মলয় রায়চৌধুরীর প্রহসন: ভরসন্ধ্যা

[একটি কদমগাছ ছেয়ে আছে ফুলে ;
গাছটির চারিপাশে উবু হয়ে বসে
উনত্রিশজন বুড়োবুড়ি আর জনা
ছয় যুবক-যুবতী । সকলেই তারা
ওপরে তাকিয়ে আছে কদম গাছের
পানে ; বোঝা যায় তারা অপেক্ষা করছে
গাছটির অন্ধকার থেকে একজন
অতিমানুষের আগমন । লোকগুলো
এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ-আশায়
কদম গাছটি নাকি সেই গল্পতরু
যার গন্ধে লুকিয়ে আছেন অবতার–
নেমে আসবেন মর্ত্যে নেতৃত্ব দেবেন।
লোকগুলোদের দেশে নেতা নেই বলে
কদম গাছের কাছে ভিক্ষা চাইছেন
যাতে একজন অতিআধুনিক কেউ
মানুষের মঙ্গলের জন্য আবির্ভুত
হন। অথচ গাছটি নিরুত্তর আজো।]

বুড়োবুড়ি ( কোরাস )।।
কবে থেকে বসে আছি হাপিত্তেশ করে
কদমের গাছ ওগো দাওনা পাঠিয়ে
কোনো লোক যাকে কাঁধে তুলে আমাদের
মসনদে বসাবো সকলের ভালোর
জন্য । উচিত মানুষ নেই কবে থেকে।
অন্য জগৎ চাইছি ভিন্ন ইতিহাস ।
বদল মানে কি স্রেফ নাচের আঙ্গিক ?
পাড়াতুতো নেতা-নেতি দেশটাকে ছিঁড়ে
সোনাদানা রাখছে বিদেশে নিয়ে গিয়ে ;
নয়তো নিজেরা নিজেদের ছিঁড়েফেড়ে
নাচন-কোদন করে জুয়া খেলছেন
কারো মুখ যেন লাল বাঁদরের পাছা
আবার কারোর ঘাড়ে শুয়োরের মাথা
কেউ ঝোলে ডালে ল্যাজ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
অনেকের জন্ম তো গুয়েরই আঁতুড়ে
পথই নজরে আসছে না আমাদের
কী ভাবে পাল্টাবো এই বেজন্মাগুলোকে
যেনাদের কথা থেকে মানেরা লোপাট !

যুবকেরা ( কোরাস )।।
খুবই খারাপ যাচ্ছে দিনকাল ; শান্তি
নেই, কোনো দিশা-নির্দেশটুকুও নেই
লেগে আছে খুনোখুনি ধর্ষণ ডাকাতি
রাহাজানি বোমাবাজি কিশোরী পাচার
আর এই সবেতেই যারা দায়ি তারা
দখল করেছে মসনদ কোষাগার
আমাদের সার্কাসে চক্রী ভাঁড়েরা আছে
বড়ই অভাব এক সৎ-মানুষের ।
ভয়ে কেউ স্বপ্ন দেখতেও চাইছে না
সব ডানা রয়ে গেছে ডিমের ভেতরে
বাধ্য হয়ে বাছাই করতে হচ্ছে ভাঁড়
উপায় না খুঁজে পেয়ে জঙ্গলে ঢুকেছে
রেগে গিয়ে অনেকেই ধরেছে বন্দুক ।
বানচোতে বানচোতে ভরে গেছে দেশ।

যুবতীরা ( কোরাস )।।
আমরা আরও গন্দা গাল দিতে চাই ;
মনে হয় মাসিকের কানি গুঁজে দিই
ধরে ধরে ওগুলোর মুখের ভেতরে ।
তাই চাই একজন বিশুদ্ধ মানুষ ।
এইসব লুচ্চা-লাফাঙ্গায় ছেয়ে থাকা
বৈভবী বাছাই থেকে মুক্ত হতে চাই।

