গাজী তানজিয়া
দৃশ্য ১
অর্পা দোতলায় তার বেডরুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চুল আঁচড়াচ্ছে। কোথাও যাওয়ার ভীষণ তাড়া। নীচের তলায় লবিতে ল্যান্ড ফোনটা একটানা বেজেই চলেছে…, কেউ ধরছে না। অর্পা চোখেমুখে যথেষ্ট বিরক্তি ঝরিয়ে বলে,
অর্পা : বাড়িতে কেউ নেই না-কি? কেউ ফোন ধরছে না কেন? মেট, বুয়া বা বাবুর্চি এরা সব গেল কোথায়?
হাতের ঘড়িটার দিকে তাকায় অর্পা।
অর্পা: শিট্! এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডরেস বলেছিল ঠিক পাঁচটায় ক্লাবে পৌঁছতে কিন্তু পাঁচটাতো এক্ষুণি বেজে গেছে।
গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাড় করে দ্রুত নিচে নামছে অর্পা। এমন সময় ফোনটা আবারো বেজে উঠল, ভীষণ বিরক্তি নিয়ে মনে মনে গজ গজ করতে করতে ফোন ধরে অর্পা।
অর্পা: হ্যালো, অর্পা স্পিকিং!
প্রীতম: হাই অর্পা, কেমন আছিস? আমি প্রীতম, চিনতে পারছিস?
অর্পা: ওহ্ প্রীতম, হোয়াট এ প্লেজেণ্ট সারপ্রাইজ! হাউ আর ইউ? আফটার আ ল-অং টাইম, তাই না?
প্রীতম: হ্যাঁ, তোর সেল ফোনের সিম টা কি চেঞ্জ করেছিস?
অর্পা : হ্যাঁ, বাট প্রীতম তুই এতোদিন পর ফোন করলি অথচ আই এ্যাম ইন আ হারি, একটু বাইরে যাচ্ছি, ডরেস সফটওয়্যার ডেভেলপের একটা নতুন ক্লু দেবে বলেছিল। ক্লুটা আমার ভীষণ দরকার। আর ও সময় দিয়েছিল ৫টায়; দেখ ৫টা অলরেডি বেজে গেছে। ইফ ইউ ওণ্ট মাইন্ড আমি তোকে গাড়িতে উঠে ফোন দেই?
প্রীতম: ও-কে, বাই দেন।
অনেকটা হতাশ ভঙ্গিতে ফোনটা রাখল প্রীতম।
অর্পা ব্যস্ত ভঙ্গিতে গাড়িতে স্টার্ট দিল। গাড়িতে উঠতেই অর্পার ফোনটা বেজে উঠল,
দৃশ্য ২
ডরেস: অর্পা তুই কোথায়? তোর জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছি।
অর্পা: সরি ডরেস, আমার একটু দেরি হয়ে গেল। এই দেখ না বের হতে যাবো ঠিক তখন প্রীতম ফোন দিল।
ডরেস: প্রীতম! তোর ঐ আদর্শবাদী, পুতু পুতু টাইপ শুচিবায়ুগ্রস্ত ফ্রেইন্ডটা? যে আমাদের দু চোখে দেখতে পারে না। এখনো লেগে আছে তোর সাথে? টিল নাও!
অর্পা: শাট আপ! এভাবে বলিশ না। ও আমার চাইল্ডহুড ফ্রেইন্ড। ও একটু অন্যরকম অন্যরকম ওর ভ্যালুজগুলো একটু আলাদা।
ডরেস: আলাদা না বল, ওর ভ্যালুজ সেই বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের হা-হা-হা।
অর্পা: যাহ্! তোরা ওকে নিয়ে খামাখা ঠাট্টা করবি না তো! ও তোদের কি ক্ষতি করেছে?
ডরেস: তুই একথা বলছিস! ব্যপার কি সূর্য কোন দিকে উঠল?
অর্পা: সূর্য যেদিক থেকে ওঠে সেদিক দিয়েই উঠেছে। ( মনে মনে বলবে- এতোদিন আমিই ভুলের স্বর্গে বাস করছিলাম।) তারপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলবে, আমি এখন ড্রাইভিং সিটে, এসে কথা বলছি বাই।
দৃশ্য ৩
অর্পার বার্থডে পার্টি। অর্পার রাফ এন্ড টাফ বন্ধুরা সব এসেছে। অন্যদিকে প্রীতম স্মার্ট ও খুব সোবার এ্যটিচিউড তার। অর্পা তার বন্ধুদের সঙ্গে সমানে হুল্লোড় করছে। প্রীতম একা এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে হাতে সফট ড্রিংক। অর্পা একটা গ্লাস নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় প্রীতমের কাছে। তার কথাটা একটু জড়ানো। সি ইজ কোয়াইট টিপসি।
অর্পা: নে।
প্রীতম: না।(মৃদু হেসে সরিয়ে দেয়।) আমি খাই না। আর তুইও খাস না অর্পা! তুই জানিস তুই এসব কী করছিস?
