পর্ব-১
গাজী তানজিয়া
হেদায়েত আলী কি ভেবেছিলেন কে জানে! তিনি ছেলেকে হিন্দু হোস্টেলে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার কথার ওপর কথা বলার সাহস বাড়িতে কারো নাই, তাই ছফা একদিন ভোর বেলা তল্পি-তল্পা সহ বাবার হাত ধরে স্কুলের হিন্দু হোস্টেলে পৌঁছে গেল।
এদিকে বাড়িতে সবাই হতাশ। হা খোদা! হাইস্কুলে এতো বড় মুসলিম হোস্টেল থাকতে ছফার হাত ধরে শেষ পর্যন্ত হিন্দু হোস্টেলে কেন নিয়ে গেলেন তার বাবা?
সামনাসামনি না বললেও পেছনে বসে বাড়ির লোকের এমন কানাঘুষা হেদায়েত আলীর কান এড়াল না। তাই তিনি একদিন তার বড় ভাবী এবং তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন, আমি জানি তোমরা আমার এই সিদ্ধান্তে মনক্ষুন্ন হইছ, এতোবড় মুসলিম হোস্টেল থাকতে আমি কেন ছেলেকে হিন্দু হোস্টেলে পাঠাইলাম। জানি এই প্রশ্ন তোমাদের মনে আসছে। আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ আমি নিয়মের বরখেলাপ করছি। তবে এর পেছনেও বিশেষ কারণ আছে। আমি খবর নিয়া জানছি গাছবাড়িয়া স্কুলের হেডমাষ্টার শ্রী বিনোদবিহারী দত্ত একজন অসাধারণ শিক্ষক। তিনি ছাত্রদের স্বভাব চরিত্র সুন্দরভাবে গঠন করার ব্যপারে কড়া নজর রাখেন। তোমরা তো জান অতি আদর দিয়া দিয়া ছফাকে আমরা ঠিকভাবে মানুষ করতে পারি নাই। এই বয়সেই তার খরচের হাত এত বেড়ে গেছে যে, বাড়ি থেকে এটা সেটা চুরি করে বিক্রি করা, দোকানে বাকি ফেলা আর ধরা পড়লে বিস্তর মিথ্যা বলা তার অভ্যাসে দাঁড়ায়ে গেছে। একে আর এখন পিটাইলেও কাজ হবে না। আর ওই রোগা পটকা লিকলিকে ছেলেকে আর কত মারধোর করা যায়! ওর এখন দরকার কড়া নিয়মের মধ্যে থাকা। শুধু শাসন না। নিয়ম মানুষের জীবনে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আর তারে এই নিয়মের মধ্যে রেখে চরিত্র গঠন করতে পারবে একমাত্র হেডমাষ্টার বিনোদ বিহারী দত্ত।
কিন্তু তিনি তো হিন্দু হোস্টেলের তত্ত্বাবধানে থাকেন, মুসলিম হোষ্টেলের না। মিন মিন করে বললেন বড়চাচী।
আমার ওসব হিন্দু-মুসলমান ভাববার এখন সময় নাই। আমার ভাবনা একটাই ছেলেরে মানুষ বানানো। আমার মনে হয় এতোক্ষণে বিষয়টা তোমাদের কাছে পরিস্কার হইছে। এই নিয়ে আমি যেন আর কোনো কানাঘুষা না শুনি।
স্কুলের বিশাল খেলার মাঠে একটিও ছেলে নেই। সবাই এখন ক্লাসরুমে। আর সেখানে সূর্যের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে একজন। শাস্তি হয়েছে তার। মিথ্যা বলার জন্য শাস্তি।
তবে শাস্তি পেয়ে তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে না। সে চোখ বন্ধ করে সূর্যমন্ত্র পাঠ করছে। ওম্ জবা কুসুম নমঃ….।
কিন্তু মন্ত্র পাঠ করার পক্ষে বেলা অনেক উঠে গেছে। কাজ হবে কি না ঠিক নেই। কিন্তু তাতে কি? এই সূর্যই তাকে উদ্ধার করবে আজ।
হিন্দু হোষ্টেলে আসার পর থেকে ছফার জীবন আক্ষরিক অর্থেই বদলে যেতে লাগল। এতোদিন সে তার ইচ্ছা মতো ঘুম থেকে উঠত। নাওয়া-খাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা ছিল না। ইচ্ছা হলো তো ঘণ্টাখানিক পাড়ার ছেলেদের সাথে ডুবিয়ে এলো। যখন ইচ্ছা তখন খেলার মাঠে ছুট্। কিন্তু এখানে হেড স্যারের কড়া নিয়মানুবর্তিতা। খুব সকালে একেবারে ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যাত্যাগ করে এক মাইল প্রাতঃভ্রমণ করা এখানে বাধ্যতামূলক। এরপর সকালের পড়াশোনা শুরু করার আগে সরস্বতী স্তুতি পাঠ করা-
