সারওয়ার চৌধুরী
অ-পক্ষপাতদুষ্ট সত্যের পক্ষে কথা রচনা করে কিছুদূর যাওয়া যাক। সরল রেখাটি, সরল পথটি- সিরাতুল মোসতাকিমটি ডানে বামে কোনো দিকে না-বেঁকে সোজা চলে গেছে। যে-দিকে গেছে মানে, গন্তব্যের দিকে তার পক্ষাবলম্বন জন্মগত। কারণ হতে পারে, মাযহাবে ইশক বা প্রেম ধর্মে শুরু প্রেম ধর্মে শেষ অন্তহীন অবশেষে।
পক্ষে থাকা বিপক্ষেও থাকা দৃশ্যত নীতিহীন অবস্থান ধরা হয়। কার পক্ষে থাকা, কিসের পক্ষে থাকা, কেন থাকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভালো মন্দের সংঘাতে সারাক্ষণ, তা নিয়ে একটু গভীরে দেখার মানুষ কম থাকে। কম থাকার তাত্পর্য যে নাই এমন নয়। যারা দেখেন তলদেশের তলদেশ তারা বুঝতে পারেন মজা কাকে বলে। আর পক্ষেও নাই বিপক্ষেও নাই অবস্থানকে ধরা হয় বিষয়ের বাইরে। আবার বাইরে বললেই বাইরে থাকছে না সাবজেক্ট, ভেতরে থাকছে অন্যভাবে।
কিন্তু ভালোতে মন্দতে মিশে থাকবার কারণে বুঝি ভালো মন্দ বোঝাবুঝি। কখনো যা দেখি ভুল দেখি, আর যা কিছু সঠিক দেখেছি মনে করি, তাও অ-সঠিক ধরা দেয় স্তর বিন্যাস করে যখন তারে দেখি। দিগন্ত ধরিত্রী স্পর্শ করেছে যে দেখতে পাচ্ছি, তা ঠিক নয়, কিন্তু দেখতে যে পাচ্ছি তা ঠিক। মানে অসত্য সত্য হিসাবে ধরা দিচ্ছে। পরিচ্ছন্ন পানিটুকু অনুবীক্ষণের নিচে পরিচ্ছন্ন ধরা দিচ্ছে না। জৈবপ্রকৌশলবিদ বের করলেন, লিকুইডস আর নট লিকুইডস। আরো বহু দৃষ্টান্ত আছে।
কখনো না-চাহিতে ভালো, কখনো না-চাহিতে মন্দ। কখনো উত্থাল উর্মিতে হাত পা বাঁধা ওদিকে পানির ছিটা যেন গায়ে না লাগে তার ধমক! ধরা যাক ঢেউয়ের পক্ষে থাকলাম। তার মানে ঢেউয়ের বিপক্ষেও থাকলাম। বললাম, ভালোবাসবার পক্ষে; একই সাথে বলে দিলাম না-ভালোবাসবার বিপক্ষে। না-ভালোবেসে ভালোবাসতে থাকা কিংবা যুক্ত থাকবার চিন্তাতে মশগুল থাকা। তুমি মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে আমার দিকে চেয়ে আছো গাঢ়তর ভালোবাসা ধারণ করে!
এবং ভাষার, ধারণার বন্দী হয়ে ভাষা বিন্যাস করি মুক্ত ও স্বাধীনতার পক্ষে। ভাষাকে, ধারণাকে মুক্ত করবার উপায় কই?
