ফেরদৌস নাহার
আনমনা হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম বেশ খানিকটা দূরে। আকাশের খোলা দেয়াল বেয়ে নীলরঙ চুইয়ে পড়ছে। অন্টারিও লেকের জলে তার ছায়া পড়ে পুরো দৃশ্যটাকে একেবারে পার্শিয়ান ব্লু করে দিয়েছে। এই জায়গাটার নাম গিল্ডউড পার্কওয়ে,যার পাশ ঘেষে যেতে যেতে শোনা যায় বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী লেক অন্টারিওর গভীর গান। আমি সেই গান শুনতে মাঝে মধ্যে চলে আসি তার কাছে। জলের ভাষা,উচ্ছ্বাস, দীর্ঘশ্বাস খুব স্পষ্ট যেন বুঝতে পারি কখনো কখনো।
কদিন ধরে মনটা বিষণ্ন নির্দ্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাই না,আবার চাইলে অনেক কারণ খুঁজেও পাই। মাঝে মধ্যে এমন হয়। কবিতা আসে না,গদ্য আসে না,গান আসে না, এমন কী ছবিও আঁকা হয় না— মোট কথা কিছুই করা হয় না। কিযে এক আকাল-বন্ধ্যাত্ব শুরু হয়! কবে যে শেষ হবে এই আকাল সঠিক করে বলতেও পারি না। বসে থাকি এই নীলজলের পাশে। মনে মনে ভাবি, যারা কোনো কিছুই লেখা না, ছবি আঁকে না বা সৃষ্টি করে না— তারা কি অনেক বেশি ভালো থাকে ? অন্তত আমার তাই মনে হয়! এই যে বার বার মনে হচ্ছে নিরর্থক এই বেঁচে থাকা! কী করে বয়ে বেড়াব এই সময়! কবে শেষ হবে এই অনাবাদীকাল ? এইসব দহন থেকে মুক্তির কী উপায় ? প্রশ্ন আছে হাজারো, কিন্তু উত্তর কোথায়!
আকাশে উড়ে চলা বলাকার ঝাঁক, দূরে ভেসে যাওয়া নানা রঙের পাল তোলা ইয়ার্ট দেখে দেখে কাটিয়ে দিলাম অনেকটা সময়। এ-আমার প্রিয় একটি জায়গা যেখানে এলে নিজেকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে খুব বেশি নিজের মতো করে ভাবতে পারি। এখানে আমার আকাশকে খুব কাছে আর হ্রদের জলকে বড়ো বেশি নীল বলে মনে হয়। ওই যে পার্শিয়ান ব্লু- ঠিক তার মতো। আগে ভাবতাম এ-বুঝি কেবল আমারই এমন মনে হয়। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি— তাদেরও তাই লাগে। হয়তো এদেশটা অনেক উত্তরে বলেই আকাশের কাছাকাছি, আর গাঢ় নীল জল বুঝি ওই আকাশের ছায়া এবং পরিবেশ সচেতনতার উপহার। কিন্তু সবকিছুর পরও মন লাগিয়ে লিখতে পারছি না বলে মনটা খুব ভার ভার লাগছে…
কবে লিখেছিলাম মনে পড়ে না
কবে লিখেছিলাম জন্মকালের সবকথা মনে পড়ে না
জন্ম মুছে যাচ্ছে আর ভালোবেসে পথে নেমেছে যারা
তাদের কথা কী আর লিখব
উদভ্রান্ত তারা সব ঘোর পায়ে চক্র কাটে।
শরৎকাল শুরু হয়েছে, রঙ লেগেছে প্রকৃতিতে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফল সিজন’। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত টানা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ বছরে পুরো নভেম্বর আর পেরুতে পারে না, তার আগেই শীত এসে গ্রাস করে নেয় ফলের রূপ-রঙ-মাধুরীমা। এই ঋতুর পাগল করা রঙ মাতিয়ে দিয়ে যায় সারা পৃথিবীর রঙ-পাগল মানুষদের। মাতাল আবেগে গাঢ় এই টকটকে লাল, হলুদ এবং কমলা রঙের মিশ্রণে এমন এক সোনারঙ সৃষ্টি হয়, সে-রঙ প্রকৃতির বুকের ভেতর যে