বাংলাসাহিত্য
বাংলাসাহিত্য শুরু করিয়া দিলাম। শর্ত মোতাবেক জনগণ শব্দটি রাখিব না। নির্বিচারে মানিয়া লইব স্বৈরতা, তাহাকেই দিব সব অধিকার। চোর ও বাটপারদের জন্য নিত্য দোয়া করিয়া যাইব।
যে মাথা আকাশ ছুঁইয়াছিল আজ তাহা চিরকালের জন্য অবনত করিলাম।
অধিক অধিক বাংলাসাহিত্য এই পথেই প্রথম আলো পাইবে।
সারাদিন ঘুরিব যাহার সঙ্গে- তাহার টাকার থলিয়া থাকিবে আমার পকেটে। রক্তকে করিব পানি, মগজে এমন সার দিব যাহাতে প্রভুদের প্রতি আমার বশ্যতা অমরতা পায়। আমি তোমার গলার হার হইব, না যদি হই বেত্রাঘাতে চামড়া তুলিয়া বাটা কোম্পানির হাতে তুলিয়া দিও।
কতিপয় রাজনৈতিক টার্ম এখন হইতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইল।
ফিসফিস চলিবে না
চোখ মারা যাইবে না
বোতলাক্ষিদের দিকে এমন ভাবে তাকাইব যেন সহজ ছন্দে তাহা মাখনের আদর পায়। পুরষ্কারের ওড়না ঝুলিবে পুরুষ স্তনের উপর আড়ং হইয়া আর গদগদ ভাবটা করিব আরো শক্ত-পোক্ত ভাবে।
জীবন রাখিলাম বাজি
আমরা বাংলাসাহিত্য করিব পদধুলি লইয়া বড়দের।
তে জন্যই তো উল্টাইয়া পাল্টাইয়া একই কৈ মাছ প্রতিদিন ভাজি!
বাংলাসাহিত্যের রূপ দেখা
আমি দেখিতেছি সৌন্দর্য তোমার, গাধার বাচ্চারা কতিপয় ভাবিতেছে গেল’ গেল’ দেশ!
এক্ষণে তুমিই বল, সৌন্দর্যে যদি প্রাচীন প্রতীক আর মুদ্রার মসল্লা না থাকিত, তৈ’লে, আল্লার বান্দারা কি করিতে পারিত?
রূপ এমন যে, সেই মহা কারিগর নিজেই এই ‘অতি’ সৃজিয়াছিলেন ছিলেন আপন রূপের মোহে!
যেইটুকু ফাঁসা, কোন রকমে এক চক্ষু বন্ধ করিয়া বাকীটা দিয়া দেখিতেছি বাংলাসাহিত্যের অপ-রূপ। (আমা ক্ষেত্রে বামচক্ষু, কি করিব মস্তিষ্কে একদিন রক্তজোয়ার উঠিল যে! আর তাই কমুনিস্টরা ভারী ভুল বোঝে।)
মদ-উদগত বাংলাসাহিত্য তাহার মেজাজ শরীফ সব সময় ভাল থাকিবার কথা নহে, ভূতমতো ললিতকুম্ভ আর সান্ধ্যবেশ্যা হইতে সকল কাঠামো মিস্তিরি, সকলেই তাহার গৌরব দেখিতে উন্মুখ,
দেখিয়া তাহাদের গলিয়া পড়িলে আঙুরের রসের হাসি তখন
উপর হইতে নামে শীতকালীন বরষা, সেই বরষায়—না, না, রবীন্দ্রনাথ নহেন, গান আসে মধ্যপদলোভী মর্মস্থান হইতে। তাহাদের আর আমার মধ্যে সুদ্ধ পার্থক্য এই, আমি সৌন্দর্য আর তাহার বিভিন্ন পেশা বা নেশাজিবীদেরও গোচর করিয়া থাকি।
এই দেখা শুধু দেখা নহে, গাড মারিয়া ব্যাংক জন্মে ব্যাংককে, পুতুল খেলিতে থাকে প্লেবয় পাতকে।
আমি জানিয়াছি, দুনিয়া অনেক দূর গিয়া পৌছাইয়া বুঝিয়াছে, সে আসলে হাঁটিতেছে পিছনের দিকে ( যদিও ইহা লইয়া প্রবল তর্ক চলিতেছে দেওয়ালে পেরেক মারা কাঁচপুরে-টিভিটারমিনালে)
মদিরাসদরবতী, আমাকে আরো আরো দেখিবারে দাও, দাও কলাবভনের পাশে সেই কস্তাপাড় বানান-প্রমাদিনীকে,
দেখিতে দিও সেই ম্লান মুখ, নিশানের ঊর্ধ্বশ্বাস আর তাহার পর যে নাই কিছু, দেখিতে দিও গো তাও,
কেনে গো অযথা এই অন্তিমে আসিয়া গরিবের রুদ্রাক্ষের মালাটি হাতাও!