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস )।।
রয়েছে আমার স্টকে পাঁচ মহাজন
একে একে গুণাগুণ শোনো ওনাদের
তারপর ভেবেচিন্তে নির্ণয় নেবার
পালা তোমাদের , নিয়ে যাও যাকে চাও।
অনেকেই সৎ নয় কেউ কেউ চোর
সকলেই কচু নয় কেউ কেউ ওল
অনেকেই স্নব নয় কেউ কেউ খুনি
সকলেই সাপ নয় কেউ কেউ ব্যাঙ
অনেকেই বোকা নয় কেউ কেউ ছুঁচো
সমস্যা হল যে তারা সবাই মানুষ ।

[ হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ।
খচ্চর খুরের ধ্বনি শোনা যায়, কেউ
আসছে মিউলে চেপে এইদিক পানে ।
ভিড়ের ভেতরে এসে ঘোড়া থেকে নেমে
তাকায় সবার দিকে; বেঁটে-ঘোড়া বাঁধে
কদম গাছেতে । লোকটির খালি গায়ে
চামড়ার শায়া হাতে বর্শা পিঠে তীর
একটা শুয়োর মরা কাঁধের ওপর ;
তার আগমনে দুর্গন্ধ ছড়ায় এত
সকলেই বাধ্য হয় নাক চাপা দিতে ।
লোকটি নিজের পরিচয় নিজে দেয় ;
একই পোশাকে ঢোকে সাঙ্গপাঙ্গদল ।]

আত্তিলা।।
আমি হুন আৎতিলা, দেবতার হাতে
গড়া, শান্তি-শৃঙ্খলার ভয়াল মানুষ
দেখছ আমাকে ? বহু দেশ জয় করে
সেখানের লোকেদের কবজায় আনা
কঠিন ছিল না। ছুটিয়েছি সেনাদের
তাদের ওপর দিয়ে থেঁতলে গুঁড়িয়ে
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করে । মেয়েদের
তুলে এনে বিলিয়েছি সেনাদের মাঝে ।
রা কাড়েনি কেউ । ইতিহাস দেখে নাও।
যে যেমন আছে তেমন থাকায় রপ্ত
হয়েছে সবাই রোম থেকে দানিয়ুব
থেকে বালটিক সমুদ্রের নোনাঢেউ–
আসেনিকো আমার মতন বারোয়ারি ।
সোনাদানা কিছুই আমরা নিয়ে গিয়ে
রাখিনি বিদেশি ব্যাংকে অথবা বাড়িতে ;
বাড়ি-ফাড়ি নেই আমাদের, যেথা ইচ্ছা
সেখানেই ডেরা বাঁধি আর সেজায়গা
হয়ে ওঠে আমাদের থাকার স্বদেশ ।
নিষ্ঠুর হিংস্রতা ছাড়া আনন্দ ঘটে না
হৃদয়ী নায়কমাত্রে ঘোর ইডিয়ট
কেন না পাবলিক হল নির্মিত প্রাণী ।

সাঙ্গপাঙ্গদল।।
আত্তিলা মাস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ
পাবলিক মানেই তো ভেড়াদের পাল
জন্মসিদ্ধ অধিকার কান্নাকাটি করা ।

আত্তিলার খচ্চর ( নারী কন্ঠে )।।
চলুন সম্রাট এটা হাঘরের গ্রাম ;
ঘাসও তো দেখতে পাচ্ছি না কোনোখানে ;
উঁহু, পুং ঘোড়াদের দেশ এটা নয়
এখানে বুকনিই পায় বক্তাকে খুঁজে
বর্তমান এলে লোকে অতীতকে খায়
স্মৃতির জোচ্চুরি দিয়ে সমাজটা চলে
ভাবছে ম্যাজিক হবে হাপিত্তেশ করে ।

কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।
সত্য বলছে আত্তিলা । কিন্তু মনে রেখো
উনি আর ওনার লোকেরা কাঁচা মাংস
খেতে ভালোবাসে । স্নান করবার প্রথা
এমনকি গরমেও ছোঁচাবার প্রথা
ওনার রাজত্বে নেই । জলের অভাব
আছে তোমাদের দেশে ; তার সমাধান
এতে হবে । খাবার সুরাহা হবে । বিয়ে
দিতে হবেনাকো মেয়েদের । পোশাকের
খরচ বাঁচবে । জনসংখ্যা কমে যাবে ।
এনার শিরায় বয় কংসের পুঁজ।

আত্তিলা।।
পারছ বুঝতে তো আমার খচ্চরও
তোমাদের চেয়ে কত বিদ্বান ও জ্ঞানী !