অর্পা: কেন, এর মধ্যে তুই খারাপ কী দেখলি? পার্টি হচ্ছে একটু এনজয় করব না?
প্রীতম: এনজয়মেণ্ট মানেই এভাবে!
অর্পা : এই শুরু হলো জ্ঞান দান।
প্রীতম: তুই তো এমন ছিলি না অর্পা স্কুলে, কলেজে! আর তোর, তোর এইসব বন্ধুদের কোত্থেকে জুটিয়েছিস? ভার্সিটিতে এসে তোর কী হলো?
অর্পা: ছিলাম না হয়েছি। হ্যভ ইউ এনি প্রব? আরে এটাইতো এনজয় করার সময়। তোর করতে ইচ্ছে না করলে করবি না। তবে এতো জ্ঞান দিবি না ওকে!
প্রীতম: তুই একবার আণ্টির কথা ভাববি না তোর মায়ের কথা!
অর্পা: মা! মা-ইতো এসব করেছেন। আমি বাইরে পড়তে যাবো সব ঠিকঠাক। হুট করে মা বললেন, গ্রাজুয়েশান না করে যেতে পারবে না। বিদেশে গিয়ে একা একা থাকলে নাকি মেয়ে বখে যাবে। এখন তো দেশে আছি। দেখি তিনি কী করেন।
প্রীতম: তাহলে তুই তো মায়ের সাথে জেদ করে এসব করছিস?
অর্পা: না, ঠিক জেদ করে না। আমার ভালো লাগছে তাই। তোর যে কেন ভালো লাগছে না সেটাই বুঝতে পারছি না।
অর্পার এক বন্ধু পাশ থেকে হেঁটে যাবার সময় ঠাট্টার ভঙ্গিতে ওর গ্লাসে উঁকি দিয়ে জানতে চায়, ওটা কী, ওটা কী প্রীতম?
প্রীতম: এটা অ্যাপল জুস।
বন্ধু: তোমার জন্য এটাই ঠিক আছে হা হা হা।
প্রীতম: অর্পা শোন, লিসন টু মি। তোর এসব উদ্ভট বন্ধুদের তুই ছেড়ে দে। তুই যে এদের সাথে মিশছিস, জীবনটাকে এভাবে উপভোগের নামে হেলায় নষ্ট করছিস এটা ঠিক না। তুই বুঝতে পারছিস না?
অর্পা: I am mature enough প্রীতম! তোকে অতো জ্ঞান দিতে হবে না। আসলে তুই ইন্ট্রোভার্ট তাই ওদের সাথে এ্যাডজাস্ট করতে পারিস না। আনসোস্যাল গাই!
প্রীতম: দেখ অর্পা আমি কিন্তু আনসোস্যাল নই, আর তুই এটা ভালো করেই জানিস, আমার একটা বড় ফ্রেইন্ড সার্কল আছে। তবে আমি সবসময় একটা লাইন মেনটেন করি। একটা সীমারেখা।
মুহূর্তে রেগে যায় অর্পা, অনেকটা ঘোর কাটিয়ে বলে,
অর্পা: আসলে তোরা ভীষণ ক্যারিয়ারিস্ট। তোরা মানে তোদের মতো মানুষেরা শুধু নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবে।
প্রীতম: ভাবাটাই কি স্বাভাবিক না? আমরাতো আর তোদের মতো সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি অর্পা!
অর্পা : কথা সেটা না প্রীতম, তোরা জীবনটাকে উপভোগ করতেই শিখলি না। জীবনটা শুধু বুক ওয়ার্ম হয়ে কাটাবার জন্য যে না সেটাই বুঝলি না। এনজয়, আই মিন উপভোগ করবারও একটা ব্যাপার আছে।
প্রীতম: তাই, না? তোর ধারণা আমরা জীবনটাকে এনজয় করি না। আর তাহলে কেমন উপভোগ অর্পা? তুই তো এমন ছিলি না!
এই উপভোগের মানেতো তোর কাছে স্পষ্ট হওয়ার কথা। এর মানেতো স্বেচ্ছাচারিতা।
অর্পা : স্বেচ্ছাচারিতা! What do you mean প্রিতম?
প্রীতম: আমি মনে করি উপভোগ ছাড়াও ‘উপ’ দিয়ে আরো যে সব শব্দ, উপপতি, উপপত্নি কোনো কিছুতেই না বলার মতো মর্যা লিটি তোর ঐ সো-কলড বন্ধুদের নেই।
অর্পা : শাট আপ প্রীতম! And I love challenging job. You are talking like such a typical middle class man.
