সিরিয়ার বিতর্কিত কবি আদুনিস

মলয় রায়চৌধুরী

 

আদুনিস (উচ্চারন: আহ-দুহ-নিইস), পিতৃদত্ত নাম আলি আহমেদ সাইদ অ্যাসবের, আরবি ভাষার একজন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় কবি ও প্রাবন্ধিক। অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামি দেশগুলোয় তাঁর রূঢ় সমালোচকের সংখ্যা কম নয়। তাঁর জন্ম ১৯৩০ সালের পয়লা জানুয়ারি পার্বত্য সিরিয়ার কাসাবিন গ্রামের শিয়া আউলিয়া পরিবারে। তাঁর বাবা, যিনি ছিলেন শিক্ষক ও ইমাম, আদুনিসকে বাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা দিতেন এবং অবসর সময়ে তাঁকে নিজেদের ক্ষেতে নিয়ে যেতেন চাষের কাজ করার জন্য। স্কলারশিপ পেয়ে আদুনিস ১৯৪৪ সালে তার্তুসের ফরাসি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে স্নাতক হন। কলেজে পড়ার সময়েই তিনি কবিতা লেখা আরম্ভ করেন, কিন্তু তাঁর কবিতা তখনকার আরবি কবিতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবার কারণে কোনো পত্রিকা সেগুলো প্রকাশ করতে চায়নি। তাঁর ধারণা হয় যে তাঁর পুরাতনপন্হী নামের কারণে তাঁর কবিতাগুলো সম্পাদকদের স্বীকৃতি পাচ্ছে না। সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে তিনি গ্রিক পুরাণের চরিত্র অ্যাডোনিস (আরবি ভাষায় আদুনিস) থেকে নিজের ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। আদোনিস নামে স্বাক্ষরিত তাঁর কবিতা সম্পাদকদের স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০ সালে তিনি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দালিয়া’ প্রকাশ করেন। তারপর তিনি দামাসকাসের সিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও দর্শন পড়েন। সৈন্যবাহিনীতে দুবছরের বাধ্যতামূলক জওয়ানের কাজে যোগ দিতে হয় তাঁকে কলেজ থেকে বেরিয়ে। এই সময় থেকে তিনি সিরিয়ার ‘আল-হিজব আস-সুন আল-কৌমি আল-ইজতিমা’ দলের সেকুলার রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন, যে-কারণে সেনার চাকরি ছাড়ার পর রাষ্ট্রের গুপ্তচর ও পুলিশের দ্বারা নিগৃহিত হবার জালে আটকে পড়েন। তাঁর ছয় মাসের কারাদন্ড হয়। এই রাজনৈতিক দলটি ২০০৫ সালে স্বীকৃতি পেয়েছিল। আরব মধ্যপ্রাচ্যকে আদুনিস মনে করেন যে তা একক সংস্কৃতিসম্পন্ন হলেও, নানা ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে মিশ্রিত।

স্বৈরতন্ত্রী ও মৌলবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গোঁড়া সিরিয় রাষ্ট্রে মনের মতন কবিতা লেখা অসম্ভব হয়ে ওঠায়, ১৯৫৬ সালে স্ত্রী কালিদা সাইদের সঙ্গে সিরিয়া ত্যাগ করে লেবানন চলে যান আদুনিস। সমমনোভাবাপন্ন রাজনীতি ও সাহিত্যবোধের কারণে তাঁরা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কালিদা সাইদ আরবি ভাষার একজন প্রখ্যাত সমালোচক। তাঁরা লেবাননের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। বেইরুটে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় আরবি কবি ইউসুফ আল-খাল( ১৯১৭-১৯৮৭ )-এর সঙ্গে, এবং তারা দুজনে ‘শায়র’ নামে আরবি কবিতার একটি আধুনিকতাবাদী পত্রিকার সূত্রপাত করেন। প্রকাশ মাত্রেই প্রথম সংখ্যাটি শোরগোল ফেলে দ্যায়, কবিতাগুলির পরতে লোকানো রাজনীতি, যৌনতা ও আধুনিকতাবাদী পরীক্ষানিরীক্ষার কারণে ; অধিকাংশ আরব দেশে সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। সিরিয় সরকার গোপনে কবিতাগোষ্ঠীতে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দেবার পর তা আদুনিস জানতে পারলে ১৯৬৪ সালে তিনি পত্রিকাটি তুলে দিয়ে গোষ্ঠী ভেঙে দ্যান। ইউসুফ আল-খাল পরে কবিতা পত্রিকাটি আবার শুরু করলেও আদুনিস তাতে যোগ দ্যাননি। আদুনিসের মতে সমসাময়িক আরব কবিতা আক্রান্ত হয়েছে শ্লথতায়, একঘেয়েমিতে, চর্বিতচর্বণে এবং তা মূলত রচিত হয় ধার্মিক ও রাজনৈতিক স্হিতাবস্হার গুণগান করার জন্য।