‘আঁধারনাশিনী। জাগো হৃদি মাঝে
প্রণমি চরণে দেবীশ্বেতভুজে
বীণারঞ্জিত পুষ্প হস্তে
ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তে।’
অন্যদিকে ছাত্রকে শাস্তি দিয়ে স্কুলের হেডমাস্টারের নিজ কক্ষে চিন্তিত মুখে বসে আছেন বিনোদ বিহারী বাবু। ছফার অনেক কাজকর্ম নিয়মের মধ্যে চলে এলেও তার তার মিথ্যা বলার অভ্যাসটা কিছুতেই ছাড়াতে পারছেন না তিনি। অথচ তিনি ছফার মিথ্যা কথন ছাড়াবার জন্য প্রায় ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছেন। কিন্তু তাঁর এই ছাত্র কিছুতেই বশে আসছে না। তিনি বিভিন্ন সময়েমহামানবদের উদাহরণ দিয়ে কখনো শাস্তি দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। মিথ্যাকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছেন। এ থেকে তার মিথ্যা বলার হার কিছুটা কমলেও পুরোপুরি সংশোধিত হয়ে ওঠেনি। ছফার ব্যাপারটা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। সে তাঁকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে অথচ তাঁর কথা শোনে না। এর ভেতরে নিশ্চই তার শিক্ষাদানে কোনো ক্রটি রয়ে গেছে। তাঁর এই অপারগতার কথা ভেবে মন খারাপ করে বসে আছেন তিনি। এমন সময় তার কাছে এলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু কমিউনিস্ট নেতা সুধাংশু বাবু।
সুধাংশুবাবু বিনোদ বিহারীর কাছে প্রায়ই আসেন কিন্তু সেদিন বন্ধুর মনটা খারাপ দেখে বললেন, কি ব্যাপার বন্ধু এতো চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন?
তিনি তার ভাবনার কারণ খুলে বলতে সুধাংশুবাবু বললেন, ওকে অন্যভাবে বোঝাতে হবে। ওর ব্যক্তিগত যে সব তুচ্ছ কারণে ও মিথ্যা কথা গুলো বলছে সেই চিন্তা সেই সংকীর্ণ জগৎ থেকে ওকে বের করে আনতে হবে। ওকে বিশ্ব মানবের সমস্যায় শামিল করতে হবে। তা হলেই এই সব তুচ্ছ ব্যক্তিগত সংকীর্ণতা থেকে ও বের হয়ে আসতে পারবে।
কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? ওকে তো বিভিন্ন মহৎ উদাহরণ কম দেয়া হচ্ছে না। শাস্তিও যথেষ্ট দেয়া হয়েছে।
দেখ মাষ্টার, একটা জিনিস লক্ষ করেছ?
কি বিষয়ে?
আমরা দুজন যখন শোষণ, শ্রমিক, কৃষক বিপ্লব, সোভিয়েত রাশিয়া, লেলিন স্তালিন নিয়ে কথা বলি তখন ও কেমন আগ্রহ করে শোনে।
হ্যাঁ, খেয়াল করেছি। কিন্তু তাতে কি?
এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে ওর ওষুধ। ওকে কমিউনিজমের ওপরে কিছু পত্রিকা এবং পুস্তিকা এনে পড়তে দেব। দেখবে ওর ভেতরটা কেমন আমূল বদলে যায়।
বদলাবে, কী ভাবে!
ধরো একটা শিশু জন্মের পর কাঁদে?
হ্যা, ওটাইতো ওর প্রথম ধ্বনি।
কাঁদে কেন জানো? কাঁদে এজন্য যে চতুর্দিকে সে শত্রু দেখে। হাসে কিন্তু অনেক পরে। যখন আদর যত্ন পায় তখন। মানুষের ওই স্বার্থপরতাটা যেমন স্বাভাবিক তেমন জন্মগত। এভাবে ধীরে ধীরে হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে শিশুটি সামাজিক হয়ে ওঠে।
তুমি বলতে চাও, সামাজিক হওয়াটা বামপন্থা?