বুড়োরা ( কোরাস )।।
উঁহু চলবে না। অমন জোকারচাঁদ
আছে আমাদের ভুঁয়ে প্রদেশে-প্রদেশে ;
তাদের সামনে চুনোপুঁটি তুমি খোকা ।
তারাও ধর্ষণ রাহাজানি লুটপাট
করতে ওস্তাদ বলে আমরা বিরক্ত
তাছাড়া সবাই ওরা সংবিধান মেনে
তাবৎ জোকারি করে দিব্বি পার পায়
রাসকেলে ঘুষখোরে ডান বাম নেই
ঘাপলার অন্ত নেই কোটি-কোটি টাকা
নামিদামিদের পেনটিং সোনাদানা
সুইজারল্যান্ডে ভল্টে লুকিয়ে রেখেছে ;
ফুসলিয়ে মেয়েদের বাজারে চালান করে।
তুমি চাপো ঘোড়ার ওপরে । তারা চাপে
দেঁতো হেসে সরকারি মোটর গাড়িতে
এই যা তফাত, তাছাড়া সবই এক
প্রতিদ্বন্দ্বী খচ্চরে-গুণ্ডায় দেশ ছয়লাপ।

আত্তিলা।।
ওরা সব আমারই দত্তক সন্তান ;
আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।
যাই, আরো গণতন্ত্রে আছে আমন্ত্রণ ।

[ ঘোড়ার পিঠেতে চেপে উধাও হলেন
মাটিতে থুতুর দলা ফেলে, আৎতিলা ।
সাঙ্গপাঙ্গদল তাঁর পেছন পেছন
তামাকের পিচ কদমের গাছে ফেলে।
হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ;
বেজে ওঠে পাঙ্ক রক শীৎকারসহ ।
আবির্ভুত হল রোমের সম্রাট বুড়ো
ক্যালিগুলা নাচতে-নাচতে শিস দিয়ে
সঙ্গে তাঁর বুক-খোলা যুবতীর দল
আর দুটি চেনে বাঁধা কালো জাগুয়ার ।

ক্যালিগুলা।।
কী বলছিল আত্তিলা ব্যাটা নরাধম ?
আমার রাজত্বে গিয়ে জেনে নিতে পারো
সেখানে আমার মূর্তি হারকিউলিস
অ্যাপোলো মার্কুরি রূপে পুজো করে লোকে।
সবাইকে বন্ধচোখে দেখি এমনকি
আমার ঘোড়াকে রাজদূত মর্যাদায়
প্রোমোট করেছি। ভাই-বোন ভেদাভেদ
নেই বলে নিজের বোনের সঙ্গে শুতে
কোনো বাধা নেই । অজাচার অনাচার
আইনসঙ্গত এ-কারণে যে আইনই
আমি । টুসকি বাজালে গলা কাটা যায়
জেলে দিই আমার কার্টুন যদি আঁকে ।
তা এমন শান্তি স্বস্তি কেউ পারবে না
দিতে তোমাদের। আমি মহা-ধুরন্ধর ।
পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ জুয়াচুরি।

জাগুয়ার জোড়া ( পুরুষকন্ঠে )।।
পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ পাঁয়তাড়া ;
জীবের জগত মুছে ফেলবার ট্রিক
অপরাধহীন কোনো রাজনীতি নেই
আবিষ্কার করতে শেখাও মহাভয়
বাঁচবে কী করে প্রাণী খুবলে না খেলে !

