স্নেহাশিস পাল
গুপ্ত
মধুভ্রমরের তুলিতে পদ্মদিঘি কেঁপে-কেঁপে ওঠে।
কোনও এক আরব-নর্তকীর নেশাতুর মুদ্রার মতো –
কিঞ্চিত ঘাসে ঢাকা – ভাঙা পাড়ের সরু রাস্তাটা
রূপকথা-রঙা ভোরের পেটে ঢুকে গেছে …
তাল-বট-কৃষ্ণচূড়া-ছাতিম-শিরীষ-অর্জুন : মোহমুগ্ধ দর্শক;
থ হয়ে দাঁড়িয়ে,
চোখে রাত-জাগার অমৃতক্লান্তি
একটু দূরেই মীরার মন্দির, তার নিবিড় চূড়ায় পড়েছে
তোমার অভিমান মেশানো সোনা-ঝরা অশ্রুর মতো
আলতো রোদ …
কবিতা
ছবি আর গানের মাঝে ছোট্ট হল্ট স্টেশন : কবিতা।
– ও বৈষ্ণবী, কোথায় তোমার কালো হরিণ
স্নান করে?
আমি, শুধু শালপিয়ালমহুয়াবীথিকা হয়ে –
পাগলা হাওয়ায় মাথা দোলাবো আর দেখবো –
সন্ধ্যার রঙ।
যখন জোনাকিদের গানে ভরে উঠবে এই অসুস্থ পৃথিবী
তখন আমি-সারাদিনের শেষে ক্লান্ত ভিক্ষু-বৈষ্ণব …
ঘাসফুল-জড়ানো – বাউণ্ডুলে মেঠো পথ হয়ে ছড়িয়ে পড়বো –
তোমার শত-সহস্র মন থেকে ভোরের বাহুতে
আর ছুঁয়ে যাবো – অজুত-নিযুত হা-ভাতে মানুষের
অজস্র স্বপ্ন …
অভিজ্ঞান
বিচ্ছেদের দূরত্ব, এবার হরিণ হয়ে এসেছে …
মন, দাবানলের আঁচড়ে অর্ধমৃত জঙ্গল।
সেই জঙ্গলের ভাঙা দরজায় শিশুর মতো হামাগুড়ি দেয়
উন্মাদ জ্যোৎস্না …
শরীর, মৃত সরোবরের জল হয়ে ছড়িয়েছে
দিবারাত্রির আত্মায় ফুরিয়েছে প্রলয়ক্ষণের ঋতু,
এসো – নির্লিপ্ততার মন্দির …
তোমার পূজারী, নিশ্চুপে – শুধু গাছেদের অশ্রু তোলে
ঈশ্বরকে দেয় – আমার অভিশপ্ত প্রেম কাহিনীর অভিজ্ঞান …
পরিচয়
প্রজ্জ্বলিত-অগ্নিশিখায় যে-ভাবে অন্ধকার পোড়ে তার বকুলতলায় গিয়ে
কবন্ধের চোখের মতো দাঁড়াও,
দেখবে: ভালোবাসার সংসার-বিজয়।
কাছে বা দূরে যে-সব সম্পর্কের ঘিলু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে –
সেটাই – তোমার-আমার-সব্বার পরিচয়
যাদের, অমাবস্যার তারাদের মতো – দু-একটা আদরের
ডাকনাম আছে …
এ-সবের অনতি স্মৃতি-দূরত্বে জেগে থাকে মগ্ন সন্ন্যাস-রঙের
ছোট-ছোট কুটিরের গ্রাম …
হারকিউলিস
মৃত্যুর জ্যোৎস্নার ভিতর ফুল মুখস্থ করছে
ঘাটে বাঁধা একলা – এক নৌকা
অনেকটা ঠিক আমার কবিতার মতো দেখতে
একটু পরে, মলিন শ্মশান – ভিক্ষার থলি হাতে
পথে পথে ঘোরে
দূরে, তখন অনাথ-আশ্রম থেকে ভেসে আসে
ভোরের প্রার্থনা-সংগীত …
– এই যে-পৃথিবী, তার একটু-আধটু দুঃখ আছে
কেউ জড়িয়ে ধরলে, চোখ থেকে জড়িয়ে যায় জল …