আশ্চর্য প্যাকেট
স্বপ্ন ছায়া হলে
ছায়াতে মন নাই, দৃশ্যময় দেহ চাই;
অঙ্গ সর্বাঙ্গ ওজন করো
রোদ্দুর বাটা কাঁচা হলুদের রঙসহ—
আষাঢ়ের জলকৃষ্ণ ঘন মেঘ ওজন করো,
তুমুল বর্ষার ব্যাঙের ছাতা
আর রবীন্দ্রসঙ্গীত
ওজন করো।
ওজন করো
রন্ধনকালে আঙুলের ঝালে আহারের ভর্তা-বিলাস;
ওজন করো
বৃষ্টিশাসিত শরতের এ্যালকোহলিক রাত্রি—
কত মুদ্রায় অন্ধকার ফুরায়;
ওজন করো
আমাদের লবণাক্ত ভোর।
দুঃখের ধুসর কাগজে বানাতে পারো আশ্চর্য প্যাকেট
ওজন করো একুশ বছর মন খারাপের প্রায় আলোকবর্ষ।
ম্যাজিকপোকার দর্শনতত্ত্ব
এক.
নদীর ওপারে কাঠের বাড়িতে ঘুণপোকাদের শুকনোকাঠ খাওয়া আষাঢ়;
বৃষ্টি আর পুকুর নতুন বউ-এর সঙ্গে আগে এরকম ভেজেনি!
ঢেঁকিতে দাঁডা়নো মোরগের তোয়াক্কা না করা চিৎকার,
আকাশের বিদ্যুৎ পুকুরে নামে
তরলের আগুন লালায় তুষ ছুঁড়ে উধাও পাডা়র বাউল।
এরকম দৃশ্যের পরে একজন দরবেশ অন্ধকারে তাবিজ বেঁধে রেখে চলে যায়;
নতুন বউ পুরানো হতে হতে পুরানো ঘাটলায় মাছ কাটে।
দুই.
পুরানো বউ সাবধানে মাছ কাটে, বৃষ্টি কাটে— অন্ধকারে কাটে অসহিষ্ণু তাবিজ;
পুরানো বউ
ঢেঁকিতে দাঁড়ানো মোরগের তোয়াক্কা না করা চিৎকারে ভ্রূ কুঞ্চিত আগুনে তুষ ছুঁড়ে মারে
দাউ দাউ আগুন তেল ভালোবাসে, ভাত উথলানো হাঁড়িতে সন্ধ্যা খুলে দেয় অন্ধকার।
পুরানো বউ আঙুলে টিপে টিপে ভাতে বিলায় বিষাদের ওম;
ন্যাংটা দরবেশ উঠানে বৃষ্টি নামায়, শিশুরা নাচে,
ন্যাংটা দরবেশ উন্মত্ত ঢেঁকিতে সুবেহসাদিকে ঘুণপোকাদের ম্যাজিকপোকার দেহ বিলায়।
একটানা
আশ্বিন শেষে কার্তিক ভুলে গেছো! অগ্রহায়ণ, পৌষ,
মাঘ আর ফাল্গুনে শুধু অভিমান করেছো; আঠারো বছর
চৈত্র-বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ চোখে পড়েনি, আষাঢ়-শ্রাবণ ভাসিয়ে গেছে রাত
আমার জানালায় ভাদ্রের গুমোট আর ভ্যাবাচ্যাকা বৃষ্টিপাত!
কাঁটা আর পাতায় পাতায় জীবনের পরমার্থ প্রকাশ
একাশিয়া প্রতীকের দেহসুখ বয়ন চেয়ে দেখে আকাশ বারোমাস
মাসাই চাদরে দলানো-গলানো লাল নকশায় জিরাফের দেহ কারুকাজ দেখি
উটপাখি হরিণের সঙ্গে নিবিড় সৌন্দর্যবোধ পিপাসায় ঘাসের শিশির চেটে খায়
নৃত্য শেষে তা দেয় আনন্দ বেদনার তাপমাত্রায় নির্বোধ কুসুমের জন্য।
মেরুর যুগল পাহাড়ে সৃষ্টির কামসূত্র, চেয়ে থাকি;
বাতাস অপরিণামদর্শী উপত্যকার নদীতে স্রোতের সঙ্গে পাথর ভাঙে
জলের সঙ্গে পাথরের সুখস্পর্শে ক্রমশ সমতল হয় পাদদেশ
জল নামতেই থাকে অজর স্বপ্নের সাথে সমান্তরাল অন্ধকারে।
অন্ধকারে ফ্যা-ফ্যা বাতাসের গলিঘুঁজি
বাতাসের বিজ্ঞাপনে
বৃষ্টির সঙ্গে ছেড়ে আসে মেঘের ঘর
মেয়েটি বেচে দেয় গোপন সব রঙপেন্সিল
ছবি আঁকবে না
সাদা ক্যানভাসও থাকে না নিজের
প্যালেট নাইফ ছানছে লাল আর সাদা
বহুকাল এরকম রঙ ছানছে বাজার
হাঁটছে চুনকাম দেয়ালের দিকে
ঝিকিমিকি দৃষ্টির বাজারে
ফেরিওয়ালী চোখ চিনে রাখে
সড়কের সরু গলিঘুঁজি
ইঁদুরের নেশাগ্রস্থ কাটাছেঁড়া—
গর্ত প্রবেশ
ভয় এসে ফিরে ফিরে যায়
ক্রমাগত অভ্যস্ত দিনরাত
লাল লাল মদ্যপান
খুব বেশি লাল চাওয়া দরাদরি
জুতার ফিতায় সাজানো নখ—
বাতাসের চাবি দেহ খোলে
পান্থসখা চাপচাপ মাংস-পোরা-ঠোঙ্গা
আহ্লাদী অন্ধকারে খুলে খায়
নিশ্ছিদ্র চতুর্ভুজ ভরা তরল রাষ্ট্র
বাজারে খুলে রাখে নষ্টবীজের সংগ্রহ
ব্যাক্তিগত কারুকলায় চালতা ফুল ফুটে আছে
মেয়েটি নিষাদে গাইছে অপেরার মতো নির্বোধ—
চড়ায় নিয়ে চলে সাধনার যোগব্যায়াম