১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্হ ‘আঘানি মিহয়ার আল-দামাসকি’ যা প্রকাশমাত্রই সাড়া ফেলে আরবি ভাষার সাহিত্যিক মহলে । প্রথাগত আরবি কবিতা থেকে আদুনিস-এর কবিতাগুলো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। কবিতাগুলোয় তিনি অতীতকে করে তুলেছেন দ্রোহের বনেদ। নিজের সাহিত্যিক মতামত ও লেখার মঞ্চ হিসাবে ১৯৬৮ সালে আদুনিস স্হাপনা করেন ‘মাওয়াকিফ’ নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা। এক বছরেই ‘মাওয়াকিফ’ হয়ে ওঠে নতুন আরবি সাহিত্যিকদের আত্মপ্রকাশের মঞ্চ। যখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল যে তিনি ইউরোপের সাহিত্য দ্বারা বড় বেশি প্রভাবিত, আদুনিস বললেন যে, “পশ্চিম হল প্রাচ্যের আরেকটি নাম”। তিনি বলেছেন যে আরবিভাষার কবিদের দুটি মাত্রা আছে: ‘আমি’ এবং ‘অপর’। ‘অপর’ হল তার পাশ্চাত্য পার্সোনা। সে দু’টি নির্বাসনের মাঝে বেঁচে থাকে; একটি অন্তরজগতের, অন্যটি বহির্জগতের। বহির্জগতের নির্বাসনের একাধিক আঙ্গিক আছে যার মধ্যে প্রধান হল সেনসরশিপ, বিতাড়ন, জেল-জরিমানা, সমাজচ্যুতি ও গুমখুন। আদুনিস স্বীকার করেছেন যে আরবি ভাষার কবিদের চেয়ে তিনি বেশি আকৃষ্ট হন গ্যেটে, বদলেয়ার, মালার্মে প্রমুখের প্রতি।

আরব ভাষার কবিতায় তাঁর প্রভাব গভীর ও নিগূঢ়। ইংরেজি ভাষার কবিতায় টি এস এলিয়ট-এর প্রভাবের সঙ্গে তুলনীয় বিভিন্ন আরব দেশের আরবি ভাষার কবিতায় তাঁর প্রভাব। আরবি ভাষায় গদ্যকবিতার জনক তিনি।আরব শাসকরা তাঁর এই প্রভাবের জন্যই তাঁকে ভয় পায়। তিনি কুড়িটির বেশি কাব্যগ্রন্হ ও তেরোটি প্রবন্ধগ্রন্হ প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে তার গ্রন্হ ‘অ্যান ইনট্রোডাকশান টু অ্যারাবিক পোয়েটিকস’। তিনি বলেছেন কবিতা হল ‘ভিশান’ ( রুয়া ); গতানুগতিক ধারণার বাইরে লাফানো, দৃষ্টিভঙ্গীর রদবদল’ ।