না, তা নয়। বামপন্থী হতে হয় আরো এগিয়ে গিয়ে।
বামপন্থাটা কি তাহলে পরার্থপরতা?
না মোটেই তা না। তবে বামপন্থীদের অনেকে এটা ভেবে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
তাহলে এটা কি?
**বামপন্থা হলো সমস্বার্থতা। সবার স্বার্থকে এক করে নেয়া; সকলের ভালোর মধ্যে নিজের ভালো দেখতে পাওয়া।
কথা ঠিক, কিন্তু ছফা এখন একথা বিশ্বাস করতে চাইবে না।
মানে?
মাঝে মাঝে ও না না প্রশ্ন করে জ্বালিয়ে মারে।
মানে, কি বিষয়ে? প্রশ্ন করাতো ভালো, তার মানে ও বুঝতে পারছে।
বুঝতে তো পারছেই একটু বেশি পারছে এই যা সমস্যা।
মানে?
একদিন সে কি প্রশ্ন করেছিল জান?
কি?
ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় নিষিদ্ধ কমিউনিষ্ট পার্টির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল কেন? কারণ তারা অসহযোগ আন্দোলনের বিরোধী ছিল এজন্য?
এ প্রশ্নের আমি কি উত্তর দেই বলত? একথা তো সত্যি স্তালিন-রুজভেল্ট-চার্চিল হাত মিলিয়েছেন বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাদের কাছে হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনযুদ্ধ আর ভারতের ইংরেজদের যুদ্ধ ব্যবস্থার সমর্থক। কমিন্টার্নের প্রভাবে কমিউনিষ্ট পার্টি সোভিয়েত রাশিয়ার সব ব্যাপারে সমর্থক। অথচ নিজ দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কথা তারা বিবেচনার মধ্যে আনেন নি। অথচ দেশে তখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষের মৃত্যুর মিছিল। উপরন্তু দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে। এ কেমন মানবতার সপক্ষে অবস্থান ছিল তাদের বলতে পার? কংগ্রেসের নেতারা যখন জেলে বন্দি কমিউনিষ্ট পার্টি তখন মুক্ত ছিল। এটা যে ইংরেজদের একটা পরিহাস এ কথাতো সত্যি। আমি অস্বীকার করি কি করে?
তা তুমি কি বলেছ?
বলেছি সে জন্য কমিউনিষ্ট পার্টি এখন ভুল স্বীকার করছে, আত্ম-সমালোচনাও।
ও কি বলল?
ও কিছু না বলে চুপ করে ছিল।
তাছাড়া এর পেছনে আর একটু ব্যাখ্যা আছে, তুমি জানো, কিন্তু ওকে সেটা বোঝাতে পারনি।
সেটা কি?
তুমিতো জানো, ইংরেজরা কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভয় করত কমিউনিস্টদেরকেই। পার্টি যখন খুবই ছোট ছিল তখনো তারা গভীর সন্দেহের চোখেই দেখেছে তাদের। কেননা তারা জানত সমাজ বিপ্লব যদি কেউ ঘটায় তবে এরাই ঘটাবে। আর তাইতো তাদের ওপরে ১৯২১ সালে পার্টি গঠনের পর থেকেই ইংরেজরা খেয়াল রেখেছে। আর ১৯২৯ সালে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামের এক মামলায় পার্টির প্রায় সকল নেতাকে দীর্ঘকাল আটকে রাখে এবং বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করে। পার্টি নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু তবুও শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে বামপন্থীদের প্রভাব বাড়ছিল। সেটি দেখে ভারতীয় কংগ্রেস। ‘কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পাটি’ নামে একটি দল খাড়া করে। যাদের আসল কাজ ছিল এটা দেখা বিপ্লবপন্থী যুবকেরা যাতে কমিউনিস্ট না হয়ে কংগ্রেসেই থাকে এবং শ্রেণী সংগ্রামের পথ না ধরে নির্বাচনের পথ ধরে এগোয়। কিন্তু ১৯৪২-এর আগস্ট মাসে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এ আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল আপোসবিমুখ যুব সমাজ; কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি এতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়। কেননা হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করার ফলে কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত ছিল যে এই আক্রমণের দরুন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে এবং বৃটিশরা যেহেতু হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র তাই ব্রিটিশদের সঙ্গে ত্রু তাকে স্থগিত রাখতে হবে। এই কথাটা ওকে বুঝিয়ে বললেই হবে। তুমি ওসব নিয়ে ভেব না। এখন যে বিষয়ের ওপরে দাওয়া দেব তাতে কাজ হবে। সে বুঝতে ও শুদ্ধ হতে বাধ্য।
