আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। মুখ তুলে তাকালেন দবিরউদ্দিন খান।
বয়স হয়েছে। চোখে ছানি। ভাল দেখতে পান না আজকাল। অতিদ্রুত অপারেশন করানো দরকার। কিন্তু হাতে টাকাপয়সা নেই। গতবার লায়ন্স ক্লাব থানা সদরে আই ক্যাম্প করেছিল। বিনা পয়সায় অপারেশন। ওষুধ পত্তর ফ্রি। দবির সাহেব এবারও সেই আশায় বসে আছেন। খোঁজ খবর করেন, এ বছর আই ক্যাম্প হচ্ছে কি না! ছানিটা এবার অপারেশন না করালেই নয়।
উঠোনের এক কোনে বসে শুকনো মুড়ি চিবুচ্ছিলেন দবির সাহেব। সকালের নরম রোদ পিঠে এসে পড়েছে। হালকা শীতে মন্দ লাগছে না। কিন্তু বেশিরভাগ দাঁত পড়ে যাওয়ায় মুড়ি চিবানোটা যুতসই হচ্ছে না বলে কপালে কিঞ্চিৎ বিরক্তির ছাপ।
পা ছুঁয়ে সালাম করে ছেলেটা উঠে দাঁড়ায়।
আমাকে চিনতে পারছেন স্যার? আমি আপনার ছাত্র মতলুব। মতলুব আলী। যাকে আপনি আদর করে মতলববাজ বলে ডাকতেন।
দবির সাহেব ঠাহর করতে পারলেন না।
স্যার, আমি সেই মতলুব যে কোনদিন ক্লাসে পড়া পারত না। যাকে আপনি রোজ জোড়া বেত দিয়ে পেটাতেন। আপনার সেই গাধা ছাত্রটাই আমি।
ঠিক চিনতে পারছি না বাবা। বয়স হয়েছে তো! চোখেও ভাল দেখি না। কোন ব্যাচে ছিলে তুমি?
কি যে বলেন স্যার! আমাদের মতো ফেলু ছাত্রদের আবার ব্যাচ! অনেক ব্যাচের সাথেই পড়েছি। তবে স্যার, ওই যে গাধার টুপি মাথায় পড়িয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। দুই হাতে দিতেন দুইখানা আস্ত ইট। মনে পড়েছে স্যার? কৌতুক মেশানো দৃষ্টি নিয়ে মতলুব তাকিয়ে থাকে।
দবির সাহেব পেছনের দিনগুলো হাতড়ে বেড়াতে লাগলেন। নাঃ মনে পড়ছে না। ভাবতে বসেন আবার নতুন করে। অনেকক্ষণ পর যেন ঝাপসা কিছু একটা মনের পর্দায় ভেসে উঠে। হ্যাঁ, ছিল বটে এরকম হাড় বজ্জাত, বদমাইশের ধাড়ি একটা। যাকে পেটাতে পেটাতে নিজেই হাঁপিয়ে যেতেন।
ভয় পেয়ে গেলেন দবির সাহেব। একসময়কার ডাকসাইটে গণিত শিক্ষক দবিরউদ্দিন খান আজ অসহায়। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। সামান্য শব্দেই কেঁপে ওঠে বুকের ভিতরটা। সব কিছুতেই এখন ভয়। তার উপরে নতুন উপদ্রব, হাঁপানি।
কেন এসেছে মতলুব? বেতপেটা করতেন বলে প্রতিশোধ নিতে নয় তো!
দবির সাহেব সন্তান জ্ঞানে ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। ছিলেন কড়া নীতিবান। ছাত্র পড়িয়ে অর্থ উপার্জনকে ঘৃণার চোখে দেখতেন। তাই চাকরি থেকে যখন অবসর নিলেন তখন ধারদেনা শোধ করতেই হিমশিম অবস্থা। তার উপরে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে প্রায় কপর্দকহীন হয়ে গেলেন তিনি। এখন তার দুবেলা খাবারও জোটে না ঠিকমতো।
দবির সাহেব কি করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। এখন তো কেউ তার খোঁজ খবর করে না। ছেলেটা তাহলে কেন এসেছে? কি চায় তার কাছে!