প্রীতম: হ্যাঁ অর্পা, I do like my class. And more thing educated, cultured middle class. I also like my values, customs. তোদের সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছি বলে নিজেকে ভুলে যাইনি। কিন্তু তুইতো এমন ছিলি না! Please come back অর্পা, please!
অর্পা: প্রীতম আমি তোকে অনেক কিছুই বলতে পারতাম, বাট এখন কিছুই বলব না, কারণ ইউ নো বেটার।
বলে অর্পা তার বন্ধুদের ভীড়ে মিশে গেল। আর প্রীতম বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।
দৃশ্য ৪
ফ্ল্যাশ ব্যাকে ওদের কলেজ জীবনের বন্ধুত্বের কিছু নমুনা দেখা যাবে। বেড়ানো, লেকে বর্শি ফেলে মাছ ধরা, হৈচৈ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অর্পা : প্রীতম চল, ফ্লাইং ক্লাবে ভর্তি হবি?
প্রীতম: কেন?
অর্পা : ওটা খুব চ্যলেঞ্জিং, And I love challenging job. ইশ্ কেন যে তখন! …না এখনো সময় আছে, ভর্তি হবি?
প্রীতম: অর্পা তুই ভুলে গেছিস আমি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড। আমি পারব না। ওটা প্লেন। গাড়ি বা মোটরসাইকেল না।
অর্পা: তুই যে কেমন! একটা ভ্যানতারা মার্কা ছেলে। কী করে যে আমার বন্ধু হলি!
প্রীতম: এখন আফসোস হচ্ছে?
অর্পা: না। নো মাই ডিয়ার! (বলে, প্রীতমের নাকটা টিপে দেবে) তুই তোর মতো। আমি আমার মতো। আর এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবী সব মানুষতো আর একরকম হবে না।
প্রীতম: তাই না…?
অর্পা: তাই না! (চোখ কপালে তুলে)
প্রীতম: তুই যে এতোটা বুঝতে পারিস সে জন্যেই তোকে ভালো লাগে।
অর্পা: ওহ্ বুঝতে না পারলে বুঝি ভালো লাগতো না?
প্রীতম: কী জানি! লাগার কি কোনো কারণ আছে? (হেসে ফেলবে সে)
এরপর গান হবে…
দৃশ্য ৫
অর্পার গাড়িটা মহাখালি জ্যামে অটকে পড়েছে।
অর্পা : ওহ্ নো! টুডে আই গেট রিয়েলি লেট! ব্রেক কষে গাড়ির স্পীড স্লো করতে করতে স্বগোতক্তি করে অর্পা।
(এই ফাঁকে প্রিতমকে কল-ব্যাক করবে সে…। )
অর্পা: হ্যালো, অর্পা বলছি, হঠাৎ কি ভেবে ফোন করেছিলি বল।
প্রীতম: তুই যে আমাকে কল ব্যাক করবি ভাবতেই পারিনি।
অর্পা: ভাগ্যিস ভাবতে পারিসনি। ভাবলে হয়তো করতাম না। আচ্ছা বল, কেন ফোন করেছিলি?
প্রীতম: আসলে আমি একটা স্কলারশীপ পেয়ে গেছি ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভার্সিটি অব আইওয়াতে। আগামী মাসে যাবো তাই।
অর্পা: কংগ্রাচুলেশনস্!
প্রীতম: থ্যাংকস! এক সময় তুই ছিলি আমার বেস্ট ফ্রেইন্ড, আর তুই আমাকে ভুলে গেলেও আমি তোকে ভুলিনি অর্পা। তুই ছিলি আমার দেখা পৃথিবীর সেরা মেয়ে।
অর্পা: হুমম্,তাই নাকি! তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে অর্পা।
প্রীতম: এভাবে কথাটা উড়িয়ে দিস না অর্পা, তুই আসলে কত ভালো একটা মেয়ে তুই নিজেও জানিস না। তোর সরলতা, তোর উচ্ছ্বাস ভরা হাসি, প্রাণচাঞ্চল্য এক মুহূর্ত আমাকে ভুলতে দেয় না তোকে। অথচ তুই নিজেকে এভাবে স্পয়লড করলি অর্পা, একবারও ভাবলি না তোর মায়ের কথা। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা, আদর্শ মূল্যবোধ সব তুচ্ছ তোর কাছে?