সুধাংশু বাবুর দাওয়ায় কাজ হয়েছিল। জাতীয়তাবাদীদের ভুল শাসন ব্যবস্থায় ছফা ব্যথিত। অন্যদিকে নিপীড়িতদের জন্য তার প্রাণ কাঁদে। সব মিলিয়ে ছফার মিথ্যা বলার অভ্যাস শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াল। আর ততোদিনে বাড়ির লোকেদের কান্না-কাটির জেরে, ছেলে পুরোপুরি হিন্দু হয়ে যাওয়ার আগেই তাকে বাবা হেদায়েত আলী পাঠিয়ে দিলেন মুসলিম হোস্টেলে। ছফা তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র।
(*বামপন্থীরা আসে যায় বামপন্থা থাকেই – সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (প্রবন্ধ-২০১১)
পাঁচ
মুসলিম হোস্টেলে এসে ছফার জগৎ আমূল বদলে যেতে লাগল। এই হোস্টেলে তার অভিভাবক হন স্কুলের অংকের শিক্ষক মুহাম্মদ ইসহাক বি.এস.সি এবং মাওলানা আবু সায়ীদ স্যার। এই দুজনের সাহচর্যও তার ভেতরে এক অদ্ভুত লোকরশ্মির মতো ছিল। মাওলানা স্যার প্রায়ই তাকে নবী কাহিনী পড়ে শোনাতেন। স্যার যেভাবে নবীদের জীবন কাহিনী বর্ণনা করতেন তা যে কোনো ডভেঞ্চারকেও ছাড়িয়ে যেত। তবে স্যারের নবী কাহিনী শোনার চেয়েও তাঁর যে জিনিসটার প্রতি ছফার বিশেষ আগ্রহ জম্মাল, সেটা হলো তাঁর পকেট ঘড়ি। এই ঘড়িটা হস্তগত করার এক তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে কিছুদিন ঘুর ঘুর করলেও শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে তাঁর অসংখ্য ঘড়ি পরবার সুযোগ ঘটলেও ওই ঘড়িটার প্রতি তাঁর যে এক তীব্র ভালোলাগা ছিল তেমন আর হয় নি কখনো। তবে যাঁর সান্নিধ্য তার জীবনে এক অদ্ভুত আনন্দ নিয়ে আসতে পেরেছিল তিনি ইসহাক স্যার। স্যার ক্লাস রুমে অংকের কড়া কড়া ফরমুলা তাদের মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করলেও এবং গাধা পিটিয়ে মানুষ করার এক মহান ব্রত মাথায় নিয়ে হাঁটলেও ভেতরে ভেতরে তিনি ছিলেন একজন কবি। তিনি প্রায় সময় কবিতা লেখার কসরত করে সময় কাটাতেন। তাঁর কবিতা লেখাকে অনেকটা বাতিকের পর্যায়ে ফেলে দেয়া যায়। তবে সমস্যা যেটা সেটা হলো, শব্দের অন্তমিল দিতে তাঁর ভীষণ অসুবিধা হয়। তিনি তাঁর এই অন্তমিলহীন কবিতা কাউকে সচারচরে দেখান না বটে তবে কী এক অদ্ভুত কারণে যেন তাঁর এই গুপ্ত প্রতিভা ছফার কাছে প্রকাশ করলেন। প্রকাশ করারও বিশেষ কারণ আছে বৈ কি। কারণ ছফা যখন হাইস্কুলে আসেনি তখন তিনি একদিন তার এই ক্ষুদে ছাত্রের কাব্য প্রতিভা লক্ষ করেছেন। এই কথা শোনার পর ছফা বেশ লজ্জায় পড়ে গেল। কারণ সে তো এখন আর কবিতা লেখে না। সেই যে একটা কবিতা লিখেছিল সে তো আব্বাজানের চাপে পড়ে..। ঘটনা হয়েছিল কি, একদিন ছফা তার বিকেল বেলার খেলা শেষে বাড়ি ফিরে দেখে তাদের কাচারি ঘরের বারান্দায় আব্বাজানের সামনে বসে আছে বিভূতিরঞ্জন ও তার বাবা জগন্নাথ বাবু। এমন তো হামেশাই হয়। প্রতিদিনই অনেকে এসে আব্বাজানের সাথে গল্প করে। বিভূতিদা ছফার থেকে বয়সে বছর দশেকের বড় হবে। হাইস্কুলের সবচেয়ে উঁচু ক্লাসে পড়ে। ছফা বিভূতিকে দেখে স্বভাবসুলভ হাসি হাসলে হেদায়েত আলী তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন। কই, এদিকে আসো, দেখে যাও।
ছফা মনে মনে ভীষণ ভড়কে গেল। সে তো কিছু করেনি তবে এরা আবার তার বিরুদ্ধে কি নালিশ করতে এলো!
