অনুবাদ: নান্নু মাহবুব
*
নদীদের আছে এক
আদিম আঁধার…
কোকিল
*
বিশাল একটি বিলে
একটিমাত্র ফুল…
কিন্তু ইহা পদ্ম!
*
অলক্ষ্যে খেলে
তাহাদের এই খেলা…
ফিকে নীল প্রজাপতি
*
সবুজ উইলোর মাঝে
দাঁড়িয়ে….
যোদ্ধা রমণী এক
*
কত দ্রুতই না
বিবর্ণ হয় রঙ…
লাল কাগজের পাখা
*
আমার গ্রামের দিকে যেতে যেতে:
খবর জানি না লোকেদের
কাকতাড়ুয়া সবই কিন্তু
হয়ে আছে বাঁকা
*
এই মথ দ্যাখে উজ্জ্বলাভা
কোনো এক রমণীর ঘরে─
পুড়ে হলো মুচমুচে
*
একে একে
সবাই গেছে চলে…
শরতের হাওয়া
*
আমি মারা গেলে
আমার কবর পাহারা দিও
ঝিঁঝিঁপোকা!
*
লোমশ পতঙ্গটি
হলো এক প্রজাপতি…
গ্রীষ্মের চাঁদ
*
কতখানি
নিজের সুখে আছ তুমি
ব্যঘ্রমথ?
*
অঢেল ধারাপাত
কিসো পর্বতের ওপর…
ছায়াপথ
*
তুঁতনীল রঙে ধোয়া
এই হাত…
রাত্রি শীতল
[প্রবল ঠাণ্ডায় নীল হয়ে যাওয়া হাতের তালুকে ইসা এইভাবে
বর্ণনা করেছেন।]
*
গ্রীষ্মের পাহাড়
ঝুঁকে আছে
খাড়ির উপর
*
প্রদীপের ভেতরেও
গাহিতে চাহ কি গান?
নীল পতঙ্গ
*
ঘন ঝোপের ছায়ে
একাকী রমণী এক
গায় রোপণের গান
*
কি এক আশ্চর্য ব্যাপার!
পুষ্পিত চেরির তলে
বেঁচে থাকা
*
আমিও কি তোমার মতো
হব বুড়ো?
শরতের প্রজাপতি
*
নিয়ে এক হালকা হৃদয়
এই দুনিয়ায়…
ফিকে নীল প্রজাপতি
*
পানকৌড়ি-সাজা শিশুরা
পানকৌড়ির থেকেও
আশ্চর্য
*
ভোরের তুষারের ওপর
ছিটকায়
কামারের ফুলকি
[একজন হাইকু কবি হিসেবে ইসা নিত্যদিনের, সামান্যের যে
বিস্ময়, তারই ছবি এঁকে গেছেন। কামার আগুনতপ্ত ধাতুর ওপর
আঘাত করছে আর ভোরের তুষারের ভেতর আগুনের ফুলকি ছিটকে
পড়ছে। আগুন আর তুষারের এই সন্নিধি আমরা কীভাবে দেখব বা
অনুভব করব, সেক্ষেত্রে ইসার কোনো প্রস্তাবনা বা প্রভাবনা নেই।
তিনি শুধু দৃশ্যটি উপস্থাপন করছেন এবং বাকিটুকু পাঠকের ওপর
ছেড়ে দিচ্ছেন।]
*
নবম মাস─
আকাশ প’রে আছে এক
রঙিন কিমোনো
[নবম মাস যদিও শরতের শেষ, তবু আকাশ যেন রঙিন কাপড়ে
পাল্টে যাচ্ছে।]
*
দশটি বেড়ালছানা
দশটি
ভিন্ন ভিন্ন রঙ
*
নববর্ষের পাইন─
একাকিনী, কান পেতে রয়
সন্ধ্যার বরিষণে
*
ফোটে চন্দ্রমল্লিকা─
পাহাড়চূড়াও
হয়ে যায় শ্বেতকায়
*
ডান দিকে তার চাঁদ
বা’দিকে তার জল…
সন্ধ্যার উইলো
*
মধ্যাহ্নের তন্দ্রা─
পদ্মের সৌরভ যায়
এঁকেবেঁকে
*
প্রবল ঝড়বৃষ্টি─
নগ্ন সওয়ার এক
নগ্ন ঘোড়ার পিঠে
*
শরৎ এসেছে তুমি
জানো নাকি?
