আমরা বেঁচে আছি সেইসব উলঙ্গ মানুষের ভিড়ে
আমরা বেঁচে আছি সেইসব উলঙ্গ মানুষের ভিড়ে
বরফাচ্ছাদিত নয় অথচ বরফে ছেয়ে গ্যাছে দেশ!
ক্রমশ মানুষের অন্ধত্ববিলাস খেয়ে ফেলছে হৃৎপিণ্ড
বিচিত্র ও বিবিধ মস্তিষ্কের অবিকশিত কল্পমূর্তি ধূসর
অপ্রাসঙ্গিক যদিও তারপরও রক্তবর্ণ ক্ষত অট্টহাস্য
হয়ে ঝরে পড়ে অলিন্দে।বৃহত্তর ঐক্য ভেঙে দিয়ে
মানুষ কেন ক্রমশ একা হতে চায়?এ বিস্ময়কর
অভিব্যক্তি নানা রঙের বক্ররেখায় চিত্রিত হতে থাকে
সুকন্যারা বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে উচ্ছন্নে উঠিয়ে দিয়েছে
পদযুগল!মদের আঙটায় ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রতীক্ষার
উপাখ্যান। সময় যাচ্ছে চলে অসময়ের হাত ধরে।
যেদিন থেকে নৈঃশব্দ্যের ভেতরে পঙ্গুত্ব ঢুকে গেল
পাখিরা বধির হতে শুরু করলো,মানবতা মুখ থুবড়ে
পড়লো পথের ওপর!গুহাবাসী মানুষেরা গেয়ে
উঠলো বধিরতার গান এভাবেই মানুষ ক্রমশ
বোধহীন ভীতিকর নির্জনতা পোহাতে পোহাতে
পাষণ্ড পাথর হয়ে অচেনা হয়ে ওঠে একে অন্যের
কাছে। বিচারকের মানদণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ আর লালিত
শব্দরা ডাকিনীর কলা-কৌশল বুঝতে না পারার
কারণে ঝলসে গেল সময়ের চাকার নিচে।
বসন্ত
এই বসন্তের দিনে কেন অবগুণ্ঠিত জলের
প্রতিবিম্ব হয়ে আছো?ঋতুমতি চন্দ্রকিরণ
হয়ে যারা দেখেছে কুসুমিত ভোর পাখিরূপ
প্রকৃতির সৌরভ তারাও দোলের দিনে রঙের
বিষণ্নতা বুঝে নেয় দ্রুত। লণ্ঠনের আলোয়
ঝরে পড়ে নীলক্ণ্ঠ সুধা।আজকাল সবকিছুই
দূরবর্তী দ্বীপের জীর্ণ ঘুড়ির মতন র্নৈব্যক্তিক
এই মধ্যদুপুরে সীমান্ত পেরিয়ে যারা প্রজাপতি
হতে চায় ছুঁতে চায় ইতিহাস, তারা বোঝেনা
চৈত্রর শূন্যতা,বাঁশির পূর্বরাগ আর বিষাদের
জলরং! ক্লেদ ও প্রাণহীন শহরে প্রেম একটা
ঘোড়া রোগ!উৎক্ষিপ্ত ঘাস ফড়িঙের মতন
ওহ্ বসন্ত গোলাপ বনে ঢেলে দাও সীমাহীন
অনুরাগ!স্বপ্নের জাল বুনে বুনে যারা সরোবর
গড়ে তোলে তারা কি নিষাদের ছল বোঝে?
