গীতি ১৬.
তোমার সহগ হয়েই ঘুরি
তোমার সহগ হয়েই মরি
তোমার সঙ্গে সহমরণে
একই-সে চিতায় চড়ি ।।
তোমার দেহে যে রূপক-ভার
আমার শরীরে প্রভাব তার
অমায় কিংবা পূর্ণিমায়
জাগায় ঘোর জোয়ার।
তোমার সহগ হয়েই ঘুরি
তোমার সহগ হয়েই মরি
তোমার সঙ্গে সহমরণে
একই-সে চিতায় চড়ি ।।
আমার নিবিড় গভীরে স্বামী
তোমারই বিম্ব, অন্তর্যামী…
তোমারই দেখানো দিশায় আমি
তোমারই সঙ্গে চলি।
তোমার সহগ হয়েই ঘুরি
তোমার সহগ হয়েই মরি
তোমার সঙ্গে সহমরণে
একই-সে চিতায় চড়ি ।।
গীতি ১৭.
মর্মী জানে মর্মব্যথা, অন্যে জানে না
প্রবোধ যতই দাও না কেন, মন তো মানে না ।।
চাতকী চায় বৃষ্টির জল
ওই জলই তার প্রিয় তরল
ও-জল ছাড়া অন্য কিছু তাকে টানে না
মর্মী জানে মর্মব্যথা, অন্যে জানে না ।।
বইছে হাওয়া মধুক্ষরা
অধরা সব দিচ্ছে ধরা
চিত্তে তবু কোনো কিছুই শান্তি আনে না
মর্মী জানে মর্মব্যথা, অন্যে জানে না ।।
গীতি ১৮.
একটি দিকের দুয়ার থাকুক খোলা
যেইদিক থেকে হারানো মানুষ আসে
মাংস-কষার ঘ্রাণ পেয়ে পথভোলা
থামুক তোমার সরাইখানার পাশে ।।
আজও দেশে দেশে কত লোক অভিমানে
ঘর ছেড়ে একা কোথায় যে চলে যায়!
কী যাতনা বিষে… কিংবা কীসের টানে
লোকগুলো আহা ঘরছাড়া হয়ে যায়।
কীসের নেশায় ঘর ছেড়ে যায় কোন-সে রাহুগ্রাসে!
থামুক তোমার সরাইখানার পাশে ।।
এ-মধুদিবসে আকাশে বাতাসে জাগে
ঘর ছাড়বার একটানা প্ররোচনা।
হারিয়ে পড়তে নদী মাঠ বায়ু ডাকে
ঘরে ঘরে তাই গোপন উন্মাদনা।
ঘরছাড়া হায় ঘর ছেড়ে যায় মধুর সর্বনাশে।
ঘরছাড়া হায় ঘর ছেড়ে যায় গোধূলির অবকাশে।
থামুক তোমার সরাইখানার পাশে ।।
হারানো মানুষ সেই কত কাল ধ’রে
স্বজনের ভয়ে দেশ থেকে দেশে ঘোরে।
স্বজনেরা তবু নানান বাহানা ক’রে
বৃথাই খুঁজছে কালে ও কালান্তরে!
হারানো কেবলই হারাতেই থাকে, স্বজনেরা তল্লাশে…
থামুক তোমার সরাইখানার পাশে ।।
স্বজন যখন খোঁজে উত্তরাপথে
হারানো তখন দাক্ষিণাত্যে যায়।
স্বজন যখন নিরাশাদ্বীপের পথে
হারানো খুঁজছে নতুন এক অধ্যায়।
ধ্রুবতারা ওঠে, দিকদিশা ফোটে হারানো-র নীলাকাশে।
থামুক তোমার সরাইখানার পাশে ।।
গীতি ১৯.
সোনা যদি হয় এক নিরূপ আকার
অলংকার হয় তবে সোনার বিকার ।।
আকারে-বিকারে
অলংকারে অলংকারে
আকারে-বিকারে অলংকারে ভরা এ অনিত্য সংসার।
অলংকার হয় তবে সোনার বিকার ।।
ধাতু যদি হয় এক বিমূর্ত আকার
মারণকলগুলি হয় তবে ধাতুর বিকার।
আকারে-বিকারে
ধাতুর অহংকারে
আকারে-বিকারে ধাতু-অহংকারে মত্ত আজব সংসার
মারণকলগুলি হয় তবে ধাতুর বিকার
অলংকার হয় তবে সোনার বিকার ।।
গীতি ২০.
তুমিই যদি যাও ছেড়ে তো কোথায় বলো রই তবে
তুমি ছাড়া এই অনাথের আর কে আছে এই ভবে?
তোমার মনের মেঘরোদ্দুর
বুঝতে আমার অনেকটা দূর
তুমি আমায় ফেললে হায় এ কেমনতর কৈতবে!
তুমি ছাড়া এই অধীনের আর কে আছে এই ভবে?
নাই যে আমার ধনকাঞ্চন
জীবন শুধু হরণপূরণ
তুচ্ছ জ্ঞানে একটু দিয়ো তোমার অতুল বৈভবের।
তুমি ছাড়া এই অধীনের আর কে আছে এই ভবে?
ক্ষণেই সুরের মেলবন্ধন
ক্ষণেই আবার ছন্দপতন
তবু দীনহীনকে ফেলে দীননাথ-বা কই রবে?
তুমি ছাড়া এই অধীনের আর কে আছে এই ভবে?