সেলিম জাহান
ছেলেটির হাতে মেয়েটির হাত ধরা– ছেলেটির ভারী পছন্দের মেয়েটির নরম ছোট্ট হাতদুটো। মেয়েটি তা জানে আর তাই ভারী মিষ্টি করে ছেলেটির মুখের দিকে তাকায়–তার মনের মানুষটির দিকে। রাস্তার এ পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’জনে – রাস্তা পার হবে। তুলতুলে নরম রোদের ঝকঝকে একটা সকাল– খুব সুন্দর চারদিক। তারপরই ঘটে যায় ব্যাপারটা। মেয়েটি ছেলেটির হাতটিতে একটি ঝটকা টান দিয়েই দৌড় দেয় মাঝ রাস্তার দিকে। ছেলেটি প্রথমে হতচকিত, একটু বাদে বিহ্বল, তারপর চমকিত, এবং পরিশেষে চমৎকৃত। সেও মেয়েটির টানে সাড়া দিয়ে দৌড় লাগায় গাড়ী-ঘোড়াকে বাঁচিয়ে ব্যস্ত রাস্তা পার হতে।
রাস্তার ওপারে পৌঁছে মেয়েটির কি হাসি– কাঁচভাঙ্গা কিশোরীর হাসিতে খিলখিল করে ওঠে সে। ছেলেটির জামার হাতা ধরে সে ভেঙ্গে পড়ে ছেলেটির বুকে।হাসি তার থামতেই চায় না– এই এক রোগ মেয়েটির, কোন কিছু বলার আগেই সে নিজেই হেসে কুটি কুটি হয়ে যায়।এবার ছেলেটিও উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে – হাত ডুবিয়ে দেয় মেয়েটির চুলে। দু’জনের দমকা হাসির উচ্চকিত আওয়াজে ভরে যায় চারদিক।
একসময়ে হাসি থামিয়ে দু’জনে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে সামনের খোলা বাজারটিতে। বহু পুরোনো বাজার এটা– ওপরে ছাউনি দেয়া বিশাল এক খোলা জায়গা। সেখানে নানান জাতের পশরা সাজিয়ে ছোট ছোট দোকান খুলে বসেছে কত দশের কত রকমের মানুষ। কি নেই সেখানে এবং কে নেই হোথায়? ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অতীতের ঐতিহ্যগত জিনিসের দোকান, রয়েছে বর্তমান পণ্যের বিপণী। রয়েছে পোশাকের দোকান, শিল্পসামগ্রীর বিপণী, আর সবকিছুর মাঝে মাঝেই নানান খাবারের সামগ্রী এবং চা-কফির ব্যবস্হা।
একদিকে ছেলে মেয়েদের নানান ধরনের পোশাক নিয়ে দোকান খুলেছেন এক ইউরোপীয় বৃদ্ধ, ভারী রঙ্গিন দেশীয় কাপড় পরে নানান টুকিটাকি বিক্রিতে ব্যস্ত একটি লাতিনো যুবতী, আবার নানান রকমের মিষ্টি আর গরম চা-কফি যোগাচ্ছে আফ্রিকান এক কিশোর। এখনও বাজার ভালোভাবে জমে বসেনি, সবে তো সকাল, কিন্তু এর মধ্যেই ভারী একটা উৎসব আর স্ফূর্তির ভাব চারদিকে।
ছেলেটির বাহুমূল ধরে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আর চারপাশ দেখতে দেখতে মেয়েটি মৃদুস্বরে বাজারটির ইতিহাস বলে ছেলেটিকে। বহু পুরোনো বাজার– কয়েক শতাব্দী ধরে আছে এখানে। একসময়ে ইহুদিদের আধিপত্য থাকলেও আস্তে আস্তে এ বাজার আর তার আশেপাশের জনপদের চরিত্রও বদলেছে। আজ এ বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে যেমন নানান দেশের লোক আছে, তেমনি এর সংলগ্ন লোকালয়েও নানান বর্ণের, নানান সংস্কৃতির ও নানান ভাষার মানুষ আছে। সেইসব গল্প বলতে বলতেই মেয়েটি ছেলেটিকে নিয়ে সামনে এগুচ্ছিল।
