স্মৃতির দূরবীন
সব স্মৃতিকে ঘুম পাড়িয়ে আজ শিকারে যাব-
যাওয়ার কথা উঠলেই সিঁড়িতে পায়ের ছাপ
যেন সমুদ্র, যেন জলের পৃষ্ঠা এ শহর,
যেন শরীর জুড়ে বিপন্ন বুদবুদ- পারফিউম
মধ্যরাতে হাওয়া আত্মসাৎ করে দীর্ঘশ্বাসের গিলোটিন,
জলপতনের শব্দ আসে শিশিরখোয়া রাতের কবজিতে-
উড়ে যাব হাওয়াই জলে, মাছের কানকায়-
ঘামের একুরিয়ামে-
যেতে যেতে আকাশ বদল করে দূরে চলে যাব-
আমাকে কোথাও পাবেনা হে স্মৃতির দূরবীন।
কুয়াশা আশ্রম
গাছের সমস্ত শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, জলঘুমে-
উষ্ণতার জন্মরহস্য ভেদ করে গোপনে উড়ে গেছে
মধ্যবয়েসী পাতা- ফুলের আশ্রম-
ঘরে ঘরে আজ বিষণ্ণ কুয়াশা- মনে নেই
শেষ কবে নদী ছুঁয়েছে দুই কূল, নিজের শরীর-
ঝরাপাতার কান্না বুকে নিয়ে বয়ে চলে জন্মান্ধ বাঁশি!
তোমার শরীর ঘেঁষে বসে থাকে কুসুম রাত্রি- শুন্যতা,
পাল তুলে চলে যায় দৃশ্যের করাত- দূরে, বহুদূরে-
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে তোমার ইশারা, বৃষ্টিরেখা-
আমি কোনখানে দাঁড়াই এমন ঘোরলাগা কুয়াশায়?
পিছুটান
নিজেকে পেরিয়ে কতদূর যেতে পারে, মানুষ!
পেছনে কান্নার স্বর- খালি পা, ওয়াকওয়ে-
পদচিহ্ন বেঁয়ে উড়ে আসে স্মৃতির পালক, পিছুটান-
পেখম মেলে দাঁড়িয়ে আছে সীমাবদ্ধ ডানা- মায়াবন,
দ্বিধার নাটমন্দিরে দীর্ঘশ্বাসের ড্যাশবোর্ড,
কাচের কুয়াশা ভেঙ্গে ঢেউ তোলে সহজাত লাঙল
খুলে দিয়েছি অনিদ্রার ভেন্টিলেটর- কেচিগেট
উড়ে এসো ঘুম, নদী ও জলের আয়না,
আমাকে নিয়ে যাও লবণের চিতায়, বলিরেখায়-
শয্যাবিমুখ বৃষ্টি
নিখোঁজ জলের খোঁজে নেমেছে বাদল ধারা
কদমের কৈশোরে-
পতনের ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃষ্টি ফোটে, অনিবার্য ব্যথায়-
তলপেট চিরে নামে প্রসবের ফুল-
জলের সুতো কেটে মৃদু পায়ে হেঁটে যায়
মেঘের ডাকহরকরা-
কতকাল খোলা হয়নি ভুল দরজা, চুমোর বারান্দা!
আমাদের সঞ্চিত ওমে আবার ধরেছে মুকুল, অঘ্রাণে-
ভুলগুলো ফুল হয়ে ফোটে, জ্বরের প্রকোপে।
কেন তুমি বৃষ্টির মতো এমন মাতাল, বিপুল শয্যাবিমুখ-
কেন আমার শহর ভিজে যায় ঘামে- জলের প্রলোভনে।
জলের এপিটাফ
আমাকে টেনে নিয়ে যায় নামহীন জলের এপিটাফ-
একবার পেছাই, পেছাতে পেছাতে খানিক আগাই-
যেতে যেতে নিজের শরীরে ধাক্কা খাই, সজোরে!
জলের উপরে বসে সেলাই করি ধ্যানমগ্ন বৃষ্টির দেহ
প্রবল আক্ষেপে যে হাওয়া জীবন বদল করে গেছে
আমার সাথে, তার নামে লিখে রাখি সমস্ত বিষাদ,
ঘুমের শরীর বেয়ে এসে গেছি অনিদ্রার রাজঘাটে-
পাঁজরে নোঙর ফেলে কোথায় যাও, স্রোতের জংশন!
নক্ষত্রের শোকসভা
প্রতিরাতে নক্ষত্রের মৃত্যু- প্রতিরাতে শোকসভা-
গাছে গাছে কুচকাওয়াজ- বৃষ্টি-
সন্দেহের ফেনা জমাট বেঁধে ইটপাথর- জলঘুড়ি
জল থেকে উড়ে যায় অশ্রু-
কিছুটা সমুদ্রে
কিছুটা চোখে
আমাকে ঘিরে রাখে পিতলের নদী, কাঁচের আয়না-
ডুবে আছি গাভীন জলে, প্রতিবেশি ঘুমে-
এই নির্জন রাতে।
রাত্রির অন্ধ কপাট
বুকের ভেতর কে যেন দাঁড় টানে জলের মতো একা-
জল কি নদীর দহন? রাতের মাইগ্রেন?
মুখাগ্নি জ্বালিয়ে রেখে উড়ে গেছে সামন্ত দিনের মেঘ
ধোঁয়ার অক্ষরে-
কতো মুখ ছাই হলো নিজেরই উত্তাপে- অনিদ্রায়-
আঁধারের তলপেটে জমে আছে ব্যথার ক্যানোলা, রক্তজবা-
ওখানে ঘুম নেই- খুলে রাখি রাত্রির অন্ধ কপাট,
বাতাসে উড়িয়ে পাল- ধ্বসে গেছে নিদ্রার জলবীজ।
নিজেকে গিলে খাওয়া রাতে, রাত আসেনা সহজে।
মালেক মুস্তাকিম
এই সময়ের একজন তরুণ কবি। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় জন্ম। গাঁয়ের ধুলোবালি আর কাদাজল মেখেই কেটেছে শৈশব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পেশায় সরকারী চাকুরে। সাহিত্য সাময়িকী ও ছোট কাগজে নিয়মিত লিখছেন।
প্রকাশিত কবিতার বই: ভুলের ভূগোল, ২০১৩; বিষণ্ণতাবিরোধী চুম্বনগুলি, ২০১৬; তোমার সাথে হাঁটে আমার ছায়া, ২০১৮
[email protected]