১.
তাড়াহুড়ো করে জুতায় পা গলিয়ে লেস বেঁধে দাঁড়ানোর পর ডানপায়ে প্যাচপেচে কিছু বোধ হলে জুতো খুলে ভেতরে মৃত তেলাপোকাটিকে দেখতে পেলাম। বিরক্ত হয়ে সেটাকে মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার জুতোটা পরে নিলাম।
২.
মা বাজারের ব্যাগটা ধরিয়ে দিতে দিতে মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোর চশমার কাঁচ দুটো তো নেই!”
” বাইরে যাচ্ছি, যদি কিছু দেখে ফেলি!”, আমি গম্ভীর মুখে বলতে বলতে এগিয়ে গেলাম।
৩.
রাত ন’টার খবর দেখা শেষ করে লোকটি হামাগুড়ি দিয়ে শোবার ঘরে গিয়ে আয়নার সামনে সটান দাঁড়িয়ে আয়নার কাঁচে একদলা থুতু ছিটিয়ে দিলো।
৪.
লোকগুলো আমার ঘরে এসে ঘরের সব আসবাব তুলে নিয়ে গিয়েছে। আমি এখন মাটিতে ঘুমাই, কিন্তু আমার ঘরের সামনের রাস্তায় তারা একটা সুদৃশ্য ফোয়ারা তৈরি করে দিয়েছে।
৫.
সবাই গিয়ে নদীটায় ঝাপ দিচ্ছিলো।কেউ সাতার জানে, কেউ জানেনা। কিছু মানুষ পুল বানানোর চেষ্টায় ছিলো, তাদের কেউ সাহায্য না করায় তারা কিনারায় বসে দুহাতে নাক টিপে চিৎকার করছে। দু’ধার থেকে মাইক নিয়ে কিছু মানুষ সবাইকে যার যার দিকে ডাকছে। কয়েকজন আবার নৌকা নিয়ে গিয়ে ডুবন্তদের ঘুমপাড়ানি গান শোনাচ্ছে। আমি ওপরে বসে দেখছি, এরা সবাই মিলে এই নদীটায় আমায় বহু আগেই ডুবিয়ে মেরেছে।
৬.
দুটো ডুমুরের ফুলের বদলে শেষ অব্দি সে চাঁদটা কিনতে পারলো। এখন এটাকে ঘরে নিয়েই বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে।
৭.
মৌমাছির কামড়ে অস্থির লোকটি যখন সাহায্য চাইতে গেলো, ওরা চাকু নিয়ে তাকে তাড়া করতে লাগল। চকচকে চোখে কেটে দেখতে চাইলো যে তার শরীরে রক্ত আছে নাকি মধু।
৮.
ওরা এখনো বলেনি ওরা আমাকে নিয়ে কি করতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করেছি। একবার, দুবার, বারবার। আমায় ওরা বলেছে চিন্তা করতে, যত খুশি। চারিদিকের সমস্যা নিয়ে কি করা যায়, চিন্তা করতে। আমি শেষবারের মত জিজ্ঞাসা করলাম। ওদের একজন এগিয়ে এসে বলল, “চিন্তা নেই, চিন্তা করুন। আপনি চিন্তা করবেন, আমরা শুধু প্রসঙ্গ বদলে বদলে দেব।”
৯.
এক গামলা ভাত নিয়ে লোকটি বসে আছে। তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে একজন। সব ভাত আজকে তাকে খেতেই হবে। লোকটি মাথা তুলতে পারছেনা, ঘাড়ের ওপর পা দিয়ে বন্দুকের মালিক বসে আছে। মাথা তুলতে পারলে সে বলত যে সে ভাত নয়, তরকারি চেয়েছিলো। ভাত তার কাছেও আছে।
১০.
পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছাপা হওয়া তিন কলাম জুড়ে থাকা ধর্ষণের খবরটার বিবরণ পড়তে পড়তে দ্রুত লুঙ্গির ভেতর হাত চালাতে থাকে লোকটি। “বেশ্যা, বেশ্যা, বেশ্যা।”
দিলশাদ চৌধুরী
জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৭ এপ্রিল, বরিশালে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেছেন বরিশালেই। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগে সম্মান তৃতীয় বর্ষে। বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই কিন্তু বিশ্বসাহিত্যের চাবিকাঠির সন্ধান পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। কাজ করছেন অণুগল্প, ছোটগল্প এবং অনুবাদ নিয়ে।