কাফনমোড়া সিংহাসন
টেবিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে খাবার
আবার শূন্য হবে কিংবা ভরে যাবে
ফুলে-ফুলে পরাগায়ন-মস্তিষ্কে ফাঁপা বাঁশির কান্না
চায়ের পেয়ালা উড়ে যাচ্ছে আকাশজমিনে;
তোমরা যারা অনাগত মাটির সহোদর
তারাও একদিন সিংহাসন জয় করবে,
জাদুর বাক্সে লতিয়ে উঠবে জলের ঘূর্ণন
প্রিয় বর্ণমালার মুখে গেঁথে আছে প্রেমের শোকগাথা;
রঙিন আয়োজনে থোকা-থোকা কোমল মুখ
বিরহীর দেহে কামড়ের কাঁচা-কাঁচা দাগ,
পেয়ালামুখ উবু হয়ে আছে জ্বলন্ত উনুনে;
সিংহাসন ঢেকে আছে রক্তাক্ত কাফনে।
বিদ্যাশ্রমে কৌরব হাসি
মাথায় হাত দিচ্ছো—
ভাবছো : বরফ নাকি রোদ
কিন্তু উত্তপ্ত হচ্ছে গাছ…
চুল শুয়ে আছে
দাঁত হাসছে-ট্রাউজার আর
লাল টিশার্ট নুয়ে আছে;
শিশুরা খেলা করছে
তখনো তোমার ঠোঁটে
লাল-পিঁপড়ে-মিথ্যা…
চিপ্স-চিপ্স দৌড়ে
শাদা-পায়রা-প্রেম ওড়ে; বিদ্যাশ্রমে কৌরব হাসি
আর বৃদ্ধাশ্রমে খেলা করে রক্তের ঘনঘোর তামাশা।
জালবন্দি মাছের উত্তপ্ত দেহ
উফ্-তুমি ঘুমিয়ে গেছো!
আমি দেখছি মোবাইল টাওয়ারে
ভিন্ন তরঙ্গে গোপন সিমের উত্তপ্ত দেহ…
ট্রেন উড়ে যাচ্ছে-কিন্তু তুমি পাঁচতলায় বন্দি
টাফনিল টিউমুটিল কারাগারে শিকলাবদ্ধ;
আর তোমার ব্রা-পেন্টি স্টেশনে ঝিমুচ্ছে!
বিশ্বাস আর সন্দেহ জমজ অম্লকলা
পুকুরপালিত মাছেরা শৈশব বোঝে না
জলের ডানায় বসে আছে ঘুমাতুর চোখ;
মোবাইল জ্বলে উঠছে-কিন্তু তুমি পাশ ফিরে
বালিশ টানছো-মিস্ড কলগুলো দীর্ঘ পথে পড়ে আছে;
চোখের কোণে জমাট অশ্রুসিন্ধু-প্র্রেমবৃক্ষের উত্তেজনা।
এলিয়েনের রাজ্যনিবাস
দেখতে-দেখতে রাষ্ট্রপতিরা মরে যাচ্ছে
ধীবর ষাঁড়ের মতো পড়ে আছে বাগান,
হাওরের জলে বানভাসি শিশু ভাসে;
খতিবের বাড়ি কতোদূর-কতোদূর জাতিসংঘ পেন্টাগন শান্তিমিশন
কতোদূর এলিয়েনের রাজ্যনিবাস-কতোদূর মায়াবাড়িছায়া…
গেটান্ধরা তুমুল তামাশা-বারণ-গ্রহণখেলা-অর্জুনের তলোয়ার হাসে;
দেখতে-দেখতে ডুবে যাচ্ছে চাঁদ ক্যাসিনোপাড়ায়
রাষ্ট্রদেহ কাদের হাতপেনিসে ধর্ষিত হচ্ছে বারবার!
প্রতিনিয়ত উড়ে যাচ্ছে বিষ-হাওয়ায় ড্রাগনের চোখ…
আমাদের পায়ে-পায়ে ড্রাগপ্যাডলার
পৃথিবীর সব সীমানাপ্রাচীর ঘিরে মায়াহরিণদল;
উঁকি-উঁকি পাহারায় চারিপাশ ঘিরে দাঁতাল শুয়োর।
শূন্যতায় মনোরোগ
এতো আলো, তবুও অন্ধকার!
মানুষ আর মানুষ; কিন্তু প্রেতাত্মাসম
এতো মানুষ কেনো! কী চায় তারা
কী দেখছে আলোর প্রিজমে…
এতো-এতো থোকা-থোকা গন্দম ফল
বাহারি রঙের লেন্স-নন্দনকানন মঞ্চ-ফাঁকা শব্দ
বিভিন্ন ফ্লোরে লাইট-লাইট উৎসব-লিপস্টিক-কান্না
এতো-এতো এয়ারক্রাফট-হাওয়া বিন্দুবিলাসে;
লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন-হাওয়া-হাওয়া উন্মাদনা
সারি-সারি রুমে পেন্সিল স্কেচ; শুধু একটি মুখ নেই
আলো জ্বলছে আলো নিভছে-লেন্স হারিয়ে গেছে
লেন্স হারিয়ে গেলে বুঝি চোখ অন্ধ নাকি সবই অন্ধ!
পরিচিতি
মাহবুব মিত্রের জন্ম নেত্রকোনা জেলার ১লা ডিসেম্বর ১৯৮১তে। বাবা মতিউর রহমান চৌধুরী ও মা জয়গুননেসা বেগম চৌধুরী। লেখাপড়া: ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স, মাস্টার্স। প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থ :
১. জননীর করতলে কবিতার মিছিল ২. অমীমাংসিত কবিতার রক্তাক্ত সংলাপ ৩. আমি নীল পাহাড়ের গান ৪. ভালো থেকো নীল আকাশ ৫. শাদা কফিনে মেঘের শব্দ ৬. মার্বেল পাথরের গহীন ছায়া ৭. জলের নিচে অনন্ত দুপুর ৮. গ্লাস ভর্তি নীল ছায়া
কথামালা বা উক্তির বই ৪টি : ১. আমার বিশ্বাস আমার অবিশ্বাস ২. আমার বিশ্বাস আমার ভাবনা ৩. টুকরো কথা সত্য সংলাপ ৪. আমার কথা উড়াল পাখি
সুন্দর লেখনী …নেত্রকোনা আমার মায়ের বাড়ী