দোলনচাঁপাচক্রবর্তী
Salamanders on the North Border Road
Two salamanders are crossing the North
Border Road. Sluggish and indifferent, they
Creep under the borderline barbed wire. I stop
The patrol. Above the ravines and fields,
Silence suddenly drops for a moment: we watch
Their orange backs, a poison colour, their tails
Striped black, and their evil aura darkens
The morning light. I feel the danger,
And give an order, but even helmets and
Bullet-proof vests can’t help when your terrain
abruptly explodes: in the orange glow
I can see the creatures: evasive, lazy, innocent,
As if they don’t carry on their backs
Marks of fear and mortal hints.
(translated from the Hebrew by Alisha Porat and Ward Kelle)
যুদ্ধের কবিতা পড়ছিলাম। ভাষা নির্বিশেষে পাখির উপস্থিতি যেন অনিবার্য। যুদ্ধের বধ্যভূমিতে পাখি ওড়ে কেন! বারুদের প্রাণঘাতী নিশানা, হতাহতের আর্তনাদ, নির্বিচার ধ্বংসের কোলাহল – ওদের অচেনা লাগে না ? নাকি ওরাও বংশপরম্পরায় জেনে গেছে, মানুষের আসলেই কোন আশ্রয় নেই, ঠিকানা নেই, ভাল থাকা নেই, লালনপালন নেই, বাঁচিয়ে রাখা নেই; মানুষের শুধু মৃত্যু আছে, দারিদ্র আছে, তাণ্ডব আছে, শোষণ আছে। তবু কালের প্রলম্বিত উপচ্ছায়ার মত ওরা মানুষের কাছে কাছে থাকে। ওদের ওই পেলব গভীরতায় এরোপ্লেন ওড়ে না। শুধু তার ভাঙা ডানার শব্দ সমস্ত স্তব্ধতাকে ছিঁড়ে বেজে ওঠে। ধাতব, যান্ত্রিক একঘেয়ে শব্দ বুলেট-বিধ্বস্ত গাছের গায়ে লেগে যায়। এই অনুরণন পাখিদের সামান্য থামায়। মৃদু কম্পন, ছুঁয়ে দেয় সমূহ গতিকে। নিচের দিকে তাকালে নিজের ছায়া দেখে ওরা। শুকনো ছায়া। যে বিবিধ জলরেখা থেকে এই অনুগমন উঠে এল, তাতে জলের কোন স্পর্শ রইল না।
যুদ্ধের দৃশ্য এবং অনুভূতিগুলো আমার তো অচেনা নয়। কেননা, আমার দেশও যুদ্ধবিধ্বস্ত। কিন্তু এত বছর ধরে যুদ্ধ সামগ্রিক ভাবে গ্রাস করেছে যে, আমাদের প্রাত্যহিক অস্তিত্বের ভিতর তার রক্তাক্ত, উপড়ে নেয়া কলিজার ছায়া পড়েনা। ভারতবর্ষ এক যুদ্ধবিধ্বস্ত উপমহাদেশ। এই বাক্যের ভার অনেক। এবং আমি তা বইতে অক্ষম। যুদ্ধের আগ্রাসী ঔপনিবেশিকতা থেকে আমি অনেক দূরে। যেন এক ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটির জগতে বিচরণ ও অবস্থান আমার। সামান্য আবছা এক কাচের আড়াল থেকে আমার অস্তিত্ব, বাইরের জগতের দোলাচল ও রক্তাক্ত প্রবহমানতা দেখে। কিন্তু অনুভব করেনা। কারণ ওই কাচের ভিতরে লাল রঙের প্রবেশ নিষেধ। কেননা, ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসন এখনো আমাদের, সাধারণ নাগরিকদের, কাশ্মীর, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম – এই সব অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা নিয়ে ভাবিত হওয়ার সুযোগ দেয়নি। আমরা এখনো ভাবি যে ওখানে কোনদিন যুদ্ধ থেমে যাবে। এবং আলোচনা করি অরবিন্দ্ কেজরিওয়ালের