তোলপাড় তোলে তা এতটাই দৃশ্যমান যে, তার প্রকাশ উত্তর আমেরিকার আকাশে, বাতাসে, পাহাড়ে, প্রান্তরে, বনে-বনান্তে প্রবল স্পষ্ট! যদিও খুব শিঘ্রী সে ফুরিয়ে যাবে। সে-রঙের এই উন্মত্ত হুল্লোড় ফেলে চলে যাবে শ্বেতশুভ্র এক দীর্ঘ বিরাণতায়। এমন ঝরে পড়া দেখছি বিগত বছরগুলো ধরে। প্রথম প্রথম রঙ দেখে ভীষণভাবে মেতে উঠতাম! ঠাহর করতে পারতাম না অনতিদূর পরবর্তী নগ্নতাকে। কেবলই উপভোগ করতে চাইতাম রঙিন হবার উন্মাদনা। উন্মাদনা বলছি— এসময় বাতাসের হুড়োহুড়ি বেশ বেড়ে ওঠে, এলোমেলো করে দিয়ে যায় চারপাশ। পাতারা ঘূর্ণি তুলে বাতাসে যেভাবে ছুটে চলে তাকে দেখে যে-কেউ মনে করতে পারে কুরুক্ষেত্রের চক্রব্যুহ যেন নেমে এসেছে। মাঝে মাঝে সেই বাতাস এতটা শীতল থাকে যে সকলে বলতে শুরু করে, শীত পড়েছে— বেশ শীত পড়েছে! কিন্তু উধাও উধাও লুকোচুরি খেলাটা অবশেষে মনে করিয়ে দেয়, এটা উত্তর আমেরিকার হেমন্তকাল। এ-সময়টা এমনই চলবে। ম্যাপেলের ঝরা পাতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ, রাস্তাঘাট সব। আমার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে একহাঁটু রঙিন ঝরা পাতা! ইচ্ছে করে পথ না ধরে হেঁটে চলি ওই ঝরা পাতার উপর দিয়ে… ভেসে আসে রবি ঠাকুরের গান:
ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে
অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে
ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র আমার হিয়াতলে
ঝরা পাতা গো, বসন্তী রঙ দিয়ে
শেষের বেশে সেজেছ তুমি কি এ
খেলিলে হোলি ধুলায় ঘাসে ঘাসে
বসন্তের এই চরম ইতিহাসে…
কবি গুরুর লেখা অনুসরণ করলে আমাদের ঝরা পাতার দিন তাহলে ফাল্গুনে আর এদেশে হেমন্তে। বাতাসের ফুঁসে ওঠা বেগ সবকিছুকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। গলার স্কার্ফটা ভালো করে পেঁচিয়ে নেই। রাত প্রায় ন’টা বাজে। উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করি। মনের খবর নিতে চেষ্টা করি না। কী হবে নিয়ে ? বাকি পথ তো যেতে হবে। জ্যাকেটের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে হেঁটে হেঁটে পার হতে থাকি লরেন্স এভিনিউর রাস্তা। এই দিকটা টরেন্টো শহরের পুবদিকে, আর কিছুটা দক্ষিণে ঝুঁকে থাকা। এখান থেকে কানাডার আদরের হ্রদ লেক—অন্টারিওর পুব দিকটা তাই বেশ কাছেই। শহরের বাতিগুলো সেই বিকেল বেলা জ্বলে উঠেছে,আকাশটা কখন যে ধীরে ধীরে মেঘলাবতী হয়েছে উঠেছে! এত আলো তবু কুয়াশা কুয়াশা লাগছে সবকিছু।
যে কবিতা আমার আজো লেখা হয়নি তাকে খুঁজি পুবদেশ থেকে পশ্চিমে
উত্তরের হিমধরা বাতাসে, উত্তর মেলেনি বলে যে কষ্ট এঁকে যাই তাকে বোঝে
আলোর আকাশ ভরা ধ্রুবতারা— অদৃষ্টের পাতায় মোড়া দুখিনী দুচোখ।
কবিতার অন্বেষণে বার বার ছুটে যাই আহত উৎসের কাছে, দেখি
তারাও প্রতীক্ষায় আছে কোনো এক বৈষ্ণব প্রহরের।
দমধরা আকুলতার দগ্ধ মুহূর্তে উজার বরষা নামে চোখের ঘরে,
কে দেখে সেই জলের নীল রঙ, কেইবা নতুন করে ভাবে ?
