১
জারী রাখো এই যুদ্ধ, জারী রাখো ক্ষত্রিয়ের তীব্র অভিধান,
যুদ্ধে যতো শব্দ হোক, কান ফাটুক, ঘর ভাঙুক,
হাসপাতালে চিরে ওঠা দালানের একাংশ পড়ুক ভেঙে,
মানুষেরা হতাহত হোক, যুদ্ধ কিন্তু আসলে বোবাই—
ভেবে দেখো মহান পুস্তকগুলো তোমাকে দারুণ সব
ছলা ও কৌশলে, নানা কুজ্ঝটিকার আড়ালে
তোমাকে, হত্যার শিক্ষা প্রতিদিন দিয়ে গেছে,
এখনও শেখাচ্ছে হাতে ধরে কলমে ও ইশারায়—
বিশ্বরূপ দর্শানোর ফাঁকতালে মহামান্য শেখালেন
হত্যা করো, হত্যা করো, হত্যার সমস্ত কার্য পূর্বাহ্ণে সমাপ্ত,
ভয় নেই, পাপ নেই, তুমি কিছু নও শুধু উপলক্ষ এক —
ভ্রাতৃহত্যা, গুরুহত্যা, আত্মীয়-স্বজন হত্যা সকলই জায়েজ,
তুমি শুধু আদিষ্ট সৈনিক, হত্যায় মেতে ওঠো, বীর হও, গাজী
হও—
তোমাদের প্রয়োজনে, নানা নামে মহামান্য পরিষ্কার বিভাজন এনে
দুচোখের সামনে নামাবেন, তুমি দেখবে তীর ছুটে চলেছে তূণীর থেকে—
যা তুমি ছাড়োনি, তোমার অবশ মাথা অবসাদে নুয়ে গেলে দেখতে পাবে
তোমার হাতের চাপে ছুটে যাচ্ছে রকেট ও মিসাইল,
ক্রীড়নক, অসহায় ক্ষত্রিয়ের এই পরিণাম,
ঘুম ভেঙে জেগে উঠলে দেখবে সেই নিবিষ্ট সকালে
নিজেকে নিহত করে যুদ্ধক্ষেত্রে একা একা প্রয়োজনহীন
তুমি একা দাঁড়িয়ে রয়েছো।
০১.০৩.২০২০
২
সারাদেশ দিনরাত দিচ্ছে পাহারা
হয়ে সর্বহারা, যেন বেহুলা বাসরে
বসে আছে লোহার দেয়াল-ঘেরা ঘরে
হতভাগ্য লখিন্দর অসহায় হয়ে,
একটি ছিদ্রপথে ছুটে আসবে কালনাগ,
সেই ছিদ্র বন্ধ করে দিতে হবে যে কোন কৌশলে,
ঘরে থাকো, বেরিও না, মাখো যতো সাবান ও হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার,
লেবুবন এখন উজাড়,
তারপরও হবে কী নিদান মহাত্মন, উদ্ধার কি পেয়েছিলো লখিন্দর?
যদি চাই তবে, বেহুলা-লড়াই চাই ঘরে ঘরে,
গ্রাম-পুরানের পথ বেয়ে,
লোকগাথা — মাথা না নোয়ানো গল্প মনে রেখে,
মানুষের-মানবীর জয়ধ্বজা
আবার উড়াক এ সময় !
দুঃসময় যাক্ কেটে যাক্ !!
২৫. ০৪. ২০২০
৩
শক্তিবাবু লিখতো পদ্য অসাধারণ !!
আপনিও তো সেই ঘরানার,
কবিতাকে পদ্য বলার অহংকারে
মাটিতে তার পড়তো না পা,
দাদা ধরে পদ্যকারের কোনোকালে
মুক্তি নামের সেই পাখিটি হয়নি ধরা,
যারা পারে, তারা কিন্তু এমনি পারে,
দাদার ছাতা যা তা কিন্তু, শতচ্ছিন্ন,
শতচ্ছিদ্রে বাড়বাড়ন্ত, দরিদ্রদের পংক্তিভোজে
নম্র চোখে মলিন মুখের নমশূদ্র, অতি ক্ষুদ্র—
কুলীনদের ঐ বার দুয়ারে বসে থাকা একলা পথিক,
উপহাসের করুণ থালায় তাকে দুটো অন্ন দিলে
বর্তে যাবে দাদার গুষ্টি,
পুষ্টিহীনের এমন দিনে কাব্য কোথায় ?
