ফারুক সুমনের একগুচ্ছ কবিতা

পুলকসঞ্চার

শব্দটি এমন
উচ্চারণমাত্র প্লাবিত হয় আবেগের বন
উড়ে যায় হাওয়ায় দুই অক্ষরের পাখি।

শব্দটি এমন
উচ্চারণমাত্র অনুভবে শীত নামে
হৃৎ প্রান্তরে শুরু হয় রৌদ্রোৎসব।

শব্দটি এমন
উচ্চারণমাত্র বাহিত হয় বেহুশ বাতাস
পুষ্পপুরে, পাতায় পাতায় পুলকসঞ্চার।

শব্দটি প্রেম
উচ্চারণমাত্র ঝলসিত বিবেকের ডানা
ধ্যানাসন ছেড়ে নেমে পড়ে মুনিঋষি।

 

বিদীর্ণ শহরের গান

শহরের গলিপথ। সবজিভ্যান। বিক্রেতার বিষণ্ণ মুখ। কালিমাখা হতাশার ছাপ। মলিন সবজির মুখে ঘনঘন পানির ঝাপটা। অনতিদূরে লেজগুটিয়ে, গুটিসুটি কুকুরের অলস ঘুম। চা বিক্রেতা টুলে বসে আছে। হাতে স্মার্ট ফোন। ইউটিউবে শুনছে ওয়াজ। কখনোবা বাংলা ছায়াছবির গান।

মাথার ওপর সর্পিল ভঙ্গিমায় শুয়ে আছে মেট্রো রেলসেতু। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে সিটের উপর পা তুলে উবারের অলস ড্রাইভার। যাত্রী নেই। কখনো ইমোতে কল। কখনোবা ফেইসবুকের উঠানে ডুব। কাশতে কাশতে লুঙ্গিপরা হাড্ডিসার বাড়ির দারোয়ান। মাত্র দেয়ালঘেঁষে দাঁড়িয়ে জলবিয়োগ সেরেছেন। তারপর কয়েকবার থুথু ছিটিয়ে দেখালেন পবিত্রতার ভান। কাজ শেষে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে কাজের বুয়া। কাপড়ে হাত মুছে পানপাতায় চুন ঘষে। তারপর মুখে পুরে নেন। গলির মোড়ে ডাস্টবিনের স্তুপ। সেখানে জটলা পাকায় কিশোর গ্যাং। চলছে টিকটকের শূটিং। শহরের গলিচিত্র। দৈনন্দিন উদয়াস্ত বিবর্ণ নগ্ননগর।

 

কামের গতর

অহরহ আমারে ডাকিয়া কহ
ঝড়ের রাতে বাড়ে রতিবিরহ
না দেখিয়া যায় না থাকন।

কতদিন কুয়াশায় কামচালা ঘর
ভিজে ভিজে বেদিশা কামের গতর।

হাওয়াহীন পাতাদের বধির ভাষা
পাথুরে সুরে কাঁদে হরিণ হতাশা
আর কত সওয়া যায়?

ডাকাতিয়ার জল সাক্ষী
আমার আর কাটে না প্রহর
তোর শোকে পুড়ে গেলো
অভাগীর কামের গতর।

 

মুখোশমোড়া চাঁদ

গেছে যাক,
এটাই বরাত
তুচ্ছ তৃণের মতো
মাটিতে গড়াক।

বয়ে চলে ডাকাতিয়া
জিগরে ঝড়ো রাত
চোখপুকুরে ভাসে এখন
মুখোশমোড়া চাঁদ।

প্রেমপোড়া দেহ নিয়ে
অন্ধদেশী যারা
মনের মিনার ধ্বসে তাদের
খসে পলেস্তারা।

 

ছদ্মবেশ

হেঁটে চলেন নেতা-নেত্রী ঝুড়ি ভর্তি ফুল
তার পিছে ধেয়ে চলে অহি ও নকুল
অসহায় মাকড়সা বোনে স্বপ্নজাল
তবুও ফোটে না ফুল আসেনা সকাল।

হেঁটে চলেন নেতা-নেত্রী মুখজুড়ে হাসি
জনগণমনে বাজে নির্ভরতার বাঁশি
রঙ ধুয়ে জল ঝেড়ে উড়ে পানকৌড়ি
অসহায় মাকড়সা দেয় হামাগুড়ি।

মাকড়সা জনগণ, তার এইতো বাহন
মেনে নেয়, টেনে চলে গাধার জীবন
একজন প্রজাপতি চিমটি থেকে বেঁচে গেল।

……………………………..

ফারুক সুমন

কবি-প্রাবন্ধিক ফারুক সুমন-এর জন্ম ১ মার্চ, ১৯৮৫। চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার অন্তর্গত শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে যথাক্রমে স্নাতক (২০০৫), স্নাতকোত্তর (২০০৬) প্রথম শ্রেণি এবং উচ্চতর এম. ফিল. (২০১৪) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলাদেশের কবিতা: উত্তরাধিকার ও পরম্পরা’ বিষয়ে পিএইচডি গবেষণায় যুক্ত আছেন। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ’ (রাইফেলস কলেজ, বিজিবি সদর, পিলখানা, ঢাকা)- এ বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। তিনি ‘পোয়েম ভেইন বাংলা’- এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।

সম্মাননা/পুরস্কার:
একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন ‘নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান’ (২০০৬) শিক্ষাবৃত্তি। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন: ১) রউফিয়ান রিদম সাহিত্য সম্মাননা-২০১৬; ২) উচ্ছ্বাস প্রহর সাহিত্য সম্মাননা-২০১৯; ৩) সমতটের কাগজ লেখক সম্মাননা-২০২০ এবং ৪) দোনাগাজী পদক ২০২১। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: ‘বাংলায়ন সভা’ (৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
কাব্যগ্রন্থ: ১. ‘অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে’ (২০১৭); ২. ‘আঙুলের ডগায় সূর্যোদয় (২০১৮); ৩. ‘বিচঞ্চল বৃষ্টিবিহার’ (২০২০) এবং ৪. ‘বিরামচিহ্নের কান্না’ (২০২২)

প্রবন্ধগ্রন্থ: ১. ‘শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর-চেতনা ও নাগরিক অনুষঙ্গ’ (২০১৫); ২. ‘শিল্পের করতালি’ (২০১৯);৩. ‘শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর’ (২০২১); ৪. ‘শিল্পের সারগাম’ (২০২২)

ভ্রমণগ্রন্থ: ১. ভ্রমণে অবাক অবগাহন (২০২১)

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top