একটা কফিশপে ঢুকে পড়ি। বাইরে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এ আবার কখন শুরু হলো লক্ষ্য করিনি তো! লাইনে দাঁড়িয়ে কফি নিয়ে জানালার পাশে এসে বসতেই চোখ চলে গেল বাইরে গাড়ির হেড-লাইটের আলোয়,দেখলাম ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষনের জন্য বসতে হবে- কফি পান,দৃষ্টি পান এবং সময় পান। তারপর হয়তো ভিজতে ভিজতেই ঘরে ফিরতে হবে। যদিও এখান থেকে আমার গন্তব্য খুব একটা দূরে নয়,কিন্তু যেতে যেতে পুরোপুরি ভিজে যাবার জন্য যথেষ্ট। যাব ক্ষণ! বৃষ্টি ধরে আসুক তারপরই না-হয়।
ব্যাগে দু’তিনখানা বই রয়েছে। সবগুলোই কবিতার। আমার বন্ধু ক্যানাডিয়ান কবি ক্যারেন শ্যানফিল্ডের কবিতার বই ’দি ফার্টাইল ক্রিসেন্ট’ বের করলাম। পাতায় পেইজ-মার্কার দেয়া ছিল। ক্যারেন একাধারে কবি, গল্পকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত জুইস পরিবারে জন্ম। ক্যারেনের সঙ্গে অনেকদিন দেখা নেই। দেখা হলে ভীষণ খুশি হয় মেয়েটা। এই তো সেদিন ওর আরো একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ’মাই ফাদার্স হ্যান্ডস স্পোক ইন ইড্ডিস’। আমাকে আমন্ত্রণ করেছিল বুক লঞ্জিঙে। কিন্ত ওদিন আমি টরেন্টোর বাইরে থাকায়, যেতে পারিনি। ইচ্ছে আছে বইটি সংগ্রহ করে নেবার। ক্যারেনের কবিতা আজ আমাকে একটি ধীরলয় বিষণ্নতার বাতাসে ডুবে যাবার পথে নিয়ে যেতে থাকে, ভালো লাগছে পড়ে যেতে
I was going,
nor where I had been,
my mind tuned to
the weight of my breath,
my steps,
the mood of the tether
in my raw hand.
