রাত্রির ভিতরে যে চিৎকার যেমন আমরা শুনতে পাই সে ছিলো কারো মৃত্যুর পরোয়ানা
একমাত্র অন্ধকার নিরাপত্তা হয়ে সতর্ক করে আমাদের
এবং বলে এই চিৎকার আর শেষ আর্তধ্বনি যা মানুষের, বলে দেয় পৃথিবীতে খুন আরো বাড়লো
তারপর যদি আগুনের লেলিহান ভেদ করে জানালার কাচ এবং এক হিংস্র আলো ছিটকে পড়ে
তখন ঘরের ইতর প্রাণীগুলো কাঁপে, চুপটি করে লুকোয় এইখানে সেইখানে চিপায়-চুপায়
আমরা তখন আরো বেশী অন্ধকার চাই তখন অন্ধকার আমাদের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে
গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলো, আলোক আঁধারে ফারাক করোনা
বলেই একটা নিশাচর উড়লো; আঁধারে সে দেখে ভালো, আর কয়েকটা বিড়াল
ওপাড়া থেকে এপাড়ায় ছুটলো, তিড়িং-বিড়িং– তাদেরও মহামৌজ জাঁদরেল অতিকায়
আর কুকুরগুলো শাসালো এই বলে যে তারা সব দেখছে তারা সব বোঝে
মহান হওয়া কোন ব্যাপারই নয় গণতন্ত্র থাকলে সে এক চমৎকার বিষয়
নিষ্কৃয়তা ব্যক্তি-স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে ! শপথ পাঠে কী আসে যায়!
কিন্তু, আমরাতো দেখছি এমনি চিরকাল, আর কে তা অস্বীকার করবে, বলবে: না !
আর আমি গলে যেতে থাকবো বুটের তলার ১১হাজার ভোল্ট তাপে বিছানা সমেত।
২৫.০৫.১৪.
০২.
মুখের আদলে তুমি বুঝতে পারবেনা মানুষ আর পশুর ব্যাবধান
সব মুখ মানুষের মতো দাঁত জিহ্বা স্বাধ বলবার তাড়ণা
মুখের উপরে নাক চোখ ভ্রু দেখবার বাসনা
তারপর একখানা চাতাল কারো চাওড়া সংকুচিত কারোবা চকচকে আরো
ভাঁজে খাঁজে লুকানো কুঁচকানো যা আমরা দেখি যেরকম দেখা যায়–
ভয়ংকর সব মুখ, ওই সব মুখে কী করে লুকায় দা’ভিঞ্চির হাতের পেনসিল, না-কী থেমে যায়
একটা মুখ কতোবার খুঁজে তবে পেয়েছিল শিল্পী বেশ্যার দালাল: সেই মুখ বসে আছে ‘লাষ্ট সাফারে’
এখন এসব খুঁজতে হবে কেনো? গণতন্ত্রের যুগে বাস করছি আমরা! যখন
মহান বলে খ্যাত শীতাতপের ঘরে মানুষের নীতিশাস্ত্র লেখে ওই সব মুখ
তখন পৃথিবীর তাবৎ শিল্পীরা উঁকি দিয়ে দেখে আর ভাবে কী সব মিস করলাম
কতো উপযুক্ত মুখ ছিলো ভুভাগে ! আহা
সেই সব শুনে লোরকা উঠে আসে তরপর মিন্টু রোডে পানির ট্যাংকিতে লাশ হয়ে ভাসে
আর আনন্দ কবি লেখে ‘অনেক গন্ধর্ব, নাগ, কুকুর, কিন্নর, পঙ্গপাল বহুবিধ জন্তুর কপাল’
দেখে নাও চিনে নাও বঙ্গের অঙ্গের স্বরূপ বলে হেসে ফ্রাঙ্কো, লেলিয়ে দেয় ৫ম বাহিনী–
কবিরা তবু ফেরেনি রক্ত দিয়ে গেছে মাদ্রিদ উদ্ধারে।
২৫.০৫.১৪.
০৩.