তৃণভূমির প্রজাপতি
*
মঠের বেড়া─
শাদা এক ফুলের ওপর
শাদা এক প্রজাপতি
*
গোধূলির ফেজান্ট
ঘুমুতে যায় ফিরে
তীক্ষ্ণ চিৎকারে
*
বসন্ত হাওয়া─
মাজু পাহাড়ে ফোটে
সোনারঙ ফুল
*
শাদা বনাম হলুদ─
প্রজাপতিরাও
করে যুদ্ধ
*
কুয়াশার দিন─
বড় সরাইখানার পেছনে
একটি পাইন
*
হ্রদ থেকে
আকাশে লাফিয়ে ওঠে
মেঘচূড়া
*
সূর্যাস্ত─
শহর গুঞ্জরিত
ফড়িঙে
*
কোথা থেকে এলো
এই শীতলতা…
জনাব কাকতাড়ুয়া?
*
নেকড়েও উঁকি দেয়
তার গর্ত থেকে…
শরৎ গোধূলি
*
ঝিলমিল মরীচিকা─
প্রভাতী সূর্য
পার হলো চৌকাঠ
[সকালের সূর্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পৃথিবী। কাছেই কোথাও
উত্থিয়মান তপ্ত বায়ুতরঙ্গের সৃষ্ট এক মরীচিকা (heat shimmer) ঝিলমিল করছে। ইসা বসে আছেন তাঁর ঘরে। সূর্য ক্রমশ উপরে উঠছে আর রোদ্দুর তাঁর ঘরের চৌকাঠ পার হয়ে তাঁর ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছে।]
*
দেখাচ্ছে ঠিক
ব্যাঙের লাফের মতো!
ঘাসের ওপরে বৃষ্টি
*
প্রভাতী তুষার
জড়িয়ে আছে
উইলোতে
*
সবুজ পতঙ্গ আর
বাদামি পতঙ্গ…
যুগলবন্দি এক
*
গোবরের ভেতর
ক্ষোভ নিয়ে ফোটে এক
পদ্ম
[পদ্মটি যেন বলছে, “দেখ আমাকে! গোবরে ফুটলেও আমি কতই
না সুন্দর!”
ইসা হয়তো এখানে একটি প্রচলিত বৌদ্ধ রূপকের ইঙ্গিত করছেন যে,
জগতের দুরাচার আর পাপাচারের ভেতরেও বোধির খাঁটি পদ্ম জন্মাতে
পারে।]
*
মুলো-তোলা লোকটা
নির্দেশ করে পথ
একটি মুলো দিয়েই
*
তুষারের শাদা
কম্বলের ওপর…
বসন্ত বৃষ্টি
*
আপনাতেই
আনত হয় মাথা…
পিওনি!
[পিওনি: চীনা ফুল। গুল্মজাতীয় গাছ। পিওনি বৃক্ষও আছে। এডো
যুগে জাপানে পিওনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সুবাসিত এই ফুল লাল,
শাদা বা হলুদ হতে পারে।]
*
প্রথম তুষারপাত─
তুমি কিসের প্রার্থনা করো
ঝিঁঝিঁপোকা?
*
বেঁচে আছি
এবং বেঁচে আছি…
কি ভীষণ শীতল যে তা!
*
ঘুম থেকে ওঠে দাঁড়ায় বিড়াল
তোলে হাই, অভিসারে যায়
চলে
*
অর্ধভুক্ত তরমুজের
কচি সবুজ পাতা…
শরতের বরিষণ
[চিত্তাকর্ষক একটি ইমেজ। কেউ একজন একটি তরমুজের আংশিক
ভক্ষণ করে ছুড়ে ফেলে গেছে। অতি নৈমিত্তিক এই দৃশ্যটি অধিকাংশ
মানুষের কাছে লক্ষ্যযোগ্য কিছু নয়, কিন্তু কবি সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন।]
*
শুয়ে আছি আর
এক প্রজাপতি করে ওড়াওড়ি…
উষ্ণ বসন্ত বাহিরে
*
ইদানীং এই
নষ্ট সময়ে
যেদিকে তাকাই, চেরি!