কবিতা পড়তে পড়তে চোখ দুটি অন্য টেবিলগুলো ঘুরে আসে। আমার সামনের টেবিলে তিনজন পৌঢ় ইতালিয়ান নিজেদের ভাষায় অবিরাম কথা বলে যাচ্ছে। হয়তো ওদের আড্ডা জুড়ে কবে সেই ফেলে আসা দূরদেশে কী কী ছিল দুর্দান্ত! কেমন ছিল সেই স্মৃতি অথবা আজকের এই কানাডা-জীবনের সাথে কতটা মিশে গেছে বা মিশে যেতে পারেনি— তারই আলাপ-সালাপ! হয়তো আলাপের অনেকটা জুড়ে ঘুরে ঘুরে আসছে ইতালির মদের মাদকতার গল্প। কোথাকার মদ সবচে’ নেশাময় আর স্বাদে অনন্য… ল্যামবার্ডি, তাস্কানি নাকি আরো দক্ষিণের সিসিলি’র মদ ? এসব গল্প করতে করতে কত না মত-মতান্তর! তারপরও একসময় মাথার ভেতর জেগে থাকা স্বদেশ বুকে করে ঘরে ফেরা। একটু দূরে আরেকটি টেবিলে দু’জন নারী কথা বলছে। একজন আরেকজনকে কাগজে লিখে-এঁকে হয়তো কোনো অনলাইন প্রডাক্ট অথবা মাল্টি লেবেল ব্যবসার নাড়ি-নক্ষত্র বোঝাতে চেষ্টা করছে। আজ যদি ব্যবসাটা ধরিয়ে দিতে পারে তাহলে বেশ কিছু পার্সেন্টেন্স নিজের ঘরে এসে যাবে। জানালার পাশে মুখোমুখি দুজন নারী-পুরুষ। মনে হয় তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। দু’জনের মুখেই চাপা উদ্বেগের ছায়া। কে জানে কী ওদের বিষয়, আর কীইবা হতে পারে যথার্থ সিদ্ধান্ত! ঠিক তার পাশের টেবিলে ল্যাপটপে কিছু একটা একটানা টাইপ করে চলছে একজন তরুণ, সামনে কফি, ঠাণ্ডা হচ্ছে। আর সে একমনে লিখেই চলছে, কখন বিরতি দিয়ে কফিতে চুমুক দেবে কে জানে। ফাঁকা টেবিলের একটিতে চারজন উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে এসে বসলো। ওরা বেশ সোরগোল করে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। এতক্ষনের প্রায় চুপ থাকা কফিশপটা সহসা কোলাহলের বাতাসে দুলে উঠলো। আমার বামপাশের টেবিলে লম্বা চুলে ঝুটিবাঁধা ছেলেটি চশমা চাপিয়ে একমনে বই পড়ে চলছে। ওর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না এই কোলাহলে, কারুরই হচ্ছে না। এক একটি টেবিলের এক একটি ছবি, কোনো ছবি কোনোটার সঙ্গে মিলছে না। কিন্তু সবগুলো ছবির মাঝে একটি বিষয়ে মিল— সকলের হাতে বা সামনে কফি। উত্তর আমেরিকার মানুষ কফিতে আসক্ত, এশিয়া ইউরোপ নাকি চায়ে। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যেতে যেতে মনে হয় এত বৈচিত্রের দেশ বুঝি কমই আছে। কত দেশের কত মানুষ এক মানচিত্রে বসবাস করছে। ভাষা, সংস্কৃতি আচরণ কতই না ভিন্ন, তবু কোনো এক অভিন্ন ডোরে বাঁধা আছে সকলের।
দূরে থাকি। বসে বা হেঁটে যেভাবেই থাকি না কেন
দূরে থাকি।
ভাষা ভেসে আসে, মেঘ ও বৃষ্টির আদুরে স্বভাব
কোথায় এসেছি ফেলে ধ্রুপদী ক্ষুধার খেয়ালে,
শীতল আগুনের শিল্পকর্ম অচিরেই প্রকাশিত হলে
সৌন্দর্য কেঁপে ওঠে উষ্ণতার দেশে, এ কেমন দিন!
কতোদিন চূড়ান্ত মেঘের অবকাশে
কতো কিইতো হতে পারতো অন্তরে অন্তরে,
শুধু ছাই,হাড়ের খোড়লে একা নির্বাসনে গেল
কে পাঠালো তাকে?