তবে কাছে গিয়ে যা শুনল তা নালিশ নয় ঠিকই তবে নালিশ হলে সে এর থেকে কম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ত। বিভূতিরঞ্জন নাকি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নিয়ে এক কবিতা লিখেছে। যা ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ওর বাবা ছেলের এই কৃতিত্বের খবর পত্রিকাসহ হেদায়েত আলীর কাছে দেখাতে এসেছেন।
বিভূতি তখন কবিয়াল হিসেবেও গ্রামে নাম ছড়িয়েছে বেশ। তার ওপরে তার জিন্নাহকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘বুক ভেসে যায় নেত্র নীরে, জিন্নাহ’র মরণে’ শুনে ছফার বাবাতো বিগলিত প্রায়। খুশিতে দশটাকা নজরানাও দিয়ে দিয়েছেন।
জগন্নাথ বাবু চলে যাবার পর ছফার বাবা তাকে ধমকাতে শুরু করলেন, এই যে জগন্নাথের ছেলে বিভূতি কবিতা লিখে মস্ত কাণ্ড করেছে। আমি তোমার জন্য দুজন মাষ্টার রাখছি। আর তুমি কিছুই লিখতে পার না!
বাস্তবিকই ছফা ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেল। সত্যিই তো বিভূতি তার চেয়ে বছর নয়-দশের বড় বটে, তবে সে কবিতা লিখতে পারে আর সে পারবে না কেন! সে তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরের ছাত্র। অত ছোট বয়সের মানুষের হাত দিয়ে কবিতা আসে না, আসা সম্ভব না। কিন্তু ছফা বা তার বাবা দুজনের কেউই সেটা বুঝতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত ছফা তার বাবাকে বলেই ফেলল যে, আমিও লিখতে পারি।
হেদায়েত আলী ওভাবেই মুখ গোমড়া করে বললেন, লিখতে পারলে লিখে দেখাও আমাকে।
কিন্তু কি নিয়ে লিখবে সে! বিভূতি লিখেছে জিন্নাহকে নিয়ে। সে ছোট মানুষ। জিন্নাহ্, পাকিস্তান এসব কিছুই সে ভালো করে জানে না। তবে তাকেও তো এমন একজন প্রভাবশালী লোককে নিয়ে লিখতে হবে। তাহলে কে হতে পারে সেই ব্যক্তি যাকে সে চেনে। যাঁর বীরত্ব দুঃখ-বেদনা সম্পর্কে সে জানে। দু’একদিন এই নিয়ে ভাবতেই মানুষটাকে পেয়ে যায় সে। হ্যাঁ, রামচন্দ্র। মনমোহন আচার্যের মা প্রতিদিন দুপুরবেলা গাছতলায় বসে রামায়ণ পড়েন আর গল্পটা তাদেরকে বুঝিয়ে বলেন। রামের মতো এতো পরিচিত ব্যক্তিত্ব তার কাছে আর কেউ নেই। এই লোকটাকে সে খুব পছন্দও করে। আহা বেচারিকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যেতে হল, আবার কোত্থেকে দুষ্টু দুরাচার লঙ্কার রাবণ এসে বৌ-টা কেড়ে নিয়ে গেল। তাঁকে নিয়েই লিখতে হবে কবিতা। ছফা তাই কবিতা লিখতে বসল। কবিতার নাম রামের পিতৃ ভক্তি।
‘যেই জন পিতা মাতার প্রতি নাহি করে ভক্তি
পরকালে হবে তার নরকে বসতি।’….