ওহ্ নির্মম মুক্তির আলোয় প্রাণের ভোরে সিক্ত
করে দাও আভূমি জলের রেণু।উৎসব শেষে
কেউ কারো থাকে না দিশেহারা পথের সাথে
উঠে আসে বিচ্ছিন্নতা,বৃষ্টিসিক্ত আভূমি জল
রঙের অপূর্ণ রূপ তাড়িত সুর পূর্ণিমার জ্যোতি
হয়ে বাজায় আত্মহননের গান আর অনন্ত লয়
১৮\৩\২০২২
সেন্ট্রাল রোড,ঢাকা
প্রতিধ্বনি
কোনো মুহূর্ত নেই যা দিয়ে মানুষকে
শনাক্ত করা যায়। যা দিয়ে অকর্মকে
কর্মে পরিনত করা যায়। যিনি নিজের
কাব্যগ্রন্হ নিজের নামেই উৎসর্গ করে
বসে আছে তাকে প্রতিহিংসাপরায়ণ
অথবা উণ্মাদও বলা যেতে পারে।
জগৎ সংসারে কত রকমের ঘটনা যে
ঘটে তা লিপিবদ্ধ করে রাখাও দুঃসাধ্য
যারা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় হামাগুড়ি দিয়ে
বসে তারা নক্ষত্র দেখেনি,শুনেছে কেবল
লোভ ও লালসার গল্প,জীবন দেখেনি ।
ক্ষীয়মাণ ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে অধিক ঘৃণা
থাকে সুবর্ণরেখা বরাবর ক্লান্তি ও ট্রেনের
ভিন্নতা থাকে। থাকেনা শুধু ঘন্টা ও অন্য
কোনো খেলা!অন্য কোনো মুহূর্ত! আলো
খুঁজতে এসে অন্ধকার জড়িয়ে ধরেছে
দু’পা। যারা মৃত্যু ও সময় বোঝেনা
তারা নদীর দীর্ঘশ্বাসও বুঝতে চায়না
সবদিকে দ্বিধা ও ঘৃণা। যে রমণী কবিতা
বোঝেনা তার মাথায় যিনি চাপিয়ে দেন
গ্রন্হের ঝুড়ি তাকে চৈত্রের জটায়ু বলা
যেতেই পারে!এতটা কি ভালো সব ভালোর
মধ্যে গরল উপচে পড়ে।যে ছেলেটি সহজ
ছিল ক’দিন আগেও এখন সে বুঝে গেছে
হোয়াটসআপ।ক্রমশ ঘুমহীন নির্জনতায়
চাঁদের আঙটায় ঝুলে থাকে দুর্বোধ্য প্রেম
মহাজাগতিক আলোয় বিবর্ণ পথের রেখা
বসন্তের মাতাল হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছে
শস্যের অক্ষর,স্মৃতির ধারাপাত,প্রতিধ্বনি
১৫\৩\২০২২
সেন্ট্রাল রোড,ঢাকা
রীতি
আমার তুচ্ছ ইচ্ছার কাছে হাঁটু মুড়ে বসেছে
বালির চাঁই।এ কোনো রীতি নয় শুধু মায়ার
বিস্তার। তাই তো সর্বনাশ জড়িয়ে ধরেছে
দু’পা। দিগন্ত নয় কেবল ধ্বংসের দামামা
বাজিয়ে দিয়েছে এক অকাল কুষ্মাণ্ড।কে
কার থাকে? ‘অবশেষে কেউ কারো থাকেনা’
নীল মেঘ উড়ে উড়ে ছোবল উঁচিয়ে ধরে
এ বনভূমি এ নদী এ গৃহ এ পথ কিছুই
কারো নয় একদিন সব দৃশ্যসীমার আড়ালে
চলে যায়।উচ্ছিষ্ট জল ও জালের খেলা ভেঙে
দেয় সরল রীতি।সবুজ অরণ্য খেয়ে ফেলে
অগ্নি। গড়িয়ে গড়িয়ে যায় আগুনের বল
অসংখ্য ডুবুরি নেচে বেড়ায় উণ্মত্ত শূন্যতায়
নটির মুদ্রায় বাজে লোভের টঙ্কার।শীত ও
অশীতের মর্ম যাতনায় জেগে থাকে ঈশ্বরের
চোখ।নিমগ্ন অন্ধকারে বিমূঢ় আলো এসে
পড়ে চৌহদ্দীর ভেতরে। মহাকাল ছুঁয়ে দেখি
মানুষের মন অলৌকিক শূন্যতায় অনন্ত দাহ
সেন্ট্রাল রোড,ঢাকা
২৪\২\২০২১
জিজ্ঞাসা
যারা খেয়ে ফ্যালে জগতের আলো চিন্তার দরোজা