— বনানী ও গুলশানে আর বারিধারায়,
কখনো বা ধানমণ্ডির লেকের পাড়ে বসে থাকে কবিতারা —
তা কুড়িয়ে আনছে যারা,
তারাই তো আজ কাব্যছোঁয়া পেনডেমিকের রাজাধিরাজ !!
কবির মুকুট অন্য কোথা,
হয়তো হবে অন্য কোনো খানের পাশের তাশের ঘরে l
0৫.0৬.২০২০
৪
আপনি বলেই লেখা হলো,
এমন অমর কাব্যকথা–
স্বরবৃত্তে এমন একটা মনজুড়ানো নিখুঁত পদ্য
তাহলে কি হতোই লেখা?
তখন হয়তো খুঁজতে হতো মাত্রাবৃত্ত—
ছয় ছয় দুই, পাঁচ পাঁচ তিন কিম্বা সাতের লম্বা মাত্রা,
প্রেমের পদ্য আসলে কি ঐ সময়ে মাত্রাবৃত্তে ভালোই জমে —
কে জানে তা?
আমি হলে রানা রায়ের টানা গদ্যে ঢুকে যেতাম,
যেমন করে বহু আগে রবিঠাকুর ঢুকেছিলেন
“লিপিকা”র ঐ ঘনারণ্যে, গদ্য গদ্য ভাবের ভেতর,
যেখানটাতে বারুদভরা বোমার মতো কাব্যভরা মধু ঠাসা l
0৫.0৬.২০২০
উল্লসিত বর্বরেরা
মাঠ-মাস্তানির দিনে উল্লসিত বর্বরেরা কৌতুকে হেসেছে।
তাদের ঘৃণিত বাক্যে সমাজের অধিপতি যারা ছিলো —
তারা সব বিস্ময়ে বিমূঢ় !
কেউ কোনো কথা বলছে না —
কোথাও ক্ষোভের কোনো মশাল জ্বলেনি,
বালিকার উদভ্রান্ত — কিশোরীরা গলায় ওড়না দিয়ে
ঝুলে পড়ছে এখানে সেখানে —
কারো কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই, সবাই নির্বাক।
বাক্ ভেঙে যাবে, জিভ খশে যাবে —
শূন্যতার ধুলো উড়ে আসমান জমিন সব
হয়ে উঠবে হাহাকারময়,
এমন তন্দ্রায় ঘোর আফিমেরও লাগেনি নিশ্চিত।
০২.০২.২০১৭
তুষার দাশ।
কবি-প্রাবন্ধিক-সমালোচক।
জন্ম:১৩ নভেম্বর ১৯৫৭।
চল্লিশ বছর ধরে দেশে ও দেশের বাইরে নানা পত্র-পত্রিকায় লেখেন।
কবি তুষার দাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কৃতি ছাত্র হিসেবে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
কর্মজীবনে বিচিত্র পেশায় নিয়োজিত থেকেছেন। লাইব্রেরীর বইয়ের তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে পত্রিকায় প্রুফ রিডিং, সম্পাদনা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা গড়ে তোলার কাজ করেছেন। তিনি অধুনা পত্রিকায় কবি শামসুর রাহমানের সম্পাদনা সহকারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কবির ঘনিষ্ট সাহচার্য লাভ করেন।
শখ: আড্ডা গান শোনা আর ভ্রমণ। ভারতের বিভিন্ন শহর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, উজবেকিস্তান, দুবাই, লন্ডন, স্কটল্যান্ডসহ নানা শহর ও দেশ ঘুরে বেড়িছেন মনের আনন্দে।
প্রকাশিত গ্রন্থ: সহজপাঠ ও অন্যান্য কবিতা (কবিতা); অতিক্রান্ত বাল্যশিক্ষা (কবিতা, ১৯৯০); দুর্লভ নির্জন আয়না (কবিতা, ১৯৯৬); অনিবার্য গৃহযুদ্ধ (কবিতা, ১৯৯৯); আমার কবিতা (নির্বাচিত কবিতার সংক লন, ১৯৯৯); ঘন আঙরার দিন (কবিতা, ২০০৮); আমাদের সম্মিলিত মেধা তালিকার দিন (কবিতা, ২০১৬); নির্বাচিত ১০০ কবিতা (নভেম্বর, ২০১৭), পণ্ডিতের প্রযোজিত যাত্রাপালা (কবিতা, ২০২০); নিঃশব্দ ব্জ্র: আহসান হাবীবের কবিতা (প্রবন্ধ, ১৯৮৬); আহসান হাবীব (জীবনী, ১৯৮৮) এবং সেইসব মুখশ্রীর আলো ও আমার জীবনানন্দ (প্রবন্ধ, ২০০২)।