ফারহানা ইলিয়াস তুলি
অভিবাসন
হ্যারিকেন আইরিন নিউইয়র্ক স্পর্শ করার আগেই জেগে উঠে
আমাদের আত্মা। আমরা বেহিসেবি নই। চিনি, অংকের ঘরবাড়ি
আর জ্যামিতির কম্পাস খুলে নির্ণয় করি দিকের উত্তর-দক্ষিণ।
কোথা থেকে ঢেউ আসে, কোথায় চলে যায়। রেখে যায় ধ্বংসবিলাস !
ভাঙারও একধরণের অহংকার থাকে। থাকে গড়ে তোলার সুবর্ণ
লীলাকাল। সেই কালের ছায়ায় বসে প্রজন্ম মেঘেরা শেখে উড়াউড়ি
বিদ্যা। সরস্বতী সকালের কাছে চায় সাদা ফুল। শান্তির মালা গাঁথবে
বলে। আমিও সেই মালার সুতো সরবরাহে এগিয়ে দিতে থাকি, একটি শব্দ।
ঘূর্ণিও শব্দ চিনে। কান্নার শব্দ। ঘুমের শব্দ। ঘাসের শব্দ।
আমি এইসব শব্দকেই আগলে রাখি। রাখি ঘূর্ণিকেও।
স্বাগত জানাই সেইসব মানুষদের মতো। যারা
নিউইয়র্কে আসবে বলে, ভিনদেশি এয়ারলাইনসে
চেপে বসে নীল উড়োজাহাজের ধূসর আসনে।
ভাগ হয়ে যায় ভেষজ ভবিষ্যৎ
ভালোবাসার কল্পকারু গানে
বাজাই বাঁশি দেখে প্রেমের রথ
মন পড়ে রয় দূরের চন্দ্রক্ষণে
ভাগ হয়ে যায় ভেষজ ভবিষ্যৎ ।
বৃক্ষগুলো মাঘের মগ্নশিখায়
পোহায় জীবন, খননপর্ব শেষে
ছাপ রেখে ঐ সরোদ শীর্ষতানে
পাঁজর কাঁপে শূন্য ভালোবেসে ।
শূন্য ভোরের সূর্য দেখে হাসি
কেউ তবে নেই সহযাত্রী রোদে
গোলাপগুলো তাকিয়ে আছে একা
আমার দিকেই, জন্মকল্প শোধে ।
ঋণী আমি ঘোর সবুজের কাছে
যে ঘর বেঁধে খেলি রঙের খেলা
থামিয়ে বৃষ্টি নদীর জলে নামি
ভুবনডাঙায় জমিয়ে সুরের বেলা।
এভাবেই কাব্যকলার মাঠে
সাজাই বীজের পূর্ণ সূত্রধর
উপত্যকায় লক্ষ মুখের ছবি
স্বপ্ন দেখায় মৌন জলকর ।
বাতিউৎসব
চাইলেই নিতে পারি ঘূর্ণিঘ্রাণ, জমি-জিরেত – বিত্ত বৈভব
সব ফেলে রেখে আমিও হতে পারি পদ্মার প্রতিবেশী
গাঙের তোষকে এলিয়ে দিয়ে নিজের শরীর
বলতে পারি— ভেসে যেতে চাই, যেভাবে ঋতুকে ভাসাই।
নেবার ইচ্ছা আছে আরো অনেক কিছুই। প্রশস্ত মাঠের ঢেউ,
মুগ্ধ গ্রামমন্ত্র কিংবা আষাঢ়িয়া দুপুরের বিদ্যুৎসমগ্র। জ্বলে
উঠবে বলে যে প্লাবন আজন্ম প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে
তাকেও নিতে চাই সহচর করে। বৃত্ত ভাঙার মনঘেরা বাতিউৎসবে।
মেঘবিত্ত আকাশের কাছ থেকে ধার নিয়ে লালফিতে, নির্মাণ করতে
চাই একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র,
প্রতিদিন যাপিত জীবনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আরেকটিবার
এঁকে যেতে চাই আমাদের সম্মিলিত বিরহের সাঁঝ ও কারুজ ।
নির্জনতার সেতুবন্ধন
বশ্যতা মানবে না জানি ঘড়ির কাঁটা। তবু নির্বাক
সাক্ষী থেকে যাক আমার আস্থার চন্দ্রালোক। ক্রমশঃ পৃথিবীর
দিকে ধাবমান বিনম্র শূন্যতা এসে লুটিয়ে পড়ুক প্রভাতী কোলাহলে
দোয়েলের গানে— শালিখের উষ্ণ ডানায়।
কিছু আলো জমা হোক এই কক্ষপথে। বড় অকাল আঁধার
রেখেছে হাত যে ঘর-জানালায়, কমে যাক তার প্রবনতা। জমাট
যন্ত্রণার পরিধানে যে সবুজ সাজে যুগলভুবনে, আমি তার কাছ থেকেই
শিখে নেবো ফ্যাশনের চিত্রকলা। ছাপবিদ্যার বিদীর্ণ প্রদর্শনীতে অংশ
নিয়ে আমিও বলে যাবো— অমর হোক, বশ্যতার সাথে নির্জনতার সেতুবন্ধন।
ভাদ্রের ভেদবসতি
বাষ্পকে বারুদ ভেবে, কতোবার উড়িয়ে দিয়েছি
ভৈরবী হাওয়ায়। কখনো উড়াতে ভালো লাগে,
কখনো উড়ে যেতে
যেভাবে চিহ্নায়ন শেষ হলে জলও শিখিয়ে
যায় ভাদ্রের ভেদবসতি।
বেদনার কোনো স্থায়ী বসতভিটা থাকে না।
থাকে না আনন্দেরও । ঢেউ আসে, ঢেউ যায়
কেউ কুড়িয়ে রাখে, কেউ দীর্ঘ নিঃশ্বাসে হারায়।
আমি নিতান্তই ছায়া খুঁজেছি নির্জন উদ্ভিদের
অধীনে। আর প্রার্থনার বনজোছনার কাছে
চেয়েছি সময়। পাশে রেখে অনেক মৌসুম,
অনেকগুলো শ্রেণীবদ্ধ সবুজের মহাকালপর্ব ।
5 ti Kobita i Besh bhalo laglo.
কিছু আলো জমা হোক এই কক্ষপথে। বড় অকাল আঁধার
রেখেছে হাত যে ঘর-জানালায়, কমে যাক তার প্রবনতা। জমাট
যন্ত্রণার পরিধানে যে সবুজ সাজে যুগলভুবনে, আমি তার কাছ থেকেই
শিখে নেবো ফ্যাশনের চিত্রকলা।
very NICE !!!
বাতিউৎসব ও অভিবাসন – কবিতা দুটি খুব ভালো লাগলো।
কবির চিত্রকল্পে যাদু আছে
শূন্য ভোরের সূর্য দেখে হাসি
কেউ তবে নেই সহযাত্রী রোদে
গোলাপগুলো তাকিয়ে আছে একা
আমার দিকেই, জন্মকল্প শোধে ।
Khub Bhalo Laglo !
ভাঙারও একধরণের অহংকার থাকে। থাকে গড়ে তোলার সুবর্ণ
লীলাকাল। সেই কালের ছায়ায় বসে প্রজন্ম মেঘেরা শেখে উড়াউড়ি
বিদ্যা। সরস্বতী সকালের কাছে চায় সাদা ফুল। শান্তির মালা গাঁথবে
বলে। আমিও সেই মালার সুতো সরবরাহে এগিয়ে দিতে থাকি, একটি শব্দ।
GR8…………….