চিনতে পেরেছেন স্যার! উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মতলুব আলী। চোখে রহস্যময় হাসি।
ন্ না.. হুম.. অস্ফুট জড়ানো গলায় না এবং হ্যাঁ এর মাঝামাঝি কিছু একটা বললেন দবির সাহেব।
যাক, আমার মতো গাধাকে যে আপনি মনে করতে পেরেছেন তাতেই ধন্য আমি। আমি স্যার এসেছিলাম একটা বিশেষ অনুরোধ নিয়ে।
বল বাবা কি অনুরোধ!
আঠারো কোটি টাকা ব্যয়ে রং এর ফ্যাক্টরি দিয়েছি স্যার। প্রোডাকশন টাইম এসে গেছে। আপনার হাত দিয়ে স্যার ফ্যাক্টরিটা উদ্বোধন করাবো। না করতে পারবেন না স্যার। আপনার আশীর্বাদ নিয়ে ব্যবসা চালু করতে চাই। অনুষ্ঠানের চিফ গেস্ট হতেই হবে স্যার, আপনাকে।
আচ্ছা ভেবে দেখি। পুলকিত দবির সাহেব।
সারাটা জীবন শুধু ছাত্রদের অংকই করিয়ে গেছেন। নিজের জীবনের অংক মেলান নি। চিফ গেস্ট বানানো তো দূরের কথা, কেউ আজ তাকে ডেকেও জিজ্ঞেস করে না।
আবার বিমর্ষ হয়ে পড়েন দবির সাহেব। ভুলেই গিয়েছিলেন যে, আজ তিনি হত দরিদ্র। ভদ্র সমাজে যাবার মতো পোশাক, জুতো কোনটাই তার নাই। চোখে ভাল দেখেন না বলে একা কোথাও যেতেও পারেন না। তাছাড়া, গাড়িভাড়াই বা পাবেন কোথায়?
ইতস্ততঃ করতে লাগলেন তিনি। ছাত্রের কাছে এই দুরবস্থার কথা বলবেন কিভাবে!
আপনাকে যেতেই হবে স্যার। কোন কথা শুনব না।
কিন্তু বাবা আমার তো একা একা কোথাও যাবার মতো অবস্থা নেই। কাতরে উঠলেন দবির সাহেব।
ভাববেন না স্যার। আমি নিজে এসে আপনাকে নিয়ে যাব। আর আপনার জন্য উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থাও করব। চিফ গেস্ট আপনাকে হতেই হবে, স্যার।
কর্ণকূহরে যেন সুধা বর্ষণ হল। সাথে সম্মানীও দেবে! দবির সাহেবের বুকের মধ্যে বসন্ত বাতাস দোল খেতে লাগল। মন আছে বটে ছেলেটার। ভাবতে লাগলেন তিনি। নইলে তার দুরবস্থা বুঝল কি করে? দার্শনিক উপলব্ধি হল তার- শুধু পড়াশুনায় ভাল হলেই হৃদয়বান হওয়া যায় না। ঠিক করলেন, যাবেন তিনি মতলুবের অনুষ্ঠানে চিফ গেস্ট হয়ে।
মেয়েকে দিয়ে জামাই এর পাজামা-পাঞ্জাবি জোগাড় করে আনলেন দবির সাহেব। চটি ধার করলেন একসময়ের কলিগ রমেশ বাবুর কাছ থেকে। ভাবলেন সম্মানীটা পেলে পোশাক আর ভাল চটি কিনে ফেলবেন একজোড়া। বলা তো যায় না, আবার যদি কোন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে তার! একদা তো নামিদামি মানুষই তো ছিলেন তিনি।
ভাবতে থাকেন দবির সাহেব, সম্মানীর আকারটা কেমন হতে পারে? শত নাকি হাজার? শত হলে কত, হাজার হলেই বা…. না, তিনি ভাবতে পারছেন না। অনুমান করার ক্ষমতাও আজ তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।