বোঝা যায় কি হচ্ছে পর্দার ওপাশে–
এখন পুতুলগুলো ছাপছুতো হবে, নানা পোষাকে সাজানো হবে নানা রকম চেহারায়
তারপর যার যার পাঠ মুখস্ত করানো হবে বিশেষ প্রশিক্ষণে
কোন রশি লম্বা আর কোনটা লাগবে ছোট মসৃন চিক্কন আলোর সাথে খাপ খাইয়ে
কে বাঁজাবে বাশি কে পিটাবে ড্রাম কারা পপ গাইবে আর কারা
দর্শকদের হয়ে নিজেরাই হাততালি দেবে মুহুর্মুহু
তার একটা নিখুঁত মহড়া, বোঝা যায়–
একটা কোকিল ডাকছে অসময় গেরোস্তের তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা
আর তারপর আশ-পাশের বৃক্ষগুলো পেরিয়ে চলে গেলো পূর্বে একটা শান্তনা আনবার জন্যে
আর কাকগুলো চিৎকার করছে চিৎকার করছে, ওরা তেমন ডুবসাঁতারে অভ্যস্ত নয়
কিংবা এমনও হতে পারে ওই এক স্বভাব কেবল কা কা
কারিগররা পর্দার আড়ালে পুতুল সাজায় আর বলে আরো কিছু নতুন পুতুল চাই
পুরানোকে রিপ্লেস করতে– সেতো সহজ নয়, একেক জনের একেক মত
আর যারা পারঙ্গম তারা বলছে ড্রাম বাজাও ড্রামের শব্দে জমে যাবে দর্শক
তখন হ্যাজাকের আলো চাড়িয়ে দিলে কিছুই বুঝবেনা তারা– খেলাটা কে খেলছে
আর ফাঁকের সময়টুকু চুলচেরা হিসেবের, কোন পুতুল উঠবে কোনাটা এবারে আর না
এখনও মূল-প্রশিক্ষক আসেনি তবে তারা আসবে আপাতত ড্রামবাজুক।
২৬.০৫.১৪.
০৪.
এটা কোনো বিষয় ছিলনা তবু তাই হয়ে গেলো
জীবনতো আর স্থবির কোনো জলাশয় নয় যে কেবল পাক জমে জমে শুকোবে
সে মারা গিয়েছিলো কবে মনে নেই, তবে মারা যে গিয়েছে সকলে তা’ জানে
আমারো বিশ্বাস তাই, কারণ মানুষ মরলে কোন আলোড়ন থাকেনা
মধ্যাহ্ন পেরিয়ে সূর্য কেবল নুয়ে পড়ছে ডোবায়
কাঠাল বিথিরা নিশ্চুপ
আর সময়টা সেলাই করছে দুটো কাঠঠোকরা
একটা মৌমাছি উড়তে উড়তে চলে গেলো, ফুলে তার অনিহা–
একটা বিড়াল বাঘের মতো লেজ বাঁকিয়ে বসে আছে
আর কটা টিকটিকি এপাশে ওপাশে দৌড়াচ্ছে সাদা পেটে
পোকাটা নড়ছে কিনা তাই তাদের অবলোকন
সময়টা দুলছে পেন্ডুলামের মতো
তখন যারা ঘরে ঢুকলো তারা নাকি মানুষের নিরাপত্তা দেয়
এবং রাষ্ট্রের মহত্ম প্রসারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,বন্ধু
কী জানি, তারা তাকে বাঁধলো পিঠমোড়া করে এবং কিল-চড়-লাথি মেরে মেরে
নিয়ে গেলো এই বলে যে সে ভয়ানক ষড়যন্ত্রকারী বসে বসে ঘোট পাকায়
সে বলছিলো, তেমন কোনো কাণ্ডই সে করে নি
সে কেবল মানুষকে ভালোবাসে, ভালোবাসে মানবতা
এবং তার প্রতি যে নিয়মটা তারা চালিয়ে দিলো
সে তারও প্রতিবাদ করছিলো
সেটা আরো বেশী ভয়ংকর হয়ে গেলো–
তারপরতো বিষয়টা সবাই জানে সে নাকি মরে গেছে ক্রসফায়ারে
এবং সবাই তাকে ভুলেও গেছে–
আর আমার সংগে তার যখন দেখা তখন সে একদম অন্যমানুষ
শাদা ধবধবে পোষাক, চুপচাপ বসে আছে একটা অচিন গাছের তলে
ঘাসগুলো কেমন সাজানো আর সজনে গাছে ক’টা চমৎকার তনতনে সজনে
যেরকম আমরা দেখি যেরকম সেও দেখেছিলো
সে বললো কী রকম এক যায়গা দেখো এখানে শীতবর্ষাবসন্ত কোনোটাই নেই
আর একটা নদী, নদী ছাড়া কী মানুষ বাঁচে! তোমরা! তোমাদের নদীগুলো আছেতো!
আর আয়েশা সে যে কোথায় তাও বুঝতে পারিনা এককাপ চা যদি হতো–
আমি কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু চি-চি, আমার ঘুম টুটে গেলো।