এই রকম আরো নানা কথা লিখে অবশেষে সে ওই কবিতাটা তার আব্বাজানের কাছে দাখিল করল।
হেদায়েত আলী পুত্রের এই মহান শিল্পকর্মের প্রচার কিভাবে করা যায় তাই নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। পত্রিকায় কিভাবে কবিতা পাঠাতে হয় তিনি জানেন না। আর পাঠালেও কতদিনে ছাপা হবে তার ঠিক নেই। ছাপা যে নাও হতে পারে সেই চিন্তা তার মাথায় নেই। যাই হোক, ওই সব সব ছাপাছাপির সময় নেয়ার আর তর সইছিল না। তিনি ছেলের এই প্রতিভা দু’একদিনের মধ্যে সবাইকে দেখাতে চান। কিন্তু কীভাবে সম্ভব! অনেক লোকের সমাগম হবে এমন জায়গাটাই বা কোথায়! আসরের নামাজ শেষে দু একজন মুসল্লি হেঁটে যাচ্ছেন তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে। আর তখনই পেয়ে গেলেন সমাধান। ভাবতে ভাবতেই তিনি এর একটা সমাধান পেয়ে গেলেন। বৃথাই তিনি এতোক্ষণ ভেবে মরছিলেন। তিনি যে একটা মসজিদ করে রেখেছেন, সেখানেই তো জুম্মার দিনে এই কবিতা পড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
হেদায়েত আলী এমনিতে নিজে ধর্মকর্ম তেমন একটা করেন না, তবে সেদিন পুত্রের প্রতিভা প্রচারের জন্য তিনি সকাল সকাল ওজু গোছল সেরে ছেলেকে নিয়ে জুম্মার নামাজে হাজির হলেন। এবং নামাজ শেষে ছফা বাবার নির্দেশে হাজারো মুসল্লিদের সামনে ‘রামচন্দ্রকে’ নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করে শোনাল। (ভাগ্য ভাল তখন আমেরিকা সৃষ্ট লাদেন এবং দেশে দেশে ইসলামী মৌলবাদ এত প্রকট ছিল না। নইলে মসজিদে শ্রী রামচন্দ্রকে নিয়ে কবিতা পাঠের কী প্রতিক্রিয়া হতো খোদা মালুম! – লেখক)
তবে এর পরে সে আর কোনো কবিতা না লিখলেও কবি হওয়ার এক সুপ্ত বীজ হয়ত তার মনে লুকায়িত ছিল। যা শিবপ্রসাদ স্যারের উৎসাহে অঙ্কুরিত হতে লাগল। কবি হওয়ার এক মহৎ বাসনা তাকে পেয়ে বসল।
ছফার এহেন কাব্য প্রতিভা স্কুলে চাউর হলে সে সাহিত্য প্রেমিক শিক্ষক শিবপ্রসাদ সেন স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলল।
শিবপ্রসাদ সেন বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার পড়াতেন। স্যার যাকে খুব পছন্দ করেন তাকে শালা বলে সম্বোধন করেন এবং কান মলে দেন। ছফা কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর শালা শ্রেণীর মধ্যে গণ্য হয়ে গেল। আর গণ্য হওয়ার পর তিনি একদিন ছফাকে ডেকে বললেন, এই শালা! এই নে, এই চাবিটা নে।
ছফা বুঝতে পারে না এটা কিসের চাবি। সে বলল, স্যার এটা কিসের চাবি?
বুঝতে পারছিস না শালা, এটা সিন্দুকের চাবি, যেখানে লুকিয়ে আছে সব ধন-রত্ন।
ধন-রত্নের সিন্দুকের চাবি তাকে কেন দেওয়া হলো বুঝতে পারে না ছফা। তাই আবারও প্রশ্ন করে, কার ধন-রত্ন স্যার?
এই রত্ন সবার। তোর, আমার, সমগ্র মানব জাতির।
স্যার আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এমন একটা চাবি আপনি আমার হাতে কেন দিলেন?
তোকে দেব না শালা কাকে দেব? লাগবে তোর, দেব কালা চোরকে? এবার বল দেখি শালা এই চাবি কিসের?
ছফা বুদ্ধি করে বলে এই চাবি রত্ন ভাণ্ডারের।
রত্নটা কি বল?