নতুন দলের নাম নিয়ে। তার কাজকর্মে আমাদের আশা-প্রত্যাশার তুলাদণ্ড দুলতে থাকার মধ্যেই হঠাৎ করে এফডিআই-এর উপর বিলটি পাশ হয়ে যায়। এর মধ্যে আকস্মিকতা ততখানিও নেই। বরং, দক্ষ যাদুকরের মত প্রশাসন আমাদের চোখের সামনেই হাতসাফাই করে। আমরা ক্ষুব্ধ হই। মনে পড়ে, মিনেসোটায় ওয়ালমার্ট খোলার পর সেখানকার ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প ধূলিসাৎ হয়েছিল। এবার আমাদের পালা। আমরা বিদেশি বিনিয়োগের সামনে ‘প্রবেশ নিষেধ’ বোর্ড লাগাতে পারি নি।
আমার স্কুলের কাছেই স্থায়ী সেনা ছাউনি ছিল। তার পাঁচিলের গায়ে ‘প্রবেশ নিষেধ’ কথাটা লেখা থাকত। রোজ যাতায়াতের সময় কালো কালিতে লেখা এই লাইনটার দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, কখনো পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়া যায় কীনা, দেখব। কী এমন আছে ওই পাশে। তখনও যুদ্ধের কবিতা পড়িনি। ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন জানি না। তবে তার কয়েক বছরের মধ্যেই প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ এল। প্রতিদিন সেই সংঘর্ষের বিবরণ পড়তাম। এরপরই প্রথম যুদ্ধের কবিতা পড়লাম। রাত্রে সৈন্য বোঝাই ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। সৈন্যরা তাদের গন্তব্য জানেনা। শুধু জানে যে আর ফেরা হবেনা কখনো। ইরাকের যুদ্ধের সময়েও আমি অ্যামেরিকায়। ওই মায়ের কথা মনে পড়ে, যিনি টেক্সাসে, জর্জ বুশের র্যাঞ্চের সামনে টানা একমাস ধরে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতেন – যুদ্ধের প্রতিবাদ জানানোর জন্য। ওনার ছেলেকে ইরাকে পাঠানো হয়েছিল। উনি চেয়েছিলেন, ছেলেকে ফিরিয়ে নেয়া হোক। অ্যামেরিকার সৈন্যবাহিনী ফিরিয়ে নেয়া হোক। টানা এক মাস ধরে ওনাকে সমর্থন জানিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অজস্র মানুষ জড়ো হয়েছিল ওখানে। এসেছিল সংবাদমাধ্যমও। কিন্তু বুশ দেখা করেননি। সারা দেশের যুদ্ধ-বিরোধী মানুষের প্রতিবাদ আছড়ে পড়েছিল। সৈন্যবাহিনী ফেরৎ আনা হয়নি। শুধু ওহায়ো স্টেটেই তখন পর্যন্ত মৃত যুবকের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবু, এই সংখ্যা আরো বেড়েই গিয়েছে ক্রমশ। যে মা সন্তানকে অকারণ নিষ্ঠুর নিধনযজ্ঞে উৎসাহিত করেনা, সেই মায়ের যন্ত্রণারও কী রাষ্ট্রধর্মজাতভাষা বিভাজন থাকে ?
সেদিন কবিবন্ধু ফয়সল আদনান লিখলেন, ‘স্মৃতি থেকে কাগজের এরোপ্লেন – উড়ে যাও তুমি এবার।’ খুব সাধারণ কিছু না কথাটা। আমি স্মৃতি থেকে একটা শব্দও ওড়াতে পারি না। হে আদিমাতা ঈভ, আমি এত সহজে রানওয়ে হতে পারব না। কেননা আমার সামনে পিছনে কখনো কোন স্বর্ণচাঁপা অধ্যুষিত বাগান পেরিয়ে আসিনি আমি। কেইন আর আবেলের মধ্যে থেকে একজনকে শুধু অহরহ বেছে নিতে হচ্ছে আমাকে। এই চয়ন এত সহজ ছিল না। আজকে যখন ফুলহীন সমস্ত বাগানও লুকানো নদীর মত বৃক্ষপ্রেমে বিলীনমনা, তখনও কী আমার পা ফেলা অনেক সহজ হয়ে ওঠে?