কিছু হই নাই
বাস্তবিক আমি কিছু হই নাই
বুধোর ঘাড়েও তাই চাপাই নাই কিছু
কি হইব, কহ?
অধো পতনের জগত-বিশ্ব
তাকাইয়া রহিয়াছে ঈশ্বরের দিকে আর নিরীশ্বর ঈশ্বরের দিকে।
এই ফ্যালফ্যাল নজরদারি দেখিয়াই বুঝিতে পারিয়াছি কিছু হইবার নাই শুধু কিছু ছাড়া।
মরণ পুচ্ছ নাড়ে নিকষিত হেমে,
বিবেক ও তাড়না ভাইবোন,
কি বলিব তাহাদের আমি যে-আমি নাই হইয়া আছি নাই-বিন্দুতে?
মেধাবিনি বাংলাসাহিত্য, ইংরেজের মলিন চাদর, তুমি সমগ্র এক সংগে সবাক রূপটান হইতে পার না
সময় সময়ান্তরে
জেনোমে জেনোমে কত যে জনম যায়
আহা, হইবার আশায়
কি লাভ তাহা প্রকাশিয়া অক্ষর সদরে!
অকবিতা
আমাকে বিরক্ত করিও না মাধব
আমি বাংলাসাহিত্য করিতেছি, আরো যা-যা করিয়াছি এতকাল সেইসব বস্তুপ্রাণ পায় নাই
মেহেদি গাছ দাড়িতে জড়াইয়া আছে
কেশবতী বলিয়া আর কিছু নাই বেবি
বোরকাবতীরা কি জর্ম দিতেছে জানি না
কিন্তু আমাকে কিছু করিতে হইবে
উৎসব মোচ্ছব করিতে হইবে শরীরের রসাবিলাসে
খানিক দুরবর্তী হও
মালকোচা মাড়িয়া দামাল খাড়াইয়া আছে
ভাবিতেছি, তাহাকেই আমার অযৌনগম্য করিব
আমি কাষ্ঠমিদঙেরে করিব তরল
এলাইয়া পড়িব বাংলাসাহিত্য লইয়া
জাতিকে তাতার না করিয়া আমার নিদ্রা নাই
অপেক্ষো, অপেক্ষো মাধব
অ-কবিতা
কি মাস চলছে এটা? সন তারিখই বা কত?
কেন বিদ্যুৎ বাহিনী রাত্রিসম্মত
করে রেখেছে দিন?
আমার এসব আর ভালো লাগে না মোটেও
কি হল আওয়ামি লিগের? বিএনপির? কমিউনিস্ট পার্টিরও নাই একটি ঢেউ?
কি করছে স্বর্গসন্ধানিরা?
মেয়রেরা ময়ূরের পেখম পরেছে, ভাল কথা, পেটে কেন পীড়া!
কি বলছ? সন, তারিখ, বার সব কিছু লুটে নিয়েছেন মহান ঈশ্বর?
একাকার হয়ে গেছে যাবতীয় জের ও জবর?
পুনর-শূন্যময় ঠিক-ঠিকানাহীন দুনিয়া জাহান-
শেষতম হত্যাকাণ্ডের পর পান মুখে উনি কে তবে একা একা বিছানায় যান!
