ডায়েরী ডে’জ: বৈশাখী নার্গিস

ডায়েরী’জ অফ মার্চ ২৫।৩।২০১৯

আসলে গদ্য আমার ভালোবাসা নয়। কিম্বা নাটকীয় সংলাপ। কাব্যিক ধারাবিবরণী বাদ দিলে আর কি যে লিখে ফিরি ছাই। ওসব কারো কারো মাথার ওপর দিয়ে যায়, আর আমি ভাবি সব বুঝি পড়ে বাহবা জানাবে। আর পিঠ থাবড়ে বলবে বাহ, এই তো জমে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন খুব একটা ভালো ছিলাম বলে মনে হয় না। মাথা ব্যথার একটা চরম সীমা থাকে। যেহেতু সবকিছুর একটা সীমা আছে। অবশ্য আকাশের নেই। না এক্ষেত্রে যদি আমি হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে ভেবে নিই আজ বৃষ্টি আসবে। আর কাঁচের ঘরে বসে বৃষ্টিতে ভিজব। সঙ্গে গুনগুন করব… আজা সানাম মধুর চান্দনীমে হাম… হে হে বাবুমশাই পিকচার বহত বাকি হ্যায়।

ওসব নাহয় বাদ দিলাম। এইমুহুর্তে জ্যাক দা পাইরটকে নিয়ে ভাবছি। একটা ছাদের উপর দাঁড়িয়ে। না না দাঁড়িয়ে নয় শুয়ে শুয়ে ভাবছি… আমার সঙ্গে এরকম পাগলামি কেউ করতে পারবে কি। হ্যাঁ হয়ত পারবে। তারপর জাহাজের ডেকের উপর থেকে গাইবে… আচ্ছা জ্বী ম্যায় হারি চলো… মান জাও না। এইসব কথার কথা। জ্বর আসছে। সেই সঙ্গে ঝড়। অকালে তো সব কিছুই আসে। সেল চলছে মশায় সেল। এসো তাঁর চেয়ে ব্ল্যাক হোলের দিকে চেয়ে থাকি। একটা অন্ধকার পথ, একটা সমুদ্র প্রমাণ চিন্তা মাথায় নিয়ে সেই পথে হেঁটে হেঁটে অনেক দূর যাই। হাতে ছাতা না থাকলেও কারো হাত হলেও চলবে। মাথার উপর খোলা আকাশ। এই চুপ চুপ। আকাশেও এখন স্যাটেলাইটের দৌরাত্ম্য। এখুনি যদি কাকেশ্বর কুচকুচে এসে কা কা করে কিছু জানিয়ে যায়… তুমি একটা ছায়া মাত্র। অস্তিত্ব বলতে শুধু কিছু শব্দ।তাহলে তুমি কি! শাব্দিক চলাচলে খানিক কাব্য করে বলি… এসো এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।

২৬.৩.২০১৯

এই যে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছি। তাঁর সঙ্গে সরে যাচ্ছে ছায়াগুলো। এক এক করে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জমে যাচ্ছে পোকা। ওষুধ তো নয়। পার্ট অফ থেরাপি। টয় ট্রেনে চেপে আইসক্রিম খেতে গিয়ে তুমি আবার ভাবছ ড্রাগ অফ চয়েস। আসি তবে। বিগ স্ক্রিনে এখন গেম অফ থ্রোনস। বাদুড়ঝোলা হয়ে বরং ট্রাফিক কাটিয়ে এগিয়ে চলি। একটা গঙ্গাফড়িং ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে থাক। গদ্যের চারদিকে আবছা অন্ধকার। রক্তচোষা মোটা ফর্সা গিরগিটি ভোকাল কর্ডে শুরু করুক গুলাম আলি।

বরং গদ্যের চিবুকে ঠোঁট রাখি। নীলকন্ঠ এবং অসমাপ্ত গল্পের শুরু থেকে শেষ শুধু ভালো না লাগার এক দুই তিন। এরপর দলবাজি কথায় একদম সময় অপচয় নয়। আজকাল বড়ো সস্তায় সব শক্তি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ব্ল্যাক হোল গিলে নিচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। এসব একদিন বিলিয়ে দেব। চোরাগোপ্তা আক্রমণে শান্তি ফিরিয়ে আনব। উরনচন্ডি আত্মার শান্তি কামনাও হতে পারে লিখিত চুক্তি। ক্রোমোজোম থেকে সাইটোপ্লাজম। সবার থেকে দূরত্ব ক্রমশ বর্ধমান। নিঃশর্ত আবেগ চাই। গদ্যের গায়ে লালা ঝরে পড়ছে। লোলুপ চোখে তীব্র অহংকার। আমার কিংবা তোমার বিভোর বিমুগ্ধতায় একটা ট্রেন চলে যায় কুয়াশার মতো।

