কবিতা: ব্লেডলিখিত সত্তাচিহ্ন

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

চিরকাল ডিসেম্বরতাড়িত আমি ফেলে এসেছি ধারালো সুরের মধ্যে মাথা ও নির্ধারণ
কোথায় সনেট থাকে? শান্তিপূর্ণ  দূরত্ব ভাষার শরীরে কি আমাদের বসবাস ছিল?
রাস্তা জড়িয়ে যায় বালিকার ধূসর ফিতে ইশকুল ফেরত মাথা নামিয়ে রেখেছে
এপাড়া তোর ছিল কোনওদিন? এই গলি আশ্রয়প্রবণ শক্ত ভিত
এগিয়ে যাই মগ্ন দেহমন্ত্র জুড়ে উচ্চারণ করি বশ, লালা,  অগভীর নাভির পাশে
এইসব রবিবার সারি সারি সাদা বাড়ি ঘিরে নিয়েছে রাস্তার দৃষ্টি
এরপর পোশাক মেলবি তুই সব ছাদে, কোনও দিন তুলবেনা কেউ

নিজে কি প্রস্তুত আছো এই ভাঙন সংক্রান্তে
এই শীত ও পাহাড়কামী মানুষের কোন বনিবনার সূত্র
ধরে তুমি এখানে এসেছো
তোমার লেখার ভাষায় জড়িয়ে আছে
ফিকে হয়ে আসা আঙুলের দাগ
বইয়ের পাতাগুলোয়
পুরনো পেজমার্ক ধরে এগিয়ে আসা কোনও আকস্মিক দিনেতিহাস
তিন বা চার মাত্রিক ছবি নয় আসলে ধ্রুপদী রীতির গায়ে দুমাত্রা লেগে থাকে
তোমার ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাওয়া পিছনের টান
অথচ নুন ছাড়া আর কিছু নেই ছাল উঠে যাওয়া আঙুলে
অথচ শুধু মাথা নীচু করে বসে থাকা ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই পাশে
তবু এই ধাক্কা
ওই তো দূরে কেউ মেলার কথা বলল বলে
শিরা থেকে ১৫ বছর খসিয়ে দেওয়া সহজ, বলো
প্রশ্ন কোথায় নিয়ে যাবে তোমায়
উত্তর কোথায় নিয়ে ফেলবে এই ওঠাপড়ার বাজারে
শুধু অভিযোগের আর না–ভালো লাগার কাহনে
তুমি কেন বারবার হাঁটু ধরে ঝুঁকে নিশ্বাস নিচ্ছ দৌড়
কে বা কারা এখানে শুধু ভারি বুটের আওয়াজ দিনেরাতে
এখানে শুধু লাল ট্র্যাক ঘিরে থাকে সমস্ত রাস্তা
প্রতিটা মোড়ে লোকে কাউকে না চেনার গায়ে লিখে রাখছে সংখ্যা
যেসব চলাকে তুমি হালকা ভাবো তাদের শরীরে সংখ্যা
কার্ড ও যৌনতাবাহী মেয়েদের দিকে ঘুরে আসে বারবার
অথচ তোমার শুধু ছাল উঠে যাওয়ার গতরে নুন
তোমার হাতে কোনও বই নেই
মেট্রো স্টেশনের ফাঁকা বুকশপের গায়ে শুধু সংখ্যা ও কুহক কাপ
ছেলেমেয়েরা আসে
ছাত্রছাত্রী
সংখ্যা
অভিযোগ তুমি চেটে দেখেছো বলো
কথা থেমে গেলেও কোনও তাপ আসেনা
শব্দ চটে যাওয়া পুরনো পাতা তুমি কীইবা দিতে পারো
এখানে অক্ষর মানে ভাঙা কিছু যতিচিহ্ন
শুধু উজ্জ্বল সংখ্যার কাছে মাথা নামিয়ে বসে থাকো
তুমি কি প্রস্তুত ছিলে না
কেনই বা ছিলেনা
অভিযোগ ছাড়া আর কিই বা থাকতে পারে তোমার সংখ্যাহীনতার বিরুদ্ধে
মাথা নীচু করে দেখ বিশ্বাসী বইয়ের পাতা থেকে কীভাবে
উঁচু হয়ে ওঠে বুনো কুকুর
তাদের শিকার
ভাঙা স্তব্ধতার কাচ গায়ে লাগিয়ে নিয়েছে শীত
আর তুমি কি জানতেনা এই রাস্তাটা চমকপ্রদ নয়
বাতাসকাটা
কাচ ও পাথরকাটা
কুয়াশার শরীরে উঁচু হয়ে থাকা দুর্গ
অপ্রত্যাশিত আক্রমণে বারবার সামলাতে থাকা
চোয়াল নেমে আসবেই
দাগ ও আঁচড়
সেই কবে থেকে জাগারাতের পিঁপড়ে এসে জানান দিয়ে গেছে মাংসলতা
মাংস ও নুনের পাহাড়ে গাঁথা ব্লেড
আসলে জানা ও বোঝার মাঝখানে থাকে একটা পায়ে চলা রাস্তা
এলোপায়ে ভুকে যাওয়া পেরেককে কি বলে
কথা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার মাঝখানে
শুধু দাঁড়িয়ে থাকে বছরগুচ্ছ
যারা এখন মেলার মাঠ থেকে বাড়ি ঢুকলো
পুরনো বন্ধুরা যারা মদ খুলে বসেছে
কিম্বা যে ব্যস্ততার গায়ে সংখ্যা লিখে রেখেছে
তাদের একজনও কেউ দাঁড়িয়ে নেই এখানে
তোমার ভিতরে কেউ মরে যেতেও আসেনা
অথচ লেখার শরীরে ফিরে আসা থাকে
লেখা কী
বিষণ্ণতার চিঠিপত্র নাকি দুটো শরতের মাঝখানে
কুয়াশায় দাঁড়িয়ে থাকা একাকী লোকটা