*
তিন ফোটা বৃষ্টি
স্বর্গের শুভেচ্ছাপত্র এক…
মধ্যগ্রীষ্মের দহন
*
এ-ই আমার জীবন─
শীতল প্রভাত
শীতল রাত্রি
*
শুভসন্ধ্যা হাওয়া!
ঘরমুখি পথ
বাঁকা আর আঁকাবাকা
*
পাহাড়ী মন্দির─
গভীর তুষারতলে
ঘণ্টা এক
*
ডেকে উঠল ফেজান্ট
যেন তার এইমাত্র
নজরে এল পাহাড়
*
মহান জাপান─
আগাছায় অতিবর্ধিত
যিশু-বুদ্ধ
*
মুহূর্তের তরে
আঁধার হলো আলোকিত…
আতসবাজি
*
বাবা যদি থাকত হেথায়…
সবুজ ক্ষেতের ওপর
প্রভাতের রঙ
*
আমি চলি…
ভালো থেকো আর খেলো
একসাথে
ঝিঁঝিঁ সন্ততি মোর
*
ঊষাসমাগমে
কাউকে পড়ে না চোখে…
ফোটে পদ্ম
*
বৃক্ষের সাথে বাঁধা
বোকা বেড়াল
কাঁদে প্রেমের তরে
*
চেরির ছায়ায়
একটি আগন্তুকের মতো
আর নয় তো কিছুই
*
পাহাড়ের ছায়া─
ঘন জঙ্গলের গভীরে
একটি ঘুড়ি
*
ভেঙে পড়ে পর্বত
আর উদ্বেগহীন চোখে
উড়ে যায় কাদাখোঁচা এক
*
আমার জন্যেও আছেন
এক অধিষ্ঠাতা ঈশ্বর!
পুষ্পিত বসন্ত
[এই হাইকুটি জাপানি বহুঈশ্বরবাদী (polytheism) ধারণার ভিত্তিতে রচিত।]
*
বাধ্য হয়ে
বাজাই বাঁশি…
একটি শীতল রাত্রি
[কিসে তাঁকে বাধ্য করছে বাঁশি বাজাতে? সম্ভবত শীতল আবহাওয়ায়
ঘরের ভেতর বন্দী হয়ে থাকার একঘেয়েমীর কারণেই এই বাধ্যতা।]
*
শিশু মাকড়সারা সব
ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়
বাঁচবার প্রয়োজনে
*
নববর্ষ─
সেই একই নির্বুদ্ধিতা
নির্বুদ্ধিতার ওপর
*
কি জ্বালা!
বুনো রাজহাঁস খুশিমতো
সখাদের করে ডাকাডাকি
*
সরে যাও
প্রজাপতি আর পাখিগণ!
ফুটিতেছে পদ্ম
*
প্রভাতী উষ্ণ স্নানের পর
প’রে দেখা যাক এটা…
গ্রীষ্মকিমোনো
*
ঝুলন্ত মন্দিরঘণ্টা
সবুজ পুরোপুরি…
শীতল হাওয়া
[ব্রোঞ্জের ঘণ্টার ওপর তাম্রমলসৃষ্ট সবুজ আস্তরণের ফলে ঘণ্টাটি
এখন পরিপূর্ণ সবুজ।]
*
নেই খুব চিন্তা
মুকুলিত হওয়া নিয়ে
বরইবৃক্ষ আমার
*
গেল বার, ভেবেছিনু
সরাব যে মাছিগুলি
বাবার মুখের থেকে
[এখানে ইসা হয়তো তাঁর বাবার ছবির ওপর বসে থাকা মাছিদের
কথা বলছেন।]
*
ভোরের আকাশের রঙ
পাল্টে গেছে
গ্রীষ্মের পোশাকে
[প্রকৃতিবিশ্বের ওপর মনুষ্যবিশ্বের একটি কাল্পনিক অভিক্ষেপণ।]
*
মুরগিছানা
চোখে চোখ রাখে অপলক…
দীর্ঘ দিবস এক
*
সান্ধ্য চাঁদের নীচে
শামুকটি
কোমরতক নগ্ন
*
এই দুনিয়া
কণ্টকাকীর্ণ…
তবুও আছে পদ্ম
*
নির্মল গোধূলি─
ফিকে নীলের ভেতর
সারি সারি শরতের পাহাড়
*
টগবগ ফোটে চা
পাহাড়ি মন্দিরে…
শীতের প্রথম বরিষণ
*
চায়ের ধোঁয়া
আর উইলো
কাঁপে একসাথে
*
ঘুমিয়ে ছিলাম ভরদুপুরে