ফ্যাক্টরির সামনে খোলা মাঠ। রঙিন সামিয়ানা টানানো। চৌকি পেতে তৈরি হয়েছে স্টেজ। অনর্গল বক্তৃতা চলছে সেখানে। দবির সাহেবকে নিয়ে মতলুব পৌঁছে গেল সভাস্থলে। মাইকে ঘোষণা চলছে- এইমাত্র আমাদের চিফ গেস্ট, আমাদের প্রধান অতিথি, অত্র এলাকার উজ্জ্বল নক্ষত্র, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত গণিত শিক্ষক জনাব মোঃ দবিরউদ্দিন খান সাহেব আমাদের মাঝে এসে পৌঁছেছেন। আমাদের কোম্পানির প্রাণপ্রিয় চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক, জনগণের সুখ দুঃখের সাথী হাজ্বী সৈয়দ মোঃ মতলুব আলী সাহেব প্রধান অতিথিকে নিয়ে ধীরপদে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছেন। ভাইসব আসুন, করতালির মাধ্যমে আমরা সবাই প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানাই। মুহুমুর্হু করতালির শব্দে সরব হয়ে উঠল প্রাঙ্গন।
মুগ্ধ হয়ে গেলেন দবির সাহেব। এত সম্মান সারা জীবনে তিনি পান নি কখনও। নামকরা কত ছাত্র তার ছড়িয়ে আছে দেশে-বিদেশে। মাঝে মধ্যে মিষ্টির হাড়ি নিয়ে দু’একজন দেখা করে যায় বটে। কিন্তু প্রধান অতিথি বানিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ তাকে সম্মানিত করে নি। জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মানটা দিল তাকে গাধার টুপি পড়া সেই অকম্মার ধাড়িটা! একেই বোধহয় বলে নিয়তি, ভাগ্যের খেলা। নিজের হতদরিদ্র অবস্থার কথা ভুলে গেলেন দবির সাহেব।
মতলুব তার স্যারকে টেনে স্টেজের উপরে নিয়ে গেল। মাঝখানের গোলাপ ফুল আঁকা টাওয়েল লাগানো চেয়ারটায় দবির সাহেবকে নিয়ে বসাল। ছোট্ট একটা মেয়ে হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিল। ঝাপসা দেখলেও আজ যেন তার চোখে সবকিছু কাঁচের মতো পরিষ্কার। না, আয়োজনের আড়ম্বরে কোন ঘাটতিই রাখে নি ছেলেটা।
মাউথপিস হাতে নিয়ে মতলুব সোৎসাহে বলতে থাকে- ভাইসব, আমার রয়েল বেঙ্গল পেইন্টিং ফ্যাক্টরির শুভ উদ্বোধন আজ। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু, আমার সারা জীবনের আদর্শ জনাব মোঃ দবিরউদ্দিন খান সাহেব নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন। আজকের এই শিল্পপতি, সমাজ সেবক আলহাজ্ব সৈয়দ মতলুব হবার পেছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান, সেই স্যারকে পেয়ে আজ আমি আনন্দিত, গর্বিত।
মতলুব এগিয়ে এসে সযত্নে দবির সাহেবের হাত ধরে চেয়ার থেকে টেনে তোলে।
আসেন স্যার। রং এর ড্রামের মুখ খুলে উদ্বোধন করবেন। তারপর সবার উদ্দেশ্যে জ্ঞানগর্ভ একখানা ভাষণ দিবেন স্যার। যাতে সবাই বোঝে আপনি কি জিনিস। রেঞ্জ ধরিয়ে দেয় সে দবির সাহেবের হাতে। রেঞ্জ দিয়ে কি করবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। মতলুব তাকে টানতে টানতে রং এর ড্রামের কাছে নিয়ে গেল।
দেন স্যার। মোচড় দেন। রেঞ্জটা দিয়ে এইভাবে জোরে একটা মোচড় দেন।