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।
সত্য বলছেন উনি। কিন্তু মনে রেখো
ক্যালিগুলা মগজবিহীন কালজয়ী ;
ওনার রাজত্বে যদি অশান্তির খোঁজ
করো , তা তোমরা পাবেনাকো । একেবারে
যাকে বলে শ্মশানের শান্তি সারাক্ষণ
অলিখিত সংবিধান ওনার জিভেতে
যে-জিভ চোবানো থাকে যোনিতে মাদকে;
অন্যের বউকে এনে ধর্ষণ করার
বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে এই শাসকের
ওঁর হাঁয়ে বক্রাসুরী বাঁকা দাঁত আছে।

ক্যালিগুলা।।
কারেক্ট বলেছে কদমের গাছ । আমি
যা বলি তা সংবিধান । তাই সমস্যাই
নেই কোনো আমার রাজত্বে । যোনি-লিঙ্গে
বসিয়েছি সারভিস ট্যাক্স । ইতিহাস
লেখকেরা ওব্দি জানে না আমার গল্প
এত রকমের সেনা দরবারে আছে ;
দলের কাজের লোক তারা ফিপ্রহর
কেননা আমিই দল আমি সংবিধান
বানাই যখন ইচ্ছা কিংবা পালটাই
তোমাদের মত জাতিপ্রথা-মার্কা নয়
মিডিয়া আমার থুতু চেটে মজা পায়
ভয়ে নাগরিকগুলো টুঁশব্দ করে না ;
এই তো দেখতে পাচ্ছ কত যুবতীরা
আমার নেশায় থাকে পুরো দিলখুশ ।
পাবলিক জিনিসটা চরসের ধোঁয়া ।

জাগুয়ার -জোড়া ( নারীকন্ঠে )।।
আমরা এদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান
এদের নিয়তি হল হাপিত্তেশে মরা ।

কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।
সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো তোমরা ওনাকে।
অন্য কোনো প্রতিযোগী নেতা থাকবে না;
ছিঁচকে চামচা-নেতা দেবে দে-চম্পট ।
কনেদের জন্য বর খুঁজতে হবে না ।

বুড়িরা ( কোরাস )।।
না মা অমন নেতার কোনো প্রয়োজন
নেই। আমরা অতীষ্ঠ তেএঁটে পাগল
মা-বোনের সঙ্গে শোয় এইসব নেতা
নিয়ে । খুনি ধর্ষক ডাকাত দাঙ্গাবাজ
ওরাই তো মসনদে বসে কলকাঠি
নাড়ে দু’চারটে প্রদেশে । পাথর-মূর্তি
নিজের ও চোদ্দোপুরুষের মোড়ে-পার্কে
পাঁচতলা বাড়ির সমান কাটাউট
বসিয়ে তারাও অন্ন ধ্বংস করে যাচ্ছে ;
শ্বশুর ধর্ষণ করে ছেলের বউকে
পুলিশ ধর্ষণ করে লকাপে ঢুকিয়ে
যার ফলে হারামি বিয়োয় ফিবছর
সে-সব হারামি একজন আরেকের
পোঁদে বাঁশ কোরে কুকুর-কুকুরী ঢঙে
ঘেউ-ঘেউ চিৎকারে সমাবেশ করে
কখনো রাস্তার মোড়ে গেটে ময়দানে ।
আমরা তো শান্তি চাই দুইবেলা পেট
ভরে খেয়ে-পরে আরাম-শৃঙ্খলা চাই।

ক্যালিগুলা।।
ওরা সব আমারই জারজ সন্তান ;
আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা।
চলি, আরো গণতন্ত্রে বহু কাজ আছে ।

[নাচতে নাচতে শিস দিয়ে হাফ-ল্যাংটো
মেয়েদের কোমর জড়িয়ে অন্তর্ধান
করলেন ক্যালিগুলা। কদমের গাছ
হাততালি দিলেন এবার জোরে জোরে।
গলায় খুলির মালা পরে কয়েকটা
হাড়গিলে মানুষকে হাতকড়া বেঁধে
প্রবেশ করল পল পট জলপাই
রঙের পোশাকে । সামরিক বাজনার
জগঝম্প হইচই ওঠে চারিদিকে ।]

