বাতাস লিখে ফেলে সুগন্ধি কবিতা
অন্ধকারে ধুয়ে নিয়ে হাত
বাতাস লিখে ফেলে নতুন সুগন্ধি কবিতা
কেউ দেখার আগেই তা প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসে
আলোর কৃষক
শহরের লোকেরা কৃষিজমি চেনে না
অথচ, প্রত্যেকের ভেতর একজন কৃষক বাস করে
শাদা ভাত যখন মিষ্টি করে হাসে, তখন তার গাল বেশ নান্দনিক টোল
আমাদের দিনগুলি পুরনো নদীর পাশ দিয়ে যায়, সেইসব স্মৃতি কাদামাটি রচিত,
রাত গহন হলে প্রায়শই তারা ফুলবানু কিংবা পুঁথিময় জোনাকজ্বলা চরিতাভিধান…
অথচ, যেদিন থেকে কই মাছ ভেজে
নিয়ে গেছে মায়া দারিদ্র মোচনে, সেই থেকেই শাঁখের করাত আমাদের রাজনীতি
সময়কে শিকল পরানো অবান্তর
মানুষ বুঝে নিতে শিখুক পরাবাস্তবতা
না হলে কসমোলজিক্যাল কবিতাও কপর্দকহীন
অঘোর
যা হয় অথবা হবে বলে গোঁ ধরে আছে
তার ভেতরেই লুকানো প্রত্ন অ্যান্টিমেটার হয়ে যাবে
হিমবাহ নেমে গেলে চারদিকে শুধু জল, শুধু দহন
মানুষ মূলত রূপান্তর ভালোবাসে…!
বিষকাটালি গাছ
বৃষ্টির নেপথ্য স্নেহ অকারণ লেগে থাকে চোখে
বোঝাতে পারিনা অনেকগুলো রাত হাত ফসকে পড়ে গেছে পথে
যাকে চেয়েছি সে চিরদিন নম্রতা মেখে চলে গেছে দূরে; তার অবয়ব জুড়ে আমার স্বরলিপি ছিল
আজ ভয়ানক সন্তরণ এসে টেনে নিতে চায়
অথচ, অনর্থ আকাশ হয়ে ঝুলে আছি নীলমেঘ
বাষ্পের কড়া রোদ শব্দের ব্যাপক বুদবুদ—
চারদিক আন্দোলিত করে ;
দেখি ভেতরে বেড়ে ওঠা বিষকাটালি গাছ ফোঁটা ফোঁটা রক্তের কষ হয়ে ঝরে…!
যে কথা সহজে বলা যায়
যে কথা সহজে বলা যায়
মন যখন কাঁদে, বৃষ্টি যখন আসে
ঠোঁট যদি কাঁপে, যদি নেচে ওঠে চোখের তারা
আর, ভেতরে সঘন উত্তাপ…
গ্যালন গ্যালন অন্ধকার পান করো
বাইরের পৃথিবী ডাকবে না তোমাকে
সহজতা ভাল ছিল
মাটি ভেদ করে বেরিয়ে আসে জল, অঙ্কুর
একদিন ভালবাসা এসে ডালে বসে, পাখির পালক
থেকে কতো সুগন্ধ ছড়ায়…!
এসবই ভুল ছিল
ভুল মানুষকে কষ্ট দিয়ে ওপারে চলে যাওয়া
কঠিন কিছু নয়
নরম হাওয়া চিরদিন জলাশয় ছেড়ে
বুকে এসে লাগে
তখন, হয়তো পৃথিবীতে সন্ধ্যা নামে…!
২০/০৭/২০২২.
চোরাস্রোত অথবা অদিতি ফাল্গুন
ডাকটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে
প্রথমে খুব চেনাচেনা লাগে
অথচ, ঠিক চেনা নয়
পরক্ষণেই মনে হয় এটা ডাক নয়—সুদূরের গান;
বাতাসের ভেতর থেকে , সুড়ুঙ্গ ভেদ করে
এলে যেমন শোনায়—ঠিক তেমন
যেন জোছনা মুকুলিত সুর
যেন নেশাতুর বনচুর, মনচুর, রূপম মল্লার
যেন জিহবায়, জিহবায় অব্যক্ত রস, হরিণ চর্যার…
অতঃপর মিশে যায় অন্তহীন তরঙ্গের ভেতর
জুঁইফুল ছুটে আসে যেমন চোরাস্রোত, ঠোঁটে লেগে
থাকা অদিতি ফালগুন…
লাল চাবুক
চাঁদ ডুবে গেলে রাত গভীর হয়ে যায়
জেগে থাকে অপার নির্জনতা
তখন দুটি একটি সাঁকো নড়ে ওঠে
তখন মাঝখানে বৃষ্টির ছায়া গভীরতর হয়
চাওয়া যায়না এমন নীল নীল চোখ
নীলাভ আগুন নির্নিমেষ
ভেতরে ভেতরে পুড়ে যায় দেহের নিটোল…!
অথচ, আমাদের বাড়িগুলো ছাদহীন
অথচ, আমাদের ঘরগুলো একা একা চিমনি জ্বেলে রাখে
তখন দূরত্বে এসে থেমে যায় লাগাম
সহিসের লাল চাবুক
যার কাছে নির্ভরতা ছিল
যার কাছে ছিল অকৃত্রিম আস্তাবল একদা’র
তার নিষ্ঠুর হাত রক্তাক্ত করে
ভালবাসা নিয়ে চলে যায় দূরে…!!
০১/০৭/২০২২
কবি মোহাম্মদ হোসাইন
জন্ম ১৯৬৫ সালে ১ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার উপজেলায়। নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউরা বাজার সন্নিকট দোয়ারগাঁও গ্রাম তাঁর জন্মস্থান। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে রসায়নে অনার্স এবং ১৯৮৯ সালে (রসায়ন) মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কবি মোহাম্মদ হোসাইনের কবিতা প্রকৃতিসন্দর্শী, জাগতিক পরিপার্শ্বসচেতন, প্রতিবাদী, মানবিক ও প্রেমিকসত্তা নিয়ে পরিস্ফুটিত। তাঁর কবিতার প্রবাহমানতা বেশ লক্ষ্যণীয়। এ পর্যন্ত তাঁর ১৮টি কাব্যগ্রন্থ ও একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য পরিমণ্ডলে সমাদৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। তিনি পেশায় শিক্ষক এবং বর্তমানে সিলেট শহরে বসবাস করছেন।