নদীতে আগুন ধ’রে…
নদীতে আগুন ধ’রে মাছ পুড়ে যায়
নদীপোড়া গন্ধে তো ঘরে টেকা দায়!
মাছরাঙা বক-চিল সেই ঘ্রাণ পায়
চিলাহাটি থেকে চিল চিলমারি ধায়।
নদী কোথা! এ যে নদ! ব্রহ্মের পুত্র
আগ লাগে এই নদে! কী-বা সেই সূত্র?
ভোঁদড়ে ধরেছে পোড়া শোল টাটকিনি
তা-ই দেখে আহ্লাদে নাচে ভোঁদড়িনী।
এক ছিল পণ্ডিত অতিশয় ধূর্ত
সাপ-ব্যাঙ খুঁজে পেতে গর্ত সে খুঁড়ত।
খোঁড়াখুঁড়ি বাদ দিয়ে এইবার ধরে
ব্যাঙ-চ্যাঙ যা-ই পায় ছুঃ মন্তরে!
ঘটনা ঘটেছে বটে চিলমারি ঘাটে
গুজব রটেছে গিয়ে দূর তল্লাটে।
জোনাকি
রাতটা যেন পড়েছে আজ নক্ষত্রের শাড়ি
সাঁতরে আঁধার নামছে মাঠে জোনাকির ঝিয়ারি
কেউ জানে না দিনের বেলা কোথায় তাদের বাড়ি
চাঁদের সাথে তাদের নাকি অনেক দিনের আড়ি।
চাঁদটা সেদিন বলল, ওদের বড্ড বাড়াবাড়ি
আলো আমি দিই বা না দিই, ব্যাপারটা আমারই।
জোনাকিরাও উঠল ক্ষেপে, রাত কি শুধু তারই?
ফাঁস কিন্তু করব চাঁদের কীর্তি-কেলেংকারি!
কোত্থেকে যে আসছে এত জোনাকির ঝিয়ারি
ঝাঁকে ঝাঁকে সওয়ার হয়ে হাওয়ার রেলের গাড়ি
খইয়ের মতো নক্ষত্র ছড়ায় কাঁড়িকাঁড়ি
তাই নিয়ে যে ঝোপে-ঝাড়ে বেজায় কাড়াকাড়ি
দূরে থেকে আমরা বলি, বাঃ আলো-আঁধারি!
একটি পাখির কাহিনি
এই শহরটা যে ভরতি ছিল কাকের কোলাহলে
পথের ভুলে একটি পাখি নামল এ-অঞ্চলে।
আহা এমন অভিশপ্ত দেশে থামাল তার ডানা
পাতিহাঁসের রাজ্যে যেমন রাজহংসের ছানা।
তার সর্বপালক-সর্বাঙ্গে ঝিলকে ওঠে গান
এসব দেশে এই পাখিটা বড্ড বেমানান।
তবু অচিন দেশের সুরের পাখি অচিন সুরের টানে
শহরটাকে ভরিয়ে দিল নতুন নতুন গানে।
কত ঠুমরি দাদরা কাহারবা আর মিয়া কি মল্লারে
ভৈরোঁ কিংবা ভৈরবী কি বসন্তবাহারে।
পাখি হয়তো আবার হঠাৎ উড়াল, হয়তো নতুন দেশ
দেশ থেকে দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণ অনিঃশেষ।
জন্মদিন
পাখির যেমন দেশ থাকে না
কবিরও নাই দেশ
আজ নতুন দিনে নতুন কবির
নতুন কথার রেশ।
এমনই এক নতুন দিনে
জন্মদিবস আসে
ঠিক জন্মদিনেই রোদ-কুয়াশা
একসঙ্গে হাসে।
কবি তোমার ভাষায়, গানে
ভাসিয়ে মহাদেশ
তুমি জ্বালিয়ে রেখো নতুন নতুন
স্বপ্ন অনিঃশেষ।
স্বপ্ন সুরের, স্বপ্ন গানের
স্বপ্ন কবিতার
আর স্বপ্ন তোমার ইমন বাহার
মিয়া কি মল্লার।
মেঘময়ূর কণ্ঠ যে তার
বিজলিচমক ধার
এমন ঝিলিক-তোলা জন্ম যেন
ঘটে বারংবার।
সব বয়সই ফিরতে যে চায়
জন্মদিনের ভোরে
আহা সব স্বপ্নই সত্যি হওয়ার
জন্যে কেমন করে!
শাদা কবুতর
একটা শাদা পায়রা ওড়ে নীল আকাশের গায়
কিচ্ছুতে সে নামে না যে জাম-জারুলের ছায়
পরমাণুর জল-হাওয়াতে বাঁচা যে তার দায়।
একটা শাদা পায়রা ওড়ে নীল আকাশের গায়।।
একদিন সেই শাদা পাখি
কণ্ঠে আঁকা রঙিন রাখী,
পশ্চিম হতে তাড়া খেয়ে পুবদেশেতে এল
তাই নিয়ে যে বাংলাদেশে লাগল হুলোস্থুলো।
শিশু ডাকে হাত-ইশারায়
কিশোর ডাকে শোলক-ছড়ায়
উজান দেশের উদাস বাউল ডাকছে একতারায়
তবুও পাখি নামছে না যে তাল-তমালের ছায়!
‘ভাটি দেশের দোহাই লাগে
কামাখ্যারও দোহাই লাগে’
মুগ্ধ হয়ে মাতাল সুরে ডাকে জাগর কবি
ক্ষ্যাপা শিল্পী আঁকে পাখির নীলমগ্ন ছবি।।
মাঠের চাষী গাঁয়ের রাখাল
ব্যাংক-ম্যানেজার বিমা-র দালাল
কামার-কুমার স্কুলমাস্টার
রিকশাঅলা পশুডাক্তার
ছুটকেরানি উকিল-মোক্তার
সওদাগর আর হুকাবর্দার
নিমকদহের নিমাই মাঝি
শ্যামাডাঙার শ্যাম বউ-ঝি
সবাই ডাকে, ওরে ও তুই কুলীন পাখির ছা
গাছে ঘেরা সবুজ দেশে একটু থেকে যা।
ধান ভানলে কুড়া দেব
মাছ কুটলে মুড়া দেব
পাটিসাপটা পিঠা দেব
খেজুর-রসের মিঠা দেব
উড়কি ধানের খুদও দেব
রাঙ্গী গাইয়ের দুধও দেব
পিঠাসরার গাছে তোকে বেঁধে দেব ঘর
তবু যে হায় দেয় না ধরা শাদা কবুতর
সেই শাদা কবুতর ।।