কথোপকথন
পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
-হুমায়ুন আজাদ
গোমর ফাঁস হলে গোবর মারে মুখে,
অমন তরুণীর সঙগ আর নয়।
আমি তো নই স্বামী, সন্ততির দিকে
তাকিয়ে কেটে যাবে আয়ুর বাকি ভাগ!
কী সব ক’য়ে তেলেবেগুনে জ্বলতেই
আমাকে প্ররোচণা দিস কি চোখ বুজে?
কতক বন্ধুর ভিডিও চ্যাটে মেতে
দুষ্টুমির স্বাদ লুটছি অবসরে।
এতেই সন্দেহে, পুরুষ ব’লে তুই,
আলিঙগন ভুলে বিরাগে তৎপর!
না, মেয়ে, দুর্মুখ, ওদের নামধাম
লুকিয়ে বিঁধেছিস আমাকে নিগ্রহে।
নইলে গোলযোগ অন্য কোথা আর
অথবা ব্যত্যয় কিসের, তোর ধ্যানে!
আমার দুর্নামে মুখর কেন তোর
লোকেরা তল্লাটে! এমন অপমানে
কিভাবে নির্দ্বিধ থাকিস কালাকালে!
নারীর মর্যাদা বিষয় নয় মোটে?
হাওয়ার পুরোভাগে ছুটিছে কতো কথা!
কুসুর কেন তবে আমারই শুধু আজ!
তাছাড়া বউ নস কারোরই আজও তুই।
তবুও ডর কিসে হরেক রটনায়?
ফন্দি টের পাই, সেয়ানা তুই কতো!
শাদি কি সম্মান রাখার মাপকাঠি?
দোস্তপ্রীতি তোর প্রশ্নসাপেক্ষ,
রটিয়ে দেই তবে পবনলেজেমুখে?
আমার বদনামে বিয়ের পথরোধ?
বিবাহ-পরোয়ানা মানি না কখনোই।
ওসব ভুলে চল বুকের পর্বতে
হারাই তোর, খুলি আমার দরবার।
তোদের আছে শুধু মিনার লালসার।
নিকটে না এলে যে মায়াও কারাগার!
৩০ এপ্রিল ২০২১
চট্টগ্রাম
আলাপন
আমাকে মন্থনে কী মজা মেলে তোর,
খুন্তি হেনে আর প্রবল মর্দনে!
অথচ নির্মাণশ্রমিক বলে তুই
বালু ও সিমেন্টে আকর্ষণহীন।
সেসব তো পোশাকে, গায়েও আছে ধূলি,
দেখেই তোকে তবু আলিঙ্গনে বাঁধি।
মিলনযুদ্ধেই গোসল সমাপন।-
কহিব কতবার? বেকুব মেয়ে, হায়!
নোংরা নই, তাই সাফাই চাই শুধু,
চাহিদা আর কিছু এখনো নাই মোর।
আমি কি চাঁদ থেকে নেমেছি দুনিয়ায়,
ত্রিনভোচারী হেন বালি ও পাথরের
শুল্কায়ন সেরে ফিরতে হবে দেশে?
কেননা অপরাধী তোমাকে ভালোবেসে!
৩১ মার্চ থেকে ০১ এপ্রিল ২০২১
চট্টগ্রাম
উভয় সংলাপ
কোন্ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তবে পাথরে বসেছিলাম!
দেহে বাহুল্য জামার থাকেনি, উরুসন্ধির থোকা
অল্প না দেখে মুঝে উন্মাদ ভেবে যায় দূরে কারা?
জানার আগেই কে তুমি লহর তুলে বহমান, হেঁটে?
এসব কী কহ! চলমান আমি, নই রে তরঙ্গিত!
তোরই প্রেরণায় অনাবরণের সাধ সত্ত্বেও দেখা,
ঘণ্টি এবং ঘন রেশমের সব সিমেন্টে ঢাকা!
নির্মাণশ্রম সেরে বিশ্রাম স্নানের অপেক্ষায়?
ধুর, নির্বোধ মেয়ে কোথাকার! শরমে সৌরধূলি
না চিনে তফাতে কেন যাও সরে করতলে ঢেকে খনি!
জানো কি মিলনসমরই গোসল, আর, বাহুল্য সব?
চল্ বর্তুল দুই বুকে আগে মুখখানি মোর ঘষি।
শখ কত তোর! আগে বল, বেটা, এসেছিস কোথা হতে।
গুম্ফ দিঘল, দুই বাহুমূলে এত জঙ্গল কেন!
স্বেচ্ছায় আসা হয় না যেমন তেমনই বন্যজাত,
যতই পোশাকে আত্মগোপনে সচেষ্ট থাকা আজও!
মঙ্গল গ্রহে হারানো হ্রদের চিহ্নে স্মৃতির রতি
যা ছুঁয়ে এসেই লাল পর্বতকিনারে এখনো আমি।
তাই কি গৌর গতরে অহং, দুধে আলতার ধার?
গ্যালাক্সিযুবা? ডানা কই তয়? থাক, তবু কাছে আয়।
চল্ দু’য়ে উড়ি রমণাবদ্ধ, বাড়াই প্রেমের ঋণ;
শূন্যে, ভূ-ভাগে অঙ্গশ্রমিক, আর কী বেহতেরিন!