তাহলে অপক্ষপাতদুষ্ট না-হয়ে মনের ভাব প্রকাশ করবার কোনো উপায় নেই! কোনো ঘটনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘সত্য বিবরণ’ এর ভেতরেও কী ‘অসত্য বিবরণ’ লুকিয়ে থাকতে পারে না? পারে। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বিবরণের কথা বলছি না। যিনি রাজনীতির জরুরতে ‘সত্য বিবরণ’ দিচ্ছেন বলে দাবী করছেন, তিনি তো নির্দিষ্ট ধারণার পক্ষে কথা বলছেন সেই ধারণা বা ধারণাসমষ্টিকে সত্য ধরে নিয়ে। দেখা যায়, ব্যক্তির সত্যসমষ্টি পক্ষপাতদুষ্ট।
কিন্তু সত্য যাহা সত্যি সত্যি, তার পক্ষপাত থাকবে কেন? সত্য তো রোদ জোছনা বৃষ্টি কুয়াশা বাতাস আকাশের মতো সকলের লাগি সমান। সত্য সকলের পক্ষে। সত্য নিয়ে পক্ষপাতদুষ্টতা হবে কেন! সত্য অ-পক্ষপাতদুষ্ট। সত্যের দীপ্তি এলে অসত্য দেহদেশের অন্তরে সেও অ-পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠতে পারবার কথা। সত্যের পরশে স্বতঃস্ফুর্ত অনির্বচনীয় সুন্দরের সাক্ষাৎ মিলে। সত্যের আভা একটুখানি প্রস্ফুটিত হয় যদি কোনো প্রাণে, কোনো মুখমণ্ডলে, কোনো কর্মে, কোনো সুরে, কোনো রূপে, কোনো শিল্পে সেটা বিস্ময়কর প্রভাব রাখে। সত্যের উপস্থিতির প্রভাবে আসা প্রশান্তি আর মিথ্যা কর্তৃক প্রদত্ত শান্তি সমান ওজনের না। মিথ্যা কী? (রাজনৈতিক সত্য মিথ্যা নির্ধারণ এখানে প্রাসঙ্গিক নয়)। দেখা যাচ্ছে, মিথ্যা দ্বারা সত্য শনাক্ত করা যায় অনেক ক্ষেত্রে। মিথ্যাও এক প্রকার সত্য, সেটা অ-সত্য মূল্যমানের সত্য। ‘না’ মর্যাদাসম্পন্ন ‘হ্যাঁ’। যেমন শুন্যকে বুঝবার জন্য অ-শুন্য বানাতে হয়। শুন্য নিজে নাই কিন্তু শুন্য আছে স্থান দখল করে। এও কি কম মজার যে, ভাষায় না, সংকেতে শুন্য বোঝাতে গিয়ে মানুষ একটা নির্দিস্ট স্পেস বৃত্তাবদ্ধ করে দেখায় (O), নাই! সে আসলে একটা বৃত্তাবদ্ধ ‘আছে’ দেখিয়ে ‘নাই’ অর্থ বের করে। একটা অ-শুন্য বিবৃত করে শুন্যরে জানায়!
ফুটে থাকা ফুলগুলো বহুরূপে সত্য ধারণ করেছে। ফুল একই সাথে সত্য এবং মিথ্যা। এই মিথ্যার দ্বারা সত্যের পরিস্ফুটন। ফুলগুলো, মানুষগুলো, প্রাণগুলো, বস্তুগুলো মিথ্যা এবং সত্য। মিথ্যা থাকে না, সত্য থাকে। সত্য অমর অক্ষয়। এর কারণ ক্ষুদ্র সত্যগুলো পরম সত্যের আভা। রোদ মানে সূর্য না, সূর্য থেকে আলাদাও না; বাতি মানে আলো না, বাতি থেকে আলাদাও না। সত্যই ‘আমি’। সম্ভবত এ্যালেক্সা ইয়ার্ডলি’র ‘এ্যাবসলিউট ইনটেলিজেন্স’ সেই পরম ‘আমি’র দিকে যাচ্ছে। যাহা বোধগম্য যে অমনিপ্রেজেন্ট, অমনিশিয়েন্ট, অমনিপটেন্ট, যদি বৃত্তাবস্থা প্রমাণিত হয়।