পলপট।।
দেখলুম ক্যালিগুলা উন্মাদ কাঁহিকা
গেল ওই দিকে কোনো মাগির ধান্ধায়
তা তোমরা খুঁজছ এমন একজন
যে কিনা শৃঙ্খলা শান্তি সুখ এনে দেবে
আমি জোকার-সন্তান সমাজের তলা
থেকে উঠে গরিব ভাগাও আন্দোলন
করে শহরের সবকটা মানুষকে
লাগিয়েছি ধান চাষে । গ্রাম-শহরের
পালটা-পালটি হয়ে গেছে যে-কারণে
কারোর মনেই কোনো দ্বেষ-ঈর্ষা নেই ;
প্রতিটি শহর দ্যাখো হয়ে গেছে গ্রাম
ধানশীষে মধু হয় গরু দ্যায় ডিম
গোবরের পোকা খেয়ে সোনা হাগে লোকে
সকলেই ভাই-ভাই নয়তো যে যার
নিজের কবর খুঁড়ে মাটির তলায়
রাতেও সবাই খাটে বলে পাবলিক
বাড়বার কোনো সুযোগ-সুলুক নেই
মিছিল মিটিঙ করা নিষিদ্ধ করেছি
কেরানিরা দিনরাত চাষ করে মাঠে
খবরের পত্রিকা ছাপতে দিইনাকো
সুতরাং কোনো গুলতানি উঠবে না
আমার রাজত্বে পাবলিক বলে কিছু নেই;
মাটিই মানুষ তাই মানুষও মাটি
জমির মালিক জমি নিজে বুঝলে হে
পরিবার ব্যাপারটা লোপাট করেছি
কেননা আমিই সকলের পরিবার ।

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস )।।
হ্যাঁ ইনি ইস্কুলে বারবার ফেলকরা
মহাসাম্যবাদী । লোকেরা এনাকে বলে
এক নম্বরের দাদা । কারোর তুলনা
এঁর সঙ্গে করা চলবে না তা সে ইদি
চেঙ্গিজ পিনোশে যেই হোন । করলেই
ধড়টা লোপাট । অতএব পল পট
যদি তোমাদের নেতা হন পড়াশুনা
করতে হবে না বলে বাবা-মা-সন্তান
সবাই চাষের কাজে খেতচাষি হবে
শিল্পের ধান্দায় দেশ হবে না বিনষ্ট
অসম্য লোপাট হবে সর্বত্র সমাজে
মাত্র তিনটি বছরে উনি কুড়ি লক্ষ
পাবলিক কমিয়েছিলেন। তোমদের
দেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে মুক্ত হবে
জমির স্বামীত্ব নিয়ে গোল বাধবে না
প্রতিবাদ করার হবে না দরকার।

যুবকেরা ( কোরাস )।।
আরে ওরকম ফেলমারা গানডুতে
আমাদের রাজনীতি পচে একাকার
এদেশেও জনগণ বলে কিছু নেই
কর্তারা যখন যাকে ইচ্ছে তুলে নিয়ে
বেমালুম মাটিতে মেশাতে এক্সপার্ট
জঙ্গল দখল করে অধিবাসীদের
তাড়িয়ে মাটির তলা থেকে খেয়ে নিচ্ছে
সোনাদানা লোহাতামা ম্যাংগানিজ ধাতু
ভিখারিরা ধনী হল রাজনীতি করে
কেরানিরা পার্টিবাজি করে জমিদার ।

পলপট ।।
ওরা সব আমারই বেজন্মা সন্তান
আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।
টাটা বাই, অন্য কোনো গণতন্ত্রে যাই।

[পলপট, কয়েদিরা বিদায় নিলেন।
কদমের গাছ পুনরায় হাততালি
দিতে ট্যাপডান্সে কুচকাওয়াজ করে
মুঠোর সেলামসহ ঢোকে হিটলার
সঙ্গের দেহরক্ষীরা চালাতেই থাকে
ট্যাপডান্স ; কদমের গাছ হাততালি
দিলে বন্ধ হয় সবায়ের নাচানাচি ।]