বাইরে তাকালাম, বৃষ্টি ধরে এসেছে, থামেনি। রাত সাড়ে দশটার উপরে। উঠতে হবে। এগারোটায় কফিখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এই বৃষ্টি সহসা পুরোপুরি থামবে বলে মনে হয় না। উঠে পড়লাম, বাইরে বেরিয়ে দেখলাম বৃষ্টি থেকে গা বাঁচিয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছে কয়েকজন, কফিপানের পর ধুমপান— অনেকেরই প্রিয় অভ্যাস। কফিখানার সামনের রাস্তায় ১১৬ নং বিশাল বাসটা এসে দাঁড়াল। পার্কিং লাইট জ্বালিয়ে ড্রাইভার দৌড়ে এলো একটি কফি নিতে, ক্লান্তি কাটিয়ে চাঙ্গা থাকতে হবে। রাতের ফিরতি বাসে মাত্র দু’তিনজন যাত্রী। সারারাত বাসগুলো আপ-ডাউন করবে যাত্রী থাকুক বা নাই থাকুক। দক্ষিণ-পুবের বিশাল জংশন স্টেশন কেনেডি থেকে উত্তরের ওল্ড ফিঞ্চ বাস-স্টেশন পর্যন্ত যাবে এই বাস, আবার ফিঞ্চ হয়ে কেনেডি। এভাবে উত্তর-দক্ষিণ করে যাবে সারারাত। মাঝরাতের পর যার নাম ’ব্লু-নাইট’ সার্ভিস। সারা টরেন্টো জুড়ে এই সার্ভিস। কতদিন যে রাতের বেলা উদ্দেশ্যহীন চড়ে বসি এইসব ’ব্লু-নাইট’ বাসে তার ইয়ত্তা নেই। নানা পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় শেষ প্রহরের আগে ভাগে ঘরে ফিরি। না আজ আর তা করছি না,সে গল্পও বলছি না। কবিতার হুইসেল শুনতে পাচ্ছি… হেমন্তের আগুন রঙা অরণ্য ভেঙে-চুরে ছুটে আসছে সে। আমাকে যেতে হবে… এখন ঘোলা-আঁধার আর বৃষ্টিকণা কেটে কেটে ঘরের পথেই হাঁটতে থাকি। ভিজে রাস্তায় ছলকে পড়া লাইটপোস্ট ও চলমান গাড়ির হেডলাইটের আলোর ঝিলিক মাঝে মাঝে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চোখের তারা…
ছোট শহরের দুঃখগুলো উঠে আসে ঢাকা শহরে
ঢাকার গুলো টরেন্টোতে। তবে আর কোথায় যাবে ?
উত্তর গোলার্ধ থেকে দূর কোনো কূহেলিকা ভোরে
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবে কোনো অচেনা জগতে।
সেখান থেকে আবার কোথায় ?
এভাবে আবারো আরো কোথাও ?
কোথায়, কোথাও, কোথায়, কোথায়…
কবি নয়, নারী নয় শুধু ধুলো পরিচয়ে
পথ তাকে আঁকড়ে থাকে আঁক কাটে ধুলোর বুকে।
ক্রস আর কাটাকুটি খেলাগুলো খেলবে বলে
কেটে গেল চৌদ্দজনম বেলা।
প্রথম দু লাইন পড়েই মেধা পাচার জনিত একটি বেদনা অনুভব করছিলাম।মনে মনে বলছিলাম ফেরদৌস নাহার কেন অন্টারিও?তারপর এক নিঃশ্বাসে পড়ে যেতে লাগলাম।কখন যে চোখের পাতা ভিজে গেল টের পেলামনা।ভাষা ভেসে আসে, মেঘ ও বৃষ্টির আদুরে স্বভাব
কোথায় এসেছি ফেলে ধ্রুপদী ক্ষুধার খেয়ালে,অথবা যাচ্ছে চোখের তারা…
ছোট শহরের দুঃখগুলো উঠে আসে ঢাকা শহরে
ঢাকার গুলো টরেন্টোতে। তবে আর কোথায় যাবে ?এই অমোঘ উচ্চারণ কী বেদনার ঝরই না তুললো মনে।গরীব হলেও সে যে জননী কোল থেকে পড়ে গেলে সন্তানের যে ব্যথা লাগে তা কেন একবারও ভাবলামনা ।মনে মনে লেখকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম।
লেখাটা পড়লাম । একের পর এক চিত্র । মাঝে মাঝে সোভিয়েট ল্যান্ডস্কেপ ভেসে আসে দৃষ্টিতে। মাঝখানে শুধু আধুনিক কিছু । সোভিয়েট মানেই আবার বাংলাদেশের গ্রামীন বা ছোট শহরের ছবি। চোখে ভেসে ওঠে শর্সে ক্ষেতের পাশেই কিজু নীল মোটরের আভা। আমাদের ফুল নেই। না সাজানো দাড়ির মত মুখ। যেমন বাংলা তেমন সোভিয়েট। বাকীটুকু কল্পনায় আনতে পারো। এই লেখা পড়ে টরেন্টো আমার মুখস্থ শহর। প্রিয়ও বটে।
আহা, কি সুন্দর করে লিখছ ! ইচ্ছে হচ্ছে একটা ছোট্ট ছবি করি। তোমাকে নিয়েই হতে পারতো বা কাউকে দিয়ে অভিনয়। একটা মাস আগে এই লেখাটা লিখতা তাও হতো। কিছু জোগার যন্ত্র ত লাগে, কফি শপের সিকোয়েন্সটায় ত অনেক কাষ্টিং এরেন্জমেন্টও করতে লাগবে। এদিকে ফল-এর রংও তো চলে যাবে দু/ চার দিনে। ইশরে ফেরদৌস, কি সুন্দর একটা ছবি! দিলা ত মাথা আরও আউলা করে… এ সব তোমার লেখার কারন। এমন অদ্ভুত করে তুমি লিখতে পারো, ছবি হয়ে ভাসতে থাকে সব!