বরং মনে হয় যেন এক দুঃস্বপ্নের মহড়া দিয়ে চলেছি সারা জীবন। নাচের উড়ন্ত মুদ্রারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে আমার চারপাশে। সেই টান লাগে আমার ধমনীতে। সরে যেতে চেয়ে আমি ছিঁড়ে যাই। দিনের রঙবদল দেখিনা, রাতকে নীল ও রূপালী ভেবে বিরহ ভোগ করি। আমার টুকরোগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমায় ছুঁয়ে থাকে। সেই সব স্থান যেখানে আমি গেছি, ও যেখানে কখনো যাইনি – সেই সবখানে আমার পায়ের ছাপ পড়ে। তার ওপর রোদ ওঠে। শরৎকালের। আমি আস্তে আস্তে সকাল হয়ে যাই। সকালের গায়ে তোমার নিদারুণ ব্যস্ততা মেলে দাও তুমি। মন্ট্রিয়ল গির্জার দরজা খুলে গেছে। আলো জমছে ওক কাঠের নকশায়। অথচ ভিতরে, হাজার হাজার মোমবাতি, কাঁপিয়ে দিচ্ছে ঈশ্বরের পায়ের পাতা।
আট বছর আগে গাজা স্ট্রিপে অনেকগুলি প্যালেস্তিনীয় বাড়ির ভিডিও দেখেছিলাম। প্রত্যেকটা বাড়ির ছাত পর্যন্ত গোলাপবাগান উঠে গেছে দেয়াল বেয়ে। দেয়ালের সামনের রাস্তায় ধ্বংসস্তূপ, ভাঙা শেল। সুসজ্জিত সৈনিক। বারুদের পোড়া দাগে বিধ্বস্ত অন্যান্য অনেক দালানকোঠা। শুধু এই গোলাপবাগের বাড়িগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ অনেক কম। তাদের সৌন্দর্য বিবেচনা করেই বাড়িগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া হয়নি, বলে রিপোর্টার জানিয়েছিলেন। ওই সমস্ত বাড়ির বাসিন্দারা অনেকেই মৃত, বাকিরা পলাতক। ইহুদীরা দখল নিয়েছে, তারাই গোলাপের শিকড়কে নরম, মনোরম রাখে। রক্ত দেয়, গলিত হাড়-মাংস দেয় – জৈব সারের অধিকারে শোষণ করে নেয় আশিয়ানা। এবার সেখানে মানুষ ফিরবে। কিন্তু আদতে কোথায় ফিরবে ! ফেরা যায়না কোথাও, শুধু যাওয়া যায়। গন্তব্য থেকে গন্তব্যে। এই গোলাপের কাছে ঋণ ছিল আমাদের। রক্তের ঋণ– অগ্রজ এবং আত্মজের। শিকড় স্থাপন ও প্রতিস্থাপনের ঋণ। সেই ঋণ শোধ করতে এসেছি আমরা। অথচ, আমরা কখনো ঈগল দেখি নি। তার আত্মাকে যারা পুজো করে, সেইসব সৌভাগ্যবান মানুষদেরও কখনো দেখি নি। আমাদের এখানে যুদ্ধ এখনো টাটকা হয়ে লেগে থাকে, নিহত দৃষ্টির কিশোর-কিশোরী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার অসম পংক্তির ভাঁজে ; বিধ্বস্ত জলের গেলাসে। পোড়া গন্ধের দুপুর ঘোলাটে হয়ে এলে বুঝি, আজ জীবিত আত্মাদের সমাবেশ। এইসব আত্মারা আমাদের জন্য যুদ্ধের গাঁথুনী তৈরি করেছিল। সেদিন কারুর বাসায় চুলহা জ্বলে না। অরন্ধনের মালমশলা বয়ে নিয়ে যায় শ্রান্ত উপত্যকা।
খোলা উঠোন পেরিয়ে কাঁটাতার। বাগান নয়, পুকুর নয়, অগোছালো জঙ্গল নয়। আদিগন্ত প্রান্তর। রুক্ষ জমি। রোদ বাড়লে বালি ওড়ে। ভারি ধুলো নিচে, মাটির ওপর পড়ে থাকে। সেখানে অজস্র শাল আর ইউক্যালিপটাস। মাটির সাত-আট হাত উপরে যেখানে মোটা ডাল দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে আরো ওপরদিকে, সেই পর্যন্ত চুন লেপে দেয়া। এতে পিঁপড়ে হবে না। আরাম পাবে গাছেরা। ওদের কারোরই বয়স বেশি নয়। কিন্তু, পাতাগুলো এর মধ্যেই পূর্ণ বয়স্ক হয়ে উঠেছে। এখানকার মানুষেরাও এই গাছেদের মত সুঠাম, সতেজ। পুরু শিকড় ছড়িয়ে পড়েছে গভীরে।
উত্তর, পশ্চিম ভারতের গ্রাম এবং মফস্বলেও এমন ছায়াশরীর দেখেছি অনেক। পশ্চিমঘাটের জঙ্গল হালকা হয়ে যেখানে অল্প কয়েকটি মকাই অথবা ধানক্ষেত পাশাপাশি; অঘ্রাণের শেষে ধানের ক্ষেত শূন্য পড়ে আছে। দুটি আলের শেষপ্রান্তে এক সারি কলাগাছ। গাঁয়ে ঢোকার কালো রাস্তাটা ঠেকে গেছে বটের থানে। আশেপাশে আরো চার-পাঁচটি সুপ্রাচীন গাছ। গাঁয়ের সীমানা শুরু হতে হতে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ওইখানে এসে। ভোরবেলা ওদিক থেকে মোষের ঝুন্ড নদীর দিকে হেঁটে যায়। কুয়াশা গিলে নেয়া ধুলোর ওম জড়িয়ে শীত কেটে যায় মেষপালকের। কেননা অপর কোন অবলম্বন নেই।