১৯৭০ সালে লেবানন বিশ্ববিদ্যালয় আদুনিসকে আরবি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করে। অধ্যাপনাকালে তিনি বেইরুটের সেইন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএচ ডি করেন; তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘আরবমননে ও সাহিত্যে অপরিবর্তনীয়তা ও পরিবর্তন’ । লেবাননে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হলে কালক্রমে তাতে ইজরায়েল ও সিরিয়া জড়িয়ে পড়ে। কবিতা লেখার জন্য প্রয়োজনীয় শান্তির অভাব বোধ করতে থাকেন আদুনিস, এবং ১৯৮২ সালে প্যারিসে চলে যান। আরবি কবিতার সঙ্গে ইউরোপকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য ফ্রান্সে আসা যে কত জরুরি ছিল তা তিনি প্যারিসে বসবাস করাকালে টের পান। ১৯৮৬ সালে তিনি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ফ্রান্সে বসবাসকালে তিনি অধ্যাপনা করেছেন সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে, জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিয়া আউলিয়া পরিবারে জন্মের কারণে তাঁর কবিতায় সুফি পরাবাস্তববাদের সঙ্গে মিশেছে ইতিহাসের রহস্যময় সংবেদন। যদিও আদুনিস মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নিয়ে অবিরাম আলোচনা করে চলেছেন তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধে, কবিতায় তিনি সরাসরি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিচ্ছায়া ঘটতে দ্যান না । তিনি চেষ্টা করে গেছেন আরবি কবিতাকে পরম্পরাগত ফরম্যালিজম থেকে মুক্ত করতে। পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন আঙ্গিকে, শব্দবন্ধে, বাক্যগঠনে ও চিত্রকল্পে। আদুনিস বলেছেন যে, “কবিতা সমাজবদল ঘটাতে পারেনা ঠিকই, কিন্তু তা বাস্তবজগতের ধারণাগত সম্পর্কে রদবদল ঘটাতে পারে। যে কবিতা সবায়ের কাছে পৌঁছোয় তা কৃত্রিম। প্রকৃত কবিতাকে বোঝার জন্য দরকার একাগ্র প্রচেষ্টা । কবির মতনই পাঠককেও হয়ে উঠতে হবে একজন সৃজনকর্তা।” নিজেকে তিনি প্রাগৈসলামিক প্যাগন রূপে দেখতে ও দেখাতে চেয়েছেন; আদুনিস মনে করেন যে তিনি এমনই এক প্রাগৈসলামিক সময়ের কবি যখন বেদুইনরা মুখে-মুখে কবিতা রচনা করত। তাঁর কবিতা অনেকসময়ে তাই ভবিষ্যবক্তার আদিম স্তরে চলে যায়, যৌনমধুর উল্লাসের সঙ্গে মেশে ব্যক্তিচেতনার অন্তরপ্রশ্ন। নির্বাসনের মননযন্ত্রণায় জর্জরিত এবং অস্তিত্বের অনিশ্চয়তায় আক্রান্ত আদুনিস তাঁর কবিতাকে উপস্হাপন করেছেন আরবি ও ইউরোপীয় গীতিকবিতার ঐতিহ্যকে টাল খাইয়ে, নান্দনিকস্তরে ও নৈতিক স্তরে।

১৯৮২ সালের ইজরায়েলের লেবানন আক্রমণ আদুনিসের কবিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল। তিনি ও তাঁর স্ত্রী যখন তাঁদের বৈঠকখানায় বসেছিলেন তখন আদোনিসের শোবার ঘর বোমায় বিধ্বস্ত হয়। এই সময় থেকে তাঁর কবিতা আঙ্গিকে পরিবর্তন ঘটে। সহজ লাইনের ছোটো কবিতার জায়গায় দেখা যায় তিনি দীর্ঘ কবিতা লিখছেন এবং তাতে তাঁর অভিনব ছবিগুলো গড়ে তুলছে উদ্ভাবিত নমনীয়তা: “হত্যা শহরের আদল পালটে দিয়েছে– এই পাথর/একটি শিশুর মাথা/ আর এই ধোঁয়া মানুষের ফুসফুস থেকে নিঃসারিত।/ প্রতিটি জিনিস নিজের নির্বাসনের কথা বলছে…এই সমুদ্র/রক্ত– আর তুমি কিই বা আশা করো আজকের এই সকালে অন্ধকারে ধমনীতে ভেসে যাওয়া ছাড়া/ ব্যাপক খুনোখুনির মাঝে ?”