হিটলার ।।
দেখলুম কেটে পড়ল অনার্যগুলো
আরে ওরা আমার চুলের যুগ্যি নয়
নেতা হতে হলে চাই বিশুদ্ধ মা-বাবা
এমন দানব যার কথা আত্মহারা
করে দেবে সবাইকে খোকা থেকে বুড়ো
সমাজ চলবে শুধু আমার কথায়;
যতো বেশি মতামত ততো গন্ডোগোল
তাকিয়ে দেখলে টের পাবে অশান্তির
প্রধান কারণ চারিদিকে স্বাধীনতা
পেয়ে কাজকর্ম করতে চায় না কেউ
দেশকে টাইট দিতে হবে সারাক্ষণ
যাতে কেউ একটুও নিজের একান্ত
সময় না পায় । জনগণ ব্যাপারটা
চটকে মিশিয়ে দিলে ব্যাস কেল্লা ফতে ।
ভিন্নমত দেখলেই পোড়াও বিষাক্ত
গ্যাসে তাদের নিশ্চিহ্ণ করো একেবারে।
আমার টোটকা হল লেবেনস্রাউম
জবরদখল করে ঝাণ্ডা পুঁতে দাও।

যুবতীরা ( কোরাস )।।
আরে দাদু অমন ভেড়ুয়া মাসতান
রয়েছে প্রতিটি রাজনীতিকের স্টকে
যাদের কাজই হল সকাল-বিকাল
একে তাকে পোঁদে বাঁশ করে টাকা তোলা
অন্য মত শুনতে পেলেই পুঁতে দেবে
জলজ্যান্ত মাটির একশো হাত নিচে
আপনার ঢঙে সেলাম ঠুকতে হয়
পাড়ার সিনডিকেট মাথারা এলেই
দেয়ালের পোস্টারের কথাও ফতোয়া ;
পোঁদেতে পার্টির ছাপ পেলেই সে নেতা।
লেবেনস্রাউম ছাড়া কিছুই বোঝে না
আমাদের পার্টিবাজ জোকার বংশজ
দেয়াল দখল শুধু নয় বউমেয়ে
বাড়িও দখল হচ্ছে দিনের আলোয়।

কদমগাছ ( পুরুষ কন্ঠে কোরাস )।।
আরেকবার ভেবে দ্যাখো এনার মতন
দিগ্বিজয়ী দানব আসেনি কখনও ;
ইনি হ্যামেলিনের সেই বাঁশিওয়ালা
মানুষকে ইঁদুরে পালটে দিতে ওঁর
জুড়ি জন্মায়নি এখনও কোনো দেশে
অসন্তোষ থেকে উনি পৌঁছোন পোগ্রোমে
শত্রু মার্কা দিয়ে নিকেষ করেন উনি
ফলে নিমেষেই সারা দেশ শত্রুহীন
তারপর শ্বাসরোধী শান্তির ফোয়ারা ।

বুড়োরা ( কোরাস )।।
আরে না না । সবকটা দলেই তো আছে
এই টাইপের অতিবজ্জাত জোকার
যারা জবরদখল করে দেশটাকে
উইপোকা হয়ে কুরে শেষ করে দিল ;
জনগণ ভয়ে মুখ খুলতে চায় না ।
কখন যে কোন লোক ইঁদুরে পালটে
যাবে কারো জানা নেই । তাইতো চাইছি
আসুক এমন এক বিশুদ্ধ মানুষ
যার গায়ে গুয়ের কসমেটিক নেই
মসনদটাকে সে ময়লা করবে না ।

হিটলার।।
কারেক্ট বলেছে কদমের গাছ । যদি
ইঁদুরে পালটে যাও তাহলে সহজে
দেশে হবে মহামৌলবাদী জমপেশ
অন্যদের ঘৃণা করে সময় কাটবে
নিজেদের দুঃখ কষ্ট ভাবতে হবে না
যে তোমার মতাদর্শে নেই তাকে মারো
মৃত্যুর নেশায় মশগুল হয়ে থাকো
আত্মাহুতি দিয়ে সব ধ্বংস করে দাও ।

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।
ওঁর মন্ত্রে তোমরা সবাই এককাট্টা
হয়ে ভুলে যাবে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট
একে আরেকের দিকে নজর ঘুরিয়ে
আড়চোখে চরগিরি করতে পারবে
সময় আপনা থেকে হু-হু কেটে যাবে
মৌলবাদ বড়ই মধুর সেঁকো-বিষ
যতো মজে থাকা যায় ততো তার মজা।

