মিউট
একটা ঝাপসা রাতের ভেতর জুড়ে বসে আছে
আরেকটা কুয়াশা মোড়া রাত।
মর্মরের ঘুঙুর বাজার অপেক্ষায় খোলা ছিল একটি জানালা।
তখন।
যখন আমরা শিখে নিয়েছিলাম
অন্ধকারের স্যাঁতসেঁতে আলোয়ানের ভেতর থেকে কিভাবে সবুজ পায়রা
ওড়াতে হয়,
প্রবল হিমের ভেতরে বেড়ালের ওম মাখা পশমি আমেজ।
ঘোর মহুয়া আর মাদলের মাতাল তালে বেজে যাচ্ছে কেউ।
আমিতো সব মিউটেই দিয়ে রেখেছিলাম!
নদীর প্রকৃত নাম
পাশ থেকে খুব সন্তর্পণে উঠে চলে গেলে কেউ ;
ধুলোয় কেবল একটুখানি পদচিহ্ন আঁকা থাকে,
কোন পদধ্বনি বাজে না।
একটা হাহাকার গড়িয়ে গড়িয়ে নামে জলের তারল্যে
তবু পাথরের কাঠিন্যে হাত রেখে বসে আছি।
ছায়াটাকে দু’ ভাগ করে,
এক খণ্ড যত্রতত্র বিলিয়ে দিয়েছি
বাকীটা নাহয় থাকলো আমার কাছে।
সব খেলার একটা শৈশব থাকে ; পুতুল এবং ঘুড়ির সময়কাল।
হয়তো কোনদিন কোথাও লেখা হবে ঘুড়ি ও পুতুলের গাঁথা।
পদ্মা, পিয়াইন যে নামেই ডাকোনা কেন
নদীর একটাই নাম ; তরঙ্গ-বিলাসী। শুধু ঢেউয়ের ভাঙ্গন।
দৌড়
দীর্ঘশ্বাসগুলো জমা রাখি না;
ভোর হলেই মুঠো খুলে ছড়িয়ে দেই।
সিঁড়ি উঠতে গিয়ে দেখি, প্রথম ধাপেই
শুয়ে আছে সতর্ক ডোবারম্যান পিনশার
কানখাড়া, গুটান লেজ
মুহূর্তেই হামলে পড়তে পারে;
ভঙ্গিমায় একথা সুস্পষ্ট।
সেই থেকে সিঁড়িঘরে গিয়েছি আটকে;
সিঁড়িপথ ভুলে গেছি।
কেউ কেউ, খোলাচোখ আকাশে নিবদ্ধ
মুক্তকচ্ছ
রণপায় দৌড়ায়।
বলতে ইচ্ছা হয়-
থামো, এতো দ্রুততার কিছু নেই।
পিছলালে তোমারই পতন।
কোন দৌড়াকাঙ্ক্ষীকে কখনো
‘ধীরে চলো’ একথা বলতে নেই।
রাতের পৃথিবী
কোন কোন ঘুম ভাঙ্গা রাতে দেখি
পৃথিবীটা নি:সম্বল ভিখিরির মতো
ফুটপাথে কানা উঁচু থালা পেতে বসে আছে।
তন্দ্রাবেশে কুয়াশাভেজা নিস্তেজ রাত।
বাতাসের গায়ে গন্তব্যের প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে
একটি নিশাচর পাখি উড়ে গেলে; তুমুল
পাখসাটে হু হু করে বাজে অস্ফুট ব্যথাচ্ছন্ন এক সুর।
কখনোবা মানুষও তো পরিযায়ী পাখি!
শোনা না শোনার দোলাচলে হিস হিসে ধ্বনি বাজে ;
ঝলসে ওঠে রাতের চাবুক।
একটা প্রকাণ্ড কালো মাকড়শার মতো
কিলবিলে দশপায়ে হেঁটে যাচ্ছে জমকালো রাত।
যেতে যেতে কোথাও কী কিছু ফেলে গেলো কেউ
একটি পত্র? এক ফোঁটা বিষ?
ভাইপার
খুব জরুরী কিছু এন্টিভেনম ;
একটা র্যাটলসাপ বারবার ছুঁয়ে যায়
ঘুমের শিথান ।
স্বপ্নের ভেতরেও তার ঘিনঘিনে ছোঁয়া ।
এখানে কোন প্রবলআকর্ষক ঘ্রাণ নেই,
নাগবাঁশি বাজায় না কেউ।
বারবার কেন আসে এই ঘৃণ্য সরীসৃপ?
কোথা থেকে?
তবে কী
অক্ষরবিন্যাস থেকেও বের হতে পারে
বিষাক্ত ভাইপার
দিতে পারে প্রাণঘাতী দংশন?
চিহ্নিত করিনি সাপের জন্মস্থান
হতে পারে সেটা তোমারই তর্জনী।
নাজনীন খলিল
জন্ম ৬ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে, বাংলাদেশের সিলেটে।
পড়াশুনা সিলেটেই, সরকারী মহিলা কলেজ এবং মুরারীচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ(এমসি কলেজ) থেকে স্নাতক।
লেখালেখির শুরু ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। তখন থেকেই রেডিও বাংলাদেশ সিলেটের একজন নিয়মিত কথক, গ্রন্থক এবং উপস্থাপক। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি সম্পাদনারও কাজ শুরু। সাহিত্য-সংস্কৃতি মাসিক ‘ সমীকরণের’ নির্বাহী-সম্পাদক হিসেবে ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনধারা নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক ছিলেন। লেখালেখির বিষয়বস্তু মূলতঃ কবিতা এবং কথিকা।
প্রকাশিত কবিতার বই:পাথরের সাঁকো; বিষাদের প্রখর বেলুনগুলো; ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ; একাত্তর দেখবো বলে(ব্রেইল,যৌথ);গুপ্তপধানুকী অথবা মাংসবিক্রেতা।