আফগান-নামা
তুমি ভালো আছো, শান্তিতে আছো এটুকু কথা জেনে
কালসমুদ্র পেতেছে আড়ি সমস্ত রাত জেগে।
কালো মেঘ ঝুঁকে পড়েছে এসে শেষ বিকেলের গায়,
অন্ধকারের মহোৎসবে তোমায় চেনা দায়।
মরুভূমি বেয়ে ব্যথিত দু-পায়ে হেঁটে চলে গেছে যারা,
খোঁজ কি নিয়েছো এই অসময়ে কেমন আছে তারা?
হাজার হাজার বছর ধরে জন্ম দিলে যাকে,
বলতে কি পারো কীভাবে তারা তোমায় ছেড়ে থাকে?
চোখ মেলে দ্যাখো ঝোপের আড়ালে ওটা শুয়ে আছে কে!
নত হয়ে দ্যাখো সেই লুন্ঠিত তোমারই ছেলে বা মেয়ে।
দ্যাখো সবাই কেমন তোমায় যাচ্ছে ছেড়ে চলে,
দু-গাল তাদের ভিজে একাকার তীব্র অশ্রুজলে।
এসব দেখেও জানি না কীভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছো তুমি!
তোমাকে দেখিয়ে মুনাফিক বলে তাদের জন্মভূমি।
জন্মান্তর
আমাদের প্রতিটা কথার মাঝে যেটুকু ফাঁক থাকে,
সেটুকু দিয়ে আলো এসে এতোটুকু অন্ধকারও দূর করে দিক।
দরকার নেই চঞ্চল হয়ে চোখে প্লাবন আনার,
ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকার কোনো দরকার নেই।
চোখের জলে যেটুকু স্রোত আছে,
সেটুকু বরং সব পলিমাটি ধুয়ে দিয়ে যাক,
অন্য কোথাও দুঃখবিলাসী বদ্বীপ গঠন করুক –
সময়ের সাথে লঘু হয়ে যাক অযাচিত ভিড়।
চলো গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ব’সি কোনোখানে,
দেখবে এসো,
কতো নদী-তীরের গাছের ছায়া খালি পড়ে আছে!
ঈষৎ খয়েরি রঙের বিকেলে বৃষ্টি নামার আগে
নরম হাওয়া সহজ হাতে তোমায় ছুঁয়ে যাক।
ভুরুতে ফুলের মাতাল রেণু আশ্রয় খুঁজে পাক
শুকনো ঘাসের মৃতদেহ তোমার পায়ের চাপে
একটু-একটু ক’রে ক্রমে মাটিতে মিশে যাক :
নতুন ঘাসের জন্ম হোক এখানে-ওখানে।
সারারাত আমরা দুজন
ব্যথার স্রোতে গা তো অনেক ভেজালে
এবার না-হয় উঠে এসে গা মোছো,
চোখ মোছো ভালো ক’রে –
পাশে এসে বসো; মাটি নাও, গাছ সাজো।
তাকিয়ে দ্যাখো চারদিকে পুকুর, শিশুজল,
পুকুরের মাঝে জলের বলয়, হাওয়ায় হাওয়ায় সবুজ সোঁদা গন্ধ –
কিশোরী বক কিশোর বকের পালক খুঁচিয়ে দেয়;
দেখেছো আগে কখনো এমন সুন্দর কোনো দৃশ্য?
শিশুর মতন শান্ত অন্ধকার মুহুর্মুহু দরজা-ধাক্কা দিলে
ভয় না-পেয়ে তাকে তুমি দরজা খুলে দাও।
পাশে বসাও, কথা বলো,
হাত বুলিয়ে দাও তার গালে-মাথায়-পিঠে।
তোমার নিজস্ব বুকের শব্দে জলপ্রপাত প্রতিধ্বনিত হোক
তোমার এক পাশে ব’সে থাকি আমি
ভোর হ’লে বাড়ি ফিরে যাবো –
আকন্ঠ মাতাল রাত্রি শুয়ে থাকুক সুবিশাল প্রান্তরে।
অভ্র ঘোষাল
কলকাতা নিবাসী। নৃতত্ত্ব বিষয়ে, বিধাননগর সরকারি কলেজে বিএসসি তৃতীয় বর্ষে পাঠরত।
তোর লেখা নিয়ে কি আর বলি! সাহস নেই কিছু বলার… ভালোবাসা অফুরান ❤❤
ধন্যবাদ বন্ধু