যুবকেরা ( কোরাস )।।
মৌলবাদীদের হাতে ধাতানি-প্যাঁদানি
খেয়ে আমরা রক্তাক্ত বোবা আধমরা
চাই না একলষেঁড়ে ওরকম জ্ঞান ।
ওই রাজনীতি করিয়েতে ছেয়ে গেছে
যারা শুধু চায় তাদের কথাই মানো
এমনকি শিশুদের দুধে তা মেশাও।
চলবে না আত্মঘাতী বিশ্ববীক্ষা-বিষ
পৃথিবীর কুষ্ঠরোগ ওই লোকগুলো
মোলবাদীদের চেয়ে ক্ষতিকর নেই।

হিটলার ।।
ওরা সব আমারই ঔরসে জন্মেছে
আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা।
ওরাই গেস্টাপো হয়ে আসে বার বার।

[বডিগার্ড নিয়ে হিটলার ট্যাপডান্স
করতে-করতে চলে যায়। হাততালি
দেন কদমের গাছ । শিকারি ব্রিচেসে
কোমরে টাইট বেল্ট দুহাতে চাবুক
মাথায় কোঁকড়া চুল দোহারা মহিলা
প্রবেশ করেন ; চাবুক পটকে তিনি
দাঁড়ান পা ফাঁক করে । কদমের গাছ
এই ভাবে মেয়েটির পরিচয় দেয় ।]

কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস )।।
ইনি হান্টারওয়ালি ; হিন্দি সিনেমার
বিখ্যাত নায়িকা । যেখানে বজ্জাত পান
দেশের ভিলেনগুলো একা সামলান ;
দু-হাতে রিভলভার চালাতে-চালাতে
শত্রুহীন করে দেন গ্রাম ও শহর
ফুল পাখি নদী চাঁদ ওঁর গান গায়।
হান্টার চালিয়ে উনি রক্ষা করবেন
তোমাদের আর পরবর্তী প্রজন্মের।
সিনেমা-নায়িকা বলে উনি তো অমর
পোঁদেতে চাবুক মেরে ঠান্ডা করবেন
বেয়াড়াগুলোকে যারা টাকা গেঁড়িয়েছে
রেখেছে বিদেশে কোনো গোপন লকারে
মাটি থেকে ধাতু তুলে পাচার করছে
ছাপছে নকল টাকা চালাচ্ছে ধর্ষণ
একা হাতে সামলান হান্টারওয়ালি।

বুড়িরা ( কোরাস )।।
আরে ! সেই মাদারি মামণি বাতেলানি !
হা কপাল শেষে এই ফিলমি নায়িকা !
জীবনকে সিনেমায় আটক করার
শিল্প-শিল্প খেলা খেলে বুদ্ধিজীবীগণ
নিজেরা তো বোকা সেজেছেন, আমাদেরো
বুঝিয়েছিলেন সমাজ পালটে যাবে
কবিতা সিনেমা গল্প আঁকাআঁকি দিয়ে
নাচের নাটক গেয়ে বাজনা বাজিয়ে
দেশের দশের আয় বেড়ে শতগুণ–
সবই ফালতু প্রমাণিত হয়ে গেছে
আমরা বাস্তব চাই প্রকৃত বাস্তব
ধোঁয়াটে সুন্দরী দিয়ে কাজ চলবে না ।

হান্টারওয়ালি ।।
বাস্তব জগতে বাস করো বলে ভোগো
তোমরা সবাই । বিভ্রমনিবাসী হও
সারাক্ষণ কুয়াশায় বুঁদ হতে শেখো
মনে-মনে নিজেদের সুখি ভেবে নাও
নয়তো কোকেন চরস গঞ্জিকা টানো
স্বপনে মিলতে পারে উদ্ধারের নেতা
যাক আমি চললাম শুটিঙ রয়েছে ।

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস )।।
আমার স্টকের সব মহাজন শেষ ।
গাছে আর কতই বা অবতার ফলে ?