পক্ষপাতদুষ্টতার বিরুদ্ধে মানে, নিরপেক্ষতার পক্ষে অবস্থান নিলে সেটাও হয় পক্ষপাতদুষ্টতা। বলা যেতে পারে নিরপেক্ষতার পক্ষাবলম্বন করবার মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম অন্ধতা থাকতে পারে। ফলে এই পক্ষপাত কিছু শান্তি দেবার পক্ষে হতে পারে। যে-সব পক্ষপাতদুষ্টতা অসন্তোষের জন্ম দিলো, সেই বিবদমান পক্ষগুলোর পক্ষে না গিয়ে অসন্তোষ নেভানোর প্রয়াসকে অপক্ষপাতদুষ্টতা ধরা যায়। যদিও এই অপক্ষপাতদুষ্টতাও জ্ঞান বিশ্লেষণে পক্ষপাতদুষ্টতা।
যখন বুঝে নিয়েছি, তোমার আত্মার সাথে আত্মীয়তা রচনা হয়ে গেছে দর্শনহীন অবস্থার আলোকে। সে তো হয়েই গেছে। স্পিরিট এ্যামব্রেইস স্পিরিট, তো আর মিল-মিশ হবার অপেক্ষা একটা দেহনির্ভর আকাঙ্খা। কিসের সাথে কিসের মিল-মিশ হলো, (আসলেই কি দেহতে দেহ মিলে! চেতনা না থাকলে দেহ দিয়ে কি কাম! যেনো চেতনার সারমর্মতে মধুর মিল-মিশ হলো। বস্তুতে আসা সারমর্ম দ্বারা। Thought into thought না হলে বডি ইনটু বডি মর্মসুন্দরহীন। তাই বুঝি মৃতদেহ সাংঘাতিক একা! এক স্তরে একা অন্য স্তরে একা না। ওখানে যে বিবর্তনের কোরাস গীত হচ্ছে না, তা বলা যায় না।) তা জানবার জন্যে আমরা ক্রমাগত প্রশ্ন রাখতে পারি। তারে নাম দেই ‘ভালোবাসবার নিমিত্তে প্রশ্ন’। প্রশ্নকে ধরতে পারতে হবে। প্রাশ্নিক হতে হবে সত্যের খাতিরে। যে-অন্তর, যে-হৃদয় দেহতে বসে আকুল হয় মিশে যেতে, সে কে?
প্রজ্ঞার সাক্ষাৎ পাওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় প্রশ্ন করতে থাকা। প্রশ্নের ভেতরেও রিজনিং না-থাকলে প্রশ্ন হয়ে ওঠে না প্রশ্ন।
ভুলের পক্ষে না-থাকা ও থাকা, শুদ্ধের পক্ষেও থাকা ও না-থাকবার প্রসঙ্গ প্রতিদিন প্রতিরাতে পৃথিবীর পথে পথে দেখা যায়। অধিকাংশ মানুষেরা আরোপিত ধারণার চাপে ভুল শুদ্ধ নির্ধারণ করে সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আসে।
কিন্তু যিনি দেখতে জানেন, যিনি বুঝতে পারেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল শুদ্ধ নির্ধারণের পটভূমি, তিনি মানে, তাঁর দ্বারা ওইসব ভুল শুদ্ধের কোনোটির পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু বিপক্ষে দাঁড়ানো হলে? কখনো দাঁড়াতে হয় পক্ষে টুকরো সত্যের খাতিরে, ঠিক যেমন জীবনের তাত্পর্য বুঝবার প্রেক্ষিতে ভুল শুদ্ধের সাথে জীবন যাপন করতে হয়। এই পক্ষপাতদুষ্টতার অন্তঃসারশুন্যতা দেখা যায় যখন বুঝে নেয়া যায় এইসব সমগ্রতে ইল্যুসিভ ব্যাপার বিদ্যমান। দ্রষ্টা কবি খলিল জিবরান দুনিয়ার বিচারকদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন–
”And you judges who would be just, what judgment pronounces you upon him who though honest in the flesh yet is a thief in spirit?
What penalty lay you upon him who slays in the flesh yet is himself slain in the spirit?