২১-২২ মার্চ ২০২১
চট্টগ্রাম
কোভিডকালে স্বরবৃত্ত অথবা প্রেমের শখ
মাস্ক পরিনি সোনার, মুখোশ রুপারও যে নাই!
সার্জিক্যালেই মুখটা ঢেকে তোমার সাক্ষাৎ পাই।
হঠাৎ হিজাব, শল্যবিদের বর্ম অন্য কালে,
এসেই কেন নিষেধাজ্ঞা হানো এই কপালে!
পুরুষ পাখি না হলেও জানি না নাচতে,
অমন নই রে। কোকিল কণ্ঠে মাঘেও পারি গাইতে।
বহুবর্ণিল মরদ পক্ষীর কোথায় বেগুনি রঙ
যাতে তন্বী মুগ্ধ, দেখে হবু সঙ্গীর ঢঙ?
বাজ-শকুনের আড়ালে যা রূপ সে আমার আছে;
মানুষ বলেই অপ্রকাশ্য, তোর যদিও কাছে!
সারা অঙ্গে থাকলে পালক কি আর অমন লাগে!
স্বয়ংবরার নির্বাচনে উল্লাস পুরোভাগে।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
চট্টগ্রাম
চুমু
বলাৎকারক, চিনবি না তুই বিবস্ত্র যদি হই,
চিতা বাঘিনির রঙ মেখে গায়ে চলি একা রাস্তায়।
অধিক অচেনা হতে পারি দেহে ঢেলে সুমেরীয় বালু
কিংবা ওষ্ঠে ওদেরই ধরনে লেপ্টে কালচে লাল।
এতে কি গণিকা সন্দেহে তোরা এগুবি দেখিয়ে গোঁফ?
পতঙ্গ পিষে দু’ঠোঁটে মাখবো ক্লিওপেট্রার হেন।
না, ধনী নারীর প্রতিনিধি নই, ঘৃণা সব বনেদিকে।
জিহ্বা চুমুর প্রশ্ন আসে না, ফ্রেঞ্চ কিসে নেই সায়।
বেদযুগে কারা প্রথম অদেখা চুম্বনরেখা আঁকে
জানার আগেই, ব্রেজনেভ আর হোনেক্কা*, দু’য়ে খেলে
গভীর সমাজতান্ত্রিক ঠোঁট পরস্পরের খুব,
তারই ফাঁকে কোনো জুডাস এসে কি আমার মুখে বা গালে
সখ্যের ছলে গাঁথবে তীব্র দেহাবসানের চুমো?
*১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লিওনিদ ব্রেজনেভ তৎকালীন পূর্ব জার্মানির এরিক হোনেক্কার ঠোঁটে, এক জমকালো অনুষ্ঠানে, সমাজতান্ত্রিক ভ্রাতৃত্বমূলক চুম্বন’রীতি অনুসারে, চুমু খান। আর, জুডাস প্রসঙ্গে বলে রাখা যায়, বিশ্বাসঘাতকের চুমো ‘মৃত্যুর চুম্বন’ ব’লে অভিহিত হয় ইতিহাসে।
রাত-ভোররাত, ২৬-২৭ অক্টোবর ২০২০
চট্টগ্রাম
খালেদ হামিদী
জন্ম: ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৩। জন্মস্থান: বাদামতলী, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। শিক্ষা: ব্যবস্থাপনায় স্নাতক (সম্মান): ১৯৮৫; স্নাতকোত্তর: ১৯৮৬; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা: প্রকাশনা বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
কাব্য (০৭টি): আমি অন্তঃসত্ত্বা হবো (ডিসেম্বর ১৯৯৯; একান্তর); হে সোনার এশীয় (ফেব্রুয়ারি ২০০৪; অনন্তর); মুখপরম্পরা (ফেব্রুয়ারি ২০০৭; লিটল ম্যাগাজিন); ধান থেকে শিশু হয় (ফেব্রুয়ারি ২০১০; বাঙলায়ন); স্লামমডগ, মিলিয়নার নই (ফেব্রুয়ারি২০১৩; প্রকৃতি); তুমি কি রোহিঙ্গা মাছি (ফেব্রুয়ারি ২০১৮; খড়িমাটি) এবং
ঘুমোই চশমা চোখে (জানুয়ারি ২০১৯; ঋতবাক; কলকাতা; ভারত)।
গল্প (০১টি): আকব্জিআঙুল নদীকূল (ফেব্রুয়ারি ২০১২; প্রকৃতি)
উপন্যাস (০১টি): সব্যসাচী (ফেব্রুয়ারি ২০১৭; বেহুলাবাংলা)
প্রবন্ধ (০৩টি): কবির সন্ধানে কবিতার খোঁজে (ফেব্রুয়ারি ২০০৭; অনন্তর); না কবিতা, হাঁ কবিতা (ফেব্রুয়ারি২০১৬; খড়িমাটি এবং চেনা কবিতার ভিন্ন পাঠ (ফেব্রুয়ারি ২০১৯; খড়িমাটি)।
অনুবাদ (০১টি): ওঅল্ট হুইটম্যানের কবিতা (ফেব্রুয়ারি ২০১৬; খড়িমাটি)
পুরস্কার: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ২০১৯ ও শালুক বিশেষ সম্মাননা পদক ২০১৯।
পাঁচটি কবিতাই অসাধারণ
এক একটি কবিতার বিষয় আঙ্গিক অনন্য