আদুনিসের শব্দ-প্রয়োগের কুশলতা ও কল্পদৃশ্যার উদ্ভাবনাশক্তি সত্ত্বেও পাঠকের অনুভূতিতে আঘাত হানার কবিতাগুলো সাধারণত বাস্তব ঘটনা ও স্হান থেকে উপজাত। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের খবর যাঁরা রাখেন তাঁরা আক্রান্ত হবেন আদুনিসের কাব্যগ্রন্হ ‘দি বুক অব সিজ’ কাব্যগ্রন্হে অন্তর্ভূক্ত কবিতাগুলো পড়ে, যা তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। ভাষা নিয়ে খেলবার ক্ষমতা এবং অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা এই বইতে মিশ খেয়েছে ইতিহাসের পরিসরীয় মনন-বিদারক ঘটনাদের সঙ্গে। বাস্তব ঘটনাকে তিনি বেঁধেছেন পরাবাস্তব সংবেদনের চিত্রকল্পে, প্রথম কবিতার শুরু থেকেই: “শহরগুলো গলে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, এবং মাটিপৃথিবী ধুলোঠাসা একটা ঠেলাগাড়ি/কেবল কবিতা জানে এই পরিসরের সঙ্গে কীভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হয়।”

নভেম্বর ২০১০ সালের লন্ডন কবিতা উৎসবে দেয়া সাক্ষাৎকারে আদুনিস বলেছেন যে, “কবিতা এবং ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই; ইসলামের ইতিহাসে কোনো ধার্মিক কবি নেই। এমনকি ইবন আরাবি’র মতো সুফি কবিরাও ইসলামি দৃষ্টিতে ধার্মিক নন, কেননা সুফি কবিরা নিজেরাই একধরণের ধর্মের জন্ম দিয়েছেন। কেবলমাত্র নাস্তিকরাই কবিতা লিখতে পারেন।” ফ্রান্সে বহুকাল বসবাস করেও তিনি ইউরোপিয় ভাষায় কেন কবিতা লিখলেন না জানতে চাওয়ায়, আদুনিস বলেন যে, “আমি আরবি ভাষায় লিখি তার কারণ আমার মা একজনই, এবং আরবি আমার মাতৃভাষা।” মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে আরবি ভাষা কি কবিতা লেখার মত তত উন্নত ও প্রকাশক্ষম ? আদুনিস উত্তরে বলেন যে, একজন মানুষ যা চিন্তা করে তা কোনো ভাষাই সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারে না; মানুষের অভিজ্ঞতা তার ভাষার চেয়ে বহুগুণ ঐশ্বর্যময়।” তাঁর কবিতার পত্রিকা দুবারই বন্ধ হয়ে গেল কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, সাহিত্য পত্রিকামাত্রেই জীবন্ত প্রাণী; তারা জন্মায়. বড়ো হয়, তারপর মারা যায়।

২০১১ সালের ২০ এপ্রিল আল আরাবিয়া টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আদুনিস বলেছেন যে “ধর্ম হল ব্যক্তির অস্তিত্ববাদী প্রয়োজন; ধর্মকে একটি মতাদর্শের রূপ দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে, এবং তাকে সামাজিক-রাজনৈতিক হাতিয়ার করার কারণেই আরবরা ইতিহাসের প্রগতির পথে এত পেছিয়ে পড়েছে। মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক বীক্ষা হিসাবে ধর্মকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে একেবারে আলাদা করে ফেলতে হবে।”

