ইউটোপিয়া
To us now
these green days lie broken
with leaves with blossoms fallen
কাঠঠোকরার পায়ের চাপে ঘাসফুলের অশল্য চিৎকার
কীভাবে বায়বীয় ঘূর্ণিতে হারিয়ে যায়
সে গল্প তোমাকে বলব বলে
সন্ধ্যামুখে ধূপকাঠি জ্বালাতেই
ধোঁয়াশায় ঢেকে গেল আকাশের পাড়।
দূরলগ্নে ফেলা আসা শৈশবের শূন্যমাঠ
আমাকেও ডাকে
আয়…আয়…
বাড়ির আঙিনাজুড়ে একজোড়া ছেঁড়া জুতো
জিজ্ঞাসার প্রতিচিহ্ন হয়ে
লুপ্ত প্রজ্ঞার ভারে ডুবে আছে ঘাসে, মাটিতে
নিঃশ্বাসের মুঠোয় দলাপাকানো শব্দহীন কান্নার ইশতেহার
সরষে দানার ভেতর গড়িয়ে গড়িয়ে যায়
ক্রমাগত…
মূর্খতায় শব্দের সোনালি ফসল ঘাই মারা বেদনায় নিঝুম হলেও
আকাশ খোলেনি ধোঁয়াশার পাড়
বরং ঘাসফুলের অশল্য চিৎকার বাদামী ক্ষিপ্রতা ছেড়ে
ধীরে ধীরে লোকালয়ে জড়ো হলে
মানুষেরা উর্ধ্বশ্বাসে গিলে খায় আতংকের ডিসটোপিয়া।
সময় এবং অক্ষরের গান
পাল্টে গেছে, পাল্টে যাচ্ছে সব
বর্ষাও নেমেছে পথে, প্রতিপক্ষহীন
চোখে তার কালো ঘুড়ি, স্থির
মিশে আছে দূরত্বের ঝাঁঝ মেঘে ও রোদ্দুরে।
আলতামিরার গুহাচিত্র ছেড়ে যে বৃষ্টিরা পড়েছিল
নির্বাণ সৈকতে, তারা কি উড়ন্ত আজ?
পাড়ি দিচ্ছে জল?
মেঘময় সোনালি ঋতুর বিল?
বর্ণময় আষাঢের দিনে
সিঁদুরে স্বপ্নের তল কতোটা গভীর হলো
দেখেছো কি আবারো নতুন করে?
থিতানো জৌলুশ রক্তপিপাসুর ডাকে
জ্ঞানহীন হতে পারে, হোক
তুমিতো হিমাঙ্ক, মদিরতাহীন
নির্ভার নির্জন
গলনাঙ্কের বৈঠায় জোয়ারের ক্রুশ
তুমিও পেয়েছো টের!
তুমিও দেখেছো
দাপুটে বর্ষায় পুড়ে যাচ্ছে ঘর
সরে সরে যাচ্ছে সব লিপির অক্ষর।
সংখ্যালঘু পাতা
পাতাটি কাঁপছে!
একা অথবা অসংখ্য সংখ্যালঘু পাতা!!
চারপাশে বিভাজন আর বিনাশের হরিতকী খেলা
পাতাদের শিরা জুড়ে থকথকে রাতের পায়রা, ডানাহীন;
পাতাটির কোলঘেঁষে নীল পায়রার দল
দাঁড়াতো যেদিন
আকাশ দোলাতো দু’পা
পাহাড় নামতো বেয়ে ঝর্ণার তুমুল বেগে।
আজ অন্ধকারের নিস্তব্ধতায়
কানামাছি বিষ ঢেলে দিচ্ছে কেউ
এঁকে দিচ্ছে রক্তাক্ত খঞ্জর!
কপাটবিহীন শূন্যতায় দশদিক জর্জরিত!