Ferdous Nahar
Opurbo tomar
likhar bahar
(♥♪♥)
লেখা হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
নস্টালজিক!
টরেন্টো, ঢাকা মিলেমিশে একাকার!
কেউ কেবল তাকায়, আর কেউ তাকিয়ে দেখে! গভীরে দৃষ্টিপাত একেই বলে। দৃষ্টির গভীরতা এমনি হয়।
সময় চলে। কল চলে। মন চলে। সবাই চলছে। কিন্তু পথ ভিন্ন। অবস্থান ভিন্ন। মনের অনুভব ও অনুভূতি কিন্তু আবার, আমাদের এক হতে পারে…! তখনই একটা ভাল লাগার ব্যাপার তৈরী হয়। একটা সাম্যতা, সমতা, ঐক্য এবং সামঞ্ছস্যতা সৃষ্টি হয়। এটাই এ মায়াবী পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম।
লেখাটি খুব সুন্দর। বেশ প্রাণবন্ত।
খুবই ভালো লাগল…
“মনে মনে ভাবি, যারা কোনো কিছুই লেখা না, ছবি আঁকে না বা সৃষ্টি করে না— তারা কি অনেক বেশি ভালো থাকে ? অন্তত আমার তাই মনে হয়! এই যে বার বার মনে হচ্ছে নিরর্থক এই বেঁচে থাকা! কী করে বয়ে বেড়াব এই সময়! কবে শেষ হবে এই অনাবাদীকাল ? এইসব দহন থেকে মুক্তির কী উপায় ? প্রশ্ন আছে হাজারো, কিন্তু উত্তর কোথায়!”
ফেরদৌস, আপনার লেখার ভক্ত আমি। অসাধারণ…!!
শুভকামনা
রফি হক
ফেরদৌস, খুব ভালো লাগলো তোমার হেমন্তের কাব্যময় প্রতিবেদন।
“কবিতার হুইসেল শুনতে পাচ্ছি… হেমন্তের আগুন রঙা অরণ্য ভেঙে-চুরে ছুটে আসছে সে। আমাকে যেতে হবে… ” / মন খারাপ হলো। মন ভালো হলো!
ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আর কোন কিছু বলার মতো ভাষা পাচ্ছি না। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতি।
একজন একাকী মানুষের নীল জলের ভালবাসার নিভৃত কথোকথা । নিঃশব্দতার ভাস্কর্য অপূর্ব ।
লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ, আপ্লুত ও আবেগপ্রবন হয়ে উঠেছি…। অশ্রু সজল চোখে চেয়ে দেখতে চাই আমার চারপাশ, যেভাবে কবি ফেরদৌস নাহার দেখেছেন। এই পরবাসে একান্ত দৃষ্টিতে কত কী যে দেখার আছে তাই যেন জানিয়ে দিয়ে গেলেন নতুন করে…।