সুরের ধ্বনিপাত
আহত পংক্তিমালার সাথে জুটি বেঁধে একটা
গান লিখেছি,
” প্রিয়তম আমার, শেষ হয়েছে ফুলদের
ঋতুকাল, পরিযায়ী বালিহাঁস চলে গেছে পাহাড়
পেরিয়ে, রেখে পালকের কোমল আদর—
সময়ের রেখায় দেখি অচেনা চিহ্নের আঁকিবুঁকি!”
হৃদ উপত্যকায় এক রাখাল বালক আসে,
গান গায়, ভেড়াদের
সাথে খেলে, নাচে যেনো সঙ্গী তার হাওয়ার গুঞ্জন!
চারণভূমির বুকে প্রলম্বিত সুরের ধ্বনিপাত…।
আবারও স্নানঘরে
স্নানঘরে যেসব গল্পেরা আজও ছায়া ছায়া ঘোরে—
যে শরীর ছায়াদের, ছুঁয়েছি কখনও?
কিছু মুছে যাওয়া রাত্রি জলভাঙা নদীর বিবরে—
ভুলে যাওয়া পাপ সেই অন্ত্যমিল, খাদের পাহাড়!
হাতে রেখে ফেনার জমাট আমি ভুলে গেছি শিশুদের নাচ
আর বাদামী চোখের সাথে বাদামী চোখের ঘেমো রোদ্দুরে আঁচ!
স্নানঘরে গল্পেরা এখনও সরব সেই পুরনো বিষয়
যারা খুব পান করে অপরূপ নেচেছিল চেনা মুদ্রা, অচেনা নেশায়—
ভুলে যাওয়া পাপ সেই নৌভ্রমণ, নীলকান্তমণি ঘেরা স্বর্ণবিহার।
এ কোন সুরের লয়?
সন্ধিক্ষণের কাছে গুল্মের স্বেদ,
তবে কি ভুলেছি আমি ঋজু ভেদাভেদ?
আরেক জন্মের কথা খুব মনে পড়ে,
চক্ষুজল নিভে গেছে প্রহারের ঝড়ে
তবু্ও বলছি ফের, বেঁচে থাকা ভালো—
জন্মের ঋণ দিয়ে কিনেছি কি আলো?
সে আলোয় কাকে দেখি? কাকে নিই চিনে?
এ কোন সুরের লয় কাহারবা, বীণে!
নিজেকে পোড়াবো ভেবে “নিইনি নির্বাণ!”
ঘোরতপ্ত, শুনে যাই সন্তাপের গান—
কিছুতো কমুক তাতে অনিদ্রার পীড়া,
স্মিত হোক শোক-তাপ, হৃদয় রুধিরা!
সন্ধ্যা ও একটি রকিং চেয়ার
এখন, ঠিক সন্ধ্যা অস্ত যাবার পর, কালাভ
আলোয় পান করছি।
সামনে একটা তে-পায়া আসন, কয়েক টুকরা বরফ,
কিছু শশার সালাদ আর একটা রকিং চেয়ার—
আমার ডানদিকে আমি,
বামে আমার ছায়া,
মুখোমুখি আমি,
অপরপ্রান্তে অপেক্ষা….
একটু আগে নীল তারাটির হদিস হারিয়ে ফেলেছি,
তার পরিবর্তে একগুচ্ছ নক্ষত্র আমাকে
সঙ্গ দিচ্ছে!
এখন আমি আমার মুখোমুখি,
বামে অন্ধকার,
ডানে ছায়া চলচ্চিত্র,
অপরপ্রান্তে রকিং চেয়ার; দুলছে।
সন্ধ্যাঘ্রাণের সুর
নিজেকে খুঁজে পেয়েছি তাখোয়াইংয়ের
কাছে বহুবার,
বর্ণাঢ্য ধুসর বুকের ডাহুক
ডাকতেই একটা সমস্ত জলধারা
আমার হয়ে গেলো!
পাথর থেকে সুরমা রঙা পতনের
উল্কি আঁকা ঝরনায় আঙুল রাখি, ডুবিয়ে
দিই মন, মুখ দেখি স্বচ্ছ ধারায়,
প্রতিধবনিত হই—
ও মেঘ,
হে অনন্তধারা,
হাওয়াবসনের উড়াল,
সন্ধ্যাঘ্রাণের সুরে এক জন্মে অনেক জীবন!
ফ্রিজিলিয়ার রাত
ফ্রিজিলিয়ার রাত আজ ঘুমাবে না—
ও প্রিয়তমা,
আঙুর সুন্দরীর লাল নেশা
ফুটে আছে সবুজ লতায়, পান্নারঙা
ঘাগড়ার সাথে
স্ফটিক সাদা ব্লাউজ, কুচি দেয়া
হাতায় আঙুরবাগানের হাওয়ারা নেচে
ওঠে প্রাচীন সঙ্গীতে…
এসো নর্তকের দল, বাদ্য বাজাও
নাচিয়ের কোমরের পদ্মমৃদু লয়ে!
গোড়ালির কাঁপা ছন্দে ‘এল টাম্বোর’,
আজ উৎসব, দিওনুসাসের রাত…
সাঈদা মিমি
জন্ম, ২৯ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত। বরিশাল থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগ ‘ জীবনানন্দের’ সহ সম্পাদক ও ‘মৌসুমী’ কবিতাপত্রের সম্পাদক ছিলেন। ফ্রি ল্যন্স সাংবাদিকতা, ফিচার রাইটার, বায়িং হাউসের অ্যাডমিন, শিক্ষকতা, হাউসিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন শেষে গৃহিনী।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস (শ্রাবন প্রকাশনী); ফারাও কুমারী (আগুনমুখা প্রকাশনী); শুশুনিয়া পাহাড় ( কালজয়ী প্রকাশনী); একজন মৃতের ডায়েরী ( অনুপ্রাণন প্রকাশনী); ঔরঙ্গজেবের নীলঘোড়া ( গল্পগ্রন্থ-অনুপ্রাণন প্রকাশনী) এবং প্রিয়নাথবাবুর বাড়ি ( গল্পগ্রন্থ- ঘোড়াউত্রা প্রকাশন)