উঁহু, একেবারে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে মেয়েটি ছেলেটিকে এখানে নিয়ে আসে নি। যদিও অলস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে এ দোকানে, ও বিপণীতে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে এটা ওটা নেড়ে চেড়ে দেখছিল দু’জনে, মেয়েটির লক্ষ্য ছিল তার পরিচিত একটাই আর হ্যাটওয়ালা। ছেলেটির জন্য নিজে পছন্দ করে টাই কিনবে মেয়েটি, কিন্তু তার সঙ্গে কিনবে সুন্দর একটা হ্যাট।
একটু পরেই তাদের দু’জনকে দেখা যায় একটি টাইয়ের দোকানের সামনে। মেয়েটির মন একটু মুষড়ানো– না, তার চেনা টাইওয়ালা আসেনি। তা’তে কি? কাছে টেনে ছেলেটা বোঝায় মেয়েটিকে। ভালো ভালো পছন্দসই অতীতকালের ঐত্যিহবাহী নানান টাই এ নাইজেরীয় বিক্রেতার কাছেও আছে। মেয়েটি একটি একটি টাই ছেলেটির বুকের কাছে জামার ওপর বিছিয়ে ধরে দেখে। টাইওয়ালা তাঁর পণ্যের গুণগান করতে থাকে, আর ছেলেটি গল্প জুড়ে দেয় যুবক দোকানীর সঙ্গে।
বহু বাছাইয়ের পর দু’টো টাই খুব পছন্দ হয় দু’জনের– অবশ্য তার একটি বেশী পছন্দ মেয়েটির। মোড়ক বাঁধার আগে শেষবারের মতো মেয়েটি ছেলেটির বুকের ওপরে টাইটি মেলে ধরে– কে জানে, মেয়েটির বুকের মধ্যে হয়তো গুনগুনিয়ে ওঠে– ‘তোমায় সাজাব যতনে, অরূপ রতনে’। সেখান থেকে চলে আসতে আসতে ছেলেটি-মেয়েটি দু’জনেরই মুখ ভরে যায় স্মিত হাস্যে টাইবিক্রেতার শেষ কথাটা মনে করে– ‘এ টাইয়ে তোমার বরকে খুব মানাবে’। দু’জন দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হাসিতে ভেঙে পড়ে– কেন কে জানে?
টাইয়ের দোকান থেকে বেরিয়ে মেয়েটি তার পরিচিত হ্যাট ওয়ালার খোঁজ করে। না, সেও আজ আসেনি। এক হ্যাটওয়ালা অবশ্য আছে বেশ কিছু হ্যাট নিয়ে। ছেলেটি দু’একটা হ্যাট মাথায় দিয়ে দেখে।পছন্দ হয় না দু’জনের কারোরই। দোকানী অবশ্য তার পণ্যের গুণগান করেই যায়। কিন্তু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। কিছু না কিনেই দোকানীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়েটি-ছেলেটি সেখান থেকে সরে আসে।
এবার ঢোকা যাক একটি টুকিটাকির দোকানে। উপহার দেয়ার জন্য খুব সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায় এখানে। বড়দিনের সময় কি যে ভিড় হয়– মেয়েটি জানায় ছেলেটিকে, ঐ সময় এলে দেখতে পাবে– যোগ করে মেয়েটি। দু’জনেই এ সারি থেকে ও সারিতে যায়, এটা নাড়ে, ওটা কাড়ে– দু’টো ছোট শিশুর মতো। তাদের আনন্দ আর স্ফূর্তি দেখে মনে হয় যে দু’জনের কাছেই ‘বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে গেছে’। ওখান থেকে বেরিয়ে মেয়েটি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে সে চা-কফি খাবে কিনা। না, খাবে না, জানায় ছেলেটি। কেমন করে খাবে? এই না ঘন্টাখানেক আগে দু’জনে একগাদা রুটি-ডিম-কফি খেয়ে এলো এক ক্যাফেতে?
তবু ছেলেটিকে কিছু একটা খেতে মেয়েটা আদুরে গলায় আবদার করে। না, ছেলেটার বাহুমূল ছাড়েনি তার হাত। থামে তারা ছোট্ট একটি দোকানের সামনে। মিষ্টি জাতীয় একটি জিনিস কিনে দু’জনে ভাগাভাগি করে খায়। কেনা হয় দু’কাপ কফি। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে শেষ করা হয় ঐ ছোট্ট মধ্য-প্রাতরাশ। তারমধ্যে যে কত কথা, কত ঠাট্টা আর কত হাসি। হাসতে পারে বটে দু’জনে!
