আমাদের যৌথ দিন
প্রায়ই আমাদের যৌথদিন অসুখে পড়ে
তুমি সুস্থ আয়ুর ধারনা নিয়ে
জানালায় রোদ-হাওয়ার তাবিজ ঝুলিয়ে রাখো।
আমাদের সুখী পারিবারিক পটভূমি দূর বন্ধুর কাছে
দুর্বোধ্য ঠেকে।
কতটা কুয়াশা জড়ানো অন্ধকার
আর অন্ধকার জড়ানো উৎসবে ঝালোরে
কেটে গেছে রাত জাগা বাজেয়াপ্ত বাসর।
এইসব গল্প পৃথিবীতে প্রেমহীন মন্বন্তর টেনে আনে
প্রসঙ্গ পাল্টে নিয়ে আরো কিছু পথ
হেঁটে যেতে পারো।
সহমতে ও আশ্বাসে পাশ থেকে বদলে গেছে
হাজারো মুখোশ
এবং বলে যাওয়া গল্পের পর মরে যায়
বারোয়ারি আত্মীয়তা।
আমাদের কয়েকটা দিন রোদে পুড়ে গেছে
কয়েকটা দিন জমে গেছে হিমাংকের নিচে।
অথচ কেটে গেছে, কেটে যায় হে—
এখন সমূলে উঠে আসে ছায়া সমেত
জড়িয়ে থাকার স্থির অবসর।
শুধু প্রেমময় সুধা দৃশ্যে
আমাদের কত কত দিন মনে পড়ে।
বিস্মৃতি
কোন কোন দূরত্বের কাছে ভরসা রাখি।
কোন কোন দূরত্বে শঙ্কা!
আজকাল মুখ আর মুখের নামে
গড়মিল হয়ে যায় বলে হাওয়ার ভ্রুকুটি এড়াতে
নিয়তই আচ্ছাদনের ভিতর এক খণ্ড আয়না হাতে বসে থাকি।
দেখি আয়নার ভিতর পড়ে আছে
ছোপ ছোপ বিষণ্ণতায় জারিত অ্যালবাম
কখনো বিস্মরণের ভিতর ছোট কোন পরিসর নিয়ে
ঢুকে পড়ে পুরনো কথা আর চেনা পথ,
অথচ গন্তব্য বদলে গেছে অনেক আগেই।
দৃশ্যের ভিতর
একটা বাঁক-জুড়ে কাশবন
আলোছায়া খেলে যায় প্রেতের মতো
তারও পরে এক খণ্ড আকাশ
কালো কালো মেঘ আকাশের দেয়ালে মাথা ঠুকে
যেন এক বিরহী পুরুষ জল আর শক্তির
তোলপাড় তুলে আগুন করে আগুন পুষে।
পৃথিবীর গ্রাম থেকে মানুষ দেখে তারে
দিনরাত বদলে নেয় চোখ
অবারিত সবুজে ও শিশিরে।
রোদ ছুঁয়ে যায় কিশোরী ফ্রকের ঝালর
একটা অস্ফুট গুনগুন ছড়িয়ে থাকে।
এই সব দৃশ্যপট পালটে গেলে
গুনে গুনে সাতটা দানায় কাটে
বিষণ্ণ একলা শালিক।
প্রবর্তনার চিরকুট ভাঁজ করে ঢাকাই শাড়ি
নিঃশব্দে একটি অপেক্ষা যতি চিহ্ন নিয়ে
দাঁড়ায় আঙিনায়।
কোথাও চলে যাওয়া নেই
শুষ্কতার ধারনায় সবটুকু সুবাসিত
নির্যাস ঢেলে দিতে পারার তুষ্টিতে
কারো কারো মন জারিত হতে থাকে।
কোরকের অনুবন্ধ আমাদের
অজানা অধ্যবসায়কে মূর্ত করে।
শুরু থেকে বা মাঝ পথে
কোন অনাদর কোন উন্নাসিক দেখার
মুখোমুখি হতে পারো ,
তালকানা আসা-যাওয়া সন্ন্যাস নিয়ে
কখনো যাওয়া হয় না জীবনের দিকে।
এত কি সহজ
শেকড়-বাকড় সব নিয়ে উবে যাওয়া?
বরং খড়িমাটি দেয়ালের শরীরে
নাম লিখি, প্রতিবেশী মুখ আঁকি, মায়া ঢালি।
সারি-সারি বাঁধ, কোথাও সরে যাওয়া নেই
চলে যাওয়া নেই,
আলোর বিপরীতে বিম্বিত জলের বুদবুদ!
যদিও এসব ছায়ারা শরীর পাবে না
রাত পোশাকের মতো যাপনের দিন ঝুলে থাকে।
তৌহীদা ইয়াকুব
জন্ম টাঙ্গাইলে। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজ থেকে পড়াশুনা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ হয়েছে। লেখালেখির শুরু সেই ছোটবেলা থেকেই। স্কুলের দেয়ালিকায়, বার্ষিক সাংস্কিতিক অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ এসব দিয়ে। এরপর প্রায় ১৫ বছর লিখেননি। বারবার শুরু ও ছাড়া। এই ছেড়ে যাওয়া, ফিরে আসার মাঝে কবিতা তাকে কখনই ছেড়ে যায়নি। ২০১৪ থেকে আবারও নিয়মিত লিখছেন। যদিও হারিয়ে ফেলেছেন পুরানো সব লেখাগুলো। কবিতা লেখা ছাড়াও, আবৃত্তি করা, বই পড়া, গান শোনা ও মুভি দেখা পছন্দের বিষয়।
বর্তমানে বসবাস ফ্রান্সের দক্ষিণে পারপিনিয় শহরে। পারপিনিয় শহরের এক পাশ ভূমধ্যসাগর, আর তিন পাশ পাহাড় বেস্টন করে রয়েছে। তাই সমুদ্রের চেয়ে পাহাড় তাকে বেশি টানে।
খুব ভালো লাগলো।
যাপিত জীবনের দৃশ্যাবলী, দৃশ্যের ভেতরে অন্তর্দৃষ্টিতে, স্মরণে বিস্মরণে চমৎকার ফুটলো। খুব ভালো লাগলো।