ভেতরে ভেতরে অনুশোচনায় কাঁপছিল সে।
অর্পা: প্রীতম আমি এখন রাখি রে পরে কথা বলব। সিগনালে সবুজ বাতি জ্বলে গেছে। ফোনটা রেখে মনে মনে বলবে…
অর্পা: আমি কি আর চাইলেই কি সব জাল ছিড়ে পৌঁছতে পারবো তোর কাছে, তোদের কাছে? সে আজ একটা অদৃশ্য খাঁচায় বন্দি। শুধু একটা মুহূর্তের ভুল…। আর সব কিছু তছনছ…।
তবে এতো সহজে হারবার মেয়ে আমি নই। একটা পাইরেটেড সফটওয়্যার ডেভেলপ করা আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না। সফটওয়্যারটা জর্জের হাতে হ্যান্ডোভার করার পর যা হবার হবে, তবে আমি এর একটা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।
দৃশ্য ৬
অর্পার মা বাইরে যাচ্ছেন। এমন সময় প্রীতম ঢুকবে ঐ বাড়িতে।
প্রীতম: স্লামালেকুম আন্টি।
মা: আরে প্রীতম! কি ব্যাপার বাবা, তুমি তো আজকল এ বাড়িতে আসোই না।
প্রীতম: আন্টি আপনিকি বাইরে যাচ্ছিলেন?
মা: হ্যাঁ। আর অর্পাও তো বোধহয় ক্লাসে গেছে বাড়িতে নেই।
প্রীতম: অর্পার কাছে না অণ্টি আমি আপনার কাছে এসেছি, একটা জরুরি কথা আছে রিগার্ডিং অর্পা।
মা: কী, কী কথা প্রীতম?
প্রীতম: আন্টি অর্পা আজকাল কাদের সাথে মিশছে। আই মিন ওদের ফ্রেইন্ড সার্কলটা সম্পর্কে আপনি জানেন?
মা: না, ঠিক সেভাবে জানি না। তবে সত্যি বলতে কি, আমারও ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে। যে গ্রুপটার সঙ্গে ওরা মিশছে এদের হাবভাব চালচলন আমারও ঠিক ভালো লাগেনি। তুমিতো জানো, ওকে আমি কীভাবে বড় করেছি। কী রকম ভ্যালু্জ নিয়ে ওর বেড়ে ওঠা। সেই মেয়ে হঠাৎ করে! আমি ওকে ওদের সাথে মিশতে বারণ করেছি। কিন্তু ও যা একরোখা মেয়ে! কী যে করি! ভেবেছিলাম তোমার সাথে ওর একটা যোগাযোগ আছে তাই খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করিনি।
প্রীতম: কিন্তু আন্টিও তো আমার সাথে এখন আর মিশছে না। ইনফ্যাক্ট ওর বার্থডে পার্টিতে সেদিন ওর সাথে একটু কথা কাটাকাটি হলো, এই ওর ঐ নতুন ফ্রেইন্ড সার্কল নিয়েই। আর তারপর থেকেই ও আমার সাথে যোগাযোগ করছে না। তাই ভাবলাম আপনাকে কথাটা জানিয়ে রাখি।
মা: গ্রাজুয়েশানের আগে ওকে বাইরে পড়তে যেতে দিতে চাইনি তাই আমার ওপরে ভীষণ অভিমান।
প্রীতম: আর সে জন্যেই ও নিজেকে এভাবে শেষ করবে?
মা: আমি এখন কী করি বলত প্রীতম?
প্রীতম: ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে, যে ভাবেই হোক।
মা: কিন্তু সেটা কীভাবে? ও যে সেনসিটিভ মেয়ে।
প্রীতম: খুব টেকনিক্যলি হ্যান্ডল করতে হবে ব্যাপারটা। আপনি পারবেন।
মা: আজকালতো ঠিকমতো ডিনারও করে না। বাড়ি ফিরেই ঘরে দরজা বন্ধ করে দেয়। সারাদিন কমপিউটার নিয়ে পড়ে থাকে আর নইলে ঘুম। তোমার আংকলও দেশে নেই।
প্রীতম: আপনি ভাববেন না আণ্টি। আমিও দেখছি কী করা যায়। অর্পা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে। আমার মনে হয়, ও নিশ্চয়ই বের হয়ে আসতে পারবে।
মা: এজন্যেই আমি ওকে বিদেশে যেতে দিতে চাইনি। আমি কখনো চাইনি ও একটা শেকড়হীন ভিনদেশি কালচারে বেড়ে উঠুক। পরগাছার মতো মানুষ হোক। সেটা কি আমি ভুল করেছি?
দৃশ্য ৭
মা অর্পার রুমে ঢোকে।
মা: কি করছিস?
অর্পা কম্পিউটার এর ওপর থেকে চোখ সরিয়ে
অর্পা: তেমন কিছু না মা। তুমি কিছু বলবে?
মা: হ্যাঁ বলতেই এলাম। একটা জরুরি কথা। আমার মনে হয় তোমার এটা বোঝার মতো বয়স হয়েছে।
অর্পা: কী কথা মা খুব কঠিন কিছু?
মা: না আবার হ্যাঁও।
অর্পা: আমি বোধহয় বুঝতে পারছি মা।
মা: না তুমি বুঝতে পারছ না। ছোটবেলা থেকেই তুমি একটু বেশি ইমোশোনাল, তুমি অন্যদের মতো বুঝতে পার না। তাহলে অনেক কিছুই বুঝতে।
অর্পা: কী সেটা?
