প র্ব-১।। প র্ব-২।। প র্ব-৩।। পর্ব-৪
গীতি ২১.
কুল ও কানাই কোনোটাই নাই পড়েছি বিষম ঘোরে
বিকারের ঝোঁকে রেখা যায় বেঁকে বৃত্ত রচনা করে ।।
বিশাল বৃত্তে বিষাদচিত্তে ছোট্ট বৃত্তচাপ
জেগে আছে একা– দূর থেকে দেখা জ্যামিতিক অভিশাপ।
যমুনার কালো জল ও জ্যামিতি পাল্টায় দ্রুত স্বরে
বিকারের ঝোঁকে রেখা যায় বেঁকে বৃত্ত রচনা করে।।
কুলের মুখে তো দিয়ে চুনকালি, ছাড়লাম ঘর গৃহস্থালি
যমুনাতীরের কূট চোরাবালি ডুবিয়ে নিলো যে দিনদুপুরে
বিকারের ঝোঁকে রেখা যায় বেঁকে বৃত্ত রচনা করে।।
গীতি ২২.
সকল বয়স ফিরে যেতে চায় বালকবেলার ভোরে
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
শৈশবকালে অঝোর শ্রাবণে হয়েছিল সাক্ষাৎ
এতটা বয়স উজিয়ে এসেছে অবাক সে-ধারাপাত!
এসেছে যখন ঝরুক অঝোরে নামতা-পাঠের স্বরে
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে।।
এসেছে যখন ঝরুক অঝোরে দেশ ও দেশান্তরে
মধুরস-সুরে ধারাপাত হোক শ্রুতিকে বধির ক’রে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে।।
ধারাপাত হতো পাঠশালা আর পড়শির আঙিনায়
আজও দেশে দেশে পুরাতন ধারা নতুন এক ঘরানায়।
আজও দিকে দিকে পুরাতন মেঘে নতুন বৃষ্টি ঝরে
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
ধারাপাতদেরই সংখ্যারা ঝরে ফোঁটা-ফোঁটা অক্ষরে
সংখ্যাধারাই বিবেচিত হয় বৃষ্টি, মতান্তরে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
পড়শিরা হায় কোথায় যে যায়, কে যে আজ কোন ভুবনে!
এক বর্ষায় ভেসে ওঠে তারা, ঝাপসা অন্য শ্রাবণে।
মুখগুলি আহা ফুটে ওঠে সব একটু একটু ক’রে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
ইচ্ছামতন ধারাগান গেয়ে যাচ্ছে ইচ্ছামতী
বিচিত্র সুরে ফুলকি ঝরিয়ে সুরের সরস্বতী
সুরের আবেশ, মৃদু মৃদু রেশ, দিকে ও দিগন্তরে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
ডুবিয়ে জরুরি কথা ও কথিকা একটানা ধারাভাষ্যে
বৃষ্টি-বাতাসে ভীষণ বাহাস বইয়েছে লীলালাস্যে।
জল আর হাওয়া পরস্পরে মেতেছে মনান্তরে
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
ভেসে যায় কালো কাফ্রি মেঘেরা গগনবিহারী দাস
উপরে তাদের খাঁ-খাঁ বৈশাখ নিচে তো শ্রাবণ মাস।
বোশেখ-শ্রাবণ সব একাকার বরুণদেবের বরে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
শ্রবণ ভিজছে মনন ভিজছে ভিজছে দেহের দাহন
এরই নাম কহে ভিজে যাওয়া আর এরই নাম অবগাহন।
ভেজানোর ছলে তন-মন-প্রাণ সব এলোমেলো করে।
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
ছড়িয়ে পড়ছে এই ধারাপাত অতীতে, ভবিষ্যতে
শাসন করতে ভেজা দেহমন নতুন ধর্মমতে।
ছড়িয়ে পড়ছে দূরদূরান্তে ইথারে, বায়ুস্তরে
সব ইতিহাস লেখা হতে চায় শ্রাবণে নতুন ক’রে ।।
গীতি ২৪.
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে
জাল ফেলে নিশ্চুপ। এত ধৈর্যের রূপ
আহা কোথাও তো দেখি না রে ।।
এমন জাদুর জালে কত মাছ ও শৈবালে
ছুটে এসে দেয় আত্মাহুতি।
তুমি জাত-জলদাস, তবু এ কী পরিহাস
মাছে তব জাগে অনুভূতি!
ধীবরের বাঁকা মন, সদা ভাবছে কখন
নদী ভাসে মাছের জোয়ারে!
