অ-কবিতা
অ-কবিতা কাকে বলে কোকিলা?
ঐ বেলকনি থেকে অসময়ে দেয় যে দোলা
না, অতি-বিপ্লবীর স্বপ্নভঙ্গে নির্জন বাড়ির বুকে নামে যে নিস্তব্ধতা
না,নিছক তোমার প্রেমে আমার ব্যর্থতা!
সে যদি সন্ধ্যার কমলা রঙ সুঁই সুতোয় সেলাই দিনের মুখরতা
তবে আমি কেন চটুল কি গম্ভীর
কার ভেতর কত আবীর
খুঁজিয়া বেড়াই
হাবুডুবু খাই নীড়ছাড়া সুনন্দার প্রেমে?
বিষয়টা যখন নিঃশ্বাস ও দমে!
আলোর নেশা
এই জীবন এই সন্যাসে
কত ঝড়ই না বয়ে গেছে।
কারো মনে রাখার কথা না
যেহেতু সহজে কেউ খুলে দেবে বুকের ছাতি
আমি নই তেমন কোনো মহারথী।
বরং খুব সস্তায় বিকোয় আমার প্রজাপতি হৃদয়!
খুব কম রেট
যেন আধপোড়া সিগারেট।
তবু আলোর নেশা গেল না
যেভাবেই দেখ না।
সোনার মাছি
রাদ, সোনার জন্য চাই বুঝি একটু খাদ
নইলে মেঘ ফুঁড়ে উঠছে না চাঁদ।
ছুটছে না বকুল হাওয়ার গন্ধ
যার জন্য প্রেমিক হৃদয় অন্ধ!
বলবে হয়তো কবিতার মতো
সব কি আর মেনে চলে মাত্রা ও ছন্দ?
হয়তো চলে না
তবে মনের আয়না মেঘাবৃত
মানতে কেউ চায় না।
ফলে সুদিনের সন্ধানে যে কেউ যেতে পারে সরে
শুধু সোনার মাছি ক্ষত তার থাকে আঁকড়ে!
যেন এ-ই তার ব্রত
নিঃশ্বাসের মতো মর্মরিত।
আসাদ চৌধুরী
ছড়ার মতোই সহজ কথার নুড়ি!
সে যদি আসাদ চৌধুরী
মন্দ কি?
মন্দ কি তার তবক দেওয়া পান-এ
আনন্দ পান যদি
গৈ-গেরামের বুড়া-বুড়ি।
তরুণ বৃদ্ধ যুবা
পাঠ করে তার প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড়
বলে যদি মারহাবা, মারহাবা
মন্দ কি?
সবই তো সময়ের আহার।
সময় হয়েছে তার আটাত্তর
এখনই বলব কি অশীতিপর?
বাকি যে এখনও দু’বছর।
প্রাণে তুলিতে কথার মৃদু ঝড়
জুড়ি নেই যে তার।
মুখপত্রহীন
কনকনে ঠাÐা হাওয়ায় থির থির কাঁপছে পাতা
তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কার কাতরতা?
আমরা কেউ জানি না
জানবার কথাও না।
ফলে দেখি,সাজসজ্জাহীন সন্ধ্যার আকাশে
ফুটে ওঠে যে দিনান্তের আলপনা
তা যেন আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের মতোই নৈঃশব্দ্যময়
আর সময় ছবির মতো স্থির আলোময়!
সে আলো যদি উৎসহীন
তবে তুমিও মুখপত্রহীন।
পদ্মাসেতু
ঘুর্ণিবায়ুয় পাক খেয়ে ওড়ে শুকনো পাতা
যা পড়ি তা-ই যদি দুঃস্বপ্ন ও বিষাদের বার্তা!
তবে আর এসো না তুমি বাড়ি
আমি পদ্মাসেতু দিয়ে নতুন বছর দেব পাড়ি।
স্বপ্নের দিগন্তে ঐ তো সূর্যোদয়।
ফলে তুমি আছ কি ছদ্মবেশ ধরে
দেখার বিষয় নয়
প্রয়োজনে বাঁধব ঘর ভাবের গভীরে।
বাধ সাধলেও কিছু আসে যায় না
আমি পেয়ে গেছি মুখ দেখার নতুন আয়না।
মাটির গান
(কাঙালিনী সুফিয়া-কে নিবেদিত)
পাখি সে এক, কাদাখোঁচা
আর তুমি সেই হাঁস
কাদার গল্প যার কাছে পরিহাস!
তবু স্বপ্ন, তবু বাঁচা
হোক জীবন এক সুবর্ণ খাঁচা!
আমাকে তুমি তোমাকে আমি
চিনি বা না-চিনি
দিনের কাছে দিন যে ঋণী
সেইটুকু মানি
নইলে বেপথু হাওয়ার ঘুর্ণি
কিভাবে থামায় কাঙালিনী?
মাটির গানের দুর্মর ধমনি।
পুলক হাসান
জন্ম ২৪ জানুয়ারি ১৯৬১ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড জালকুড়ি গ্রামে। পিতা : আবদুল বারেক ও মাতা : নূরুন্নাহার বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং-এ সম্মানসহ ¯œাতকোত্তর। পেশা : সাংবাদিকতা। বিবাহিত। স্ত্রী রীনা ইসলাম ও কন্যা আরিয়ানা ইফফাত নূর রুসামাকে নিয়ে যাপন।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি: চক খড়ি মেয়ে (কবিতা) ১৯৯১; ও জল ও তৃষ্ণা (লিরিক) ১৯৯৭; সব দাগ ওঠে না (কবিতা) ২০০৮; পরকীয়া ওমে (কবিতা) ২০১১; রোদ ও ছায়ার রচিত (কবিতা) ২০১২; কবিতার গদ্যরূপ (প্রবন্ধ) ২০১৩; কবিতা : সহজ করে বলা (প্রবন্ধ) ২০১৭; বাছাই কবিতা (কবিতা) ২০১৮; আরো কিছু বুদবুদ (কবিতা) ২০২০;মুহূর্তের কবিতা (কবিতা) ২০২০; প্রতিবেশি ও বেলুন সভ্যতা (কবিতা) ২০২১ এবং আমার কবিতা (কবিতা) ২০২১