And how prosecute you him who in action is a deceiver and an oppressor,
Yet who also is aggrieved and outraged?” (অন ক্রাইম এ্যান্ড পানিশম্যান্ট)
কিন্তু যাদের ব্যাপারে বলা হয় ‘ক্রিমিনালিটি এ্যানকোডেড ইন দেয়ার জীন’, সেই ‘বর্ন ক্রিমিনাল’দের বিষয়টা আনএ্যাক্সপ্লেইনড মিস্ট্রিজ (Unexplained Mysteries) এর ভেতরেই থেকে গেলো! পাখির বাসাতে ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলোর দুই তিনটি নড়াচড়া করতে করতে কয়েক মিনিটের মধ্যে টুপ করে মাটির পৃথিবীতে পড়ে ‘শেষ’ হয়ে যাওয়াটাও আনএ্যাক্সপ্লেইনড মিস্ট্রিজ এর ভেতরে। ওগুলোকে তো অন্য কোনো শিকারী পাখি বধ করে নি। অথবা কোনো ‘বীর যোদ্ধা’ গুলি করে মারে নি ওদেরকে।
আবার বুঝবার বিষয় হলো, ”Cesare Lombroso, a high-minded 19th century Italian physician, is remembered for his series of skull measurements purporting to show that criminals have smaller brains than law-abiding citizens. Few criminology textbooks go to print without elaborate coverage of Lombroso’s folly, a reminder to students that nurture, not nature, is responsible for criminal behavior. Now, however, two prominent Harvard professors, James Q. Wilson and Richard Herrnstein, argue that Lombroso was on the right track: no one is born a criminal, but many are born with “constitutional factors” that predispose them to serious crime.” (http://www.time.com/time/magazine/article/0,9171,960148,00.html#ixzz1eiF35HJT)
কখনো ভুল শুদ্ধ নির্ধারণের প্রেক্ষিতে মানুষ ‘না-ভাসাই না-ডুবাই’ বা ‘না-জ্বালাই না-নিভাই’ মানে দ্বিধা অবস্থানের দিকে যায়। কিংকর্তব্যবিমুঢ়। দেখা যায়, দ্বিধা মানে দ্বিধা না, অন্যপথে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিত। যেতে তো হবেই। মোভমেন্টের ভেতরে স্থির থাকবার উপায় নাই। এমন অবস্থায় দ্রষ্টা দেখতে পান ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে’। এই খেলায় আমি মানুষ নাই আবার আছি ‘সংসার পিঞ্জরে রেখেছ রয়েছি আমি’ এই কারণে। পক্ষে বা বিপক্ষে গেলে ফ্যাসাদে জড়াতে হয়। কোরআনের পবিত্র কালাম- ‘লা ইউফসিদু ফিল আরদ’ অর্থ ‘ধরাপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ করো না’। তবু এতো ফ্যাসাদ-রক্তপাতের ইতিকথা! জীবনের পক্ষে না মৃত্যুর পক্ষে থাকা? জীবনের পক্ষে থাকলেও মৃত্যুর কাছে যেতে হয় স্বাভাবিক নিয়মে। মৃত্যুর পক্ষে না-থাকলেও মৃত্যুর কাছে যেতে হবে। মা-বাঘ হরিণ শাবক খায়, মা-শিয়াল ছাগলছানা বধ করে এনে তার বাচ্চাদের খাওয়ায় নিজে খায়। আরো অযুত প্রকার বধ আর ভক্ষণ লীলা ধরিত্রীর জলে স্থলে। তাপস অ-তাপস উভয় রকমের কাছে জীবনের যন্ত্রণা যায়। আচরণ বাস্তবতা এরকম যে, প্রেম আছে, ভালোবাসার কানেকশন আছে কিন্তু প্রিয়জনের গহনস্পর্শি আর্তি-
‘তুই যদি আমার হইতি রে
আমি হইতাম তোর
কোলেতে বসাইয়া তোরে
করিতাম আদরও রে’।
মানুষের বংশধর From heir apparent to frightened fugitive হয়। বাদশাহ সকাল সন্ধ্যার ব্যবধানে ভিক্ষুক হয়। সবই ক্রীড়ার অংশ। মৃত্যু ভয়ের বিষয় নয়। ধারণাবন্দী থাকা আর মায়াজালের কারণে মৃত্যুভয়। কারণ মৃত্যু মানে মৃত্যু না। স্থানান্তর-ইনতেকাল। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অনির্বচনীয় মানুষ সত্তা নিঃশেষ হয়ে যায় না।
পরাণপাখি নিঃশেষ হয় না। দেহ ছেড়ে যায়। এখানে এও বিবেচনায় রাখা যায় যে, ‘Einstein’s conservation of energy which proves that energy can be converted from one form to another, but never destroyed.’
কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, পরাণপাখি মানে অধরা মানুষের সত্তাটি কি ম্যাটেরিয়েল এ্যানার্জির সমতুল্য?
এবং মানুষ আমি দেখতে পায়, অন্ধজন ভাসানোতে আর ডুবানোতে মেতে আছে প্রাণভরে। অন্ধতা পরিহার করলে মানুষটি আর অন্ধ থাকে না।
জন্মান্ধ লেবেল লাগানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত অনেক ক্ষেত্রেই। অপরাধিরও হক আছে ভালোবাসা পাওয়ার।
‘Rumi’s love and honor for all religious traditions was not always popular in his day, and often provoked criticism from the more dogmatic. A story is told that one such public challenge came from a Muslim dignitary, Qonavi, who confronted Rumi before an audience. “You claim to be at one with 72 religious sects,” said Qonavi, “but the Jews cannot agree with the Christians, and the Christians cannot agree with Muslims. If they cannot agree with each other, how could you agree with them all?” To this Rumi answered,“Yes, you are right, I agree with you too.”
