চিত্রকর্ম: জহির হাসান
জহিরের বিলাপ-১
যে পাতা উড়ার পর পাখি নাম ধার পাইলো
ঘরে ফেরার পর তারে পাতা নামে ফের
ডাকতে রাজি হইলো না
আমাদের কাচারিঘরের কাছে
দেবদারু গাছখান!
সেই পাখি
সেই পাতা
ধূলা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামি গেলে
চিল্লাই চিল্লাই কইতে শুরু করি দিই:
কে হারবেনে!
কে হারবেনে!
সেই শোরগোলের মধ্যে
হারাই গেলে
আমারই বিলাপ আমিই
শুনতে পাইতেছিলাম না!
ফলে তারে আর জহিরের বিলাপ
কই কেমনে!
আমার আরো কাক
কিছু কাক মারা গেলে ফিরি আসে
সাদা কাক হই পৃথিবীতে- তারা সারাদিন রোদে মিশি ঘুমায়।
আর শরীরের ভিতর, তাদের
স্বপ্নের ভিতর ভরে কমলালেবুর মত গোলগাল
অন্ধকার, জাগে সন্ধ্যা মিহি ঠোঁটে
ছাড়ে, সেই অন্ধকার, আমি শুধু খেয়ালে রাখি সব সময়
একই রয় বাড়েও না কমেও না, তাদের সংখ্যা,
আমি রায়ের বাজার এলাকাতে আপাতত
ত্রিশ বছরের জরিপে খেয়ালে রাখছি,
জিনিশটা গোপন রাখতে চাইছি—
শুধু তুমার অন্তরে একটু শান্ত নৈশ
ওই সাদা অদৃশ্য কাকদের
আপন একটা ইচ্ছা মত তারা বাসা বানতে
গিয়া কেমনে কেমনে নীড় বান্ধি ফেলছে!
অথচ কত নিমগাছ পত্রশোভিত ডাল নিরিবিলি ছিল এইদিকে!
কমিন জহির, নীড়ও চিনলা না
বাসাও চিনলা না!
শালিখ সংবাদ
রাত্রির অন্ধকারে জাল ফেলি পাইছি তোমার শরীর!
যেই ধরছি তুমি একটা শালিক হই গেছ!
শালিকের লগে আর কী করবোনে পেরেম!
শালিখ দেখি সারাক্ষণই তারিফ করতেছে
গত দিনের শস্যদানার, খেতঅলার
আর সেই খামোখা আলোমাখা বাবলাডালের
সেই হাসনাহেনা গন্ধে টলকাই পড়া ভোরবেলাকার
সেই বেহিসাবি দোলখেলা বাতাসের, পেরেশানমুক্ত স্মৃতিগের
এ জীবনে শালিখ তুমি শরীল হইবা না?
আমি তক্কে তক্কে থাকলাম মৃত্যুরে
শরীর দিই ঢাকা পর্যন্ত!
আফসানা
একদিন মোর যে চোখের তারা
আসমানে শুধু তোমার চোখে না-পড়া তারাগুলি গুনত সরায়ে মেঘ—
এখন তোমার হাঁটি যাওয়া সান্ধ্যপথে সঙ্গহারা
তমা তাড়ায়ে তাড়ায়ে পরে কুকুর খেদায় আর্ধেক—
পাছে সারমেয় চটকায় দিন যায় সেই ছলে
তাতে তোমার পায়ের ছাপ সরি সরি যায় কোন শানে
আমার দৃষ্টির তত্ত্বাবধানে
ঘাসের ডগার ছায়াতলে!
এ দৃশ্য দেখার সুযোগ হইল থোড়া শটে
তোমা প্রতি দুর্বলতা পোরকাশ পায় বটে
তা কী আর টেকে ধোপে
তাহা কাটে কে আসি একশ এক কোপে!
আফসানা
তার চাইতে বড় গানা
এই যে এ সূত্রে কতগুলা রঙ ধরে আমার উদিলা পাপড়িতে
গুনতে গুনতে পায় জরা শীতে
রেহাই পাবে নি আঁখি
শুধু ঝরতে বাকি!
বলি যে জহির কিছু একটা হও আগে ছার
তারপর চিন্তা কইরো নির্জনে
ঝরার!
মহাকাশে -২
এইখেনে অন্ধকার যেন বড় একটা কেক
আলো-ছুরি রেডি নাকি?
অন্ধকারের উদ্বেগ!
এ ছিল বা মহাকাশে
অনেক রাতের মধ্যে একটা আলাদা রাত
বুঝে নাই খন্ড অখন্ডের পরম আঘাত!
সমস্যা এই যে দৃষ্ট ন হওনের লাগি এই এত দূরে
অন্ধকারে মিশি থাকতি আইছিলাম!
সেও ভাগ্য এইখানে লুকাইতে আসি
তাদের সাথেই কাটা পড়লাম!
জহির হাসান
সাক্ষাৎকার পুস্তিকা (কবি উৎপলকুমার বসুর সাক্ষাৎকার) : কথাবার্তা (সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬)