নিরালম্ব
পাঁশুটে ধোঁয়ার ভেতর যে কষ্টগুলো
তা থেকে অনায়াসে একটা মাদকসুখ
অনুভূত হতে পারে
এই যে দু-আঙুলের ফাঁকে জ্বলা সিগারেট
তার সঙ্গে পুড়তে পুড়তে যা কিছু বায়ুভূত
আলগোছে তুলে নিচ্ছে ঠোঁট
আর ভাসতে ভাসতে একখণ্ড মেঘ
টোকা দিয়ে যাচ্ছে আকাশে
লাল হয়ে যাওয়া সেই মহাশূন্য থেকে
চুঁয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা লজ্জার রং
জল,মাটি,নালিঘাস তা গোগ্রাসে গিলছে
অস্তিত্ব সংক্রান্ত তোমার যাবতীয় চরাচর
লোকালয় ছেড়ে চলে যাচ্ছে
অন্য কোনো মিস্টিসিজমের দিকে
স্ট্রাইকার
ভায়োলেট কালারের স্ক্রিনশটগুলো
এখনো তেমনই নিষেধপ্রবণ
মসৃণ আলোর ত্বক বেয়ে গড়িয়ে নামা হরমোন
তাতে কিছু আস্কারা মিশিয়ে রেখেছে
কোলাজের এই তমোকৃতি যতিচিহ্নের সিটি মেরে
কথাসরিতকে কোনো টিজ করেনি
অন্ধকার সবেদাবন কেবল জোনাকির ছটা
ক্লিক করে খুঁজে বেরিয়েছে নকশীবাহার
রাতগুলো ডিঙোতে ডিঙোতে আমিও
পরিযায়ী ডানাদের ঘুম থেকে খুঁটে নিচ্ছি
আকাশ ও মেঘেদের শূন্যভ্রমণ
ডিওগন্ধের মনস্তত্ত্ব বুঝতে গিয়ে
তোমার শরীরের বুনোহাঁসটাকে
যেভাবে ছুঁতে পেরেছিলাম
বাহন
দু-খানি হলুদ ঠোঁট দুধ ভ্রমে সুরাপাত্রে চুমুক দেয়
মরলোক যে বহুমাত্রিক লিবিডোয় পর্ণমুখি হয়,যৌনমুখর
অপরিণামদর্শী কিছু পাপবোধ
ঠোঁটের দু-পাশে এসে জমে
ব্রহ্মকমলের হরমোন থেকে ছিটকে আসা মৈথুনগাথা
পলাশশিবিরে অঞ্জলির কৃতকর্ম রেখে ফিরে যায়
অমর্ত্যলোকের কিনারায়
অহংকারের কিছু নিচে শূন্যের সামান্য উপরে
ডানা ঝাপটাতে থাকে দেবীসূক্তের সিনারিওগুলি
গল্প
নিশি ঘিরে নাচছে ঘোষাল বাড়ির পরী
চোখাচোখি হতেই ট্রে হাতে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো
যেন ফুরফুরে মেঘ উড়ে যাচ্ছে
এক ডাল থেকে অন্য নিসর্গে
আমি তাকে অক্ষরের রং ধরে ডাকলাম
কি যে রং, কি সে রঙ, চোখে ঢালছে তো ঢালছেই
জল,মাটি,হাওয়া সব তার ডানায় প্রকাশ কর্মকার
এঁকে যাচ্ছেন একের পর এক কুয়াশা
বালকবেলার ঘাসে
ওকে কি কখনো অদিতি নামে চিনতাম
ইভের বাগানে যখন কোনো ঋতুই আসে নি
অপেক্ষারত রেণুর খুব কাছে ছিলো
মিলনোন্মুখ পরাগ
আর এসবই যেমন থাকে, জলসঙ্কুল
অনিবার্য মুছে যাওয়া প্রায় রহস্যকাহিনী
বিনির্মাণ
শূন্যের ভেতরে আরো কতো শূন্য
মি.দেরিদা,আপনি কি দেখছেন
এই মেগা সিরিয়াল কতোটা বায়ুভূত
ওলনের নিরালম্ব খুলে পড়ে নিচ্ছে
আপাত সরল ঝুলে থাকা
ব্রা-এর ফিতেয় বাঁধা গোধূলি
তবু ঝোড়ো বাতাসের দ্রাঘিমায়
হা দরিয়া,হা ভাটিয়াল আকাশের নাও
ব্রেক-আপের ল্যাভেন্ডার ছড়িয়ে চলে যাচ্ছে
গ্যালাক্সির বাইপাস বরাবর
সাউন্ড অফ একসেলেন্স
আর ডি-কন্সট্রাকডেড প্রেমোরামায়
অনস্তিত্ব সংক্রান্ত
ওয়াটগুলো কিছুতেই জিরোদের পিছু ছাড়ছে না
আলোর স্টিকার লাগানো নানা রং
কথায় কথায় এখন শূন্য ভোকাবুলারি
প্রদীপের গা ধুয়ে ঢেকে দিচ্ছে সন্ধেতলা
এক চিলতে বিশ্রামের জন্যে ওই দেখো
পাওয়ার অফ গ্র্যাভিটেশন তোমাকে ডাকছে
বাতাস খই উড়িয়ে চলে যাচ্ছে
মাইনাস টু ইয়োর এগজিস্টেন্স
শান্তিময় মুখোপাধ্যায়
জন্ম : ১৯৫৬, মুর্শিদাবাদ
আটের দশকের অন্যতম কবি শান্তিময় মুখোপাধ্যায় বাংলা কবিতায় এক নতুন টেক্সচারের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর কবিতা আসলে জীবনের মধ্যে খুঁজে চলা এক অনাবিষ্কৃত বিমূর্তলোক। যেখানে শব্দরা ধ্বনি আর ধ্বনি সুরের মূর্ছনায় পুলকিত।আর মগ্নতার শরীর বেয়ে স্বেদ গড়িয়ে নামে পায়ের পাতায়। বহরমপুর থেকে একদা প্রকাশিত ‘রৌরব’ পত্রিকার থিঙ্কট্যাঙ্ক এই কবি মনে করেন কবিতা আসলে এক না শেষ হওয়া জার্নি। ভালোবাসার রিবন সেখানে খুলে রাখে বিস্ময়-কোলাজ। মূহুর্তের প্রতিচ্ছবি দরবারি কানাড়ার সুরে সম্মোহিত করে পাঠককে। কবি লেখেন “ক্ষতচিহ্ন বুকে যে পাশবালিশ তোমার পাশে শুয়ে আছে/ তারও কোনো রাত্রি ছিলো একদিন”। লেখালিখি শুরু সেই স্কুল জীবন থেকেই। সত্তরের উত্তাল দামামা যখন শিকল ভাঙার নির্ঘোষ দিচ্ছিল। পরতে পরতে কবি জড়িয়ে যাচ্ছিলেন উন্মাদনার চক্রব্যুহে। তখন থেকেই তাঁর তথ্য ও পরিসংখ্যান ভিত্তিক প্রবন্ধগুলি বহুজনের নজর কেড়েছিলো। বহু পত্র-পত্রিকা সম্পাদনের সাথে যুক্ত থেকেছেন নানা সময়, নিজেকে আড়ালে রেখেই। তন্ত্রশাস্ত্রের রহস্যময় পরাবাস্তবের সাথে বাংলা কবিতার সমন্বয় নিয়ে তাঁর ভাবনাও বেশ উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক কবি দীর্ঘ কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খুব কাছ থেকে দেখা মৃত্যুমিছিলের মধ্যেও সংগ্রহ করেছেন অপুষ্টিজনিত জীবনের অঙ্কুরোদ্গমগুলো — ” খানিক বাদেই মেডিকেল কলেজের কার্ণিশ ঘেঁষে ফুটে উঠবে/ অনিতার মেয়ের চেয়েও ফুটফুটে আন্ডারওয়েটের চাঁদ ” আবার কখনো জিরো ওয়াটের স্বপ্ন জ্বলে উঠতে দেখেছেন ৪২ নং কেবিনে।এই কবিতাযাত্রার সূত্রপাত আমরা দেখেছি আশির দশকের একবারে গোড়া থেকেই।
প্রকাশিত কবিতার বই: শীতের মাতৃসদন;অনুশীলনপর্ব;খোসাকাল;অসমাপ্ত রিহার্সালরুম;অপঠিত; জলপাইলিপি;স্মৃতিশহরে রোমিং