প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
অনেক প্রাপ্তিতে যোগ্যতা লাগে না,
যেমন; গরুর গর্ভে গরু, রাজতন্ত্র বা ব্রাহ্মণ্যবাদ!
তা-বলে বলছি-না, সকলই এমন,
তবু বিজেতারা ইতিহাস লেখে বলেই;
পরাজিত সৈনিকের কপালে ঘৃণার সিলমোহর দাগা।
সাফল্য বা ব্যর্থতা-এক শুভঙ্করের চরম ফাঁকি,
লঞ্চডুবিতে দক্ষ সাঁতারুও মারা যেতে পারে!
তবু দ্যুতিময় হীরায় অঙ্কিত থাকে গভীরতম খননের ইতিকথা।
অলক্ষে মুদ্রিত কাচঘর
দেয়ালে যে হাসিমুখো পোস্টার;
তার আড়ালেও থাকে কান্নার অভিধান!
দৃশ্যের অলক্ষ্যে হেঁটে যায় কত-শত শব্দাবলী—
ভিলেনের মৃত্যুর আগেই প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করে যে দর্শক;
তারও আস্থায় থাকে নায়কের জয়।
অথচ চারদিকে; বিয়োগাত্মক কাহিনির জয়জয়কার!
অভিনেতার জীবন;
ঝিরঝির টিভিস্ক্রিনে দেখে চলেছি, স্বচ্ছটিভির বিজ্ঞাপন!
সচিত্র প্রতিবেদন
বর্ণমালা পরিচয় পর্বে ছবির সংযুক্তি, অবশ্যই যুক্তিযুক্ত,
এ-তো গেল বাল্যপাঠে।
বিখ্যাত কবির সঙ্গে ছবি ছেপে;
নিজেকে বিখ্যাত কবি ভাবে কেউ-কেউ!
বাজারে স্টুডিওতে দেখি, ক্যাটরিনার সঙ্গে পাংকু তালিবের যুগ্মছবি!
আর দলীয় পোস্টারে-তো, বড়ো থেকে ছোটো ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে
লেখার মতো নগ্নমুখের বহর।
অথচ মূর্খও বোঝে; অভিকর্ষ বল প্রমাণে নিউটনের ছবি নয়, সূত্রটাই মুখ্য।
শার্ট
অতিশ্রেণি বাদ দিলে,
শার্ট মানে— গায়ের ওপর একটা আলগা কাপড়ের আস্তরণ;
চেনা ঘামের ঘ্রাণ,
টুকরো কাপড়ের সম্মিলিত কারুকাজ—
যার পকেটে লুকিয়ে থাকে একেকটা সংসারী গল্প।
আর হাত থেকে পকেট-তো কারো কাছে, মহাকাশ সমান দূরত্ব!
বোতাম আর বোতামঘর?
সে-তো, পোস্টমর্টেম শেষে জুড়ে দেয়া একেকটা দরকারি সেলাই।
আমরা ঘাড় পাল্টাতে পারি-না বলেই;
দুরারোগ্য ক্ষত নিয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে কোনো-কোনো কলার।
ত্রাণ
যেহেতু স্বপ্নই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা, সেজন্যই হয়তো বেঁচে থাকা!
ওদিকে;
আশ্বাসে ভরে ওঠে আশ্বস্তের গোলা।
বৈশাখে কম্বল বিতরণ কর্মসূচি কতোটা যৌক্তিক; সে প্রশ্নে না-হয় নাই-গেলাম।
বরাদ্দকৃত ত্রাণ বলতে আমাদের ভাগে;
বাঁহাতে আলু ও একপ্যাকেট চিনি,
আর ডানহাতে ডায়াবেটিসের প্রেসক্রিপশন।
বিনয় কর্মকার
জন্ম ১৯৭৩ সালে, মানিকগঞ্জ জেলার যাত্রাপুর প্রামে। বাবা নিতাই চন্দ্র কর্মকার, মা পূর্ণিমা রানী কর্মকার। শৈশব থেকেই স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে বেড়ে ওঠা এক সংগ্রামী জীবনের বাহক হয়ে প্রতিক্ষণ মিশেছেন প্রকৃতির সাথে, মানুষের সাথে। বিনয় কর্মকার লিখেছেন শৈশব থেকেই। শিক্ষা বলতে প্রকৃতি, মানুষ ও জীবন পাঠ। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : সুবর্ণ বন্দর (২০১৭); পরগাছা বা রোদসকাল (২০১৮); চেনা কোনো সংকেত নেই (২০২১)
কবিতা ছাড়াও নিয়মিত লিখে চলেছেন গীতিকাব্য, অণুগল্প, ছোটোগল্প ও রম্যরচনা।