কিছু
আমার কিছু ছিল আমারি’,
এখন নাই তার অবশেষ,
শক্তি নেই যে নিজেকে ঘা মারি
ভুলেও গিয়েছি কোন আঘাটায় আমার দেশ।
একটা হাফ শার্ট গায়ে রুখু-রুখু চুলে
বাহিরগোলা রেল ইস্টেশনের দিকে
যেতে যেতে হারাল সে ভুলে
একটা পদ্যও না লিখে।
পকেটে ছিল ১০৮টি মার্বেল
আর একটা বাটালি- ক্ষীপ্র লক্ষ্য স্থির,
তাও সে পারল না হতে সভার কামেল
যমুনা-সমান কথা এখন বধির।
সদরঘাটের এক কোণে
ছিল সে ফ্লাওয়ার ভাস সহজ নাসরিন—
মদিরা ভরা চোখে পুষ্পগাথা হয়ে,
সেও আজ আমার মতই পরাধীন
প্রফেসর সাহেব তিনিও বললেন, বাঁচানো যাবে না, নো ওয়ে!
এখন টাংগাইলে দেখি খাট্টা-তামাসা,
যা ছিল আমার তার এক কণাও নাই,
ছোট-বড় মস্তানেরা খেলছে এক সংগে পাশা
এবং নিজেই জন্ম দিচ্ছে শিঙ-অলা শিশু বৈদেশি-ভাড়া করা দাই!
নতুন আরম্ভের গান
ঘুরছি বৃত্তাকারে
কেন্দ্রের অন্তর টানে,
সুডৌল এ মন্দিরে আমি
পূজা দিচ্ছি বিশুদ্ধ আচারে,
তুমি তাই হলে মোর স্বামী।
বিভাবতী, রাখিও খেয়াল
যেন ছিটকে না-পড়ে যাই
চুম্বকের নিহিত শক্তি জাগা তুমি না আলোর দেয়াল?
তুমি আছ বলেই তো আমি আর কোত্থাও নাই!
হে বৃত্ত-নগ্নিণী, হে চারুলতা
কালাকালে ক্ণাদে -কুমুদে ধুয়ে যতই কর না তুমি আমাকে নাকাল
শুরু থেকে মেনে আছি তোমার বশ্যতা
যেন কোন নতুন আরম্ভের শুরু করবে বলে পাগল পাখিটা ঝড়ো-বেগে নেড়ে যাচ্ছে স্বর্গের আমলকি ডাল!
অনেকদিন পর আবার শোভাদি
ভুখ লেগেছে আমার, মালপোয়া দাও
তারপর না হয় যাব অরবিন্দের বাড়ি,
শুনে আসব তাঁর বিপ্লবী গাথা আর ঈশ্বরের নিরীশ্বর প্রতিভার কথা।
জলদি জলদি করো, আগুনের আঁচ যেটুকু দিয়েছ
চলবে শোভাদি,
ও, হ্যা, দেখেছি আসবার সময় সূর্য উঠছে পক্ক আতার!
বড় খিদে দিদি, আমলোকে ছুরি চলছে জনে-জনে- বন্দুক চালনাও আছে,
কে থাকে এমন দেশে, কে!
চলে এলাম তো তাই
বেসরের তাপ না হয় নিলাম দুষ্কাণ্ড না করে,
প্রতি-পদ্যে পদে-পদে
তোমার রোসনাই
ঝরছে উঠান সেজেছে যেন মহানৃত্যপুর
দেখছ না বেল গড়িয়ে গেলেও থামে নি নূপুর?
আজ তোমাকে নিয়ে চাঁদে যাব, হুলুস্থুল ও পাড়ায় যাব না যাব না
মহামন্ত্রে নিখিল কালাম উপচে ঝরে পড়বে তুমি
বিশুদ্ধ আমলকি জল
আমরা আমাদের হিয়া মুহূর্তেই করব বদল।
বড় ভুখ, শোভাদি দয়া দাও মোরে
মালপোয়া না নিয়ে আজ আর যাচ্ছি না গোরে!
……
শামসেত তাবরেজী
জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯৬১, ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ফ্রিল্যান্স কনসালট্যান্ট, প্রোজেক্ট ট্রানস্লেশিয়া। প্রকাশিত কবিতার বই : ১. উদবাস্তু চিরকুট ২. আবাগাবা ৩. আম্রকাননে মাভৈ কলের গান ৪. অবিরাম অরেঞ্জ ৫. তক্তা ৬. হে অনেক ভাতের হোটেল ৭. দুজনেষু ৮. অশ্রু মোবারক ৯. রওজার দিকে
মাও জে দং (মাওসেতুঙ), রাসুল ঝা প্রমুখের কয়েকটি কবিতা তর্জমা করেছিলেন।
ই-মেইল : [email protected]