সাম্প্রতিক আরবদেশগুলোয় রাজনৈতিক উথালপাথালের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের মে মাসে এক বিবৃতিতে আদুনিস বলেছেন যে “আরব শাসকরা অচলাবস্হা, পশ্চাৎপদতা, তিক্ততা, অত্যাচার, অবনতি ও পশ্চাদপসরণ ছাড়া আর কিছুই রেখে যাচ্ছেন না জনগণের জন্য। তাঁরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করলেন। তাঁরা নিজেদের দেশকে মানবিকতাহীন স্লোগানের পরিসর করে তুললেন”। আদুনিসের কবিতা ও খোলাখুলি মতামতের জন্য এডওয়ার্ড সাইদ বলেছেন যে, ” আদোনিস হলেন সমসময়ের সবচেয়ে নির্ভীক ও ক্রোধোদ্দীপনকারী কবি।” ২০১১ সালে তিনি জার্মানির গ্যোটে পুরস্কার ( সত্তর হাজার ডলার ) পেয়েছেন। তার আগে ২০০৭ সালে তিনি সম্মানিত হয়েছেন বিয়র্নসন পুরস্কারে, প্রথম আন্তর্জাতিক নাজিম হিকমত কবিতা পুরস্কারে, ব্রাসেলস দ্বিবার্ষিক কবিতা পুরস্কারে, সিরিয়া-লেবানন বেৎ কবি পুরস্কারে, আমেরিকা সাহিত্য পুরস্কারে, প্রি দ্য লা মেদেতেরেনিয়েঁতে, অরউইস সাংস্কৃতিক পুরস্কারে, ফরাসি সরকারের অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্সে । ১৯৮৩ সালে তাঁকে স্তেফান মালার্মে অ্যাকাডেমির সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। নোবেল পুরস্কারের জন্য পরপর দু-বছর মনোনীত হলেও, পুরস্কৃত হন নাগুইব মাহফুজ ও ওরহান পামুক।

প্রথম দিকের সুফি পরাবাস্তববাদী কবিতা থেকে ক্রমশ সরে গিয়ে তিনি তাঁর কবিতাকে করে তুলেছেন কঠিন ও প্রায় দুর্ভেদ্য, অনেকের মতে কিয়দংশে এজরা পাউন্ডের ‘ক্যান্টোস’-এর মতো দুরুহ। এই পর্বে তিনি কবিতার রৈখিকতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে প্রথাগত আরব কবিতা থেকে একেবারে সরে গেছেন। ইউ টিউবে তাঁর বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার আছে, কাব্যপাঠও আছে। তাঁর কবিতা ইউরোপের প্রায় সব কয়টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ইংরেজিতেও তাঁর কবিতা অনেকে অনুবাদ করেছেন। তবে আদুনিস মনে করেন যে তাঁর কবিতার প্রাণ অনুবাদে ধরতে পেরেছেন কেবল খালেদ মাত্তাওয়া। আমি তাঁর কবিতার অনুবাদ করেছি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত মাত্তাওয়া’র করা ইংরেজি অনুবাদগ্রন্হ ‘সেলেকটেড পোয়েমস অব আদোনিস’ ( ২০১০ ) থেকে। তবে আদুনিস-এর বিখ্যাত দীর্ঘকবিতা, বিদ্যায়তনিক আলোচকদের মতে যা ওয়াল্ট হুইটম্যান-এর ‘লিভস অব গ্রাস’, টি এস এলিয়টের ‘দি ওয়েস্ট ল্যান্ড’ ও অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘হাউল’ কবিতার মতো ভূসময়কে ধরে রাখার জলবিভাজক, সেই পর্যায়ে পড়ে আদুনিসের এই কবিতাটি, ‘এ গ্রেভ ফর নিউ ইয়র্ক’ , যা তিনি ১৯৭১ সালে প্রথমবার এই শহরে যাবার পর লিখেছিলেন । পশ্চিমের বিদ্যায়তনিক আলোচকদের কাছে এই কবিতাটি ৯/১১-এর ঘটনার পর বহুচর্চিত।

আমি অনুবাদ করেছি আদুনিস প্যারিসে স্হায়ীভাবে বসবাস করার আগে লেখা তাঁর কিছু কবিতা।

(সাহিত্য ক্যাফেতে প্রকাশিত কবিতাগুলো দেখুন-সম্পাদক)

 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top