মোচড় দেবার মতো শক্তি দবির সাহেবের নেই। তাতে কোন অসুবিধা হল না। মতলুব এবং অন্যদের সহযোগিতায় ড্রামের মুখের প্যাঁচ খুলে ফেললেন তিনি।
ঘটনাটা ঘটে গেল ঠিক তখনই। ড্রামের মুখ আলগা হতেই ভক করে খানিকটা সবুজ রঙ ছুটে এসে লাগল তার পাঞ্জাবিতে। বুক শুকিয়ে গেল দবির সাহেবের। জামাই এর সাধের পাঞ্জাবিটা নষ্ট হয়ে গেল। কি করবেন তিনি এখন? নতুন একটা কিনে দেবার সামর্থ্য তার নেই।
ভাইসব! এই যে দেখেন আমার রয়েল বেঙ্গল পেইন্ট এর যাদু। রং ছুটে এসে লেগেছে স্যারের পাঞ্জাবিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এই রং কেউ কোনদিন আর তুলতে পারবে না। যদি পারে, এই জনসমক্ষে সবার সামনে ঘোষণা দিচ্ছি, তাকে এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেব। আর সেদিনই আমি আমার স্যারকে নতুন একটা পাঞ্জাবি কিনে দেব।
হতাশ হয়ে পড়লেন দবির সাহেব। আশা ছিল আজই নিশ্চয় মতলুব তাকে নতুন পোশাক দিয়ে দেবে। সাথে হাজার দশেক টাকা সম্মানী।
স্যার পাঞ্জাবিটা খোলেন তো।
দবির সাহেবের বুকে আশার সঞ্চার হল। না, ভুল ভেবেছিলেন তিনি। নতুন পাঞ্জাবি নিশ্চয়ই এসে গেছে। ছেলেটা আসলেই মানীর মান দিতে জানে। যন্ত্রের মতো গা থেকে তিনি পাঞ্জাবি খুলে ফেললেন। সেটা মতলুব হাতে নিয়ে সবার সামনে উঁচু করে ধরল।
এই যে দেখেন, আমার পেইন্ট এর গুন। পাঞ্জাবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। রয়েল বেঙ্গল এর মতো থাবা মেলে সুতো আঁকড়ে বসে আছে। এই পাঞ্জাবিটা আমি ফ্যাক্টরির হলরুমে বাঁধিয়ে রেখে দেব। উন্মুক্ত প্রদর্শণীর জন্যে প্রয়োজনে যাদুঘরে পাঠাব। বলতে বলতে মতলুবের নজর গেল দবির সাহেবের গায়ের গেঞ্জির দিকে।
ভাইসব, এই যে দেখেন পাঞ্জাবি ভেদ করে পেইন্ট ঢুকে গেছে স্যারের গেঞ্জির মধ্যেও। এটাও বাঁধিয়ে রেখে দেব আমি। স্যার খোলেন তো গেঞ্জিটা। স্যারের অপেক্ষায় না থেকে মতলুব নিজেই টান মেরে গেঞ্জিও খুলে নিল।
দবির সাহেব ভয়ে ভয়ে নিজের খালি গায়ের দিকে তাকালেন। রয়েল বেঙ্গল পেইন্ট আবার গেঞ্জি ভেদ করে গায়ের চামড়ার ভিতরে ঢুকে যায় নি তো? দবির সাহেবের বুক কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছে যেন আবছা সবুজ দাগ লেগে আছে বুকের নিচটায়। মতলুব যদি দেখে ফেলে কি হবে তখন? গায়ের চামড়াও যদি…
পাজামার দড়ি ধরে ছুটছেন দবির সাহেব। গায়ের চামড়ার সাথে যাতে পরনের পাজামাটাও বাঁচে। এমনিতে তিনি লাঠি ভর না দিয়ে হাঁটতে পারেন না। গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যথা। কিন্তু এখন তিনি উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছেন। বাতের ব্যথা তাকে কাবু করতে পারছে না। দবির সাহেব হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলেন- প্রাণের দায়, বড় দায়।