মা: আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার সৌন্দর্য দেখে তোর বাবা আমাকে বউ করে এনেছে দেশের বিশিষ্ঠ শিল্পপতির বাড়িতে। অথচ দিনে দিনে স্বামীর উন্নাসিকতা আমাকে কোন ঠাঁসা করে দিয়েছে। সৌন্দর্যের কদর কর্পূরের মতো উবে গেছে কয়েকদিনের মধ্যেই। যখন স্ত্রীর বাবার বাড়ির সোস্যাল স্টাটাসটাই মূখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে, ঠিক তখন থেকেই যেন আমি এ বাড়িতে একটা সো-পিসের মর্যাদায় সীমাবদ্ধ হয়েছে। বলার মতো কোনো স্ট্যাটাসটাই নেই ওদের। আর এটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয় আমার সব মতামতকে উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে।
অর্পা:আমি জানি মা।
মা: জানিস তারপরও! তুই এভাবে আমাকে…!
অর্পা: আমি তোমাকে ছোট করিনি মা। জানি আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। বাট আই নো হাউ টু ওভারকাম!
মা: আই হোপ সো। আমিতো বেশি কিছু চাইনি, শুধু আমার মূল্যবোধগুলো তোদের মাঝে রুয়ে দিতে চেয়েছি। সেটা কি মা হিসেবে খুব বেশি চাওয়া?
অর্পা: না মা তুমি দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। এভরিথিং উইল বি ওকে।
দৃশ্য ৮
[ফ্ল্যাস ব্যাক]
স্থান: জর্জ এর ডিস্ক।
লিয়ানা: She is অর্পা, আমাদের নতুন ফ্রেইন্ড। আর অর্পা, this is জর্জ। তোমাকে আগেই বলেছি ওর কথা। এই ডিস্কের কর্ণধার।
জর্জ হাত বাড়িয়ে দেয় অর্পার দিকে-
জর্জ: Nice to meet u
অর্পা: me too
অর্পা এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই জর্জের বার কাম ডিস্ক এ যেতে লাগল। ওখানে অনেকগুলো ঘর জর্জ ওকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে।
অর্পা: আপনার এই ডিস্কটা অনেকটা বাড়ির মতো।
জর্জ:হ্যাঁ এটাতো বাড়িই। আমার দাদুর প্রপার্টি। দাদু মারা যাবার পর আমরা পেয়েছি। এমনিতে তো আমাদের আরো কয়েকটা বাড়ি আছে। তাই স্টেটস থেকে ফিরে এটাকে আমি একটা ডিস্ক মতো করে ফেললাম।
Enjoyment, —বুঝলেন আমার জীবনে Enjoyment, টা ভীষণ ইমপর্টেন্ট।
অর্পা: এখানে সব এ্যারেঞ্জমেণ্ট আছে?
জর্জ: অফকোর্স। লিয়ানারা এটাকে ডিস্ক বললেও আসলে এটা একটা ইউথ ক্লাব বলতে পারেন। You can play, you can sing or can drink or…!
জর্জের বলার ভঙ্গিতে ভেতরে যেন আরো অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে।
এভাবে প্রতিনিয়তই অর্পা ক্লাবে আসবে । কখনো বিলিয়ার্ড, কখনো স্নুকার, কখনো চেজ এক সময় তাস…। ধীরে ধীরে কোমল থেকে কঠিন পানীয়। আর এক সময়ে যখন তার ব্যাংকের লিকুইডিটি সম্পর্কে জেনে যাবে ওরা তখনই নিয়ে যাবে ঐ ডিসকের বেজমেন্টের ঘরটাতে যেখান নিষিদ্ধ সব নেশায় বিভোর তরুণ-তরুণীরা।
একটা এসি রুমে ধোঁয়ায় ধোঁয়াময় হবে এক সময়। আর তার ভেতরেই চলবে আদিম উৎসব।
দৃশ্য ৯
ডিস্কের ঐ সিক্রেট চেম্বারের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে অর্পা। ঢুকতে যাবে এমন সময় বাধা দেয় ষণ্ডা মতো গার্ড।
গার্ড: নো ম্যাম। You have to pay money first.
অর্পা: কেন, এখানে ঢুকতে আবার টাকা লাগবে কেন? একদিন তো টাকা চায়নি কেউ।
গার্ড: I am sorry Mam. এটা এখানকার নিয়ম।
অর্পা: নিয়ম? হঠাৎ করেই হলো নিয়ম! কই আমি জানি না তো!