—> DISCOURSES OF RUMI ( FIHI MA FIHI)
তাঁর উপর দোষারোপ করতে আসা কুনাওয়ীকে জানিয়ে দিলেন রুমি তার সাথেও একমত। রুমির অন্তদৃস্টিতে এসে গেছে Say I am you. কামালিয়াত হাসিল ছাড়া অমন দেখা-বুঝা হয় না।
তারপর বলি, ভালোবাসলেই কী শুধু পক্ষে? নইলে বিপক্ষে?
না, মহাপ্রকৃতিতে অমন আচরণের দলিল নেই। ওখানে ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। এবং দেখতে দেখতে যোগাযোগ চৌদিকে সমান্তরাল আমরা-তে অনন্ত অসীম অনির্বচনীয় আমি’র সাক্ষাৎ।
অবশেষে অবিভাজ্য অশেষ অবশেষ।
‘ও আমার প্রাণপাখি ময়না’
বলো বলো,
‘মা হুয়া ক্বালবি হাজা ক্বালবাক হাজা ক্বালবাক’
(একটি আরবি জনপ্রিয় সংগীতের একটি চরণ-অর্থ তার,’আমার এই হৃদয় আমার নয়, এ তোমার, এ হৃদয় তোমার’।)
‘We are like the reed-flute, and the melody within us is from You. ‘ (Rumi, Mathnawi I, 596)
মাটির পুতুলের প্রাণায়ন করা হয়েছে ‘মনের মানুষ’ দিয়ে! The body is made of the material elements fire, earth, air and water, and has five external senses — sight, hearing, smell, taste and touch; and five internal faculties — discursive thinking, imagination, doubting, memory and longing. All these powers, that is, both the external senses and the internal faculties, serve the heart.( http://muslim-canada.org/sufi/sufism.htm )
আত্মাকে শুদ্ধ করতে হয়। বলা হয়েছে, ‘When one’s heart is purified, the manifestations of the Divine is reflected in the mirror of the heart. Only then may man ascend from the level of his animal nature to the level of the true human being.’
এই ট্রু হিউম্যান বীইঙ কি অ-পক্ষপাতদুষ্ট নয়!
কিসের জন্যে, কেন এতো দিশেহারা? কোন দিগন্তের দিকে পক্ষপাতদুষ্ট তোমার দৃষ্টি! পক্ষাবলম্বনের আগে নিজের দিকে গভীর মমতা নিয়ে তাকাও হে বনি আদম! ধরিত্রীর দিকে বিস্তারিত রাখো তোমার দৃষ্টি, দেখতে পাবে, দেশ জাতি ধর্ম ইত্যাকার বহু পরিচয়ে বিন্যস্ত মানুষগুলোর মধ্যকার শত্রুতা এবং মিত্রতা কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। প্রকাশ্যে যারে বলে শত্রু, গোপনে হয়তো সে জানে না, তার শত্রুকেই প্রাণভরে সহায়তা করে যাচ্ছে। রাজনীতি ব্যাপারটাতে প্যারাডক্স জীবন্ত!
(এই রচনার কেন্দ্রে আছে ভালোবাসা তরিকা বা ‘মাযহাবে ইশক’। ভালোবাসার ভেতরে প্রাকৃতিক কানুনসমষ্টি লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। লঙ্ঘন করে ‘দিল কা কেয়া কসুর’ বলে লাভ নাহি। ভালোবাসবার পক্ষে অ-পক্ষপাতদুষ্ট থাকতে পারা সুকঠিন সহজ সুন্দর। যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। প্রতিটি দৃশ্য অদৃশ্য বস্তুকণাতে প্রাণবন্ত ভালোবাসা মুদ্রিত। পাঠ করতে পারলে ভালোবাসবার বহুবিধ প্রীতিকর সুঘ্রাণের সাক্ষাৎ। মানুষেরা রঙধনু রঙে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে রাজনীতি করে যায়, রঙধনু থাকে না।)
রচনাকাল, নভেম্বর ২০১১