তারা সম্পূর্ণভাবে অবগত থেকেও ক্রমাগত প্রতিহিংসার জাল
ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে!তুমি কোনদিকে যাবে সবদিকে
অযোগ্য কাঙাল। কামার্ত চিখির পান করে সেও
মধ্যপধে অধিকতর মাতাল হয়ে নটরাজ!কোনো অর্জন নেই
মূর্খের বিতর্কের ফাঁদে আটকে আছে মোহ আর ছলনার
প্রমাণক। এভাবে বৃক্ষ মাটি মানুষের ক্রন্দন জিজ্ঞাসা
চিহ্নের কাছে থিতু হয়ে আছে বহুদিন। বহু রঙে রঞ্জিত
যারা তারা আসলে কি?এর যৌক্তিকতায়ই বা কি? এই
অমীমাংসাময় দিন ও রাত্রির কাছে মানুষেরও কোন
পরিত্রাণ নেই।যিনি স্ত্রৈণ ও সংস্কৃতিখাদক তার অধিক
আনুগত্য ও রঞ্জিত হবার বিষয়টি প্রত্যক্ষ হলেও তিনি
ভাঁড় হিসেবে জ্ঞানশূন্য।তাহলে কি আমাদের কোথাও
যাবার নেই?কারণের ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতে ভূকম্পন
লোভের সাঁকোর ওপর ঘাতক তস্কর,গ্রন্হকীট আর
অসত্যের ওম। প্রতিশ্রুতিরও কোনো মূল্য নেই! মূর্খের
নিকট যথার্থ জ্ঞান আজ প্রমাণসাপেক্ষ।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ঢাকা
সুহিতা সুলতানা
জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ যশোর। শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ রেবেকা সুলতানার দ্বিতীয় সন্তান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স), এমএ। বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কর্মকর্তা হিসেবে গ্রন্থোন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণাধর্মী বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। দু’বাংলার জনপ্রিয় কবি সুহিতা সুলতানা। পাঠকপ্রিয়তা তাঁর লেখার ভুবনকে করেছে আলোকিত। নিভৃতচারী এ কবি অনবরত অরণ্য পাহাড় সমুদ্রের মুখোমুখি অনন্তকাল বসে থাকতে চায়; স্পর্শ করতে চায় কুয়াশা শিশির বৃক্ষরাজি পত্রালী বনফুল মেঘপুঞ্জ। প্রিয় ভাষা বাংলা ভাষা। চর্চা করেন নরওজিয়ান, রুশ ও হিন্দী।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : দাঁড়াও পথিকবর (যৌথ), দুঃসহ শুদ্ধতা, অবিরাম শােকার্ত স্বপ্নেরা, অসংখ্য অভিশাপ। আমার নিদ্রার ভেতরে, হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে বিষঘুম, শূন্যতার এক আশ্চর্য মহিমা, নির্বাচিত কবিতা, ভাসে বহুবিধ খেলা, কবিতা সমগ্র ১। প্রবন্ধ গ্রন্থ : সুহিতা সুলতানার গদ্যসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড; সম্পাদনা গ্রন্থ : ১৯৪৫-১৯৯৫ ষাটজন কবির কাব্যচিন্তন; গ্রন্থ, প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও মন এবং গদ্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। উপন্যাস : মুখােশের আড়ালে নরনারীগণ, মানবাঙ্ক, মুক্তিযুদ্ধ ও একা একজীবন, ধ্বংসবীজ।