ছফা এখন ভাবে রত্নটা কী হতে পারে! যা একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে এতো আগ্রহ করে দিতে চান! তার ওপরে শিব স্যার আবার আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের ক্লাস ফ্রেইন্ড। দুজনের এখনো যোগাযোগ আছে।
তাহলে এটা.., হেসে ফেলল ছফা। স্যার এই চাবি জ্ঞান ভাণ্ডারের। এটা লাইব্রেরির চাবি।
শিববাবু ছফার এই বুদ্ধি দেখে চমকিত হলেও বুঝতে দিলেন না। ছেলে আবার বিগড়ে যেতে পারে।
এরপর শিব বাবু নিজে ছফাকে নিয়ে স্কুলের লাইব্রেরিতে ঢুকলেন। এবং নবীনচন্দ্র সেন, হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, কায়কোবাদ, বঙ্কিম, মাইকেল এঁদের সবার বই দেখিয়ে বললেন, এগুলো পড়বি।
ছফা তখন ইতস্তত করে বলল, কিন্তু স্যার রবীন্দ্রনাথ দেখালেন না!
তিনি তখন প্রায় হুংকার করে উঠলেন বলে কি ছোড়া! যাঁর কবিতা পড়া মাত্রই মানুষ বুঝে যায় তাঁর মধ্যে কবিত্ব কোথায় থাকে? শোন ছফা, যে কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দে কবিতা লিখতে পারে সেই আসল কবি বুঝলি?
ছফা স্যারের কথায় এতোটাই প্রভাবিত হলো যে, সে নিয়মিত অমিত্রাক্ষর ছন্দের কসরত করতে লাগল।
শিববাবু ছাত্রের এই কসরতে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে স্বয়ং মাইকেল মধূসূধন দত্তকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেলতে বললেন।
ছফাও মহা উৎসাহে লিখে ফেলল,
‘হে বঙ্গকবিকূল চূড়া শ্রী মধুসূদন
তোমার যাওয়ার পথে বায়ু সমবেগে
আমিও বাসনা করি যেতে। কিন্তু সদা ভয় জাগে
যদি যায় সঙ্কল্প টলিয়া, পারিপার্শ্বিক পৃথিবীর চাপে,
যেমতি নদী এসে বাধা পড়ে শিলাময় পাহাড়ের ধারে
যদি কোনমতে তারে বারেক টলাতে নারে–
হয় প্রবাহিত ভূ-গর্ভের নিরপেক্ষ স্তরে।’
ছফার এই কাব্য প্রতিভায় অংকের শিক্ষক ইসহাক স্যারের গর্বের সীমা নেই। কারণ তিনিও একজন কবি। তিনি তার কাব্য প্রীতি ও কাব্য চর্চা গোপনই রাখতে চান সবার কাছে। কবিতা লেখা তার কাছে ছিল অনেকটা গোপন প্রেমের মতো। একদিন এই গুরুগম্ভীর লোকটি কোনো এক গোপন ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে ছফাকে তাঁর ঘরে ডেকে পাঠালেন।
ছফা তাঁর ঘরে পৌঁছলে তিনি একথা সেকথার পর তাঁর তোষকের নিচ থেকে একটা ঢাউস সাইজের খাতা টেনে বের করলেন। তারপর তাকে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন, দেখ, পড়– এগুলো আমার কবিতা। তবে অন্য কাউকে বলবি না কিন্তু।
ছফা দেখে এতো দু’একটা কবিতা না পুরো কবিতার বন।
এতো কবিতা স্যার! আপনি লিখেছেন?
আমি লিখিনি তো কে লিখেছে, জ্বীন ভুতে?
না স্যার, বলছিলাম যে..!
নে, পড় এগুলো।
কিন্তু স্যার, এতোগুলো কবিতা এখুনি পড়ব!
এখনি তোকে কে পড়তে বলেছে গাধা! নিয়ে যা। পড়ে দেখ। ভুলচুক কিছু হলে, সে নিয়ে আমার সাথে আলোচনা কর। সে জন্যইতো তোকে এটা পড়তে দেয়া মূর্খ।
ছফা খাতা নিয়ে চুপচাপ হোস্টেলে তার ঘরে চলে গেল। প্রেমিকের গোপন চিঠির মতো সে পড়ে সেই কবিতা। পুরো খাতাটা পড়ে শেষ করতে তার এক সপ্তাহ লেগে গেল। কিন্তু স্যারের যেটা সমস্যা, সেটা স্যার যেমন নিজের কবিতার দুর্বলতার কথা জানেন, তেমনি ছফার কাছেও ধরা পড়ল। স্যার কবিতা লেখেন ভাল কিন্তু অন্ত্যমিল দিতে পারেন না। কিন্তু এই কথাটা সে স্যারের কাছে বলবে কী করে! সে পড়ল এক মহা সমস্যায়।
কবিতার খাতা পড়া শেষ করে ফিরিয়ে দিতে গেলে স্যার ছফাকে বললেন, কবিতা সব পড়লি?