জর্জ: হ্যাঁ, অর্পা নিয়মটা আগেও ছিল। তুমি নতুন তাই খেয়াল করনি।
অর্পা: খেয়াল করিনি? না কি খেয়াল করতে দেয়া হয়নি।
জর্জ: আসলে বুঝতেই পারছো। এগুলোর মেনটেনেন্স-এ বিরাট খরচ।
অর্পা: কিন্তু জর্জ আমিতো মেম্বারশিপ চার্জ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছি।
জর্জ: সেটা বাইরের জন্য আর এই সিক্রেট চেম্বারের জন্য আলাদা চার্জ। বুঝতেই পারছ, অনেক রকম খরচ আছে।
অর্পার তখন নেশার ঝোক চেপে গেছে। সে তখন ঘামতে শুরু করেছে। ভীষণ এক অস্থিরতার ভেতরে ব্যাগ থেকে মুঠো ভরে কতোগুলো টাকা বের করে বলে,
অর্পা: নাও কতো লাগবে? Let me in.
জর্জ: Ok Mam, you are most welcome
দৃশ্য ১০
অর্পা পায়চারী করছে ঘরের ভেতরে । বিকেল হলেই তার নেশার ঝোঁক চাপে। ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ে ভেতরে ভেতরে।
ওদিকে আস্তে আস্তে টাকার অংক বাড়তে থাকে। অর্পা ভীষণ অসহায় বোধ করে। তাহলে কি টাকা চাইবে মা’র কাছে?
না। কিছুতেই না। মা না না রকম প্রশ্ন করবে। এর উত্তর তার জানা নেই। কী বলবে মাকে সে?
অর্পা মাকে জড়িয়ে ধরে বলবে,
অর্পা: মা, I need some money.
মা: কী জন্যে? .
অর্পা: এই ইউনিভার্সিটিতে শর্ট ফিল্মের একটা কোর্স করব তাই এ্যাডমিশন ফি।
মা: এর মধ্যে আবার শর্টফিল্ম কেন?
অর্পা: শিখব মা, আমার শিখতে ইচ্ছে করছে। দাও না মা প্লিজ, প্লিজ মা!
মা: ঠিক আছে, কতো?
অর্পা: এই ফিফটি থাউজ্যান্ড।
মা: এতো!
অর্পা: হ্যাঁ তাতো হবেই।
মা: ঠিক আছে, আমি একবার কথা বলে নেই, তোদের এ্যাডমিন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে।
অর্পার উৎসাহে যেন পানি ঢেলে দিল কেউ। তার এই কৌশলটাও কাজে লাগল না। ওদিকে ব্যাংকে লিকুইডিটি শুন্য।
অর্পা: ঠিক আছে, এখনিতো না একমাস পর। তখন তুমি গিয়ে কথা বলে এসো।
ফোন করল লিয়ানা।
লিয়ানা: হাই অর্পা! কি খবর, ক্লাবে আসছ না কেন?
অর্পা: টাকা নেই ডিয়ার!। মা টাকা দিতে চাইছেন না।
লিয়ানা: তোমার বাবার কাছে চাও।
অর্পা: নিলাম তো কয়েকদিন আগে। এখন আবার চাইলে নানা রকম কোয়ারিজ! ভাল্লাগে না। Better I decide that ওখান থেকে বেরিয়ে আসব। Control করব নিজেকে Control, Control কি পারব না?
লিয়ানা: দেখো, Hope for the best.
এদিকে বিকেল হলেই অস্থির হয়ে পড়ে অর্পা। আর ধ্যানের ভঙ্গিতে বসে বলে, Control Control Control!
দৃশ্য ১১
অর্পাদের বাড়ির দোতলার লিভিং রুমে বসে আছে লিয়ানা। অর্পা এসে দাঁড়াল সেখানে।
লিয়ানা: What’s up অর্পা? ফোন বন্ধ কেন? আর ৫ দিন ধরে তোমার দেখা নেই। Are you ok?
অর্পা: Yap, every thing is ok. সামনে এক্সাম তাই! ফোন বাইরে যাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছি। (অনিচ্ছার স্বরে মিথ্যা জবাব দেয় সে এড়িয়ে যাবার ভঙ্গিতে।)
লিয়ানা: ওহ্ তোমার পরীক্ষা কিন্তু…!
অর্পা: কিন্তু কি?
লিয়ানা: তোমার জন্য দারুণ একটা ছবি এনেছিলাম, দেখবে?
অর্পা: ওকে, দিয়ে যাও তবে এখন দেখব না, পরে।
লিয়ানা: না প্লিজ, এখনই দেখো না, আমি তোমার সঙ্গে দেখব বলেই এসেছি।
অনুনয়ে ভেঙে পড়ে সে।
অর্পা: ওকে… চলো।
অর্পার বেড রুমের কমপিউটারে সিডিটা চালালো লিয়ানা। কিন্তু এ কি দেখছে অর্পা! জর্জের ডিসকের বেজমেন্টের সেই আধো অন্ধকার ঘরটা…। কী ভীষণ আপত্তিকর অবস্থায় সে এবং একটা ছেলে। মুহূর্তে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে সে।
অর্পা: ওহ্ স্টপ, স্টপ ইট! হাউ ডেয়ার ইউ লিয়ানা!