মাইকে তখন ভেসে আসছে মতলুবের ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর- ভাইসব, আপনারা উতলা হবেন না। আমাদের চিফ গেস্ট, আমার পরম শ্রদ্ধেয় স্যার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমে গেছেন। তিনি ফিরে এলেই বুঝতে পারবেন আমার রয়েল বেঙ্গল পেইন্ট কি অব্যর্থ জিনিস। গেঞ্জি ভেদ করে ঢুকে গেছে স্যারের গায়ের চামড়ার ভিতর। কাঁইচি দিয়ে চামড়া চেঁছে তুলে আমি প্রমান করে দেব, রয়েল বেঙ্গল শুধু চামড়াতেই বসে নেই। এতক্ষণে ঢুকে গেছে স্যারের শরীরের মাংসের ভিতরেও…
মুহুর্মুহু করতালির শব্দ দবির সাহেবের কানে কামানের গোলার মতো আঘাত হানতে লাগল।
খালি গায়ে প্রানপণে ছুটছেন দবির সাহেব। পায়ের চটিজোড়া কোথায় ছিটকে চলে গেছে। দেখার সময় নাই। ভাগ্যিস্ মতলুব এখনও টের পায় নি যে, তিনি বাথরুম থেকে পালিয়ে গেছেন!
লেখক পরিচিতি
বাম চিন্তাধারার যুক্তিবাদী মানুষ। বৈচিত্র আর বৈপরীত্যে ভরা জীবন। হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক, নয়তো সাংবাদিক। হলেন আমলা। ভাবেন নি লেখক হবেন কোনদিন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে লিখে ফেললেন নমশূদ্র সম্প্রদায়ের জীবনধারা নিয়ে গবেষণাধর্মী উপন্যাস ‘নমসপুত্র’। পেলেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা এবং পুরষ্কার। লিখলেন মুক্তিযুদ্ধের অজানা অধ্যায় নিয়ে ‘শরণার্থী’, গণ জাগরণ মঞ্চ নিয়ে ‘দ্রোহের দীপাবলি’, বিলের জনজীবন নিয়ে ‘বিলের জীবন’। লিখে চলেছেন একের পর এক উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিগল্প, ভ্রমণ কাহিণি।
জন্ম ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার প্রত্যন্ত বিলের মধ্যে মধুপুর গ্রামে। বাবার কর্মসূত্রে শৈশব, কৈশোর কেটেছে খুলনা, যশোর, বরিশাল এলাকার বিভিন্ন জেলায়। স্কুল জীবন থেকেই যুক্ত ছিলেন ছাত্র রাজনীতি এবং ‘উদীচী’ ‘খেলাঘর’ এর মতো সংগঠনের সাথে। অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশুনা সম্পন্ন করেছেন টিউশনি আর পত্রিকায় চাকরি করে।
বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। সহকারী সচিব হিসেবে কর্মজীবন শুরু। মাঠ পর্যায়ে ছিলেন ইউএনও, এডিসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিএ, বগুড়ার পরিচালক। কাজ করেছেন উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। অবসর নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। উচ্চতর পড়াশুনা করেছেন লন্ডনে। সরকারি কাজে ঘুরেছেন বহু দেশ। অবসর জীবন কাটে মূলতঃ ঘোরাঘুরি আর লেখালিখি করেই।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আঠারো।