আর যারা দুধের বিশাল পাতিলা নিয়ে চার-পাঁচটি স্টেশন পরে জাংশানে যাবে, এসে বসে প্ল্যাটফর্মে। মাধেপুরা, সাহারসায় ফুলের বাজারে ফুলও যাবে। ফুলওয়ালীদের বিশাল ঝাঁকায় শুধু গাঁদা আর গোলাপ। মাটির খুরি থেকে ধোঁয়া ওঠা শুরু হতে হতে চা ঠান্ডা হয়ে যায়। রাজনন্দগাঁও, বেলপাহাড়, বিলাসপুর, কাটিহার, মান্সী – ছায়াদের রক্তঘামের শিরাউপশিরা অতিক্রম করে এইসব স্টেশনের নামে অল্প শিশির লেগে থাকে। যতদিন না এখানে ভারতীয় বায়ুসেনা, বা সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে; মাওবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্যারা-মিলিটারি কম্যান্ডো ফোর্সের অস্থায়ী শিবির বসছে, বাঁধ তৈরি হচ্ছে। ততদিন এই শিশির, গ্রামের বৌটি’র ঘোমটাতেও লাগবে অল্প। তারপর সে জমিহারা, বাস্তুহারা অন্যত্র যাবে।
মজদুরি করবে কোথাও। চোখে পড়বে কোন জোতদার, ঠিকাদারের। ঘর চালানোর জন্য, ছেলের পড়হাইয়ের জন্য, মেয়ের শাদীর দহেজ জড়ো করার জন্য মেনে নেবে সেটুকুও। অথবা ঢুকে যাবে জঙ্গলে, কাঁধে অবহেলায় ঝুলবে রাইফেল। যতদিন গ্রেপ্তার এড়িয়ে এই ভাবে সম্ভব – বিপ্লব করবে ওরা। ছড়িয়ে পড়বে ‘লাল করিডোর’ পার হয়ে আরো প্রান্তিকতায়। তারপর কোন সুচিত্রা’কে বিশ্বাস করে কিষেণজীর মত ঝাঁঝরা হয়ে যাবে গরম বুলেটে। সুচিত্রাও আরামে থাকবেনা। সংবাদপত্রের ক্যাপশন নিউজ থেকে জেলের ব্লাইন্ড সেলের সদস্য হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে সেও। হয়ত জেলেই জন্ম দেবে সন্তানের। যে সন্তান কোন দয়ালু ওয়ার্ডেনের হাত ধরে স্বাধীনতা দিবসের ঝকঝকে উৎসব দেখতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় কেঁদে ফেলবে। দাবি জানাবে ওয়ার্ডেনের কাছে, ‘আমাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেও না, ওই অন্ধকার ঘরে ফিরে যেতে চাইনা আমি। আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে চল।’
মানবাধিকার কর্মীদের মিটিং – মিছিল, পনেরো হাজার লোকের সই করা পিটিশন লাল করিডোরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই সিলসিলা থামাতে পারে নি। মুগ, কুলথী, অড়হর, রাই, তেজপাতার সুবাস হারিয়ে যাচ্ছে ছায়াদের হাতের তালু থেকে।
অর্ধেক জীবন তুমি পার করে দিলে;– তারপর
মৃত্যু এসে অতীব জরুরি কিছু মাপজোক নিয়েছে তোমার।
এঘটনা বেমালুম কবে ভুলে গেছি! জীবন চলেছে তার
নিজের নিয়মে।
তবুও নিরবে কেউ সে-পোশাক করছে সেলাই।
(প্রকৃত কবিতা – টমাস ট্রান্সটোমার / বাংলা অনুবাদ: জু্য়েল মাজহার)
ধানে ভর্তি গোলার চূড়ায় রোদ নামছে। এই রোদে উঠোন ভরে উঠলেই সূর্য উপাসকদের উৎসব শুরু হবে। আমাদের গ্রামের তালাওয়ের সামনেই ছঠিয়াস্থান। প্রত্যেক পরিবারের নামে ওখানে ঘাট বানানো হয়েছে। সূর্য তর্পণ হবে তিন দিন ভোরে। লাল শালু, জরি দিয়ে মোড়ানো লাল সুতোর পাতলা হার, বাতাবি লেবু, গাছ সমেত কাঁচা হলুদের গোছা, খই-বাতাসা, আর হাতে তৈরি চালের গুঁড়োর নাড়ু, সুজির বিস্কুট। ছট পূজার নৈবেদ্য। কলকাতা, পাটনা, বেনারসে গঙ্গার ঘাট ভরে যাবে সূর্য-তর্পণে। ওরা বলে, গঙ্গাজী। রঙীন কাগজের শিকল দিয়ে সাজানো ছঠিয়াস্থানের আশেপাশে কিছু পাহাড়ি ময়নাও দেখলাম এবার।
ঈশ্বরের মুঠির ভিতরে এত পাখি কেন! অজস্র পাখি শুধু উড়ে আসে জল ভেদ করে। অথচ অচেনা বিশাল পাখিটি এক সমুদ্র দূরত্ব বহন করে। আজীবন। একা।