দুটি কবিতা

মাসুদ খান

দীক্ষা

পথ চলতে আলো লাগে। আমি অন্ধ, আমার লাগে না কিছু।
আমি বাঁশপাতার লণ্ঠন হালকা দোলাতে দোলাতে চলে যাব চীনে, জেনমঠে
কিংবা চীন-চীনান্ত পেরিয়ে আরো দূরের ভূগোলে,,,
ফুলে-ফুলে উথলে-ওঠা স্নিগ্ধ চেরিগাছে মৌমাছির গুঞ্জন শুনব
নিষ্ঠ শ্রাবকের মতো, দেশনার ফাঁকে ফাঁকে।
মন পড়ে রইবে দূরদেশে। সাধুর লাঠির বাড়ি পড়বে পিঠে,
দাগ ফুটবে সোনালু ফুলের মঞ্জরীর মতো শুদ্ধ, সালঙ্কার…

চর্চা করব বটে মিতকথনের, কিন্তু
দিনে-দিনে হয়ে উঠব প্রগলভ-কথক,
নিরক্ষর হবার সাধনা করতে করতে আমি হয়ে উঠব অক্ষরবহুল
হাসাহাসিভরা ভুঁড়িটি ভাসিয়ে গল্প বলে যাব
কখনো প্রেমের ফের কখনো রাগের…
অথবা ধ্যানের, কিংবা নিবিড়-নিশীথে-ফোটা গভীরগন্ধা কোনো কামিনীফুলের…

 

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরবে মঠের মেঘলা আঙিনায়
অথচ অদূরে লালে-লাল-হয়ে-থাকা মাঠে পুড়তে থাকবে ঝাঁঝালো মরিচ
সেই তথ্য এসে লাগবে ত্বকে ও ঝিল্লিতে।
আমি সেই মরিচ-পোড়ার গল্প বলব যখন—
ঝাঁঝের ঝাপটায় উত্তেজিত হয়ে তেড়ে গিয়ে যুদ্ধে যাবে যুবকেরা।
যখন প্রেমের গল্প— আঙুর পাকতে শুরু করবে সোনাঝরা নরম আলোয়।
আবার যখন গাইব সে-গন্ধকাহিনি, ভেজা-ভেজা রাতজাগা কামিনীফুলের—
ঘ্রাণের উষ্ণতা লেগে গলতে থাকবে মধুফল, দেহের ভেতর।

 

বৈকুণ্ঠের তরে বৈষ্ণবীর গান

‘যেই দেশেতে গৌর পাই
সেই দেশেতে চলিয়া যাই
এ দেশ তো আর ভালো লাগে না’—
গাইতে গাইতে দেশ-দেশান্তর পার হয়ে
চলেছে সে, স্নাতকিনী, বৈষ্ণবী আমার…

সে-কোন অজ্ঞাত পূত এক স্নানসত্রের সন্ধানে
বহু দিন বহু তিথি বহু দেশ ভ্রমণের শেষে
স্নাতকিনী এসে দাঁড়িয়েছে আজ এমন এক তারিখরেখায়,
যেইখানে একই দিনে একইসাথে আসে রবি-আর শশীবার
একইসঙ্গে জাগে কৃষ্ণ প্রতিপদ আর দ্বিতীয়ার গোরা বাঁকাচাঁদ
গোলার্ধপ্রতিম দূরে, বৈষ্ণবী দাঁড়িয়ে আছে সেই দ্রাঘিমায়
যেইখান থেকে দূর বৈকুণ্ঠ-গোলোক,
কৈলাশ ও অলিম্পাস, জান্নাত আর জাহান্নাম…
সবকিছু ঝাপসা দেখায়।

 

Facebook Comments

9 Comments

  1. মিতুল দত্ত

    ”হাসাহাসিভরা ভুঁড়িটি ভাসিয়ে গল্প বলে যাব
    কখনো প্রেমের ফের কখনো রাগের…
    অথবা ধ্যানের, কিংবা নিবিড়-নিশীথে-ফোটা গভীরগন্ধা কোনো কামিনীফুলের”…আহা!

    আমরা শুনব মাসুদ ভাই…

  2. subir chatterjee

    স্নাতকিনী এসে দাঁড়িয়েছে আজ এমন এক তারিখরেখায়,
    যেইখানে একই দিনে একইসাথে আসে রবি-আর শশীবার
    একইসঙ্গে জাগে কৃষ্ণ প্রতিপদ আর দ্বিতীয়ার গোরা বাঁকাচাঁদ
    masud bhai jabab nei, kabe asbe sei din

  3. subir chatterjee

    যখন প্রেমের গল্প— আঙুর পাকতে শুরু করবে সোনাঝরা নরম আলোয়।
    আবার যখন গাইব সে-গন্ধকাহিনি, ভেজা-ভেজা রাতজাগা কামিনীফুলের—
    ঘ্রাণের উষ্ণতা লেগে গলতে থাকবে মধুফল, দেহের ভেতর
    ki korey lekhen emon line?
    simplely beautiful.

  4. অর্নব পুত্‌

    পথ চলতে আলো লাগে। আমি অন্ধ, আমার লাগে না কিছু।
    আমি বাঁশপাতার লণ্ঠন হালকা দোলাতে দোলাতে চলে যাব চীনে, জেনমঠে
    কিংবা চীন-চীনান্ত পেরিয়ে আরো দূরের ভূগোলে,,

    জানি নাকো, পথ নিয়ে যাবে অন্ধ করে গহীন কোনে…………

    ধন্যবাদান্তে
    অর্ণব পুত্‌

  5. আল-ইমরান সিদ্দিকী

    কবিতা দুটো কপি করে সেভ করেছিলাম।এখন খুজে পাচ্ছি না।তাই আবার আসতে হলো।
    অসাধারণ দুটি কবিতা।

    ”বহু দিন বহু তিথি বহু দেশ ভ্রমণের শেষে
    স্নাতকিনী এসে দাঁড়িয়েছে আজ এমন এক তারিখরেখায়,
    যেইখানে একই দিনে একইসাথে আসে রবি-আর শশীবার
    একইসঙ্গে জাগে কৃষ্ণ প্রতিপদ আর দ্বিতীয়ার গোরা বাঁকাচাঁদ
    গোলার্ধপ্রতিম দূরে, বৈষ্ণবী দাঁড়িয়ে আছে সেই দ্রাঘিমায়
    যেইখান থেকে দূর বৈকুণ্ঠ-গোলোক,
    কৈলাশ ও অলিম্পাস, জান্নাত আর জাহান্নাম…
    সবকিছু ঝাপসা দেখায়।”

    ধন্যবাদ সাহিত্যক্যাফেকে

  6. SHOSHAN THAKOOR

    ভূমি ছেড়ে উড়ে গেলে পাখি…..অদেখা নীড় অচেনা মনে হয়….শ্বেত মেঘের গায়ে কালোদাগ….যেখানে সমাপই….সেখানেই সব প্রেম আছড়ে পরে……..ভালো লাগলো কবিতা।……আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top