সেখান থেকে বেরিয়ে এবার দু’জনে বাইরের চত্বরে এসে দাঁড়ায়। রোদেলা মধ্য-সকালে কি সুন্দর লাগছে চারদিক। কত মানুষ যে বেরিয়েছে এ রকম একটা সুন্দর দিনে! এ দিকটা নতুন অফিস পাড়া– নতুন নতুন দালানের সারি। মেয়েটি এ অঞ্চলের পরিবর্তন আর বিবর্তনের ইতিহাস বলে ছেলেটিকে– দেখায় সুন্দর একটা স্থাপত্য। ছেলেটি মন দিয়ে শোনে সবকিছু– মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় সে যতটা না শুনছে, তার চেয়ে অনেক বেশী করে দেখছে মেয়েটির সুন্দর মুখখানি।
মেয়েটি ছেলেটিকে একটা জায়গা দেখাতে নিয়ে যেতে যাবে – আগেই বলেছিল সে। রাস্তা পেরোয় তারা– না, এবার একদম ভদ্র দায়িত্ববান নাগরিকদের মতো ভব্যভাবে। সামনেই রেলস্টেশন। স্টেশনের মাঝখান দিয়ে যেতে যেতে মেয়েটি ছেলেটিকে অনেক গল্প বলে মজার মজার ঘটনার যা এ স্টেশনে ঘটেছিল। যত না বলা, তার চেয়ে একশো গুন বেশী হাসি।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে অনেকখানি হেঁটে মেয়েটি ছেলেটিকে একটি বিরাট গোল চত্বরে নিয়ে এলো। চত্বরের চারপাশ ঘিরে হরেক রকমের দোকান আর সেগুলোর সামনে রেলিং ঘেরা বৃত্তাকার বারান্দা। দু’জনে দোতলায় উঠে এলো। রেলিংয়ে ভর দিয়ে ঘন হয়ে পাশাপাশি দাঁড়াল তারা। তারপর ছেলেটিকে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েটি একদিকে ওপরে তাকাতে বলল।
সে এক অপূর্ব দৃশ্য। বিরাট চত্বরের একদিকে নির্মাণ কাজ চলছে। তাকে ঢেকে দিয়েছে বিশাল এক বোর্ড, যার পুরোটা জুড়ে আঁকা হয়েছে নীল-সাদা আকাশ, পেঁজা তুলোর মতো মেঘ এবং সূর্যের আভা। ছেলেটি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল সেদিকে। আসল আকাশ আর অঙ্কিত আকাশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, আসল আকাশই যেন নেমে এসেছে ধরাতলে। ছেলেটি নিজের দিকে টেনে নেয় মেয়েটিকে, হাতের মুঠোয় চাপ পড়ে, গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় পরম আদরে।
ততক্ষণে খিদে পেয়ে গেছে দু’জনারই। আর বেলাও তো কম হয়নি – প্রায় দুপুর একটা। সামনেই মেক্সিকান-জাপানী মিলিত খাবারের দোকান। গল্প করতে করতে, খুনসুটি চালাতে চালাতে অন্যকে খাইয়ে দিতে দিতে শেষ হয় তাদের মধ্যাহ্ন ভোজ। না, এখানে চা-কফি খাবে না তারা। সে পর্ব সাঙ্গ হবে একটু দূরে একটি শিল্প কেন্দ্রের নীচতলায় নিরিবিলি একটি ক্যাফেতে।
অতএব আবার হন্টন শুরু। সেখানে পৌঁছনোর আগেই একটি স্থাপত্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেয়েটি ও ছেলেটির। অফিস ফেরতা একদল নারী-পুরুষের মূর্তি। মেয়েটি ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে দেয় তাঁদের পাশে– ঐ ভঙ্গিতে যেন সেও ঐ অফিস-ফেরতা লোকজনদেরই একজন। তারপর উঠল ছবি। খুশী দু’জনেই ঐ ছবি দেখে।
তারপর ক্যাফেতে ঢোকে তারা। এক কাপ কফি আর সবুজ চা নিয়ে উঁচু টেবিলে বসে দু’জনে।বাইরে তাকিয়ে অফিসের লোকজনদের দেখে। মেয়েটি হঠাৎ ছেলেটির টুপিটি নিয়ে মাথায় দেয়, ভ্রুভঙ্গি করে। টুক টুক ছবি তোলে ছেলেটি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তার মনে হতে থাকে– কি মিষ্টি দেখাচ্ছে মেয়েটিকে, এতো সুন্দরও মানুষ হয়? তারপর এক সময় কথারা থেমে যায়– দুজনের মনের মধ্যেই অভ্রান্তভাবে গুনগুন করে একটি কথা– ‘কেমন সুন্দর একটা দিন গেল’!