লিয়ানা: হিসস্!
নিজের ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে লিয়ানা বলল,
লিয়ানা: কিপ সাইলেন্স অর্পা! এই ভিসিডিটা জর্জ তোমাকে প্রেজেণ্ট করেছে। এর আরো অনেক সফট কপি ওর কাছে আছে। আর তুমি ক্লাবে যাচ্ছো না কেন?
সাপের মতো হিস হিস করে কথা বলছে লিয়ানা।
অর্পা: আমি আর ওখানে যাবো না।
শক্ত হয়ে বলে অর্পা। কপট সহানুভূতির স্বরে লিয়ানা বলে,
লিয়ানা: তাহলে তো সর্বনাশ! জর্জ এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে।
মুহূর্তে মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে অর্পার, কিন্তু এটা লিয়ানাকে বুঝতে দেয়া যাবে না। ঘুরে দাঁড়ায় অর্পা।
অর্পা: কি করতে হবে আমাকে? কী করলে মুক্তি পাবো আমি?
কোনো রকম ভনিতা না করেই উত্তর দেয় লিয়ানা,
লিয়ানা: জর্জ ডিমান্ডস মানি। আর নইলে তোমাকে… বুঝতেই পারছো। অপরাধ জগতে জর্জের অবাধ বিচরণ; আর প্রশাসনও ওদের ছুঁতে পারে না।
অর্পা: কত টাকা চায় সে?
লিয়ানা: আপাতত পঞ্চাশ লাখ।
অর্পা: ইমপসিবল, আমি দিতে পারব না। বাবা মা কে একথাটা আমি কিছুতেই বলতে পারব না।
দৃঢ় স্বরে জবাব দেয় সে।
লিয়ানা: তাহলে তো বুঝতেই পারো, জর্জ এমনটাই বলেছে আমাকে।
কাঁধ ঝাকায় লিয়ানা।
অর্পা: আমি পুলিশকে জানাবো।
লিয়ানা: তাতে তোমারই ক্ষতি। রূঢ় স্বরে জানিয়ে দেয় লিয়ানা। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে, আর তাই এই ভুল তুমি করবে না।
অর্পা এতদিনে জেনে গেছে যে লিয়ানা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের রিক্রুইট। হতাশ হয়ে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ল সে। তাহলে এখন কি করব আমি? ঘুরে দাঁড়ালো লিয়ানা, এতোক্ষণে বাগে আনতে পেরেছে তাহলে! নিমেষে পরিবর্তিত হয় তার অভিব্যক্তি।
লিয়ানা: আসলে জর্জ তোমাকে খুবই পছন্দ করে, তাই তোমার জন্য একটা অলটারনেটিভ অপশনও রেখেছে।
অর্পা: কি সেটা?
লিয়ানা: তুমি যেহেতু ভাল স্টুডেন্ট, প্রমিজিং সফটওয়্যার ডেভেলপার, তাই এই অপশন।
অর্পা: অপশনটা কি?
বিরক্ত হয়ে আবারও জানতে চায় অর্পা।
লিয়ানা: তুমিতো জানোই, ডোরেস ও একজন দক্ষ কমপিউটার উইজার্ড কিন্তু সেও এটা ডেভেলপ করতে পারেনি। আর তাই আমরা তোমাকে টার্গেট করেছিলাম এবং আমরা অনেকটাই সাকসেসফুল হতে চলেছি। বাকিটা তোমার ওপর নির্ভর করছে ডিয়ার!
বলতে বলতে অর্পার কাঁধে হাত রাখে লিয়ানা। অর্পা নিঃশব্দে তার কাঁধ থেকে ঐ বিষাক্ত হাতটা সরিয়ে দিতে দিতে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে অর্পা: কিন্তু কাজটা কি?
লিয়ানা: মর্ফিং!
অর্পা: মর্ফিং?
লিয়ানা: হ্যাঁ যা তুমি নিশ্চয়ই জানো যে ঐ নামে একটা সফটওয়্যার আছে!