শুনতে পেলাম ধানচাষীদের গান
লজ্জা হলো ভারি
*
বসন্ত সমাগত
ধীরে ধীরে
জল বহে যেইখানে
*
নববসন্ত হয়ে যায়
জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রি…
আমার বলিরেখাময় মুখ
*
মোকুবোজি মন্দির─
জোনাকিরা চলে আসে
ঘেউঘেউ কুকুরের কাছেও
*
নগরীর মাঠে মাঠে
ধ্যানমগ্ন চেরিগাছ…
আগন্তুকেরা যেন সখা
*
ভিজে যাই
নববর্ষের বরষায়…
ছুটন্ত তুষার
*
বসন্তের হাওয়া─
মাটির পুতুল
পায় কিছু রঙ
[কেউ একজন একটি মাটির পুতুল রঙ করছে, আর এই রঙের
সজীবতা বসন্তের অনুভূতিকে জোরদার করে তুলছে।]
*
আমার পাইনও
হলো কৃতজ্ঞ…
বসন্ত বৃষ্টি
*
একে একে
বেড়ালেরাও ফেরে ঘরে…
শীতল রাত্রি
*
তুষারে করি মূত্রত্যাগ
দরোজার ওইপারে─
গর্ত এক তৈরি হলো বরাবর
*
আমার ঘরের নীচে
ক্ষুদে কীট এক
মাপে কড়িকাঠ
*
এমনকি আকাশেও
রয়েছেন বুদ্ধ…
বুনোফুল
*
ঘুমিয়ে ছিলাম অর্ধদিবস;
দিল না কেউ
শাস্তি!
*
চড়ুইছানারা
সরে যাও!
যায় ঘোড়া মহাশয়
[জাপানে এটি ইসার অন্যতম বিখ্যাত একটি হাইকু।
একজন আলোচক লিখেছেন: ‘ইসা প্রায়শই এবং বেশ সচেতনভাবেই
প্রাণীদেরকে তাঁর মনুষ্য-সহচর হিসেবে গণ্য করেছেন। বৌদ্ধিক বিশ্বাসটা
হলো মহা পরিনির্বাণের পথে সকল সংবেদনশীল সত্তাই পরস্পরের আত্মীয়।
ইসা ঘোড়াকে মি. হর্স বলে একটি সাম্মানিক উপসর্গে সম্বোধন করেছেন,
যদিও এক্ষেত্রে তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ শিশু চডুইয়ের মঙ্গলের দিকে’।
এভাবে হাইকুটিকে ব্যাখ্যা করাই যায়, যদিও আমার সেরকম মনে হয় না।
ইসার হাইকুতে রয়েছে একধরনের অ্যাবসার্ডিটি এবং বিশেষ ধরনের এক
সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ। এবং সেটাই আমার ইসার প্রতি দুর্বলতার অন্যতম কারণ।]
*
ফুল-ফোটা রাত
আর মুখগুলি লোকেদের
দোলে, সঙ্গীতের তালে তালে
*
ফড়িঙ─
ওড়ে দুই ফুট
তারপর আরও দুই ফুট
*
সারারাত তাকিয়ে রয়েছি
আমার বলিরেখাময় হাতে…
শরতের বৃষ্টি
*
সবুজ উইলোর তরে
রাত্রি আসে ত্বরা…
ফোটে পদ্ম
*
বসন্তদিন─
পূবের পর্বতগুলো দেখা যায়
সূর্য অস্ত গেলেও
*
অন্যমনস্ক আমি
কাকতাড়ুয়ার
স্থলাভিষিক্ত
*
যদি তুমি ঝাঁপ দাও মক্ষী
ঝাঁপ দাও
পদ্মে
[পদ্ম যেহেতু শুভ পুনর্জন্ম এবং বোধির প্রতীক, তাই ইসা তাঁর মক্ষীকে
(flea) বুদ্ধত্বে নিমজ্জিত হতে বলছেন। অবশ্য ‘flea’ অর্থ ঠিক মক্ষী নয়,
এটি পক্ষহীন ক্ষুদ্র একধরনের রক্তপায়ী কীটবিশেষ; দেহিকা।]
*
প্রত্যয়! শুধু প্রত্যয়!