আস্তে আস্তে হেঁটে দুজনেই আবার রেল স্টেশনের সামনে ফেরত আসে। মেয়েটি ট্রেন ধরবে কতগুলো কাজ সারতে, ছেলেটি হেঁটে ফিরবে তার গন্তব্যে। কাছে টেনে নেয় দু’জন দু’জনকে– অনেকক্ষণ আলিঙ্গনে ধরে রাখে পরস্পরকে। ছেলেটি তার মাথা নামিয়ে আনে মেয়েটির চুলে, মৃদুস্বরে কিছু কথা হয়। দু’জন তাকায় দু’জনার দিকে – তারপর একসময়ে দু’জন দুদিকে ফিরে আস্তে আস্তে পা চালাতে থাকে সামনের দিকে। তারমধ্যেই দু’জনে একবার অভ্রান্তভাবে পেছন ফিরে চায়, হাসে পরম ভালবাসার চোখ নিয়ে, হাত নাড়ে।
হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটির মনে পড়ে, ছেলেটির আজই দুপুরে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মন খারাপ ছিল, মুষড়ে ছিল সে অন্য একটি কারণে, তার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না মেয়েটিকে ছেড়ে। সকালে তাই মেয়েটি যখন বলল ছেলেটিকে, ‘তা’হলে যেও না আজ’, সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি বদলে ফেলল তার যাত্রার সময়সূচী। মেয়েটি ভাবে, ভাগ্যিস এমনটি হয়েছিল, আর তাই না এমন একটি দিন পেলো তারা। এটা ভাবতেই মেয়েটির সারা মুখ ভরে গেল অনিন্দ্য সুন্দর এক হাসিতে।
হাঁটার জন্য পা বাড়াতে গিয়ে ছেলেটি ভাবে, কোন পথ দিয়ে ফিরবে সে। যে পথ দিয়ে এসেছিল, সেই পথে, না কি নতুন কোন রাস্তায়? তার মনে পড়ে যায়, এক নদীতে যেমন দু’বার পা রাখা যায় না, তেমনি এক রাস্তায়ও দু’বার হাঁটা যায় না। নাহ, নতুন পথেই ফিরবে সে। আর সে তো জানে, যে পথেই ফিরুক না কেন, সব পথই তো মেয়েটির হৃদয়ের উঠোনে গিয়ে পড়বে। তবে আর ভাবনা কি? এটা মনে হতেই একটু হেসে নতুন পথেই পা বাড়ায় সে।
এ’টুকু লিখেই লেখা থামালাম। ইউনিয়ন স্কোয়ারের যে ক্যাফের জানালার ধারে বসে লিখছিলাম, তার শার্সির বাইরে তাকিয়ে দেখি, সন্ধ্যা ঘনিয়েছে এর মধ্যেই। স্কোয়ারের ভেতরে আলোর মালা, বড়দিনের জন্য বসানো অস্থায়ী দোকানগুলোতে লোকের ভিড়, কেনা-কাটা চলছে পুরোদমে। শীতল ঠান্ডার মধ্যেও তরুণ-তরুণীদের হাসি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কথা, আর শিশুদের কলকাকলির শব্দ ক্যাফের ভেতর থেকেও পাচ্ছি। ভেসে আসছে বড়দিনের নানান গানের সুর, ঘণ্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে কোন একটি জায়গা থেকে, সাধু সন্তের হো হো ও শোনা গেল কি? চারদিকে একটা খুশীর আমেজ, একটা আনন্দের সুর এবং একটা নরম মমতার পরিবেশ যেন। মনে মনে ভাবলাম বড়দিনের সময় নিউইয়র্ক ভারী মায়াময় হয়ে ওঠে।
নাহ, এবার আমাকে উঠতে হবে। কফির পেয়ালায় শেষ চুমুকটি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। জিনিস পত্র গুছিয়ে, গায়ে গরম ওপর-কোটটি চাপিয়ে দরজার দিকে এগুলাম। হঠাৎ ভাবলাম, আরে, লেখাটির তো নাম দেয়া হোল না।
কি নাম দেব : ‘মায়াময় একটি দিন’, নাকি ‘একটি নিটোল প্রেমের গল্প’? কোনটাই পছন্দ হল না। ঠিক তখনই মনের মধ্যে চিলিক দিয়ে উঠল, লেখাটির নাম হওয়া উচিত ‘সেদিন দু’জনে’, কারণ আসলেই ‘গল্পটি তো দু’জনার’। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে, হৃষ্টচিত্তে ওপর-কোটের কলারটি তুলে দিয়ে ক্যাফের দরজা খুলে নিউইয়র্কের শীতল বাতাসে বেরিয়ে আসলাম।
সেলিম জাহান
ড: সেলিম জাহান একজন অর্থনীতিবিদ ও লেখক। কর্মজীবনে বছর দু’য়েক আগে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের পরিচালক ও মূখ্য লেখক হিসেবে অবসর গ্রহন করেছেন।তার আগে তিনি জাতিসংঘের দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগের পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে যেগদানের আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘ ২৫ বছর। উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্হাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
ড: জাহান লেখালেখি করছেন গত চার দশক ধরে। আশির দশকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এ সাময়িকীতে নিয়মিত লিখেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জননন্দিত উপস্হাপক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মহাসচিব ছিলেন।ইংরেজী ও বাংলায় তাঁর প্রকাশিত গ্রণ্হের সংখ্যা এত ডজন এবং প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা দেড় শতাধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্হ: বেলা-অবেলার কথা, স্বল্প কথার গল্প, পরানের অতল গহিণে, শার্সিতে স্বদেশের মুখ, অর্থনীতি-কড়চা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনীতি, Overcoming Human Poverty, Freedom for Choice, Development and Deprivation.