অর্পা: হ্যাঁ জানি। আর ওটা বেআইনি। যে কারো বডির সাথে অন্যকারো মুখ সেট করে দেয়া যায় এর মাধ্যমে।
লিয়ানা: এক্স্যাক্টলি তাই। আর তোমার কাজটা হলো ওটাই। একটা মর্ফিং সফটওয়্যার ডেভেলপ করে দেয়া। তাহলেই তোমার মুক্তি। জর্জ তোমার সামনেই তোমার সব এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলবে। আর যদি না করো, তো…।
অর্পা: ওকে আই উইল ট্রাই,
আস্তে করে উচ্চারণ করে অর্পা।
দৃশ্য ১২
এরপর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাতদিন এক করে পাইরেটেড সফটওয়্যারটা ডেভেলপ করে ফেলে অর্পা।
আর ঠিক সেই মুহূর্তেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে সে ক্লাবের উদ্দেশ্যে। ক্লাবে ঢুকে একটু খোঁজ করতেই পেয়ে যায় জর্জকে। জর্জ তাকে দেখেই উচ্চস্বরে যেন কিছুই হয়নি এভাবে বলল, হাই!
অর্পাও যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হ্যালো করে।
দৃশ্য ১৩
জর্জ : Please come to my chamber.
চেম্বারে ঢুকে কোনো সৌজন্য না করেই ব্যাগ থেকে সফটওয়্যার এর কপিটা বের করতে করতে অর্পা বলে,
অর্পা: First remove my all evidences.
জর্জ: ওহ্ শিওর! তবে আগে তোমার কাজটা দেখাও।
অর্পা: ওকে, তবে তোমার কাছে আমার যে সব ডকুমেন্টস আছে সেগুলো আমি নিজ হাতে ডিলিট করবো।
জর্জ: As you wish!
চোখে ধূর্ত হাসি তার।
কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক থেকে ভিডিও ক্লিপটা ডিলিট করে অর্পা, বাকি সফট কপিগুলো তার হাতে তুলে দেয় জর্জ। অর্পা তার এ্যাসাইনমেণ্টের সিডিটাও তুলে দেয় জর্জের হাতে।
জর্জ : ডরেস নিশ্চয়ই পারবে এটা অপারেট করতে?
অর্পা: I hope so. ওকে জর্জ, আমি তাহলে এবার উঠবো। And I wish we will never meet again.
জর্জ: পৃথিবীটা যে গোল অর্পা, দেখাতো হতেই পারে।
হেসে জবাব দেয় জর্জ।
অর্পা:সেটা অন্য কথা, তবে আমি চাই না আমাদের আর দেখা হোক।
জর্জ: We must meet dear! তুমি আমার সোনার ডিম দেয়া হাঁস…!
মনে মনে বলতে বলতে অর্পার ভিডিও ক্লিপের আর একটা সফট কপিতে হাত বোলাতে থাকে জর্জ।
অর্পাও প্রস্তুত। ওদেরকে আর বাড়তে দেবে না সে। গাড়ি স্টার্ট করে বাবার বন্ধু ডিসি নর্থকে ফোন করে সে। হ্যালো অর্পা: আঙ্কল স্লামালেকুম, আমি অর্পা।
পুলিশ: ওহ্ অর্পা, হোয়াটস আপ মা? বাবা কোথায় তোর?
অর্পা: আঙ্কল, আমি একটু এক্ষুণি আপনার সাথে দেখা করতে চাই, খুব জরুরি। একটা ইনফরমেশন আছে আমার কাছে।
পুলিশ: এখুনই? ঠিক আছে চলে এসো।
অর্পা থানায় গিয়ে পুলিশকে সব বলে ধরিয়ে দেবে ওদের।
দৃশ্য ১৪
এরপর প্রীতমকে রিং দেয় অর্পা, ওকে একটা কথা বলা ভীষণ দরকার…। অর্পা ভেবেই অবাক হয় কেন এতোদিন বলা হয়নি কথাটা!
প্রীতম: হ্যালো।
অর্পা: প্রীতম অনেক কথা বলার আছে তোকে। তোর কী একটু সময় হবে?
প্রীতম: আমি যে এই দিনটার জন্যেই অপেক্ষা করছি অর্পা। তোর অনেক কথা বলার থাকবে আমাকে; আর আমারও তোকে। আমাদের কথা যেন কোনোদিন না ফুরায় অর্পা!
অর্পা: কেন কথা ফুরালেই পারস্য দেশের ঐ রানির মতো তুই আমাকে খুন করবি? হা হা হা। (হাসি)
প্রীতম: কথা যেদিন ফুরিয়ে যাবে, ভালোবাসারও সেদিন মৃত্যু হবে। এই সহজ কথাটাও তুই বুঝিস না বোকা!
অর্পা: এ্যই তোকে আমি ১০০ দিন নিষেধ করেছি। কথায় কথায় আমাকে বোকা বলবি না।
প্রীতম: কেন, আমি বললেই কি তুই বোকা হয়ে যাবি?
অর্পা: তুই বললেই আমি সব সয়ে যাবো, সব…।
প্রীতম: তাহলে আমি কী কী বলব কলতো?
অর্পা: প্রীতম শাট্ আপ!…
এভাবে খুনসুটির মধ্য দিয়েই শেষ হবে। অন্যদিকে দেখা যাবে ওরা সব পুলিশের ভ্যানে উঠছে।