৃতের ছায়া মাড়াতে আসে না কেউ— কফিনের দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ঝুলে থাকে বিষণ্ণ প্রস্থান। শান্তমুখে, ধীর পায়ে জড়িয়ে থাকে পাথরভার।
বিহ্বলতা সে এক ব্যর্থ মানুষের গুমোট কান্না! হৃদয় বিদীর্ণ করে যে জমিয়েছে প্রেম।
অন্তিম আভার কাছে মৃতমুখের নেই কোন ঋণ— সমস্ত শুভ্রতা যেন কাফনে মেখে থাকে।
অর্ধসত্য এ জীবন সময়ের গহব্বরে পুরোটাই ভুল!
হৃদয়, তুমি বিনয়ী হও— নির্ঝরে ঢালো মূঢ় রক্তে ব্যথার বিষ, অবসরে ডেকে আনো ডঙ্কা বাজা রাত; বৈতাল বাতাসে মাখো হত-প্রণয়ের কেঁপে ওঠা জল।
মাথাকাটা মানুষের আকাশই উপহাস—
নিরাশায় আলো লীন হয়ে যাচ্ছে চোখের গভীরে, আধভাঙ্গা আশ্রয়ে কেউ দিচ্ছে উঁকি সুদূর জতুগৃহে। মৃত্যুর আগেও আশার প্রদীপ মিটিমিটি জ্বলে।আলুলায়িত জোছনায় সে-ও বাঁধে গান নির্জন ব্যথাতুর রাতে।
তাকে বলো— জন্ম মানেই জীবনের আয়ু খেয়ে ফেলা।
পিতার আর্তনাদ
কন্যা, মা আমার! তোমার খেলার সাথী আকাশটা আজ মেঘে ঢেকে গেছে।পাখিরা ভুলে গেছে উড়তে। মাকড়সার জালের মতো পেতেছে ফাঁদ অগ্নিলাল ঈশানের ঝড়। তোমার হাসির মতো হেসে থাকা ফুলও অকাতরে ঝরে— অরণ্যান্ধ নগরীর ছায়া-পথ ধরে।
আজ ঘুণাক্ষরেও নিরাপদ নয় স্বদেশ— শৃগাল পরিবেষ্টিত উপত্যকায় আয়নার দেরাজ ভেঙে যায়। পথের লালধুলোয় সহসাই নামছে অন্ধকার।
তোমার বুকে রাখতে চাই আমার সকল প্রার্থনার মর্মার্থ। তোমাকে দেখাতে চাই বৃক্ষের গা থেকে বেরিয়ে আসা পাতার সংসার। শোনাতে চাই, যে বিলে জল নেই তার দুঃখমথিত গান। চাই, বিষণ্ণ দুপুরে ঘুঘুডাকা সুরে ছড়াক তোমার চোখে ঘুম; দুরতম বাঁশির বুকে বেজে ওঠা প্রাণ।
অথচ তুমি নিরাপদ নও—
তুমি নিরাপদ নও পৃথিবী দেখার শত বাসনায়।
আমি অক্ষম পিতা! ক্ষমা চাই।
এ অপমানের চেয়ে হে আগুন, জ্বালাও আমাকে— পুড়ে করো ছাই।
কস্তুরি রোদ
নীরবতা মনে রুয়ে যায় কথার বীজ, রোদে ফোটায় কথার ফুল— বাতাসে লুটোপুটি খায় হাসি-কান্না বেদনার ঘ্রাণে।
প্রাণপণে ছটফট করছি মোম-আলোতে গলে, তোমার মুখচ্ছবির ছাপমোহরে।
মমতায় ব্যবচ্ছেদ করা নৈঃসঙ্গ্যের অন্তরমহল, তাম্রলিপির বুকে লেখো মৃত্যুর নাম।
অপেক্ষায় আলোকিত দিনের জনশ্রুতিতে ব্যাকুল নগরীর ধারণা! ক্রমঘনীভূত ছায়া বিধ্বস্ত আলোর পিপাসায় ছিটিয়ে দিচ্ছে মৃগমদ কস্তুরি রোদে।
যে চিঠি খুন হয়েছে সে চিঠি বাঁধা ছিলো শ্বেত-শপথের পায়, রেখেছিল চুম্বন ঠোঁটে রাখা সীমানার গায়— সীমানা দিয়েছে ব্যারিকেড বিষমাখা কাঁটায়।
তুমুল বৃষ্টির দিনেও,খরায় শুকিয়ে যাচ্ছি তোমার নামে—
কথা না-বলা মানুষের কথার পাহাড় বুকে। চোখে রাখা আকাশ, আশ্রয়হীন মেঘে সঘন নীলে টুপটাপ ঝরে। যে পথে উড়ছে মসলিন মিহি ছাই— সে পথ পুড়িয়ে গেছে মোটাদাগের আগুন, মেহনতির মুখে হাসি নাই। মিনতির চাদরে ঢাকা শিরদাঁড়ায় দগদগে ক্ষত!
আমি আগুনের ফুল হবো— পাঁপড়িঠোঁটে তুমি চুমু খাও।
মা-ই প্রেমের বাতিঘর
জীবনের আয়নায় যতিচিহ্ন, কমা, সেমিকোলনের সংশয়ে তাকিয়ে থাকেন ‘মা’। ভিটে নেই, নেই ঘরদোর— আলোর পথ বেঁকে গেছে বিজন অন্ধকারে। স্বপ্নখসা দিনে, কুড়িয়ে জমা করা কষ্ট আঁচলের গিঁটে বেঁধে মমতার চৌকাঠে আঁকেন নকশায় জ্বলজ্বলে অশ্রুতারা!
শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ঘোড়া! খুরে পথের ভার, ধুলোয় ওড়ে বাজির দর— অনশ্বর ভেবে ঘড়ির কাঁটায় সময়ের দায়। কান্নায় ঝরে হাহাকার, মন কাঁদে হতাশাসংযোগে।
নাভিতে ফোটা ফুল, মায়ার পিপাসায় আলোতে ঝরে—
প্রবর্ধিত পাপ, পবিত্র চাদরের আশ্রয়ে চাইছে ক্ষমা; ঐশ্বরিক চুম্বনে পৃথিবীর বুকে গড়তে চাইছে জননীমুখ। দীর্ঘ পথের ভাঙনমুখি সময় কাতর হচ্ছে মসৃণডাকের অপেক্ষায়।
চোখে জল গড়ালে মায়ের চোখ দুটো খুঁজি—
নিমগ্নতায় খুঁজি পরশ, কনেদেখা রোদ একপশলা বৃষ্টির পর’।
মাকে জানি শ্রেষ্ঠ কবিতা, আয়াতের সুর, প্রেমের বাতিঘর।
পরিচিতি
জন্ম ৩রা ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। চরলক্ষ্মীপুর, সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