নিজেকে বলি আরও হিংস্র হয়ে ওঠো
গতবছর যাদের সঙ্গে খারাপ ছিলে
এবছর যাদের সঙ্গে আরেকটু নিম্নগামী স্বেদ
জিভে ব্লেড কে রেখেছে?
প্রতিদিন পায়ে জড়িয়ে উঠেছে লতানে রোদ
মাথা নামানো সকাল নয় বরং ঝকঝকে দুপুরগুলো
সারিবদ্ধ কীটনাশকের সামনে মেলে রেখেছে বই
পাতার পর পাতা শুধু বন্ধুদের না লেখা অনুপস্থিতি
তুমি কি অন্য দিকে যাবে
পছন্দ মত বাসের পাশে অনায়াস নেমে যাওয়া স্টপ
আরেকটু গেলেই গলি গ্রীষ্ম আসার আগে কুকুর ধরার গাড়ি
আর্তনাদ খালি করে চলে গেছে
তুমি দেখ বেঁচে যাওয়া সন্ত্রস্ত জানোয়ার
তার কম্পন
প্রতিদিন বাবার কথা মনে হয়?
আয়নার সামনে অফিস যাওয়ার অনিচ্ছা
না দেখার অভ্যেসে বুড়িয়ে গেল

রুখে দেওয়ার কথা কি ঝাপসা হয়ে গেছে?
নিজে বসেছো  স্বর্ণাভ পাথরে
সামান্য রক্তের ছাপ
মধ্যযুগের গায়ে কারা উপুড় করে দিয়ে গেছে দারিদ্র্য
কোথায় থাকবে তুমি ডিসেম্বরতাড়িত?
সামনে কেউ অযথা মুখ খুললে কি তোমার নৈঃশব্দ্য
তার চোয়াল তুবড়ে দিতে পারে আজও?
নিজের শরীরে দাগ, ক্ষত বরাবর উঠেছে বিশ্রামরেখা
কতদূর ভিজে ও শুকনো পাতা ঢেকে দিয়ে গেছে ঘুম
কতদূর চোখ নামানোর মত ভঙ্গি দিয়ে গোপন করেছো
কবুল করা ভুল সমর্পণ
এবং তোমার যোগ ছিঁড়ে গেছে
রক্ত শিরা তন্তুর সঙ্গে
আকুল জ্যোৎস্নার পথে থকথকে জামরুল পাতার
প্রগাঢ় সবুজের সঙ্গে
কী আছে এখন এই দীর্ঘ দুপুরের দেশে?
শুধু কাচ ভেঙ্গে রাস্তা রক্ত হবে
পাথর ছোঁড় না?

কাচে কাটা পা দিয়ে চলাচল, যেদিকে রেখেছি শীর্ষ তীক্ষ্ণ মেধা ও তার যাবতীয়
ক্ষতচেতনার গায়ে গুমরে ওঠা নতুন অবস্থান, সেখানেই ফিরে আসি
কতদিন বলো পতাকা রাখবো সন্তানের শরীরে কামনার শরীরে রাতে
পর্দা লোপাট করা হাওয়া দেয় এই অক্টোবর এই ফিসফিস নীল
এই উড়োজাহাজের ছায়াহীনতা একে কিসে অনুবাদ করবো পাথর
বা টিলার ভাষা পাশে বসেছে কন্যা তার অক্ষর পিছলোন নীরবতা

 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top