মাছরাঙা রাত ক্রমশ গভীর
আলো আরো আলো চাই প্রভু
পাতাটি হাসুক
উড়ে যাক সফেদ পায়রা ঠোঁটে নিয়ে রূপালি রোদ্দুর।
কান্নার দর
শব্দের প্রতিটি বিন্যাসকে ভেঙেচুরে দেখি
ভেতরে আমারই কান্নার সোতস্বিনী
নায়াগ্রার চেয়েও তীব্র
প্রায় দশ লাখ বছরের পলি ঘেঁটে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,
‘এবারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিপর্যকর বর্ষা নামবে’।
তুমুল বর্ষাতে আমার কান্নার দর নেমে গেলো হু হু করে;
দরপতনের ম্লান ছায়ায় ঢেকে গেল
আহ্লাদী বিড়ালের পাশে পড়ে থাকা সবটুকু নরম আলো
দিনে দিনে কতোকিছু পাল্টালো
অক্ষরের বিন্যাসগুলো লন্ডভন্ড হয়ে ভেসে গেল
ঈষাণ কোনের ঝড়ে
যেখানে মেঘদূতের গল্পগুলোও আগে থেকেই ছিল
আজ তাদের নিলাম হবে
কৌতুহলী ক্রেতার ভিড়ে আমি খুঁজি একজোড়া চোখ
যেখানে তুমুল বর্ষাতেও আমার কান্নার দর
মূল্যহীন হবে না কোনকালে।
গৃহবিবাদের গল্পে যেভাবে হেমন্ত এলো
রোদ্দুরের তাতানো ছায়া সরে গেলে
ভেসে ওঠে শৈশবের মাঠ
সেখানে হেমন্ত ছড়িয়ে আছে
যেন সোনাঝরা মধুবন্তী রাগ
নির্জন গোপন মায়া।
অনেক ডেকেছি তাকে
গোল্লাছুট খেলা শেষে
বলেছি, ওঠো
এই শীত এলো বলে;
এসো, দরোজা জানালা বন্ধ করো।
‘আমার সিথানে এখনও অনেক বেলা’
হেমন্ত বললো হেসে
আমিতো নদীদের গল্প কুড়াবো আজ
শুষে নেবো চরাচর জুড়ে থাকা
জীবনানন্দের দীর্ঘশ্বাস!
ঠিক তখনই গাছের শেকড় জুড়ে মচমচ
হাওয়ার অন্তরালে শুকনো পাতার ভাঁজ
ঘোরহীন পথের ঘূর্ণন।
আবছা নদীজলে সূর্যের ছায়া কাঁপে
মিলিয়ে যায় পলেস্তরাহীন গোধূলির বিষণ্ণ ডানায়
তারাও ডাকল তাকে
বলল, ওই দেখো তেরছা আলোর রেখায় ওড়ে কতোশতো
ধূলিচিত্রের ঝাঁক
হেমন্ত ওঠো, ঘরে চলো
এখনই নামবে অন্ধকার—
শূন্যতার বেড়ি পায়ে হেমন্ত লেপ্টে আছে ওই দূর পাহাড়ের গায়ে
এখন ডাকি না তাকে আর
পাহাড়ে পাহাড়ে কুয়াশার রেণু ছুঁয়ে সেই কবে মুছে গেছে
আমাদের সকল গৃহবিবাদ।
…
জুনান নাশিত
জুনান নাশিত, কবি ও প্রাবন্ধিক
উত্থান: নব্বই দশকের শেষ দিকে
জন্ম: ১ অক্টোবর, ১৯৭৩, কুমিল্লায়
পেশা: সাংবাদিকতা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত।
শিক্ষা: অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।
প্রকাশিত গ্রন্থ: কাব্যগ্রন্থ: কুমারী পাথর, অন্য আলো অনেক দূরের, পলকাটা অন্ধকার, বাতাসে মৃত্যুর মায়া, কাঁটাঘন চাঁদ, জলন্ত ভ্রুণ।
প্রবন্ধ: রোগশয্যা ও রবীন্দ্রনাথ, দুই বাংলার কথা ও কাব্য
সম্পাদনা: আবুল হোসেন, কবির পোর্ট্রেট
ছড়াগ্রন্থ: ব্যাটে বলে ছক্কা, হরেকরকমবা।
কিশোর উপন্যাস: বেগুনি অ্যাম্বুলেন্স
কিশোর গল্প: ভূতের নাতি ওঁ চিঁ
গল্পগ্রন্থ: তিথি ও একটি আঙুল
পুরষ্কার: মহাত্মা গান্ধী স্বর্ণ স্মারক ২০১৬জুনান নাশিত, কবি ও প্রাবন্ধিক