জী স্যার।
পড়ে কি বুঝলি?
স্যার কবিতা ভাল, একটু বাড়িয়ে বলল ছফা– ভালো শুধু না, খুবই ভাল। তবে..।
তবে কি?
অংকের স্যার যে কড়া। একথা বলার পর তার যে কী হাল হবে কে জানে! কিন্তু তার পরও বলতে হবে। না বলে থাকতে পারছে না ছফা। তাই সসঙ্কোচে বলল, স্যার অন্ত্যমিলটা কম।
ঠিক বলেছিস বেটা। তুই যে এটা ধরতে পেরেছিস আর সাহস করে বলতে পেরেছিস তাতেই আমি খুশি। তুই যখন বুঝতেই পেরেছিস, তখন তুই আমার আর একটা কাজ করে দিবি বল?
কি কাজ স্যার?
কাউকে বলবি না কিন্তু।
জিভ কাটে ছফা, কী যে বলেন স্যার!
ঠিক আছে তুই আমার কবিতায় যেখানে যেখানে মিলের অভাব হয় সেখানে মিল করে দিবি। আজ থেকে তুই আমার কবিতার শিক্ষক।
ছফা এমন একটা কাজ পেয়ে তো মহা খুশি। সে সীমাহীন উৎসাহে স্যারের কবিতার অন্ত্যমিল ঠিক করে দেয়।
তারপর হলো এক মজার ঘটনা। এই ছাত্র এবং শিক্ষক মিলে প্রতিযোগিতা করে কবিতা লিখতে লাগল। স্যার একটা লিখলে ছফাকেও একটা লিখতে হয়। এ যেন গোপন প্রেমের অভিসার।
ছফার কাব্য প্রতিভার কথা এভাবে এক সময় তাদের স্কুলের সবচেয়ে গুরুগম্ভীর শিক্ষক মওলানা আবু সৈয়দের কানেও পৌঁছে যায়। চেহারায় তিনি একহারা ধরনের মানুষ। মাথায় কিস্তি টুপি এবং মুখে সামান্য দাড়ি ছাড়া তাঁর মধ্যে মাওলানা সুলভ বেশভূষার বিশেষ আড়ম্বর ছিল না। অথচ তিনি ছিলেন অসামান্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। স্কুলের হেড মাষ্টার মশাই যাঁকে ছফা মনে করত দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তিনিও তাঁকে সমীহ করে চলেন। সেই সৈয়দ স্যার একদিন স্কুল ছুটির পর ছফাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তোমাকে আমি টাইটেল দিলাম লিটল কায়কোবাদ। ইসলামি বিষয়ে কবিতা লিখবা’।
এই সৈয়দ স্যারের উৎসাহে একদিন ছফা একটা ইসলামি গানও লিখে ফেলল।
‘সেই তৌহিদের জোরে আল্লাহ
যার আমানত তোমার কাছে জমা
কাঙালেরে দেখাইও তোমার
মক্কা-মোয়াজ্জমা
স্বপ্নে দেখি ওই দূরে ওই মক্কারও প্রাণ [প্রান্তর]
সেখানে চড়াইতেন ছাগল আমার দ্বীনের পয়গম্বর।’
কবিতা লেখার এবং কবি হওয়ার এক তীব্র আকাঙ্খা সব সময় মনে মনে পোষণ করলেও কমিউনিজমের পুস্তিকা আর বিনোদবাবু ও সুধাংশুবাবুর প্রেরণায় ছফা ক্রমেই কৃষক সমিতির সাংগঠনিক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে লেখালেখির অভ্যেসটা ক্রমেই কমে আসতে থাকে। এক সময় কৃষকদের দুঃখ দুর্দশা তাকে এতটা ব্যথিত করে তোলে যে সে ভাবল, তার কাজ লেখালিখি না। কৃষক সমাজের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সামনে একটা মহা লড়াই আসছে, সে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করাই হবে জীবনের প্রধানতম ব্রত। (ক্রমশ)