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে ।।
ধীবর ও জালের লীলা, তরলে ভাসায় শিলা
ঘাই মারে মৎস্যরতন
জাল নয়, কালাচাঁদ, মায়া লাগানোর ফাঁদ,
ত্রিভুবনে কী আছে অমন?
জালের মায়ায় ম’জে, ধীবরের খোঁজে-খোঁজে
ধেয়ে আসে আধেয়, আধারে।
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে ।।
একে তো ঘোলাটে পানি, তদুপরি কানাকানি,
জলে নাকি কামঠ, কুমির
তবুও ধীবর বলে, কখন নামব জলে
মনপ্রাণ উতলা, অধীর।
মন তবু মানে তার, প্রাণটা তো অনিবার
ছুটে যায় ইশারা আকারে
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে ।।
এমন নদীর বাঁকে তেঁতুলের গাছ থাকে
তেঁতুল পাকতে থাকে ক্রমে।
কুমির কামুক বটে ঠেলিয়া ডাঙায় ওঠে
পাকা-পাকা তেঁতুলের ভ্রমে।
ধীরে ধীরে বয় বায়ু, আরো ধীরে পরমায়ু
বেড়ে যায় মীন-সংসারে।
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে ।।
জল ও জালের খেলা সারাদিন সারাবেলা
মাছেরা মারছে খালি ঘাই
জাল সে তো নয়, চাঁদ, মায়া লাগানোর ফাঁদ,
ওরকম আমার তো নাই!
ওপারে মীনের দেশ, লীলার তো নাই শেষ,
আমি থাকি নদীর এপারে।
তুমি তো ধীবর-জাত, সারাদিন সারারাত
বসে থাকো নদীর কিনারে ।।
গীতি ২৫.
আয়ু দিলে, বায়ু দিলে, দিলে অক্সিজেন
দুগ্ধ দিলে, মধু দিলে, দিলে অহিফেন ।।
প্রাণ দিয়েছ, তাই তো সবাই প্রাণী বলে চেনে
প্রাণধারণের ভাণ্ড দিলে, খুঁজে বেছে এনে
সেই ভাণ্ড সদা পূর্ণ, সজল ও সফেন
আয়ু দিলে, বায়ু দিলে, দিলে অক্সিজেন ।।
এক ভাণ্ডেই দিলে দয়াল দুই ধরনের টান
একটা টান সাধু-স্বভাব, অন্যে চোরাটান।
উভটানে দিন কেটে যায় অলস মধুরেণ…
আয়ু দিলে, বায়ু দিলে, দিলে অক্সিজেন ।।
গীতি ২৬.
হয়তো এখন আকাশ নামছে ঝেঁপে
মেঘ ও মেঘনার ছেদরেখা বরাবরে
ঝাপসা একটি মানুষীর ছায়ারূপ
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।
দূর গ্রহে বসে ভাবছি তোমার কথা
এতটা দূরে যে, ভাবাও যায় না ভালো
ভাবনারা হিম-নিঃসীম ভ্যাকুয়ামে
শোধনে-শোষণে হয়ে যায় অগোছালো।
ভাবনারা গিয়ে হারায় গ্রহান্তরে
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।
অথচ এখানে তোমারই শাসন চালু
তোমার নামেই বায়ু হয়ে আমি বই
তোমারই আবেশে বিদ্যুৎ জাগে মেঘে
তোমার রূপেই ময়ূর ফুটেছে ওই।
তোমার সুরেই সুর জাগে চরাচরে।
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।
হয়তো এখন আকাশ নামছে ঝেঁপে
মেঘ ও মেঘনার ছেদরেখা বরাবরে
ঝাপসা একটি মানুষীর ছায়ারূপ
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।
মধুকর আজ ভুলে গিয়ে মাধুকরী
তব রূপ জপে কায়মনোগুঞ্জনে।
মনন করছে তোমারই বিম্বখানি
ধ্যানে ও শীলনে, স্মরণে, বিস্মরণে।
মনন করছে যাপনের অবসরে।
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।
গন্ধকের এই গন্ধধারিণী গ্রহে
তটস্থ এক বিকল জীবের মনে
ক্ষার, নুন, চুন, অ্যাসিড-বাষ্প ফুঁড়ে
চমকিয়ে যাও থেকে-থেকে, ক্ষণে-ক্ষণে।
উদ্ভাস দাও কিছুক্ষণ পরে পরে।
ঝিলিক দিয়েই মিলাচ্ছে অগোচরে ।।