গীতা কিম্বা বাইবেল কিম্বা কোরান সব নক্ষত্রের উল্লাসে মেতে ওঠে। গদ্যের গায়ে সীমেন ছড়িয়ে বেরিয়ে যায় কালপুরুষ। আত্মহত্যার কাছাকাছি যেসব গল্পকথা ছিল, মুখ লুকিয়ে নেয়। সন্ধে নেমে আসে। তারপর নিঝুম রাত মাঠের ভেতর। বিজ্ঞাপন জুড়ে কেবল বৃষ্টি আর বৃষ্টি। ক্যাবচালকের বুকে বেজে যায় গান.. ইয়ে রাত ভিগি ভিগি…তুমি জেনে যাও অর্ধেক আকাশ শুধু তোমার। প্রচন্ড ঝড় সামলে বেঁচে আছে যে গাছটা। আমি তার নাম দিই শিহরণ। এসব কাব্যিক তত্ত্বকথার ভেতর জমা হতে থাকে আরও ইতিহাস। ফুরিয়ে ফেলার ভেতর পর্দা টেনে দিয়ে বলি। গদ্য তুমি কালপুরুষের কবিতা হয়ে ওঠো। আমি কলম তুলে নিই। নিভিয়ে দিই মোমবাতি ।

২৭.৩.২০১৯

সকাল ধিকিধিকি জ্বলে ওঠে চায়ের ঠেকে। আজ আড্ডা জমবে বেশ। কয়েক পশলা বৃষ্টির পর আহ্নিক গতি নিয়ে আলোচনা শুরু করি। কাল কিম্বা আজ মিলিয়ে কত মিলি মাইক্রন সেকেন্ড তুমি ভেবেছ আমার কথা, আমি সেই তাত্ত্বিক আলোচনায় যাই না। ডচ কাটিয়ে ময়দানের হাওয়া খেতে বসি। সঙ্গে বায়োডাটা। সবুজ ঘাসের ফাঁকে খুঁজে ফিরি কালপুরুষের সন্তান।

সমস্ত ভালো থাকাগুলো নোটবুকে টুকে রাখি। জামায় লেগে থাকে পিরিয়ডিকাল মেটামরফোসিস। ঘুরে ফিরে আসে গদ্য। দাম্ভিক তার চলাফেরা। যদিও জানি এখন সে গর্ভধারণ করেছে। তাই ঠোঁট উল্টিয়ে হাসি। কলারে লেগে যায় বোহেমিয়ান জীবন। আমি ক্যালিফস খেতে বলি তাকে। আর গভীর নিশ্বাস। আমার কেবলি মনে হয় তেতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ি। অনুভব করি গর্ভযন্ত্রণা। গদ্য মুচকি হাসে। হাসির মধ্যে অদ্ভুত মায়া। আর অপেক্ষা করিনা। চুপচাপ তারকভস্কির আলাপে চলে যাই। পাক্ষিক কথাবার্তায় ঠিক হয়, আগামী কয়েকদিন তাকে নিয়েই থাকব।

যদিও ঘোষণা করা হয়েছে, সময়টা টিপ ছাপের। পেনড্রাইভে নিয়ে রাখি মুহুর্ত। গদ্যের আর সময় হয় না। গঙ্গার ঘাটে চুপচাপ বসি। প্রেসার বেড়ে চলে। সিগারেটের খাপে অন্যকিছু। ডক্টর বলে এই সব নার্সিসিজমের লক্ষণ। সাদা চাদরে ফুল এঁকে নিই। মা একসময় বলত, বড়ো হলে সব বুঝবি। আজ সব ফাঁকা। ব্যালট পেপারে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। যেভাবে পরিক্ষার খাতায় চুমু এঁকে রেখেছিলাম। গল্পের শুরু এভাবেই। গদ্য রোজ হাঁটতে বেরোয়। কালপুরুষ রাতে আসে সমস্ত কাজ সেরে। ওষুধের মাত্রা বেড়ে যায় আস্তে আস্তে।

হাত রাখি হাতে। এখন আমি সুবোধ। অবলীলায় হেঁটে হেঁটে ফিরি ন্যাশনাল লাইব্রেরী থেকে কলেজ স্ট্রিট। মাঝে মাঝে কান্না পায়। সমস্ত সত্যি একদিন মিথ্যে হয়ে যাবে। বুকের ভেতর ঘূর্ণি তুলবে সন্ত্রাসী মন। চিবুকে ঠোঁট রেখে গদ্যের চোখে ঘুম রেখে যাব। আর ভেবে নেব আমি কিছুই লিখিনি কখনও। স্নায়ুর ভেতর দৌড়ে যাবে সহজ উচ্চারণ।

 

বৈশাখী নার্গিস

জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯৩। বসবাস কলকাতা। পড়াশুনো সংস্কৃত-এ মাস্টার্স। বর্তমানে লেখালিখি এবং সম্পাদনার কাজে যুক্ত। লেখার সঙ্গে যুক্ত ২০০৯ সাল থেকে। 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top