[ দেখা যায় মোষের ওপর চেপে
নীলদেহ যমরাজ আসরে এলেন
সঙ্গে হালখাতা হাতে চিত্রগুপ্ত বুড়ো
আগে-পিছে দুইজন বাঁটকুল চাষি ।]

চিত্রগুপ্ত ।।
এঁদের কারোর তো হয়নি ডিউ ডেট !
এত ভিড়ভাড় কেন কিসের জটলা ?
প্রবলেম যে কী তাই তো টের পাচ্ছি না
সকলেই দিব্বি সুস্হ শুধু মনমরা
তা মন খারাপ থাকলেই ডিউ ডেট
দিই না কখনো । মন ভালো করবার
দায়িত্ব যে যার তোমাদের নিজেদের ।

কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে )।।
এনাদের দেশে কোনো সৎ নেতা নেই
চাইছেন আমি কাউকে পাঠিয়ে দিই
অন্ধকার গন্ধ থেকে চাগিয়ে উঠুক
সৎ ও সুজন দেশরক্ষাকারী লোক।

যমরাজের মোষ ( শিশুকন্ঠে ) ।।
তোমরা যা চাইছ তা বাতুলে বোকামি
সমাজ বদল করে গুবরে পোকারা
নেতারা গোবর জেনো ঠেলে নিয়ে যাও
গড়িয়ে গড়িয়ে সেই তাল বড়ো হলে
আপনা থেকেই পাবে মহাজন নেতা
ইতিহাসে চিরকাল এমনই ঘটে
গোবর খসলে তার রূপ ধরা পড়ে
ঠিক যেরকম দেখা গেল এতক্ষণ
ওরা মহাজন হয়ে মসনদে ছিল
হেগেমুতে স্বদেশকে নষ্ট করে গেছে ।

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে )।।
অতএব ফিরে যাও যে যার মুলুকে
যেমন চলছে সব তেমন চলুক
তোমাদের মুরোদের বড়ই অভাব
ক্রোধ ছাড়া আস্ফালন গোসাপের বিষ
তবে বার্তাহীন ক্রোধে বদল আসে না
সুখ শান্তি পেতে হলে বিপদকে ডাকো
সাহস তো মানুষের বাঁচার আঙ্গিক
মসনদ কোনো কালে নিজেই পড়ে না ।

চিত্রগুপ্ত ।।
ফিরে যাও তারপর উঠে পড়ে লাগো
কোনো নেতা বদল ঘটাতে আসবে না
নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মসনদ ভাঙো ।
প্রিপন করতে পারি কয়েকটা ডেট
বড়োজোর । বাকি সব কাজ তোমাদের ।

[ সমবেত বুড়োবুড়ি যুবক যুবতী
সবাই দাঁড়িয়ে উঠে চিৎকার করে
তারা সব নানা দিকে ছুটে চলে যায়।]

 

Facebook Comments

6 Comments

  1. SHOSHAN THAKOOR

    পুরান বোতলে নতুন মদ। সরাপে ঘোর থাকে, এখানেও ছিল। প্রিয় মানুষের সবই ভাল লাগে। লেখাটা ঘোরে পড়লাম। ভাল লাগলো।উত্তম কামনা।

  2. Mousumi Bilkis

    পুরো লেখাটা পড়লাম। আপনার লেখা তো বরাবর-ই অন্যরকম। আপনার সব লেখা পড়েছি সেরকম নয়। কিছু কিছু পড়েছি তাই জানি। এ লেখাটাও ব্যতিক্রমী যথারীতি। তবে ‘ঋতুস্রাবের কানি’ মুখে গুঁজে দেওয়াটা পছন্দ হল না। মেয়েদের বসন্তগুলোকে একটু অন্যভাবে দেখা যায় না? আপনার লেখার ‘ধারা’ জেনেও অনুরোধ করছি। ভাবুন।

  3. Saikat Das

    Apnar lekha ki onek bodle geche? “Ei Odhom Oi odhom” e sob kichu nossat korar chora jhaNj-r songe besh kichu monostattik reflection chilo, tnia pakhi ora Punjab-r gomer kheter moto birol kintu sundor imagery peachi ……. ekhonkar lekhae nischoy onno barta ache …….j samajik proyjone aro nisthur o khotor hote hobe…. kintu ei palte jaoa, jeta amar mone hoe thake, asole nao hote pare….. seta ki socheton bhabei esche?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top