শিশির উপচে উপচে
পড়ে
*
হেই দোয়েল─
এখানে খোঁজো, ওখানে খোঁজো
হারিয়েছ কিছু?
*
প্রথম জোনাকি
মুখটি কেন ফেরাও─
এ তো ইসা
*
বুদ্ধের ছবির তলে
এইসব বসন্তফুল
মনে হয় কিছু ক্লান্ত
*
পরিত্যক্ত
পুরনো নিবাসে আমার
চেরি, আছে ফুটে
*
পতঙ্গের এই
দুনিয়াতেও আছে…
ভালো গায়ক, মন্দ গায়ক
*
দেখলাম
এক দূরবীন দিয়ে:
দশ পয়সার কুয়াশা
*
হচ্ছে অসুর
হচ্ছে বুদ্ধ…
মধ্যগ্রীষ্মের মেঘ
*
শীতল হাওয়া
জড়িয়ে গেছে
একটি তৃণের ফলায়
*
সুরুগা রোড─
প্রজাপতিরাও স্বপ্ন দেখে
ফুজি পর্বত
*
এই তবে
পরম নিবাস আমার?
পাঁচ ফুট তুষার
*
সন্দেহ নেই কোনো
পাহাড়ী কোকিল এক
ছিঁচকাঁদুনে শিশুই
*
ভিখিরি শিশুটি
হাঁটে আর ওড়ায়
একটি ঘুড়ি
*
কাঁদে একা
মাতৃহারা পাখি…
শরৎ গোধূলি
*
হেই, চড়ুই!
রাস্তা ছাড়ো
আসছে ঘোড়া
*
বসন্ত বৃষ্টি─
জনপ্রতি
একটি করে জানালা
*
আমি, যে বেঁচে আছে
তার চেয়ে বেশিদিন
শিশিরস্নাত এই মাঠে
*
সাবড়ে দিই এক মাছি
তাকিয়ে এক
পাহাড়ের দিকে
*
তোমার ধানের ক্ষেত
আমার ধানের ক্ষেত
একই সবুজ
*
শীতল চন্দ্র
আর এক শীতল পাইন
রয়েছে দাঁড়িয়ে
*
এই পাহাড়ি বৃষ্টি
আর হরিণের অশ্রুজল
নিশ্চয় গেছে মিশে
*
তাকাই পাহাড়ে
তাকাই সাগরে…
শরৎ গোধূলি
*
সবচেয়ে ছোট্ট দ্বীপেও
তারা প্রস্তুত করে ক্ষেত
ভরতপাখিরা গায় গান
*
একদা যা ঘটেছিলো
একটি বালক নিষ্কৃতি পেল
অনুনয়ে
*
বসন্ত হলো শুরু─
অন্তত পঞ্চাশ তো আজ
হলোই আমার
*
অতিকায় এক ব্যাঙ আর আমি
তাকিয়ে থাকি পরস্পরের চোখে
নড়িনা আমরা কেউই
*
বিশাল জোনাকি এক:
এদিক-ওদিক, এদিক-ওদিক─
তারপর যায় চলে
*
এইসব সমুদ্রশামুক
দেখে ঠিক মনে হয়নাতো
জাপানি
*
হাতছানি দেয়
একটি তৃণের ডগা…
জোনাকি
*
যখন কাঁদে হরিণেরা
রক্তিম পাতারাও ঝরে
অশ্রুর মতোন
*
কাকটা
ওইখানে হেঁটে যায় বরাবর
প্রস্তুত যেন করবে সে ক্ষেত
*
আসমানী রোদছাতা
একের পর এক…
প্রস্ফুটিত মেঘদল
*
শেখে সে
কীভাবে ফোটাতে হয় জল…
শীতের প্রথম বরিষণ
*
আমার একাকীত্বে
যোগ হলো আরও…
জানালার ওপর তুষার
*
চড়ুইয়ের স্নানে হলো
বিক্ষিপ্ত…
পদ্মজল
*
আমার ছায়াকে দেখাচ্ছে
ঠিক সেই বৃদ্ধের মতো!
শীতের প্রথম বরিষণ
[‘সেই বৃদ্ধ, অর্থাৎ মহান সেই হাইকু কবি, বাশো।]
………..
Nice….