মজনু শাহ-এর তিনটি কবিতা

অস্তিত্ব

অস্তিত্বের রঙ কী– মাঝে মাঝে ভাবি। যেমন কোনো রাজমহিষীকে দেখি নি কখনো, তবু তার মুখের রঙকাহিনি মনে পড়ে। ঐ হাবা অরণ্যের পাশে, চুম্বকের বিছানাই আমার সব। রাত্রিবেলা, প্রান্তরে, দেখা দেয় মহাজাগতিক ডিম। হারেমের রূপসীরা সেই দিকে দৌড়াতে থাকে। সবাই রঙ পেয়েছে, রসিকতাও। কেবল এই বহু ছিদ্রময় অস্তিত্ব, প্রতিমুহূর্তে অস্বীকার করে রঙ, আর সর্বত্র কায়েম রাখে তার অট্টহাসি। সেদিন সাপরাজার সাথে দেখা, বৃত্তান্ত শুনে বললেন, এইসব রেখে, কিছুকাল মেঘে মেঘে পায়চারি করুন–

***

রক্তবর্ণনার ভিতর দিয়ে যাই। হে অভিরূপ, তুমি কোন্ পাখি? নির্জন ঘাটে শুয়ে কেউ কেউ ক্ষয় হয়ে যায়। মাছরাঙা একপ্রকার আলোজাদু। কাব্যের, ইশারার সমস্ত বীজ, জবাকুসুমের মুখ থেকে শুনি। আমার মৃত্যুচিন্তা মুদ্রিত আছে ঐ কাঠবাদামের গায়ে, কাঠবেড়ালি আজ সকাল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যত অদ্ভুত আলো দেখ, সবই মাছরাঙাটির।

***

যে-কোনো সুদূরকে আজ অপরাহ্ন বলে মনে হয়। যে-কোনো প্রণয়, বল্মীকস্তূপের প্রায়। । অতি শাদা ফুলের রাত্রিসংলাপ ছুটে যায় কার পানে! মনে রেখ ঘাসেদের বিপুল অভ্যর্থনা, পতঙ্গদের মৃত্যুনাচ। আমার সবুজ অক্ষরগুলো ধুলোয় ঘুমায়। বাঁকা পথ দিয়ে যেতে যেতে কিছু শশীবাক্য আজ তোমায় শোনাতে হলো। আগামী কোনও ঝড়ে হাতি, হিতোপদেশ সবই হয়ত একসঙ্গে উড়বে।

দাম্পত্য

যখন তুমি মেয়েমানুষ থেকে দূরে আছ, পড়তে পার চিহ্নবিজ্ঞান, চাঁদের নিচে ডিগবাজি খেতে পার কিছুক্ষণ বা বানাতে পার চাবুক। আসলে তোমার জন্যে কোথাও অপেক্ষা করে আছে কাঠবেড়ালি, তার বগলে এ বছরের রাশিফলের বই, আর অন্য হাতে সেক্স-পিস্তল।

যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে।

সহজ কবিতা

হেঁটে হেঁটে একদিন আমরা হয়ত আরও সহজ কবিতার কাছে পৌঁছব। তার রূপ কি হবে বাগীশ্বরী বজ্রের, নিখিল ঘাসের? তার শুরু নক্ষত্রের বিরহ দিয়ে! রাঙা ধূলির পথ অনন্ত প্রস্থানের ইঙ্গিত দেয় আমাদের। যদিও অন্ত নাই, শুধু অজস্র মুকুল, অজস্র না-ফোঁটা কুঁড়ি। সৃষ্টিতত্ত্ব একটা তেজপাতাগাছ বা অন্যকিছু। মহাসময় তার কাছে আসে, ঘুম আর বিষাদ আলোচনা যারা করেছিল, তারাও। প্রতিমুহূর্তে নিকটবর্তী হয় চিরন্তন শবাধার। মধ্যরাতের পর একটি প্রাচীন শ্লোক একা একা জ্বলে ওঠে কারো ঘরে। সুর লেখে কেউ তখন, বাইরে মৃদু কাঁপতে থাকা পাতাদের কাছ থেকে বাক্য আসে একের পর এক। কখনো না-লেখাও সুন্দর, ঐ যেমন নির্বাক সন্ন্যাসিনী, যেমন শিশির। মুগ্ধ বা বিভ্রান্ত খরগোশ, খরগোশের সামান্য ঘর, সবই আজ গ্রন্থ প্রায়।

Facebook Comments

One comment

  1. সাগুফতা শারমীন

    আমার মৃত্যুচিন্তা মুদ্রিত আছে ঐ কাঠবাদামের গায়ে, কাঠবেড়ালি আজ সকাল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যত অদ্ভুত আলো দেখ, সবই মাছরাঙাটির…কী সুন্দর শব্দাবলী, দেখে ফেললাম যেন ভেতর দিয়ে। ধন্যবাদ কবিকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top